Home ইসলাম আল্লাহর নাম ধরে বার বার ডাকা বা ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ বলে জিকির করা কি শরীয়ত সম্মত?

আল্লাহর নাম ধরে বার বার ডাকা বা ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ বলে জিকির করা কি শরীয়ত সম্মত?

by admin
0 comment

Allah hu

আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমতউল্ল্যাহ। ওয়াল্ড টিউন্স থেকে আজ আপনাদের নিকট ইসলামী আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে হাজির হলাম আমি মো: আনোয়ার হোসেন।।

হযরত মুহাম্মদ (স.) এর ওপাতের পর ইসলাম ধর্ম প্রচার “পীর”দের ওপরই ছিল। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের প্রচার করেন হযরত শাহজালাল (রা.)। বর্তমান সমাজেও অনেক কথিত “পীর” আছে যার ধর্ম প্রচারের নামে তাদের ভক্ত ও আশেকানদের তার নিজস্ব তরীকার কিছু নিয়ম বা জিকির শিক্ষা প্রদান করেন। সৌদির বর্তমান সময়ে আলেমদের মধ্যে যেকজন সেরা আছে তার মধ্যে অন্যতম “শাইখ আল্লামা সালিহ আল ফাওযান”। যাকে পুরা আরবের তালেবে এলেম তথা সকল মুসলমানরাই চিনেন। জিকির সম্পর্কে তার জবাব গুলো নিয়ে আজকের আলোচনা।

প্রশ্নঃ বিশেষ কোন নাম ধরে কি আল্লাহর যিকির করা কি জায়েয ? অনেকে, ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বা ‘ইয়া গাফূরু, ইয়া গাফূরু’ ইত্যাদি বলে জিকির করা। আমার মতে ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বলে জিকির করা সম্পূর্ন বিদআত। ‘হা’ অক্ষরে পেশ দিয়ে ‘আল্লাহু আল্লাহু’ বলার অনুমতি আছে কি?

উত্তরঃ  আল্লাহই সকল প্রশংসা যোগ্য। ‘আল্লাহ’ শব্দ দ্বারা জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করতে চাইলে এই ইবাদতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হেদায়াত কি ছিল তা আমাদের জানা দরকার। জিকির ও দুয়ার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতে কেবলমাত্র ‘আল্লাহ’ শব্দ ব্যবহারের কোন অস্তিত নেই। সেটা আল্লাহ শব্দের সাথে ‘হা’ অক্ষরে পেশ দিয়ে হউক বা জযম দিয়ে হউক- কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। একইভাবে শুধু মাত্র আল্লাহর সুন্দর নামগুলো ধরে তাঁর জিকির করার কোন প্রমাণ মেলেনি। যেমন অনেকই বলে, ইয়া লাতীফু, ইয়া লাতীফু, অথবা ইয়া রাহিমু ইয়া রাহিমু…. ইত্যাদি।
এছাড়া এ প্রকার যিকিরগুলোকে অর্থবোধক বাক্য বলা হয় না। এই ধরনের জিকিরে উপকারী কোন অর্থও প্রকাশিত হয় না। একক শব্দ এতে কোন উপকার পাওয়া যায় না। এই নামগুলো ধরে ডেকে যদি আল্লাহর কাজে কোন আরিজি বা আবেদন বা প্রার্থনা করা হয়, তাহলে এই ডাকটাই অনর্থক হয়ে যাবে।
শাইখ সালেহ ফাওযান বলেন- এটা বিদআত। বিশেষ কোন সময়ে বা নামাযের পর আল্লাহর নাম সমূহের জিকির করা এবং এর অভ্যাস গড়া বিদআত। যেমন ইয়া লাতীফু, ইয়া লাতীফু, বা এরকম কোন নাম বিশেষ সংখ্যা ও বিশেষ পদ্ধতিতে যিকির করা। এগুলো ইসলাম ধর্মে সবই নতুন সৃষ্টি তথা বিদআত। সেরা হেদায়াত হচ্ছে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হেদায়াত। আর নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে – দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি (শুরা) করা। বিদআত মানে হচ্ছে ভ্রষ্টতা।
(আল মুনতাকা মিন ফাতাওয়া ফাওযান ২/৮)
তাই যখন বলবে

* ‘ইয়া আল্লাহ ইয়ারহামনী’ অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে দয়া কর।

* ‘ইয়া গাফূরু ইগফিরলী’ অর্থাৎ হে ক্ষমাশীল আমাকে ক্ষমা কর।

* ‘ইয়া রাজ্জাকু উরযুকনী’ হে রিযিকদাতা আমাকে রিযিকদান কর।

তাহলে তা হবে অর্থবোধক বাক্য এবং সেটাই বৈধ যিকির।

অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী, দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। সউদী আরব।

 শুধু “আল্লাহ” শব্দের যিকর:

জিকর শব্দের অর্থ হচ্ছে, স্মরণ। আল্লাহর স্মরণে যে সব শব্দ বা বাক্য মুখে উচ্চারণ করে বলতে হয়, সাধারণতঃ শরীয়ার পরিভাষায় তাহাই জিকির। এছাড়া আন্তরিক ভাবে স্মরণকেও জিকির বলা যায়। আল্লাহ বলেনঃ (এবং তোমার প্রতিপালককে অধিক স্মরণ করবে এবং সকালে ও সন্ধায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে।) [আল ইমরান/৪১]

