Home ইসলাম সময়মতো নামায পড়া উত্তম

সময়মতো নামায পড়া উত্তম

by admin
0 comment

সময়মতো নামায পড়া উত্তম

  মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

সময়মত নামায আদায় করা ফরয। আল্লাহ পাক কুরআনে ইরশাদ করেন :
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَّوْقُوْتًا
উচ্চারণ : ইন্নাস-সালাতা কানাত আলাল মুমিনীনা কিতাবাম মাওক্বুতা।
অর্থ : নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। (সূরা ৪ : আন নিসা : আয়াত ১০৩)
জামায়াতের সাথে নামায না পড়ার পরিণাম
يَوْمَ يُكْشَفُ عَن سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُوْدِ فَلَا يَسْتَطِيْعُونَ ﴿٤٢﴾ خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ۖ وَقَدْكَانُوا يُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُوْدِ وَهُمْ سَالِمُونَ ﴿٤٣﴾
উচ্চারণ : ইয়াওমা ইউকশাফু আন সাক্কিন ওয়া ইউদ আউনা ইলাস সুজুদি ফালা ইয়াস তাত্বীউন। খাশিআতান আবসারুহুম তারহাকুহুম জিল্লাতুন ওয়া ক্বাদকানু ইউদ আউনা ইলাসসুজুদি ওয়া হুম সালিমুন।
অর্থ : আল্লাহ বলেন : পায়ের গোছা পর্যন্ত উম্মুক্ত করার দিনের কথা স্মরণ কর, সেদিন তাদেরকে সিজদা করতে বলা হবে, অতঃপর তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত থাকবে, তারা লাঞ্ছনাগ্রস্ত হবে,অথচ যখন তারা সুস্থ অবস্থায় ছিল, তাদেরকে সিজদা করার জন্য আহবান জানানো হতো। কিন্তু তারা সাড়া দিত না (সূরা ৬৮ কালাম : আয়াত ৪২-৪৩)
এ আয়াতের প্রথমাংশে কিয়ামতের দিনের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। তাদের ওপর অবমাননার ছাপ থাকবে। অথচ দুনিয়ার জীবনে তাদেরকে সেজদা করতে ডাকা হতো ইব্রাহিম তাইমী এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন: অর্থাৎ আযান ও ইকামাত দ্বারা তাদেরকে ফরয নামাযের দিকে ডাকা হতো। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব বলেন: তারা আযান শুনতো, অথচ সুস্থ সবল থাকা সত্ত্বেও জামায়াতে হাজির হতো না। কা’ব আল আহবার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: এ আয়াত কেবলমাত্র নামাযের জামায়াতে অনুপস্থিত থাকা লোকদের প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছিল। এ থেকে বিনা ওযরে জামায়াতে উপস্থিত না হওয়ার কী ভয়ংকর পরিণাম, তা জানা যায়।
এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে জামায়াতে হাজির না হওয়া কোন ক্রমেই বৈধ হতে পারে না। কেননা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন অন্ধ ব্যক্তিকেও বাড়িতে নামায পড়ার অনুমতি দেননি।
জামায়াতের সাথে নামায না পড়ার পরিণাম সংক্রান্ত কতিপয় হাদীস :
১.উবাই ইবনে কা’আব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর পর দুইদিন ফযর নামাযের সালাম ফিরিয়ে আমাদের জিজ্ঞেস করেন : ‘অমুক ব্যক্তি কি নামাযে হাযির হয়েছে? সবাই বললো : জ্বী না। তিনি আবার বললেন : অমুক উপস্থিত হয়েছে কি? লোকেরা বললো : জ্বী না। তিনি বললেন : এই দুইটি (ফজর ও এশার)Ñনামায মুনাফিকদের জন্য অন্যান্য নামাযের তুলনায় অধিকতর ভারী। তোমরা যদি জানতে এই দুইটি নামাযের মধ্যে কি পরিমাণ (সওয়াব) নিহিত আছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও নামাযে উপস্থিত হতে। (আবু দাউদ ও আন-নাসায়ী)
২.আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: আল্লাহর শপথ, আমি সাহাবীগণকে দেখেছি। (তাঁরা কখনো নামাযের জামায়াত ত্যাগ করতেন না) জামায়াত ত্যাগ করে তো কেবল সুস্পষ্ট মুনাফিক। নিশ্চয়ই সাহাবীগণের মধ্যে এমন লোকও দেখা গেছে, যাকে দু’পাশ থেকে দুজনে ভর দিয়ে ধরে মসজিদে এনেছে এবং সফের মধ্যে দাঁড় করিয়েছে। (সহীহ মুসলিম)
৩.উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মসজিদে আযান হবার পর যে ব্যক্তি বিশেষ জরুরি কাজ ছাড়া বেরিয়ে যায় এবং মসজিদে প্রত্যাবর্তণের ইচ্ছা রাখে না, সে মুনাফিক। (মিশকাত)
