Home ইসলাম পবিত্র কোরআনের আলোকে রমজান

পবিত্র কোরআনের আলোকে রমজান

by admin
0 comment

ইসলাম হলো একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যাতে আমরা সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, ধর্ম প্রভৃতি সকল কিছুরই রূপায়ন দেখতে পাই। কোনো জীবনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান ও আইন-কানুন অত্যাবশ্যক। পবিত্র কুরআন এ জীবনব্যবস্থা পরিচালনার মৌলিক আইন-কানুন ও বিধি বিধান ব্যতীত আর কিছুই নয়। সাধারণ জীবনব্যবস্থা পরিচালনা ছাড়াও কুরআনের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
প্রতিদিন পাঁচবার নামাজে পবিত্র কুরআনের অংশ বিশেষ মূল আরবীতে পাঠ করতে হয়।এ জন্য ইসলাম যেখানেই গিয়েছে, আরবীতে গ্রন্থিত এর কোষগ্রন্থটি আর এর ভাষাকে সঙ্গে নিয়ে গেছে। ফলে, বিভিন্ন দেশে মানবগোষ্ঠীকে ইসলাম কেবল ধর্মান্তরিতই করেনি বরং সেখানকার ভাষাকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। কুরআনের প্রভাবেই আফ্রিকা মহাদেশের এক তৃতীয়াংশ লোক আরবীভাষীতে পরিণত হয়েছে। তদুপরি এশিয়া ও আফ্রিকার বহু ভাষা, যথা : ফুলানী, হাউসা, উলফ, সোয়াহিলী, উর্দু, ফার্সী, পশতু, সিন্ধি, পাঞ্জাবী প্রভৃতি আজও আরবী বর্ণমালায় লেখা হয়। এ থেকে একটি বিষয় স্বচ্ছ হয় যে, কুরআন সর্বতভাবে প্রভাব তৈরী করে।
এই কুরআনের সাথে রমযানের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। দেহের সঙ্গে পোশাকের যেমন নিবীড় সম্পর্ক, রমযানের সঙ্গে কুরআনের সর্ম্পকটা তেমনি গভীর।মানবজাতির ইহ ও পরকালীন সর্বাঙ্গীন কল্যাণের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এই মহাগ্রন্থ রহমত, বরকত মাগফিরাতের পবিত্র রমযান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে।পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, রমযান হলো এমন একটি মাস যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এতে রয়েছে মানুষের জন্য হেদায়াত এবং পথ চলার নির্দেশিকা ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ। (বাকারা-২ আয়াত : আয়াত-১৮৫) কুরআন ও রমযান বান্দার জন্য আল্লাহ দরবারে সুপারিশ করবে।
রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,রমযান এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব! সারাদিন আমি তাকে খাবার এবং বৈধ উপভোগ থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তুমি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করে নাও। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। রাতের ঘুম ছেড়ে দিয়ে সে তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদে আমায় তিলাওয়াত করেছে। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ তুমি কবুল করে নাও।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজা এবং কুরআনের সুপারিশ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করে নিয়ে বান্দাকে মাগফিরাত এবং ক্ষমার পুরস্কারে ভূষিত করবেন। (মিশকাত) সুতরাং আসুন আমরা কুরআন পাঠ ও এর গবেষণায় মনোযোগ দিই। কুরআনের কারণে যেমন রমযানের মর্যাদা, তেমনি অন্যান্য কয়েকটি আসমানী কিতাবও এই রমযান মাসে নাযিল হয়েছে, এদিক থেকে রমযানের মর্যাদার উৎস একাধিক। মুসনাদে ওয়াসেল বিন আসকা থেকে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমযানের প্রথম রাতে হজরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর সহীফা, ৬ই রমযান হজরত মূসা আলাইহিস সালাম এর ওপর তাওরাত, ১৩ই রমযান ঈসা আলাইহিস সালাম এর উপর ইঞ্জিল এবং ২৪শে রমযান (দিবাগত রাত) কুরআন নাজিল হয়েছে।
কথিত আছে যে, ১৮ই রমযান হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম এর নিকট যাবূর কিতাব নাজিল হয়। এই রমযান মাসেই অতীতের উম্মতগুলোর কাছেও আল্লাহ হেদায়াতের বাণী এসেছিল। এদিক থেকে রমযান হচ্ছে, মহাকল্যাণ, পুরস্কার ও হেদায়াতে ভরা মওসুম। তাইতো রমজানে কুরআন পড়া ও শেখা আরও বেশী উত্তম। কুরআন এসেছে মানুষকে সহজ-সরল পথ দেখাতে। কুরআন হচ্ছে অন্তরের চিকিৎসা ও আলো এবং জ্ঞান ও দলীল। কুরআন হচ্ছে সৌভাগ্য ও সওয়াবের বিষয়।
কুরআন হচ্ছে আল্লাহ শিক্ষা ও চিরন্তন শাসনতন্ত্র। তাই কুরআনকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ ও অনুধাবনের চেষ্টা চালাতে হবে।রমজানে কুরআন বুঝার জন্য আমাদের অতীত নেক পূর্বপুরুষরা যা করে গেছেন তাও আমাদের জন্য উৎসাহের কারণ হতে পারে। হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রতিদিন একবার কুরআন খতম দিতেন। ইমাম মালেক রহ. রমযান আসলে কুরআন পড়া ছাড়া বাকী সব কাজ বন্ধ করে দিতেন। তিনি শিক্ষা দান, ফতওয়া ও লোকজনের সাথে বসা বন্ধ করে দিয়ে বলতেন এটা হচ্ছে কুরআনের মাস।ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফিয়ী রহ. রমজানে তারাবীর সালাত ছাড়াই ৬০বার কুরআন খতম করতেন। আবু হানিফা রহ. রমজানে শুধু কুরআন নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।
তিনি দিনে এক খতম, রাতে এক খতম পড়তেন। রমজানে খুব কমই কেউ তার সাথে কথা বলতে পারত।রমযান এলে ইমাম জুহরী বলতেন, রমযান হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত ও খানা খাওয়ানোর মাস। ইমাম মালেক (র.) রমযান এলে হাদীস অধ্যয়ন ও জ্ঞানীদের আসর ত্যাগ করতেন এবং শুধু কুরআন অধ্যয়নে ব্যস্ত থাকতেন। তাঁরা এ মাসকে সৃষ্টির সাথে বয়কট এবং¯্রষ্টার সাথে সম্পর্কের মাস বলে অভিহিত করতেন।

You may also like