Home ইসলাম হিংসা-বিদ্বেষ ও লোভ মানুষের সমস্ত নেকীকে খেয়ে ফেলে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ না করলে জান্নাতে যাওয়া সহজ হয়

হিংসা-বিদ্বেষ ও লোভ মানুষের সমস্ত নেকীকে খেয়ে ফেলে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ না করলে জান্নাতে যাওয়া সহজ হয়

by admin
0 comment

অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ ও লোভ মানুষের সমস্ত নেকীকে খেয়ে ফেলে
হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ না করলে জান্নাতে যাওয়া সহজ হয়
হিংসা
অন্যের সুখ-শান্তি ও ধন-সম্পদ বিনষ্ট বা ধ্বংস করে নিজে এর মালিক হওয়ার কামনা-বাসনাকে আরবিতে ‘হাসাদ’ অর্থাৎ হিংসা বলা হয়। হিংসা অর্থ! ‘আল্লাহ অন্যকে যে নেয়ামত দান করেছেন তাকে হিংসা করা এবং উক্ত নেয়ামতের ধ্বংস কামনা করা’। ইসলাম অন্যের প্রতি হিংসা করা বা প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়াকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বা নিষিদ্ধ করেছে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষের স্থলে সামাজিক শান্তি ও স¤প্রীতি বজায় রাখার জন্য কোরআনের নির্দেশ।
হিংসুক
হিংসুক হলো, ‘হিংসাকৃত ব্যক্তির নেয়ামত ধ্বংসের আকাংখী’। হিংসার পিছে পিছে আসে বিদ্বেষ। সে তখন সর্বদা ঐ ব্যক্তির মন্দ কামনা করে। বস্তুতঃ এ দু’টি বদ¯^ভাবের মধ্যে ঈমানের কোন অংশ নেই। কেননা মুমিন সর্বদা অন্যের শুভ কামনা করে। যেমন সে সর্বদা নিজের শুভ কামনা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য ঐ বস্তু ভালবাসবে, যা সে নিজের জন্য ভালবাসে’। যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করে, তার ঈমান হয় ক্রুটিপূর্ণ। হিংসা মুক্ত সমাজ গঠনের জন্য এটাই উত্তম। কেননা হিংসা কেবল হিংসা আনয়ন করে। মানব চরিত্রে যেসব খারাপ দিক আছে, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ মারাত্মক ক্ষতিকারক। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে অত্যন্ত বিষময় করে তোলে। এতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। হিংসা মানুষের অন্যতম একটি খারাপ গুণ। ইসলামে হিংসা বা বিদ্বেষ পোষনকারীকে খুবই নিকৃষ্ট চোখে দেখা হয়েছে। হিংসুকের জীবন কখনই সুখের হয় না। কেননা সে সবসময় সকল জিনিসের অধিকারী হতে চায়। তার সর্বদা এই চেষ্টাই থাকে যে, অন্যের কাছে যা আছে তারচেয়ে তার জিনিসটা ভাল হওয়া চাই। আর এই হিংসুক ব্যক্তিই সমাজের অন্যান্য সন্মানিত ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্বকে হেয় করার চেষ্টা করে। কেননা তার দৃষ্টিতে সে একাই সমাজে সন্মানিত ব্যক্তি, বাকিরা সবাই তার চেয়ে নগন্য। এই কারণে বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তির পরিণাম সম্পর্কে আপনারা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যে, তারা না ¯্রষ্টার দৃষ্টিতে ভাল আর না সৃষ্টির দৃষ্টিতে। হিংসুককে কেউ ভাল দৃষ্টিতে দেখে না, সবার মাঝে তার প্রতি একটা খারাপ ধারনা জন্ম নেয়। সমাজে অন্য সবার সাথে বসবাস করলেও মানুষের মনে কোন স্থান তার নেই। কোরআন ও হাদীসে হিংসা এবং হিংসুককে কঠিণ ভাবে নিন্দা করা হয়েছে। হিংসা-বিদ্বেষ একটি ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি।
বিদ্বেষ
কোনো কারণে কারও প্রতি শক্রুভাবাপন্নতা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ধরে রাখার নাম বিদ্বেষ। একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার বিষয়টি বদভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে পারস্পরিক বিদ্বেষ পোষণ করা হারাম। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘তিন ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয় না, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে বিশ্বের সব সৃষ্টির সেবা ও জনকল্যাণ কামনাই হলো সত্যিকারভাবে ইসলামের অনুশীলন। কিন্তু হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী লোকেরা শরিয়তের পরিপন্থী কাজ করে দ্বীন ইসলামের মূলে কুঠারাঘাত করে। বাহুবলে হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা ও শক্রুতা বৃদ্ধি পায় এবং সামাজিক জীবনে শান্তি ফিরে আসে না। তাই কোনো কিছু নিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ করা উচিত নয়। নিজের যা কিছু আছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। অন্যের দিকে তাকিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করে হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। সুতরাং আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হলে ধর্মপ্রাণ মানুষকে অবশ্যই সর্বাবস্থায় হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সুন্দর মনমানসিকতায় সৎভাবে পরিশীলিত জীবনযাপন করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।
লোভ