৪. ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আমি দেখেছি সাহাবায়ে কিরামের সমাজকে। সে সমাজে মুনাফিক এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই জামায়াতে উপস্থিত না হয়ে থাকতো না। (সহীহ মুসলিম)
৫.রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমার ইচ্ছা হয়, নামাযের নির্দেশ জারি করি, আর এক লোকের ইমামতিতে নামাযের জামায়াত শুরু হোক, অতঃপর আমি শুকনো লাকড়ি বহনকারী এক দল লোক নিয়ে ঐ লোকদের বাড়ীতে গিয়ে তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেই-যারা জামায়াতে হাযির হয়নি। (সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম)
৬.হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করা হল, এক লোক সারা দিন রোযা রাখে এবং সারা রাত নামায পড়ে, কিন্তু ফরয নামাযের জামায়াতে শরীক হয় না, তার কি ফয়সালা? তিনি বললেন: এ অবস্থায় মারা গেলে সে দোযখে যাবে। (জামে আত-তিরমিযী)
৭.হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তিন ব্যক্তিকে আল্লাহপাক অভিশাপ দিয়েছেন :
১.যে নেতাকে লোকেরা অপছন্দ করে,
২. যে মহিলা তার উপর স্বামী অসন্তুষ্ট থাকা অবস্থায় রাত যাপন করে,
৩.নামাযের আযান শ্রবণ করেও যে জামায়াতে উপস্থিত হয় না। (হাকেম)
৮.হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন : কিয়ামাতের দিন যে ব্যক্তি মুসলমান হিসেবে আল্লাহর দীদার লাভ করতে চায়, সে যেন প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ঠিকমত আদায় করে। কেননা আল্লাহ তোমাদের নবীর জন্য হিদায়াতের বিধানাবলী প্রবর্তন করে দিয়েছেন। আর এ নামাযগুলো হচ্ছে হিদায়াতের অন্যতম পন্থা। অনেকের মতে তোমরাও যদি নিজ গৃহে নামায পড়, তবে যেন নবীর পথ ছেড়েদিলে। আর তোমরা যদি নবীর পথ ছেড়ে দাও, তাহলে পথভ্রষ্ট হবে। আমার জানামতে, মুনাফিক বা অসুস্থব্যক্তি ছাড়া কেউ জামায়াতে শামিল হতে অবহেলা করে না। অথচ যে ব্যক্তি দু’জনের কাঁধে ভর দিয়ে মসজিদ পর্যন্ত আসে, অবশ্যই সে জামায়াতে নামাযের জন্যই আগমন করে। অসুস্থ রবী বিন খায়সাম দু’জনের কাঁধে ভর দিয়ে মসজিদে এসে জামায়াতে শরীক হতেন। তাঁকে বলা হতো, আপনি তো অক্ষম, আপনার ঘরে বসে নামায পড়া তো জায়েয। তিনি বলতেন : আমি তো আযান শুনতে পাই। অতএব যে ব্যক্তি জামায়াতে শরীক হওয়ার শক্তি আছে, তাকে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও শরীক হতে হবে। কোন কোন বুযুর্গ বলতেন : জামায়াত তরক শুধু পাপের কারণে হয়ে থাকে।
৯.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। কোন সময় নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সংখ্যক লোককে দেখতে পেলেন না। তিনি বললেন : আমি স্থিরভাবে মনস্থ করেছি যে, তাদের নিকট চলে যাই, যারা নামাযে অনুুপস্থিত থাকে, অতঃপর কাঠ জমা করে তাদের ঘর জ্বালিয়ে দিতে বলি। (সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম)
১০.রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি মায়ের ডাক শুনলো কিন্তু ওজর না থাকা সত্বেও জামায়াতে হাজির হলো না, তার একাকি পড়া নামায কবুল হবেনা। জিজ্ঞেস করা হলো যে, কি ধরণের ওজর? রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, রোগ অথবা বিপদের আশঙ্কা। (আবু দাউদ)
১১.যে ব্যক্তি আযান শুনল এবং এর অনুসরণের পথে অর্র্থাৎ-নামাযের জামায়াতে হাযির হবার ব্যাপারে কোন ওযরই প্রতিবন্ধক রূপে না দাঁড়ায়, তার ঘরে পড়া কোন নামায কবুল হবে না। প্রকৃত ওযর কি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন: ভয় কিংবা রোগ। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)
