জামায়াত কায়েমের ফযীলত
মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী
১.আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: -কোনো জনবসতি কিংবা কোনো জনবিরল এলাকায় যদি তিনজন ব্যক্তিও বাস করে, আর তারা যদি নামাযের জামায়াত কায়েম না করে, তবে অবশ্যি শয়তান তাদের উপর চড়াও হবে। সুতরাং অবশ্যি তুমি জামায়াত কায়েম করবে। কারণ দলছাড়া ভেড়া-বকরীকে তো অবশ্যি নেকড়ে তার গ্রাস বানাবে। (মুসনাদেআহমদ, আবু দাউদ ও সুনানে নাসায়ী)
২.আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দুই বা দুইয়ের অধিক লোক হলেই একটি জামায়াত করতে হবে। (ইবনে মাজাহ)
৩.হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি আযান শুনলো, অথচ জামায়াতে হাযির হলোনা, তার নামায নাই। তবে কোনো ওযর থাকলে ভিন্ন কথা। (আবু দাউদ ও দারু কুতনি)
৪.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার জীবন! আমার ইচ্ছা হয়, কাঠ-খড়ি জমা করার নির্দেশ দিতে। অত:পর যখন সেগুলো কুড়িয়ে একত্র করা হবে, তখন নামাযের আযান দেবার নির্দেশ দিতে। অতঃপর কোনো একজনকে ইমামতি করার নির্দেশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখতে-কে কে নামায পড়তে আসেনি। অপর বর্ণনায় বলা হয়েছে : আমার ইচ্ছে হয়, যারা আযান শুনেও মসজিদে হাযির হয়না, তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে। (সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম)
৫.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি লোকদের ঘরে নারী ও শিশু না থাকতো, তাহলে আমি যুবকদের আদেশ দিতাম, সেইসব ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে, যেসব ঘরের লোকেরা এশার জামায়াতে হাযির হয়নি। (মুসনাদে আহমদ)
৬.হযরত উম্মুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একদিন আবু দারদা অত্যন্ত রাগান্বিত অবস্থায় ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন জিনিসি আপনাকে রাগান্বিত করেছে? তিনি বললেন: আল্লাহর কসম, আমি উম্মতে মুহাম্মদীর পরিচয় এছাড়া আর কিছুই জানিনা যে, তারা সবাই মিলে জামায়াতে নামায পড়ে। (সহীহ আল বোখারী)
৭.আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো : ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এমন কেউ নেই, যে আমাকে হাত ধরে মসজিদে আনবে। অতঃপর লোকটি মসজিদে উপস্থিত হওয়া থেকে অব্যাহতি চায় এবং ঘরে নামায পড়ার অনুমতি চায়। তিনি তাকে ঘরে নামায পড়ার অনুমতি দিয়ে দেন। অনুমতি পেয়ে লোকটি ফিরে রওয়ানা করে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনরায় ডেকে পাঠান। সে ফিরে আসে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন : তুমি কি আযান শুনতে পাও? সে বললো : জী-হ্যা, শুনতে পাই। তিনি বললেন : তবে তুমি মসজিদে উপস্থিত হবে। (সহীহ মুসলিম)
৮.হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! মদীনায় ক্ষতিকর জীব- জানোয়ার এবং বন্য পশুদের আধিক্য, আর আমি অন্ধ মানুষ, আমার বাড়ীও বেশ দূরে এবং আমার হাত ধরে আনারও লোক নেই। আমি কি নিজের ঘরে নামায পড়তে পারি? তিনি বললেন; তুমি কি আজানের শব্দ শুনতে পাও? উত্তরে তিনি বললেন; জ্বি হাঁ। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি সাড়া দেবে তোমার রুখসতের কোনো উপায় আমার নিকট নেই।
একজন অন্ধ মুসল্লীর ব্যাপার, যার কষ্টের কথা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সরাসরি বলার পরও রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে নামায পড়ার রুকসত বা অনুমতি দেননি। তাহলে আমরা জামায়াত ছাড়া কি ঘরে নামায পড়তে পারি?