লোভ মানুষের অধপতনের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়। যেহেতু লোভ একটি নৈতিক ক্রুটি, তাই এই বিষয়টি সর্ম্পকে জানা প্রয়োজন। লোভ মানুষের জীবন থেকে সুখ কেড়ে নেয়। আল্লাহতায়ালা যে সকল নেয়ামত তাকে দান করেছেন তার শুকরিয়া কখনই সে আদায় তো করেই না, বরং আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন তার চেয়ে সে বেশী চায় এবং যদি সেটা পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে সে আবার নতুন করে আর একটি জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দেয়। উদাহরণ ¯^রূপ, একজন ব্যক্তি একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে, যদি সে লোভী হয় এবং আল্লাহর শুকুর গোযার না হয় সব সময় তার এই চিন্তা থাকে যে, আরো উন্নত একটি বাড়ি ভাড়া নিতে হবে। যখন পূর্বের চেয়ে আরো উন্নত বাড়ি সে ভাড়া নিতে সক্ষম হয়, তখন সে আবার নতুন করে অন্যের সম্পত্তির প্রতি দৃষ্টি দেয় যে, এবার যদি অমুকের মত একটি সুন্দর বাড়ি বানাতে পারতাম। এভাবেই চলতে থাকে তার লোভের চক্র। আর কখনই সে এ সমস্ত নেয়ামত যা আল্লাহ্ তাকে দিয়েছে তার শুকুর আদায় করে না। কিন্তু আল্লাহর মুমিন বান্দারা যে সকল নেয়ামত তাদেরকে দান করা হয়েছে সেগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা ¯^ীকার করে ও তাতেই সন্তুষ্ট থাকে। আর যদি পরবর্তীতে কিছু তার সম্পদ বৃদ্ধি পায় তবে তার জন্য সে আল্লাহর দরবারে পূর্বাপেক্ষা অধিক শুকরিয়া আদায় করে। আর ভুলেও সে অন্যের সম্পদের প্রতি দৃষ্টি দেয় না। মুমিনদের এ দলটি সর্বদাই সুখে ও শান্তিতে বসবাস করে। কেননা তারা শুধুমাত্র আল্লাহর নৈকট্য বৈ আর কিছু চায় না।
হিংসা-বিদ্বেষের উৎপত্তি
মানুষের হীন মনমানসিকতা, ঈর্ষাপরায়ণতা, সম্পদের মোহ, পদমর্যাদার লোভ-লালসা থেকে হিংসা-বিদ্বেষের উৎপত্তি ও বিকাশ হয়। হিংসা-বিদ্বেষ মুমিনের সৎ কর্ম ও পুণ্যকে তার একান্ত অজান্তে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে। মানুষ হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, শঠতা-কপটতা, অশান্তি, হানাহানি প্রভৃতি সামাজিক অনাচারের পথ পরিহার করে পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে এবং ইসলামের পরিশীলিত জীবনবোধে উদ্বুদ্ধ হবে এটিই ধর্মের মূলকথা। ঈর্ষা বা হিংসা মানুষকে কত অধঃপতনে নিয়ে যায়, তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। ঈর্ষা ও হিংসা প্রায় একই রকম আবেগ, তবে হিংসাকে বলা হয় ঈর্ষার চরম বহিঃপ্রকাশ। ঈর্ষাকাতরতা হিংসার পর্যায়ে চলে গেলে আক্রোশবশত: মানুষ হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলতে পারে। হিংসুক ব্যক্তি অন্যের ভালো কিছু সহ্য করতে পারে না, কাউকে কোনো উন্নতি বা ক্ষমতায় অভিষিক্ত দেখলে অন্তরে জ্বালা অনুভব করে। এহেন অশোভন আচরণ ইসলামের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। হিংসুক ব্যক্তি যখন হিংসাত্মক কাজে লিপ্ত থাকে, তখন তাকে পরিত্যাগ করা অবশ্যকর্তব্য। এ জন্য হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকার লক্ষ্যে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে হিংসার বহুবিধ কারণ যেমন পারস্পরিক ঈর্ষাপরায়ণতা, পরশ্রীকাতরতা, শক্রুতা, দাম্ভিকতা, নিজের অসৎ উদ্দেশ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা, নেতৃত্ব বা ক্ষমতার আকাক্সখা, অনুগত লোকদের যোগ্যতাবান হয়ে যাওয়া এবং কোনো সুযোগ-সুবিধা হাসিল হওয়া, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নীচুতা বা কার্পণ্য প্রভৃতি বিদ্যমান। নানা কারণে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির প্রতি হিংসা প্রকাশ করে থাকে। ধর্মপ্রাণ মানুষের চরিত্র গঠনে হিংসা-বিদ্বেষ বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এতে মানুষে-মানুষে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, হানাহানি ও দ্বন্দ-সংঘাতের উদ্ভব ঘটে। ঈমানদারদের মন থেকে সব ধরনের হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করে সমাজের সবার সঙ্গে শান্তিতে মিলেমিশে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়।
হিংসা তার সমস্ত নেকীকে খেয়ে ফেলে
হিংসা তার সমস্ত নেকীকে খেয়ে ফেলে যেমন আগুন ধীরে ধীরে কাঠকে খেয়ে ফেলে। এভাবে সে নিজের আগুনে নিজে জ্বলে মরে। পরিণামে তার পূর্বে কৃত সৎকর্ম সমূহের নেকীগুলিও ক্রমে নিঃশেষ হয়ে যায়। ঐ অবস্থায় তার মৃত্যু হ’লে সে নিঃ¯^ অবস্থায় আল্লাহর কাছে চলে যায়। অতএব একজন মুসলিমের কর্তব্য হলো সর্বদা সাদা মনের অধিকারী থাকা। তার অন্তরে যেন কারু প্রতি হিংসার কালিমা না থাকে। যদি কোন কারণ বশতঃ সেটা কখনো এসেই যায়, তবে বুদ্দুদের মত যেন তা উবে যায়। কচুর পাতার পানির মত যেন তা ঝরে যায়। হৃদয় যেন সকলের প্রতি উদার থাকে এবং শক্রু-মিত্র সকলের প্রতি হেদায়াতের আকাংখী থাকে। এমন অবস্থায় নিদ্রা যাবে, যেন তার হৃদয়ের কোণে কারু প্রতি হিংসার কালো মেঘ জমে না থাকে। কেননা এই নিদ্রা তার চিরনিদ্রা হতে পারে।
ভালোবাসা ও বিদ্বেষের মানদন্ড ঈমান
ভালোবাসা ও বিদ্বেষের মানদন্ড হবে কেবল ঈমান। আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য বিদ্বেষ এটিই হল মানদন্ড। কোন মুমিন কোন কাফিরকে কখনোই উদারভাবে ভালবাসতে পারে না। কেননা কাফিরের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। তাকে ভালোবাসার মধ্যে আখেরাতে কিছুই পাবার নেই। এক্ষেত্রে কাফিরকে তার কুফর থেকে ঈমানের দিকে ফিরানোর সাধ্যমত চেষ্টা করাই হবে তার প্রতি ভালবাসার সঠিক নমুনা। এটা না করলে মুমিন গোনাহগার হবে ও আল্লাহর নিকট কৈফিয়তের সম্মুখীন হবে। কেননা মুমিন ও কাফির উভয়ে একই পিতা আদমের সন্তান। আদম (আঃ) মুসলিম ছিলেন। তাই উভয়ে বংশসূত্রে মুসলিম। কিন্তু না বুঝে অথবা বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে যদি কেউ কাফির-মুশরিক হয়ে থাকে, তবে তাকে বুঝিয়ে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। যেসব মুসলিমের পিতা-মাতা কাফির বা মুশরিক অবস্থায় মারা গেছেন, তারা সর্বদা জাহান্নামের আগুনে জ্বলছেন, এ দৃশ্য চিন্তা করে কোন মুসলিম সন্তান স্থির থাকতে পারেন কি? একইভাবে মুসলিম হওয়া সত্তে¡ও যারা শিরক ও বিদ‘আতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের পরিণামও জাহান্নাম। তাদের নিকটাত্মীয়রা কি তাদের জীবন্ত আগুনে পোড়ার জ্বলন্ত দৃশ্য মনের আয়নায় দেখে সহ্য করতে পারবেন? তাই কাফির-মুশরিক, মুনাফিক ও ফাসিকদের প্রতি বিদ্বেষ-এর অর্থ হলো তাদের অবিশ্বাস ও অপকর্মকে ঘৃণা করা ও নিজেকে তা থেকে বাঁচিয়ে রাখা। তবে সকল আদম সন্তানের হেদায়াতের জন্য নিজের হৃদয়কে সদা উন্মুক্ত ও বিদ্বেষ মুক্ত রাখাটাই হ’ল প্রকৃত মুমিনের নিদর্শন।