১২.হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহর অভিশাপ ১. সেই ইমাম যার উপর সমাজের লোক নারায, ২. স্বামী অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত্রিযাপনকারিনী স্ত্রী এবং ৩. যে ব্যক্তি হাইয়্যা আলাস সালাহ এবং হাইয়্যা আলাল ফালাহ শুনেও তাতে সাড়া দেয় না। অর্থাৎ জামায়াতে উপস্থিত হয় না। (মুসতাদরক হাকিম)
১১.রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: অমুসলিমদের ও আমাদের মাঝে যে অঙ্গীকার, তা হচ্ছে নামায সংক্রান্ত। নামাযকে যে ত্যাগ করলো, সে কাফের। তিনি আরো বলেছেন: বান্দার ও তার কাফের হওয়ার মাঝে কেবল নামায তরকের ব্যবধান।
কুরআন মজীদে বলা হয়েছে, আল্লাহভীরু লোক ছাড়া অন্যদের জন্য নামায ভারী বোঝার মতো। অন্যান্য হাদীসে বলা হয়েছে, মুনাফিকরা লোক দেখানোর জন্য নামায পড়ে। কেউ না দেখলে নামায পড়ে না। কেউ দেখলে বাধ্য হয়ে পড়ে।

নামায না পড়ার পরকালীন শাস্তি
مَاسَلَكَكُم ْفِي سَقَرَ ﴿٤٢﴾ قَالُوْ الَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ ﴿٤٣﴾
মাসালাকাকুম ফি সাক্বারা। ক্বালু লাম নাকু মিনাল মুসল্লিন।
জাহান্নামবাসীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : জান্নাতবাসী তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে, কোন কারণে তোমরা দোজখে গেলে? তারা জবাব দেবে : আমরা নামায আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না ।
মহান আল্লাহ বলেন :
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوْا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوْا الشَّهَوَاتِ ۖ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ﴿٥٩﴾
উচ্চারণ : ফা খালাফা মিম বা’দিহিম খালফুন আদা’উস সলাতা ওয়াত্তাবায়ুশ শাহাওয়াতি ফাসাওফা ইয়াকাউনা গাইয়ান।
অর্থ : তাদের পরে যারা স্থলাভিষিক্ত হল তারা নামায নষ্ট করল আর নফসের লালসা-বাসনার অনুকরণ করলো। অতএব সেই দিন বেশী দুরে নয় যখন তারা এই কুকর্মের শাস্তি ভোগ করবে। অবশ্য তারা ব্যতীত যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্মশীল হয়েছে। (সূরা ১৯ মরিয়াম : আয়াত ৫৯)
মহান আল্লাহ বলেন :
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ ﴿٥﴾ الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ ﴿٥﴾ الَّذِيْنَ هُمْ يُرَاءُوْنَ ﴿٦﴾
উচ্চারণ : ফা ওয়াইলুল লিল মুসাল্লিন। আল্লাযিনা হুম আন সলাতিহিম সাহুন। আল্লাযিনা হুম ইউরাউন।
অর্থ : সুতরাং ‘ওয়াইল’ নামক দোযখের কঠিন শাস্তি সেই নামায় আদায়কারীদের জন্য যারা তাদের নামায সম্পর্কে উদাসীন। (সূরা ১০৭ মাউন : আয়াত ৪-৫)
মহান আল্লাহ বলেন :
مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ ﴿٤٢﴾ قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ ﴿٤٣﴾ وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ ﴿٤٤﴾ وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ ﴿٤٥﴾ وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ ﴿٤٦﴾ حَتَّىٰ أَتَا نَا الْيَقِيْنُ ﴿٤٧﴾ فَمَا تَنفَعُ هُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِيْنَ ﴿٤٨﴾
উচ্চারণ : মাসালাক্বাকুম ফি সাক্বারা। ক্বালু লাম নাকু মিনাল মুসল্লিন। ওয়ালাম নাকু নুতইমুল মিসকিন। ওয়াকুন্না নাখুদু মা’আআল খাইদিন।ওয়া কুন্না নুকাজ্জিবু বি ইয়াওমিদ্দিন। হাত্তা আতানাল ইয়াক্বিন। ফামাতানফাউহুম শাফায়াতুআশ্শাফিইন।
অর্থ : তোমাদেরকে কিসে সাকারে অর্থাৎ জাহান্নামে নিক্ষেপ করছে? উত্তরে তারা বললেন; আমরা মুছল্লিদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম না, (অর্থাৎ আমরা নামায পড়তাম না) আমরা অভাবীদেরকে অন্ন দান করতাম না,আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করে থাকতাম এবং আমরা কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করতাম। শেষ পর্যন্ত আমাদের নিকট নিশ্চিত মৃত্যুর আগমন গটল। এমতাবস্থায় সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন উপকারে আসবে না। (সূরা ৭৪ আল মুদ্দাছছির : আয়াত ৪২-৪৮)
