Home ইসলাম আয়াতুল কুরসী পড়ার ফযীলত

আয়াতুল কুরসী পড়ার ফযীলত

by Jafor Salah
0 comment

ক) হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি এই কাঠের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেছেন : যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর আয়তুল কুরসি পড়বে তার বেহেশতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ব্যতীত আর কোন বাধা নেই। আর যে ব্যক্তি শয়ন কালে এই আয়াতুল কুরসি পড়বে আল্লাহতায়ালা তার ঘর, তার প্রতিবেশীর ঘর এবং আশে পাশের আরও কিছু সংখ্যক ঘরকে নিরাপদে রাখবেন। (মেশকাত শরীফ)

খ) হযরত উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে আবু মুনযির! তুমি কি জান, মহান আল্লাহর গ্রন্থ (আল-কুরাআন) এর ভিতর তোমার যা মুখস্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) আয়াত কোনটি?’ আমি বললাম, ‘সেটা হচ্ছে আয়াতুল কুরসী’। সুতরাং তিনি আমার বুকে চাপর মেরে বললেন, ‘আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান তোমাকে ধন্য করুক’। (সহীহ মুসলিম)

(অর্থাৎ তুমি, নিজ জ্ঞানের বরর্কতে উক্ত আয়াতটির সন্ধান পেয়েছ, সে জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।)

গ) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বললেন : (একবার) রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমযানের যাকাত (ফিৎরার মাল-ধন) দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন। বস্তুতঃ (আমি পাহারা দিচ্ছিলাম ইত্যবসরে) একজন আগমনকারী এসে আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরলাম এবং বললাম, ‘তোকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পেশ করব’; সে আবেদন করল, আমি একজন সত্যিকারের অভাবী। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার উপর, আমার দারুন অভাব’; কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

সকালে (রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হলাম); রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে আবু হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচারন করেছে’? আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে তার অভাব ও (অসহায়) পরিবার-সন্তানের অভিযোগ জানাল। সুতরাং তার প্রতি আমার দয়াহলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম’; তিনি বললেন, ‘সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে’। আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আনুরুপ উক্তি শুনে সুনিশ্চিত হলাম যে, সে আবার আসবে। কাজেই আমি তার প্রতীক্ষায় থাকলাম। সে (পুর্ববৎ) এসে আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি বললাম, ‘অবশ্যই তোকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে পেশ করব’; সে বলল, ‘আমি অভাবী,পরিবারের দায়ত্ব আমার উপর, (আমাকে ছেড়ে দাও) আমি আর আসব না’; সুতরাং আমার মনে দয়া হল। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

সকালে উঠে (যখন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম তখন) রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘আবু হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচারণ করেছে’? আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! সে তার অভাব ও অসহায় সন্তানের-পরিবারের অভিযোগ জানাল। সুতরাং আমার মনে দয়া হলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম’; তিনি বললেন, ‘সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে’। সুতরাং তৃতীয়বার তার প্রতীক্ষায় রইলাম। সে (এসে) আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম ‘‘এবারে তাকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে হাযির করবই’; এটা তিনবারের মধ্যে শেষবার।

‘ফিরে আসবো না’ বলে তুই আবার ফিরে এসেছিস’’; সে বলল ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে এমন কতকগুলি শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন’; আমি বললাম ‘সেগুলি কী?’ সে বলল, ‘যখন তুমি (ঘুমাবার জন্য) বিছানাই যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করে (ঘুমাবে); তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না’। সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আবার সকালে (রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম); তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তোমার বন্দী কী আচারণ করেছে?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে বলল, ‘‘আমি তোমাকে এমন কতিপয় শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আমার কল্যাণ করবেন’’; বিধায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম’;

তিনি বললেন ‘‘সে শব্দগুলি কী?’’ আমি বললাম, ‘সে আমাকে বলল, ‘‘যখন তুমি বিছানাই (শোয়ার জন্য) যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুলল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ পড়ে নেবে’’; সে আমাকে আর বলল, “তার কারনে আল্লাহর তরফ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না’’। (এ কথা শুনে) তিনি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘শোনো ! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে। হে আবু হুরায়রা! তুমি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?’’ আমি বললাম, ‘জী না’; তিনি বললেন, ‘‘সে ছিল শয়তান’’। (সহীহ আল বুখারী)

ঘ) হযরত উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে আবু মুনযির! তুমি কি জান, মহান আল্লাহর গ্রন্থ (আল-কুরাআন) এর ভিতর তেমার যা মুখস্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) আয়াত কোনটি? আমি বললাম, ‘সেটা হচ্ছে আয়াতুল কুরসী’। সুতরাং তিনি আমার বুকে চাপর মেরে বললেন, ‘আবুল মুনযির! তেমার জ্ঞান তোমাকে ধন্য করুক’। (সহীহ মুসলিম)

ঙ) হযরত আবু উমাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনায় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতি ফরয নামাযের পর আয়াতুল করসী পাঠ করলে, সে পাঠকারী মু’মিন মৃত্যুর সাথে সাথেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে নাসায় ও তাবরানী)

চ) সহীহ বুখারী এর এক হাদীসে রাসূলে করীম সাল্লøাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা রাতে নিদ্রার জন্য বিছানায় যাও, তখন আয়তুল করসী পড়ে নাও। এরূপ করলে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য রক্ষী নিযুক্ত হয়ে যাবে এবং শয়তান তোমাদের কাছে আসতে পারবে না।

ছ) হযরত আবু আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর ‘আয়তুল করসী’ শাহিদাল্লাহ (সূরা আল-ইমরান-৩ আয়াত : ১৮ আয়াত) এবং কুলিল্লাহুম্মা গাইরি হিসাব পর্যন্ত পাঠ করে আল্লাহতায়ালা তার গুনাহ ক্ষমা করে তাকে জান্নাতে স্থান দিবেন। এছাড়া তার সত্তরটি প্রয়োজন মিটাবেন, এর সর্বনিম্ম প্রয়োজন হবে ‘মাগফিরাত’ (তাফসীরে রূহুল মা’আনী)

জ) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক জিনিসের একটি চূড়া বা শিখর থাকে। আর আল-কুরআনের শিখর হচ্ছে সূরা বাকারা। এর একটি আয়াত আল-কুরআনের সমস্ত আয়াতের সর্দার, আর তা হচ্ছে আয়াতুল কুরসী। (জামে আত তিরমিযি)

( Benefit of ayatul kursi )

You may also like