হিংসা ও বিদ্বেষ হলো অন্তরের বিষয়
হিংসা ও বিদ্বেষ হলো অন্তরের বিষয়। কিন্তু তার বিষফল হিসাবে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও সম্পর্কচ্ছেদ ইত্যাদি হলো কর্মের বিষয়। তাই অন্তর বিদ্বেষমুক্ত না হলে কর্ম অন্যায়মুক্ত হয় না। যদি কোন মুমিন পাপকর্ম করে, তাহলে তার পাপকে ঘৃণা করবে। কিন্তু ঈমানের কারণে তাকে ভালবাসবে। আর ভাইয়ের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা তখনই বুঝা যাবে, যখন তার পাপের কারণে তাকে ঘৃণা করা হবে। তাতে সে তওবা করে ফিরে আসতে পারে। নইলে পাপী হওয়া সত্তে¡ও তাকে ভালবাসলে সে কখনোই তওবা করবে না এবং পাপ ও পূণ্যে কোন ভেদাভেদ থাকবে না বরং প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন হলো ফাসেক-মুনাফিকদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা এবং সত্যের পক্ষে সমর্থন ও মিথ্যার বিপক্ষে ক্রোধ প্রকাশ করা।
হিংসুক থেকে বাঁচার পথ
ক্ষমতা থাকলে প্রতিরোধ করা। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম মদীনার ইহুদী গোত্রগুলির বিরুদ্ধে করেছিলেন এবং অবশেষে তাদেরকে মদীনা থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। সত্য প্রকাশ করে দেওয়া এবং হিংসুক ব্যক্তি বা দলকে এড়িয়ে চলা ও তাদের শাস্তির বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত করা। যেমন আল্লাহ হিংসুক ইহুদী সম্পর্কে বলেন, ‘তোমরা তাদের ক্ষমা কর ও উপেক্ষা করে চলো যতক্ষণ না আল্লাহ ¯^ীয় আদেশ নিয়ে আগমন করেন।
ভালোর প্রতি হিংসা
মানুষ অনেক সময় ভালোর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। যেমন নবী-রাসূলগণের প্রতি, কুরআন ও হাদীছের প্রতি, ইসলামের প্রতি, সমাজের সত্যসেবী দ্বীনদারগণের প্রতি এবং বিশেষ করে সমাজ সংস্কারক মুত্তাক্বী আলেমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা পাপাচারী মানুষের ¯^ভাবগত বিষয়। যেমন-
(ক) সৃষ্টির সূচনায় প্রথম পাপ ছিল আদম (আঃ)-এর প্রতি ইবলীসের হিংসার পাপ। আদমের উচ্চ সম্মান দেখে সে হিংসায় জ্বলে উঠেছিল। তাকে আদমের প্রতি সম্মানের সিজদা করতে বলা হলে সে করেনি। বরং যুক্তি দেখিয়ে বলেছিল আমি আগুনের তৈরী ও সে হলো মাটির তৈরী। অতএব আগুন কখনো মাটিকে সিজদা করতে পারে না। এ যুক্তি দেখিয়ে সে আল্লাহর হুকুম মানতে অ¯^ীকার করে ও অহংকার করে। ফলে সে জান্নাত থেকে চিরকালের মত বিতাড়িত হয়।
(খ) আদম-পুত্র কাবীল তার ভাই হাবীলকে হত্যা করে হিংসা বশে। কারণ হাবীল ছিল মুত্তাকী পরহেযগার ও শুদ্ধ হৃদয়ের মানুষ। সে আল্লাহকে ভালবেসে তার সর্বোত্তম দুম্বাটি আল্লাহর ওয়াস্তে কুরবানীর জন্য পেশ করে। অথচ তার কৃষিজীবী ভাই ক্বাবীল তার ক্ষেতের সবচেয়ে খারাব ফসলের একটা অংশ কুরবানীর জন্য পেশ করে। ফলে আল্লাহ তারটা কবুল না করে হাবীলের কুরবানী কবুল করেন এবং আসমান থেকে আগুন এসে তা উঠিয়ে নিয়ে যায়। এতে ক্বাবীল হিংসায় জ্বলে ওঠে ও হাবীলকে হত্যা করে।
(গ) ইহুদীরা মুসলমানদের হিংসা করে তাদের নিকট শেষনবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের কারণে। কেননা ইহুদীরা ভেবেছিল শেষনবীর আগমন হবে তাদের মধ্য থেকে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা ক্ষেপেছিল।
(ঘ) আবু জাহেল শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লামকে সত্য বলে ¯^ীকার করেও মেনে নেয়নি তার বনু মখযূম গোত্রে জন্ম না হয়ে বনু হাশেম গোত্রে জন্ম হওয়ার কারণে। এভাবে ভাল-র প্রতি হিংসার ইতিহাস চিরন্তন। ঐসব হিংসুকরা নিজেদের হিংসা গোপন করার জন্য ভােলার বিরুদ্ধে নানাবিধ মিথ্যা রটনা করে। তাকে নানাবিধ কষ্ট দেয়, এমনকি দেশ ত্যাগে বাধ্য করে ও হত্যার চেষ্টা করে। যেমন শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধে তাঁর বিরোধীরা করেছিল। অথচ তিনি এজন্য আদৌ দায়ী ছিলেন না। যদিও প্রবাদ আছে যে, ‘এক হাতে তালি বাজে না’। অথচ নবী-রাসূলগণ ও তাঁদের নিখাদ অনুসারী নেককার মুমিনদের বিরুদ্ধে যাবতীয় ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত এক পক্ষীয় হয়ে থাকে। সকল যুগে এর অসংখ্য নযীর রয়েছে। বর্তমান যুগেও এমন নযীরের কোন অভাব নেই।
হিংসুকদের অনিষ্টকারিতা হতে বাঁচার জন্য দোয়া
যে কারণ হিংসুকদের অনিষ্টকারিতা হতে বাঁচার জন্য আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা করতে বলেছেন-‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই হিংসুকের অনিষ্টকারিতা হতে যখন সে হিংসা করে’। (ফালাক্ব : ৫) যে সমাজে হিংসার প্রসার যত বেশী, সে সমাজে অশান্তি তত বেশী। সমাজে অতক্ষণ যাবত কল্যাণ ও শান্তি বিরাজ করে, যতক্ষণ সেখানে হিংসার প্রসার না ঘটে। হযদও যামরাহ বিন ছা‘লাবাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘মানুষ অতক্ষণ কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তারা পরস্পরে হিংসা না করবে’।
হিংসার পরিণাম