৯.রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মসজিদে নামায পড়ার মর্যাদা একা পড়ার চাইতে সাতাশ গুণ উর্ধ্বে। (সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম)
১০.হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ১. কারও ঘরের নামায এক ওয়াক্ত নামাযের সমান ২. পাঞ্জেগানা মসজিদের নামায ২৫ নামাযের সমান ৩. জুম’আর মসজিদের নামায ৫০০ নামাযের সমান ৪. মসজিদে আকসার নামায ১ হাজার নামাযের সমান ৫. মসজিদে নববীর নামায ৫০ হাজার নামাযের সমান ৬. মসজিদে হারামের নামায ১ লক্ষ নামাযের সমান। (ইবনে মাজাহ)
১১.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোনো ব্যক্তির জামায়াতের সাথে নামায তার ঘরে বা বাজারের নামাযের চাইতে পঁচিশগুণ বেশি সওয়াবের অধিকারী। আর এটা তখন হয় যখন সে অযু করে এবং ভাল করে অযু করে তারপর বের হয়ে মসজিদের দিকে চলতে থাকে, একমাত্র নামাযের জন্যই সে ঘর থেকে বের হয়। এ অবস্থায় সে যতবার পা ফেলে তার প্রতিবারের পরিবর্তে একটি করে মর্যদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে গুনাহ মাফ করা হয়। তারপর যখন সে নামায পড়তে থাকে, ফিরিশতারা তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকে যতোক্ষণ সে নামাযের মুসল্লার ওপর থাকে এবং তার অযু না ভাঙ্গে। ফিরিশতাদের সেই দোয়ার শব্দাবলী হচ্ছে : হে আল্লাহ! এই ব্যক্তির ওপর রহমত নাযিল করো! হে আল্লাহ! এর ওপর রহম কর। আর যতোক্ষণ সে নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে নামাযের অন্তর্ভূক্ত গণ্য হতে থাকে।
১২.হযরত উব্বাই ইবনে কা’আব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নামাযের প্রথম সারি হলো ফেরেশতাদের সারির মতো। তোমরা যদি প্রথম সারির মর্যাদা সম্পর্কে জানতে, তবে তা পাওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তে। মনে রেখো, একা নামায পড়ার চাইতে দুই ব্যক্তির একত্রে নামায পড়া উত্তম। আর দুই ব্যক্তির একত্রে নামায পড়ার চাইতে তিন ব্যক্তির একত্রে নামায পড়া উত্তম। এভাবে যতো বেশি লোকের জামায়াত হবে, তা আল্লাহর কাছে ততো বেশি প্রিয় হবে। (আবু দাউদ, আন-নাসায়ী)
১৩.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত : যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে (জামায়াতে নামায পড়ার জন্য) কোনো একটি মসজিদের দিকে পা বাড়াবে, তার প্রতিটি কদমে আল্লাহ পাক তার জন্য একটি করে পণ্য লিখে দেবেন, তার একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি করে পাপ মুছে দেবেন। (সহীহ মুসলিম)
১৫.ইমাম তিরমিযী (রহ.) মওকুফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন-যখন হযরত ইবনে আব্বাস মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যে দিনে রোজা রাখে এবং রাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে কিন্তু জামায়াতের সাথে নামায পড়ে না-তার সম্বন্ধে তিনি বললেন-এই অবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে যাবে।
১৬.রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায ঠিকমত আদায় করেব, আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কারে সম্মানিত করবেন। ১. তার অভাব দূর করে দেবেন ২. কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেবেন ৩. ডান হাতে আমলনামা দেবেন ৪. বিজলীর ন্যায় পুলসিরাত পার করাবেন ও ৫. বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
১৭.নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে নামায আদায় করবে, বিচার দিবসে তার জন্য নামায নূর হবে এবং মুক্তির উপায় হবে । (আহমাদ ও মুসনাদে তিবরানী)
১৮.হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একবার হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খেজুর বাগান পরিদর্শনে গেলেন। ফিরে এসে দেখেন আসর নামাযের জামায়াত ছুটে গেছে। তিনি তখন জামায়াত ছুটে যাওয়ার কাফফারাস্বরূপ খেজুর বাগনটি সদকা করে দেন।