  •  সর্ব্বোত্তম জিকির : অনেক বিজ্ঞ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, সবচেয়ে সেরা জিকির হচ্ছে, কুরআনুল কারীম। ইমাম নবভী এ প্রসঙ্গে বলেনঃ ‘জেনে রাখো, কুরআনের তিলাওয়াত সর্ব শ্রেষ্ঠ জিকর আর তা হচ্ছে, চিন্তা-ভাবনার সাথে তিলাওয়াত করা। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  হতে প্রমাণিত জিকর সমূহ(দোয়াই মাসূরাহ)। তন্মধ্যে উত্তম হচ্ছে, [সুব্হানাল্লাহ, ওয়াল্ হামদু লিল্লাহ্ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আক্ বার।]
  •  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেনঃ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় বাক্য চারটি, [সুব্হানাল্লাহ, ওয়াল্ হামদু লিল্লাহ্ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আক্ বার। এর মধ্যে যার দ্বারায় শুরু কর না কেন কোন অসুবিধা নেই।[মুসলিম]
  •  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আরো বলেনঃ ‘সব্বোর্ত্তম যিকর হচ্ছে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। [ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন এবং ইবনু হিব্বান ও হাকেম সহীহ বলেছেন।]
  •  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ ‘আমি ও আমার পূর্বের নবীগণ সব্বোর্ত্তম যা বলেছি, [তা হল,] ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকা লাহু’। [মালেক তাঁর মুআত্তায় বর্ণনা করেন এবং তাববারানীও বর্ণনা করেন। সনদ হাসান]

উপরে উল্লেখিত হাদীসের মতে বলা যায় যে, শুধু “আল্লাহ” শব্দের মাধ্যমে জিকির করা নবী (স.)হতে প্রমাণিত নয় আর না তাঁর কোন সাহাবা হতে এটা প্রমাণিত।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেনঃ ‘শুধু (আল্লাহর) নাম তা গোপনে হোক কিংবা প্রকাশ্যে তা একটি পূর্ণ কথা নয় আর না একটি পূর্ণ বাক্য। আর না এর সম্পর্ক কুফর বা ঈমানের সাথে আছে, না আদেশ কিংবা নিষেধের সাথে সম্পর্কিত। আর না সালাফ (পূর্বসুরী) থেকে প্রমাণিত আর না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বৈধ করেছেন। [মাজমুউল ফাতাওয়া/১০/৫৫৬]
এই জন্য এই জিকিরকে বহু আলেম-উলামা বিদআত বলেছেন। দেখুন, সাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ হাফেযাহুল্লাহের ওয়েব সাইট। www.islam-qa.com

সংকলনে: আব্দুর রাকীব (মাদানী) দাঈ, আল খাফজী দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

প্রশ্ন: শুধুমাত্র “আল্লাহু” “আল্লাহু” বলে জিকির করা কি শরীয়ত সম্মত?

উত্তর: আল হামদুলিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়া সালামু আলা রাসূলিল্লাহ। আম্মা বাদ:

রাসূল (স.) থেকে দুয়া ও জিকিরের ব্যাপারে যে সকল হাদীস পাওয়া যায় সবগুলোই পূর্ণাঙ্গ বাক্য। যেমন, সুবাহান আল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ ইত্যাদি। সংখ্যা সহ হাদীসগুলোতে উল্লেখ রয়েছে।
রাসূল (স.)বলেছেন-

أفضل ما قلت أنا والنبيون قبلي: لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير.

“আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের বলা শ্রেষ্ঠ জিকির হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।”
তিনি আরও বলেন:

أفضل الذكر لا إله إلا الله

“শ্রেষ্ট জিকির হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” তিনি আরও বলেন:

أفضل الدعاء الحمد الله

“শ্রেষ্ঠ দুয়া হল, আল হামদুলিল্লাহ।” এভাবে বহু হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে জিকিরের শব্দাবলী শিক্ষা প্রদান করেছেন।
কিন্তু আল্লাহ তায়ালার একটি মাত্র নাম নিয়ে একক শব্দে, (যেমন, আল্লাহু আল্লাহু… বা আর রাহমানু আর রাহমানু… ইত্যাদি) জিকির করার ব্যাপারে একটি হাদীস পাওয়া যায় না। সাহাবী বা তাবেঈদের কাছ থেকেও এমন নজির মেলিনি।
একটি শব্দ দ্বারা যদি জিকির করা যদি শরীয়ত সম্মত ইহত তবে আল্লাহর রাসুল (স.) উম্মতের জন্য অবশ্যই তা উল্লেখ করতেন। সাহাবীগণও তা পালন করতেন।
এভাবে জিকির করে থাকেন ভ্রান্ত আকীদার পীর-ফকীর ও সূফীগণ। এই সকল পীর-ফকীর ও সূফীদের অনেকেই আবার আল্লাহ শব্দ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র হু হু বলে জিকির করেন। এমনিভাবে তারা দীনের মধ্যে বিদআত চালূ করেছেন। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী।

 

You may also like