হিংসুক ব্যক্তি অন্যকে ক্ষতি করার আগে সে নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কেননা শুরুতেই সে হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে। হিংসা দূর না হওয়া পর্যন্ত এটাই তার জন্য স্থায়ী দুনিয়াবী শাস্তি। তার চেহারা সর্বদা মলিন থাকে। তার সাথে তার পরিবারে হাসি ও আনন্দ থাকে না। অন্যের ক্ষতি করার চক্রান্তে ও ষড়যন্ত্রে সে সর্বদা ব্যস্ত থাকে। প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে সে সর্বদা ত্রস্ত ও ভীত থাকে। নিশুতি রাতে বাঁশ ঝাড়ে কঞ্চির শব্দে জিনের ভয়ে হার্টফেল করার মত হিংসুক ব্যক্তি সর্বদা কল্পিত শত্রুর ভয়ে শংকিত থাকে। তার অন্তর সদা সংকুচিত থাকে। তারই মত শঠেরা তার বন্ধু হয়। ফলে সৎ সংসর্গ থেকে সে বঞ্চিত হয়। ঘুণ পোকা যেমন কাঁচা বাঁশকে ভিতর থেকে কুরে কুরে খায়, হিংসুক ব্যক্তির অন্তর তেমনি হিংসার আগুন কুরে কুরে খায়। এক সময় সে ধ্বংস হয়ে যায়, যেমন ঘুণে ধরা বাঁশ হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে যায়। এভাবে দুনিয়ায় সে এসি ঘরে শুয়ে থেকে হিংসার আগুনে জ্বলে-পুড়ে মরে। আর মৃত্যুর পরে তাকে গ্রাস করে জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন। দুনিয়ায় সে যেমন ছিল সর্বদা মলিন চেহারার অসুখী মানুষ, আখেরাতেও সে উঠবে তেমনি মলিন চেহারায় অধোমুখি হয়ে।
হযরত যুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন ‘তোমাদের মধ্যে পিপীলিকার ন্যায় প্রবেশ করবে বিগত উম্মতগণের রোগ। আর তা হলো হিংসা ও বিদ্বেষ। যা হলো ছাফকারী। ‘আমি বলিনা যে চুল ছাফ করবে, বরং তা দ্বীনকে ছাফ করে ফেলবে’। অর্থাৎ ক্ষুর ও ব্লেড যেমন চুল ছাফ করে দেয়।
হিংসা ও বিদ্বেষ দ্বীনকে বিদূরিত করে দেয়
অন্তরে হয় ঈমান থাকবে, নয় হিংসা থাকবে। ঈমানদারের অন্তরে হিংসা থাকবে না, হিংসুকের অন্তরে ঈমান থাকবে না। মুমিন কখনো হিংসুক নয়, হিংসুক কখনো মুমিন নয়। অর্থাৎ পূর্ণ মুমিন নয়। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘কোন বান্দার অন্তরে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হতে পারে না’।
হিংসুকদের চটকদার যুক্তি
হিংসুক ব্যক্তি তার চাকচিক্যপূর্ণ কথা ও আকর্ষণীয় যুক্তির মাধ্যমে সত্যকে মিথ্যা বলে ও মিথ্যাকে সত্য বলে। এ বিষয়ে খ্যাতনামা তাবেঈ ইকরিমা বিগত যুগে বনু ই¯্রাঈলের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, তাদের মধ্যে তিনজন বিখ্যাত কাযী বা বিচারপতি ছিলেন। পরে তাদের একজন মারা গেলেন। তখন অন্যজন তার স্থলাভিষিক্ত হলেন। তিনি বিচারকার্য চালাতে থাকলেন। এমন সময় একদিন আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে পাঠালেন। যিনি ঘোড়ায় চড়ে একজন ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। যে বাছুরসহ তার গাভীকে পানি পান করাচ্ছিল। ফেরেশতা বাছুরটিকে তার দিকে ডাক দিলেন। তাতে বাছুরটি ঘোড়ার পিছে পিছে চলল। তখন ঐ লোকটি ছুটে এসে তার বাছুরটিকে ফিরিয়ে নিতে চাইল এবং বলল, হে আল্লাহর বান্দা! এটি আমার বাছুর এবং আমার এই গাভীর বাচ্চা। ফেরেশতা বললেন, বরং ওটা আমার বাছুর এবং আমার এই ঘোড়ার বাচ্চা। কেউ দাবী না ছাড়লে অবশেষে তারা একজন কাযীর কাছে গেলেন। বাছুরের মালিক বলল, এই লোকটি আমার বাছুরের পাশ দিয়ে যাবার সময় তাকে ডাকল, আর বাছুরটি তার পিছে পিছে চলে গেল। অথচ বাছুরটি আমার। কিন্তু এখন সে আমাকে ফেরৎ দিচ্ছে না। উত্তরে বিবাদী ফেরেশতা বললেন এমতাবস্থায় যে, তার হাতে তিনটি বেত ছিল। যার অনুরূপ কোন বেত সচরাচর দেখা যায় না। তার মধ্যে একটি বেত তিনি বিচারকের হাতে দিয়ে বললেন, আপনি এটা দিয়ে আমাদের মাঝে ফায়ছালা করুন। বিচারক বললেন, কিভাবে? বিবাদী বললেন, আমরা বাছুরটাকে ঘোড়া ও গাভীর পিছনে ছেড়ে দিব। অতঃপর বাছুরটি যার পিছে পিছে যাবে, সেটি তার হবে। বিচারক সেটাই করলেন। দেখা গেল যে, বাছুরটি ঘোড়ার পিছু নিল। তখন বিচারক বাছুরটি ঘোড়ার বলে রায় দিলেন। বাছুরের মালিক এ রায় মানল না। সে বলল, আমি আরেকজন বিচারকের কাছে যাব। সেখানে গিয়ে উভয়ে পূর্বের মত বাছুরটিকে নিজের বলে দাবী করল এবং আগের মত যুক্তি প্রদর্শন করল। সেখানেও একই রায় হলো। তখন বাদী তাতে রাযী না হয়ে তৃতীয় বিচারকের কাছে গেল। বিবাদী তাকে এবার তৃতীয় বেতটি দিলেন। কিন্তু তিনি তা নিতে অ¯^ীকার করলেন এবং বললেন, আমি আজকে তোমাদের বিচার করব না। তারা বলল, কেন করবেন না? তিনি বললেন, কেননা আমি আজ ঋতুবতী। বিবাদী ফেরেশতা একথা শুনে বলে উঠলেন, সুবহানাল্লাহ! পুরুষ লোক কখনো ঋতুবতী হয়? তখন বিচারক বললেন, ঘোড়া কখনো গরুর বাছুর জন্ম দেয়? অতঃপর তিনি বাছুরটিকে গাভীর মালিককে দিয়ে দিলেন। এবার ফেরেশতা বললেন, আল্লাহ তোমাদের পরীক্ষা করেছেন। তিনি তোমার উপর খুশী হয়েছেন এবং ঐ দুই বিচারকের উপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন’।
হিংসুকের পরিণতি
হিংসুক ও বিদ্বেষী মানুষ কোন অবস্থায় শান্তি পায় না। তার কোন সৎবন্ধু জোটে না। সে কখনোই সুপথপ্রাপ্ত হয় না। তার হৃদয়-মন থাকে সর্বদা জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডের মত। যেখান থেকে সর্বদা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র, ধোঁকা ও মিথ্যাচারের দুর্গন্ধযুক্ত স্ফুলিঙ্গ সমূহ বের হয়। সে সর্বদা নিজেকে বিজয়ী ভাবে। অথচ সেই-ই সবচেয়ে পরাজিত। সে নিজেকে বীর ভাবে, অথচ সেই-ই সবচেয়ে ভীরু। ভীত-চকিত সর্পের ন্যায় সে তার কল্পিত প্রতিপক্ষকে ছোবল মারার জন্য সর্বদা ফণা উঁচিয়ে থাকে। এভাবে আমৃত্যু সে হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে। ফলে হিংসা-বিদ্বেষ অন্যকে হত্যা করার আগে নিজেকে হত্যা করে। এদিক দিয়ে বিচার করলে হিংসাকেই বড় ন্যায় বিচারক বলতে হয়। কেননা সে সর্বাগ্রে হিংসুককে শাস্তি দেয়, অতঃপর অন্যকে। হিংসুক ব্যক্তি শত চেষ্টায়ও তা গোপন রাখতে পারে না। কেননা শত্রুকে ঘায়েল করার পূর্বে সে নিজেই ঘায়েল হয়। যার নমুনা তার চেহারায় ও কর্মে ফুটে ওঠে। সৎকর্মশীল ঈমানদারগণ কখনো কাউকে হিংসা করেন না। কারু প্রতি বিদ্বেষী হন না। তারা সর্বদা অন্যের হিংসার শিকার হন। তারা আসামী হন, কিন্তু সহজে বাদী হন না। যুগে যুগে এটাই ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। এজন্য প্রবাদ বাক্য হয়ে রয়েছে,‘ইমাম বুখারী কি হিংসুকের হামলা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করতে পেরেছেন’? এর পরেও প্রকৃত মুমিনগণ পাল্টা হিংসা করেন না। বিদ্বেষ করেন না। বরং প্রতিপক্ষের হেদায়াত কামনা করেন।
হৃদয়কে হিংসামুক্ত রাখার উপায়
হিংসা হলো শয়তানী আমল। শয়তান সর্বদা মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। তাই তার হাত থেকে বাঁচার জন্য শয়তানের প্রতি তীব্র ঘৃণা থাকা এবং তার বিরুদ্ধে প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকা আবশ্যক। সেইসাথে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে সর্বদা ছালাত শেষে বা ঘুমাতে যাবার সময় বা যেকোন সময় সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়া। এছাড়া নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়া আবশ্যক। আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদীকে শিখিয়ে দিয়েছেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ও আমাদের সেইসব ভাইকে তুমি ক্ষমা কর। যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আর তুমি আমাদের অন্তরে মুমিনদের বিরুদ্ধে কোনরূপ বিদ্বেষ সঞ্চার করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয়ই তুমি স্নেহশীল ও দয়াবান’ (হাশর : ১০)। মুসলমানকে আল্লাহর পথে সংগ্রামে পরস্পরকে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় থাকতে বলা হয়েছে (ছফ : ৪) । এটা কেবল তখনই সম্ভব, যখন হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত মনে আমরা পরস্পরকে নিঃ¯^ার্থভাবে ভালোবাসতে পারব এবং এর বিনিয়ে স্রেফ আল্লাহর নিকটে পারিতোষিক কামনা করব।
হিংস-বিদ্বেষ সর্ম্পকচ্ছেদ করে
হিংসা মানুষের অন্তরের দুরারোগ্য ব্যাধি, যা সামাজিক স¤প্রীতি বিনষ্ট করে সমাজে নানা ফেতনা ফাসাদ সৃষ্টি করে। সর্বোপরি তা সমাজের স¤প্রীতির ভীত নষ্ট করে দেয়। হিংসা-বিদ্বেষের ফলে মানুষ কারো বিরুদ্ধে কুচক্রান্ত, ষড়যন্ত্র এমনকি সম্পর্কচ্ছেদ করতেও দ্বিধা করে না। তাই যতক্ষণ মানুষের অন্তর বিদ্বেষমুক্ত না হয় ততক্ষণ তার কর্মও অন্যায়মুক্ত হয় না।
হিংসা-বিদ্বেষ সমাজে অন্যায়-অপকর্ম ও পাপাচার ছড়ায়
হিংসা-বিদ্বেষ সমাজে অন্যায়-অপকর্ম ও পাপাচার ছড়ায়। হিংসার কারণে সমাজের মানুষ অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে। সর্বপ্রথম পাপ করে ইবলিস। সেটা ছিল হিংসার কারণে। ইবলিসকে বলা হলো আদম (আ:)-কে সম্মানের সিজদা দিতে। আদম (আ:)-এর উচ্চমর্যাদা দেখে ইবলিস হিংসায় জ্বলে ওঠে এবং তাকে সিজদা করতে অ¯^ীকার করে। ফলে সে জান্নাত থেকে চিরদিনের জন্য বিতাড়িত হয়। অনুরূপভাবে আদমপুত্র কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে হিংসার বশবর্তী হয়ে। হাবিল ছিল পরহেজগার ও মুত্তাকি। সে আল্লাহর ভালোবাসায় তার সবচেয়ে ভালো দুম্বাটি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে। কাবিল তার ক্ষেতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ফসলের একটা অংশ আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি দেয়। আল্লাহ তায়ালা কাবিলের কোরবানি কবুল না করে হাবিলের কোরবানি কবুল করেন এবং আসমান থেকে আগুন এসে তা উঠিয়ে নেয়। এতে কাবিল হিংসায় জ্বলে ওঠে এবং হাবিলকে হত্যা করে।
হিংসা-বিদ্বেষ মুনাফিকের চরিত্র।
হিংসা-বিদ্বেষ মুনাফিকের চরিত্র। কোনো মুমিন অন্য মুমিনের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ রাখতে পারে না। এটি মুনাফিকদের একটি বদ ¯^ভাব। মুনাফিকদের হিংসা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমাদের কোনো কল্যাণ স্পর্শ করে তাতে তারা অসন্তুষ্ট হয় আর যদি তোমাদের কোনো অকল্যাণ হয় তাতে তারা আনন্দিত হয়’। (ইমরান : ১২০) এই দু’টি ¯^ভাবের মধ্যে মুমিনের গুণ হলো সে সর্বদা মানুষের কল্যাণ চাইবে, শুভ কামনা করবে। অন্যের অকল্যাণ কামনা করে কখনো মুমিন হওয়া যায় না। হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে অন্যের জন্য সেই বস্তুই ভালো না বাসবে যে বস্তু সে নিজের জন্য ভালোবাসে।’ কারণ মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সূরা হুজরাতের ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই’। আর সত্যিকার অর্থে ভাই ভাইয়ের জন্য এমন বস্তু কামনা করতে পারে না যা সে নিজের জন্য অপছন্দ করে। অপর দিকে মুনাফিকের ¯^ভাব হলো, সে সর্বদা অন্যের অকল্যাণ চায়। অন্যের কোনো ভালাই দেখলেই সে অ¯^স্তি বোধ করে। আর এটাকেই হাদিসের পরিভাষায় হিংসা বলা হয়েছে। ‘আল্লাহ তায়ালা অন্যকে যে নেয়ামত দান করেছেন তার প্রতি হিংসা করা এবং ওই নেয়ামতের ধ্বংস কমনা করা’ এরই নাম হাসাদ বা হিংসা। সুতরাং বোঝা গেল হিংসার সাথে নেফাকের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। হিংসার সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো, হিংসুক ক্রমাš^য়ে মুনাফিক হয়ে যায়। আর মুনাফিকদের অবস্থান হবে জাহান্নামের সর্বনি¤œ স্তরে। সুতরাং প্রকৃত মুমিন কখনো কারো প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে না বরং মুমিনের হৃদয় থাকবে উদার। সে সবাইকে ভালোবাসবে। ব্যক্তিগত কারণে কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না। ভালোবাসা ও বিদ্বেষের মানদণ্ড হলো ঈমান। যার মাঝে ঈমান আছে তাকে ভালোবাসবে। যার মাঝে ঈমান নেই তার সাথে সামাজিক সৌজন্য বজায় রাখলেও তাকে ভালোবাসা যাবে না। হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে আল্লাহ তায়ালার জন্য অপরকে ভালোবাসে আল্লাহ তায়ালার জন্য বিদ্বেষ করে, আল্লাহ তায়ালার জন্য দান করে এবং তার জন্য বিরত থাকে সেই পূর্ণ মুমিন।’ অন্য হাদিসে আছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো, শ্রেষ্ঠ মানুষ কে? তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক শুদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী এবং সত্যভাষী।’ লোকেরা বলল, সত্যভাষীকে তো আমরা চিনতে পারি, কিন্তু শুদ্ধ হৃদয়ের ব্যক্তিকে আমরা কিভাবে চিনব?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যার মাঝে আল্লাহ ভীতি থাকবে, যার হৃদয় হবে পরিচ্ছন্ন, যাতে থাকবে না পাপ-পঙ্কিলতা এবং হিংসা-বিদ্বেষ।’ সুতরাং হিংসার মতো মানবতাবিধ্বংসী, সমাজবিধ্বংসী ব্যাধি থেকে আমাদের সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।
হিংসা মানুষের অন্তরের দুরারোগ্য ব্যাধি
হিংসা মানুষের অন্তরের দুরারোগ্য ব্যাধি। হিংসা-বিদ্বেষ সমাজে অন্যায়, অপকর্ম ও পাপাচার ছড়ায়। হিংসার কারণে সমাজে মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম পাপ করে ইবলিস। সেটা ছিল হিংসার কারণে। ইবলিসকে বলা হলো আদম (আ:) কে সিজদা দিতে। আদম (আ:) এর উচ্চ মর্যাদা দেখে ইবলিস হিংসায় জ্বলে ওঠে এবং তাকে সিজদা করতে অ¯^ীকার করে। ফলে সে জান্নাত থেকে চিরদিনের জন্য বিতাড়িত হয়। অনুরূপভাবে আদমপুত্র কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে হিংসার বশবর্তী হয়ে। হাবিল ছিল পরহেজগার ও মুত্তাকি। সে আল্লাহর ভালোবাসায় তার সবচেয়ে ভালো দুম্বাটি আল্লাহর নামে কোরবানি করে। কাবিল তার ক্ষেতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ফসলের একটা অংশ আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি দেয়। আল্লাহতায়ালা কাবিলের কোরবানি কবুল না করে হাবিলের কোরবানি কবুল করেন এবং আসমান থেকে আগুন এসে তা উঠিয়ে নেয়। এতে কাবিল হিংসায় জ্বলে ওঠে এবং হাবিলকে হত্যা করে। পরবর্তীকালে ইহুদিরা বিদ্বেষী হয়ে ওঠে মুসলমানদের ওপর এ হিংসায় যে, শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন মুসলমানদের মধ্যে আগমন করল। তাদের ধারণা ছিল, শেষ নবী তাদের মধ্য থেকে আগমন করবে। শেষ নবী তাদের মধ্য থেকে আগমন না করার হিংসায় তারা বহু মুসলমানকে ঈমান আনার পরও কাফের বানাতে চেষ্টা করেছে। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘আহলে কিতাবদের অনেকে চায় ঈমান আনার পর তোমাদের কুফরিতে ফিরিয়ে নিতে, তাদের কাছে সত্য প্রকাশ হওয়ার পরও, শুধু বিদ্বেষবশত তারা এ অপকর্ম করে।’ দেখা যাচ্ছে, যুগে যুগে মানুষ হিংসার কারণেই অপরাধপ্রবণ হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসাবিদ্বেষ কর না, ষড়যন্ত্র কর না এবং সম্পর্ক ছিন্ন কর না। বরং তোমরা আল্লাহতায়ালার বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।’
জান্নাতে যাওয়ার জন্য হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত সল্প আমলই যেথেষ্ট
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে (মসজিদে নববীতে) উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমাদের নিকট এখন একজন জান্নাতী মানুষ আগমন করবে। (বর্ণনাকারী বলেন) অতপর একজন সাহাবী আগমন করলেন। তাঁর দাড়ি থেকে সদ্যকৃত অযুর পানির ফোটা ঝরে পড়ছিল। তিনি তার বাম হাতে জুতা নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তার পরদিনও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে অনুরূপ কথা বললেন এবং প্রথমদিনের মতো সেই সাহাবী আগমন করলেন। যখন তৃতীয় দিন হল, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই কথা আবার বললেন এবং যথারীতি সেই সাহাবী পূর্বের অবস্থায় আগমন করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আলোচনা শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই সাহাবীর অনুগামী হলেন। তিনি তাকে বললেন, আমি আমার পিতার সাথে ঝগড়া করে শপথ করেছি, তিনদিন পর্যন্ত তার ঘরে যাব না। এই তিনদিন আমাকে যদি আপনার ঘরে থাকার সুযোগ করে দিতেন, তবে আমি সেখানে থাকতাম। তিনি বললেন, হ্যাঁ, থাকতে পার। বর্ণনাকারীহযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, তিনি তার সাথে সেখানে সেই তিন রাত অতিবাহিত করলেন। তিনি তাঁকে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়তেও দেখলেন না। তবে তিনি যখন ঘুমাতেন, বিছানায় পার্শ্ব পরিবর্তন করতেন তখন আল্লাহর যিকির করতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তার মুখ থেকে কিন্তু ভালো কথা ছাড়া কোনোমন্দ কথা শুনিনি। যখন তিনদিন অতিবাহিত হয়ে গেল এবং তার আমলকে সাধারণ ও মামুলি মনে করতে লাগলাম, তখন তাকে বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আপনার সম্পর্কে তিনবার একথা বলতে শুনেছি যে, এখনই তোমাদের তিনি বললেন, তুমি যা দেখেছ, ঐ অতটুকুই। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন আমি ফিরে আসছিলাম তখন তিনি আমাকে ডাকলেন। তারপর বললেন, আমার আমল বলতে ঐ অতটুকুই, যা তুমি দেখেছ। তবে আমি আমার অন্তরে কোনোমুসলমানের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি না এবং আল্লাহতায়ালা কাউকে কোনো নেয়ামত দান করলে সেজন্য তার প্রতি হিংসা রাখি না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ গুণই আপনাকে এত বড় মর্যাদায় উপনীত করেছে। আর সেটাই আমরা করতে পারি না। (মুসনাদে বাযযার, আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, আততারগীব ওয়াত তারহীব) হাদীসের কিছু ফাওয়ায়েদ উক্ত হাদীসে আগন্তুক জান্নাতী সাহাবীর নাম অনুচ্চারিত হলেও তিনি হলেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, যিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবীর একজন। এখানে তার ফযীলত ও অনন্য মর্যাদার পাশাপাশি তার বিশেষ একটি গুণ ও অনুপম ¯^তন্ত্র বৈশিষ্টের কথা আলোচনা করা হয়েছে। উক্ত হাদীসটিতে মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় আগন্তুক সাহাবীকে ‘একজন আনছারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা পরবর্তী কোনো বর্ণনাকারীর ভুল। কারণ অন্যান্য বর্ণনাসূত্রে স্পষ্টভাবেইহযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নাম উল্লেখ রয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের সম্মুখে এক জান্নাতী সাহাবীর কথা বলে নেক্কার মানুষের প্রশংসার মাধ্যমে সৎকর্ম ও উত্তম আচরণের প্রতি জোর তাকীদ দিয়েছেন এবং তাদেরকে সেই মহৎ ¯^ভাব ও বিশেষ গুণ অর্জন করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। মুমিনদের করণীয় হলো : মুত্তাকী ও নেক্কার লোকদের আমল আগ্রহ ও মনোযোসের সাথে পর্যবেক্ষণ করা এবং অনুসরণ-অনুকরণের নিমিত্তে সেই গুণ অর্জন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা। প্রয়োজনে তাদের নিকট অবস্থান করে তাদের সান্নিধ্য গ্রহণ করা। যেমন আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তারা ছিলেন এমন লোক যাদেরকে আল্লাহ হেদায়াত দান করেছেন। সুতরাং তুমিও তাদের পথের অনুসরণ করো। (আনআম : ৯০) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এই প্রেরণা থেকেই ঐ সাহাবীর নিকট অবস্থান করেছেন। আর হাদীসের সেই সুস্পষ্ট বক্তব্য, যা সহজেই বোধগম্য, জান্নাত লাভের অধিকারী নিষ্কলুষ আত্মার ফযীলত। আত্মশুদ্ধি করা, অন্তরকে পাক-পবিত্র রাখা এবং হিংসা-বিদ্বেষ ও অন্যান্য আত্মার ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখা হচ্ছে এমন একটি গুণ, যা মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার শীর্ষ চূড়ায় নিয়ে যায়, তথা জান্নাত লাভের উপযোগী বানায়। কারণ, মানুষের অন্তর হল ঈমান-ইখলাস ও তাক্বওয়ার স্থান। সুতরাং কোনোখাঁটি মুমিনের অন্তরে ঈমান-তাক্বওয়া ও হিংসা-বিদ্বেষ কখনো একত্র হতে পারে না। এ জন্যই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামহযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছেন, হে বৎস! কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা ব্যতীত তুমি যদি সকাল-সন্ধ্যা অতিবাহিত করতে (জীবন কাটাতে) সক্ষম হও, তাহলে তাই করো।
হিংসা-বিদ্বেষ সর্ম্পকে কোরআনেরা ভাষ্য
১.আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন, সে জন্য কি তারা তাদের ঈর্ষা করে? (নিসা : ৫৪)
২.আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই, যখন সে হিংসা করে। (ফালাক : ৫)
৩.কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ সকলে ভাই ভাই। (হুজুরাত : ১০)।
৪.আহলে কিতাবদের অনেকে চায় ঈমান আনার পর তোমাদেরকে কুফরিতে ফিরিয়ে নিতে, তাদের নিকট সত্য প্রকাশ হওয়ার পরও, শুধু বিদ্বেষবশত তারা এ অপকর্ম করে। (বাকারা : ১০৯)
৫.নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। (বাক্বারাহ : ১০৯)
৬.মুনাফিকদের অবস্থান হবে জাহান্নামের সর্বনি¤œ স্তরে এবং তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী পাওয়া যাবে না। (নিসা : ১৪৫)
৭.মোমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। (হুজরাত : ১০)
৮.যদি তোমাদের কোনো কল্যাণ স্পর্শ করে তাতে তারা অসন্তুষ্ট হয় আর যদি তোমাদের কোনো অকল্যাণ হয় তাতে তারা আনন্দিত হয়’। (ইমরান : ১২০)
৯. অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে ধূলি ধূসরিত’ ‘কালিমালিপ্ত’ তারা হ’ল অবিশ্বাসী পাপিষ্ঠ। (আবাসা : ৪০-৪২)। ১০.তাদেরকে দেখে যেমন দুনিয়াতে চেনা যেত। আখেরাতেও তেমনি চেনা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেন,‘অপরাধীদের চেনা যাবে তাদের চেহারা দেখে। অতঃপর তাদেরকে পাকড়াও করা হবে কপালের চুল ও পা ধরে। (রহমান : ৪১)
১০.হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ও আমাদের সেইসব ভাইকে তুমি ক্ষমা কর। যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আর তুমি আমাদের অন্তরে মুমিনদের বিরুদ্ধে কোনরূপ বিদ্বেষ সঞ্চার করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয়ই তুমি স্নেহশীল ও দয়াবান’। (হাশর : ১০)
১১.মুসলমানকে আল্লাহর পথে সংগ্রামে পরস্পরকে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় থাকতে বলা হয়েছে। (সফ : ৪)
হিংসা-বিদ্বেষ সর্ম্পকে হাদীসের ভাষ্য
১.রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে বেঁচে থাকবে, কেননা এরূপ ধারণা জঘন্যতম মিথ্যা। আর কারও দোষ অনুসন্ধান করবে না, কারও গোপনীয় বিষয় অšে^ষণ করবে না, একে অন্যকে ধোঁকা দেবে না, পরস্পর হিংসা করবে না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করবে না, পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ করবে না, বরং তোমরা সবাই এক আল্লাহর বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (সহীহ ্আল বুখারি, সহীহ মুসলিম)
২.হিংসা-বিদ্বেষের কঠিন পরিণতি সম্বন্ধে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার মানুষের আমলগুলো পেশ করা হয় এবং সব মুমিন বান্দার গুনাহখাতা মাফ করে দেওয়া হয়; কিন্তু যাদের পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও দুশমনি আছে, তাদের ক্ষমা করা হয় না। তাদের সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন : তাদের ছেড়ে দাও, যেন তারা ফিরে আসে অর্থাৎ মিলে যায়।’ (সহীহ মুসলিম)
৩.রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মুণ্ডনকারী (ধ্বংসকারী) রোগ ঘৃণা ও হিংসা তোমাদের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে আসছে। আমি চুল মুণ্ডনের কথা বলছি না, বরং তা হলো দ্বীনের মুণ্ডনকারী।’ (জামে আত তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)
৪.নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘তোমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিবৃত্ত থাকবে। কেননা, হিংসা মানুষের নেক আমল বা পুণ্যগুলো এমনভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন লাকড়িকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।’ (আবু দাউদ)
৫.রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘হে আলী জেনে রাখ! ভয়, কৃপণতা ও লোভ একই প্রকারের, আর তাদের মূলে হল খারাপ ধারণা পোষন করা’। (এলালুশ শারায়ে, মুন্তাখাবে মিযানুল হিকমাহ)
৬.ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন : আমিরুল মু’মিনীন (আঃ) বলতেন যে, হে আদমের সন্তানেরা! যদি তুমি দুনিয়া হতে পরিমাণ মত চাও তাহলে সেটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যদি পরিমাণের চেয়ে বেশী চাও, সমস্ত দুনিয়াও তোমার জন্য যথেষ্ঠ নয়’। (আল কাফী)
৭.ইমাম আলী (আঃ) বলেছেন : ‘সেই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা ধনি যে লোভের বন্দি নয়’।
৮.ইমাম আলী (আঃ) বলেছেন : ‘সেই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা ধনি যে লোভের বন্দি নয়’।
৯.ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন : ‘লোভী দু’টি উৎকৃষ্ট গুণ হতে বঞ্চিত, ফলশ্রæতিতে সে দু’টি দোষের অধিকারী; সে পরিতৃপ্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত ফলে প্রশান্তিকে হাতছাড়া করেছে, [আর] সন্তুষ্টি হতে বঞ্চিত ফলে বিশ্বাসকে খুইয়েছে’।
১০.হযরত লোকমান (আঃ) ¯^ীয় পুত্রকে বললেন : ‘হিংসুকের তিনটি চিহ্ন রয়েছে : পিঠ-পিছনে গীবত করে, সামনা সামনি তোষামোদ করে এবং অন্যের বিপদে আনন্দিত হয়।’ (আল খেসাল)
১১.ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন : ‘একে অপরের সাথে হিংসা করা থেকে বিরত থাকো, কেননা হিংসা হল কুফরের ভিত্তি ¯^রূপ’। (আল কাফী
১২.তিনি আরো বলেন : ‘হিংসা ও বিদ্বেষ মানুষের কোন উপকারে আসে না’। (প্রাগুক্ত)
১৩.ইমাম আলী (আঃ) বলেছেন : ‘হিংসা ও বিদ্বেষকারী শোকার্ত হয়’। (মেরাজুস সায়াদাহ)
১৪.ইমাম বাকির (আঃ) বলেছেন : ‘নিশ্চয়ই যেভাবে আগুন কাঠকে ভক্ষণ করে [জ্বালিয়ে নিঃশ্বেষ করে], হিংসাও ঈমানকে ভক্ষণ করে’। (আল কাফী)
১৫.হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে আল্লাহর জন্য অপরকে ভালবাসে ও আল্লাহর জন্য বিদ্বেষ করে, আল্লাহর জন্য দান করে ও আল্লাহর জন্য বিরত থাকে, সে তার ঈমানকে পূর্ণ করল’।
১৬.একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো শ্রেষ্ঠ মানুষ কে? তিনি বললেন,‘প্রত্যেক শুদ্ধহৃদয় ও সত্যভাষী ব্যক্তি’। লোকেরা বলল, সত্যভাষীকে আমরা চিনতে পারি। কিন্তু শুদ্ধহৃদয় ব্যক্তিকে আমরা কিভাবে চিনব? জবাবে তিনি বললেন, সে হবে আল্লাহভীরু ও পরিচ্ছন্ন হৃদয়; যাতে কোন পাপ নেই, সত্যবিমুখতা নেই, বিদ্বেষ নেই, হিংসা নেই’।
১৭.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,‘কোন বান্দার অন্তরে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হতে পারে না’।
১৮.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তাকে যুলুম করে না, লজ্জিত করে না, নিকৃষ্ট ভাবে না। তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে বলে তিনি নিজের বুকের দিকে তিনবার ইশারা করেন। অতঃপর বলেন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার অন্য মুসলিম ভাইকে নিকৃষ্ট ভাবে। মনে রেখ এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের জন্য হারাম হলো তার রক্ত, তার মাল ও তার ইযযত’।
১৯.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও মাল-সম্পদ দেখেন না। বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল’।
২০.হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা পরস্পরে বিদ্বেষ করো না, হিংসা করো না, ষড়যন্ত্র করো না ও সম্পর্ক ছিন্ন করো না। তোমরা পরস্পরে আল্লাহর বান্দা হিসাবে ভাই ভাই হয়ে যাও’।
হিংসা-বিদ্বেষ হল ঈমান-ইসলামের পরিপন্থী এমন অসৎ প্রবণতা, যা মানুষের নেকীকে ধ্বংস করে এবং জান্নাতের পথ হতে দূরে সরিয়ে দেয়। মানুষ যতক্ষণ হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকবে ততক্ষণ তারা কল্যাণের উপর অবিচল থাকবে। যদি আমাদের মাঝে এমন ধরণের ক্রুটি থাকে তবে আমাদের উচিত সেটাকে দূরে সরিয়ে দেয়া। আর যদি আমাদের মধ্যে বিদ্যমান না থাকে তবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং এই দোয়া করা যে, হে আল্লাহ্! এমন ধরণের ক্রুটি হতে আমাকে সদা রক্ষা কর। আল্লাহ আমাদের সকলকে পারস্পরিক হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের সবাইকে ভাই-ভাই হবার তাওফীক দিন। আমীন

You may also like