নামায না পড়ার পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে রাসূলের বাণী :
১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমার ইবনুল আছ কর্তৃক নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত হয়েছে, একদা তিনি নামাযের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করলেন, বললেন : যে লোক নামায সঠিকভাবে আদায় করবে না তার জন্য নূর, অকট্য দলীল এবং মুক্তি কিছুই হবে না বরং কিয়ামতের দিন তার পরিণতি হবে কারুন, ফিরাউন হামাম এবং উবাই ইবনে খালাফ-এর সাথে। (মুসনাদে আহমদ, দারেমী ও সুনানে বায়হাকী)
২. একদা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের জন্য দু‘আ করলেন : হে আল্লাহ! আমাদেরকাউকে বঞ্চিত ও হতভাগা করো না, অতঃপর উপস্থিত সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রশ্ন করলেন: ইয়ারাসূলুল্লাহ! কে সে ব্যক্তি? তিনি বললেন: নামায ত্যাগকারী।
৩.বর্ণিত আছে, বনী ইসরাঈলের এক মহিলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের নিকট এসে বলল : হে আল্লাহর নবী! আমি এক জঘন্য গুনাহ করেছি, আতঃপর তা থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা করেছি। আপনি দু‘আ করুন আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করে দেন এবং আমার তাওবা কবুল করেন। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি পাপ করেছ? সে বলল : আমি যিনায় লিপ্ত হয়ে একটি সন্তান প্রসব করেছি এবং তাকে হত্যা করে ফেলেছি। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বললেন : হে পাপিষ্ঠ! এ মুহূর্তে এখান থেকে চলে যাও। নচেৎ আকাশ থেকে আগুন এসে আমাদেরকেও জ্বালিয়ে ফেলবে। মহিলাটি ভগ্ন হৃদয়ে চলে গেল। তখনি জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এসে বললেন : হে মুসা! আল্লাহ জানতে চেয়েছেন, কি কারণে আপনি এ তাওবাকারিণীকে দূর করে দিলেন : হে জিবরাঈল! এর চেয়েও বড় পাপী আর কে হতে পারে? জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বললেন : ইচ্ছাকৃতভাবে নামাযত্যাগকারী।
৪.হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : মানুষ যতক্ষণ এক আল্লাহকে মা’বুদ হিসাবে মেনে না নেবে, নামায কায়েম ও যাকাত আদায় না করবে, ততক্ষণ তাদের সাথে যুদ্ধ করতে আমি আদিষ্ট। এ কাজগুলো যারা করবে, তাদের রক্ত ও সম্পদ আমার হাত থেকে নিরাপদ। তবে ন্যয়সঙ্গত কারণ থাকলে ভিন্ন কথা। তাদের হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালার। এ হাদীসের ব্যখ্যা প্রসঙ্গে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : নামায ত্যাগকারী ইসলামের প্রদত্ত কোন সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা ভোগ করতে পারবেনা। (সহীহ আল বোখারী ও সহীহ মুসলিম)
৫.রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি বেনামাযী হয়ে আল্লাহর কাছে যাবে, তার অন্যান্য সৎ কাজকে আল্লাহ গ্রহন করবেন না। (তাবরানী)
৬.রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন : কোন বান্দা যখন প্রথম ওয়াক্তে নামায পড়ে তখনসেই নামায একটি আলোকরশ্মি ছুঁড়তে ছুঁড়তে আরশ পর্যন্ত পৌছে যায়। অতঃপর কিয়ামত পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে যে, তুমি যেমন আমাকে রক্ষা করেছেন। আল্লাহ তেমন তোমাকে রক্ষা করুন! (তাবরানী)
নামায ত্যাগ করা কুফরি
وَماَمَنَعَهُم ْ اَن تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَتُهُمْ اَلَّا اَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاَللهِ وَبِرَسُوْلِهِ وَلَا تَاتُوْنَ الصَّلوٰةَ اِلَّا وَهُمْ كُسَالَى وَلَا يُنْفِقُونَ اِلَّا وَهُمْ كَرِهُوْن
উচ্চারণ : ওয়ামা মানাআহুম আন তুক্ববালা মিনহুম নাফাক্বাতুহুম আল্লা আন্নাহুম কাফারু বিল্লাহি ওয়া বিরাসূলিহি ওয়া লা তাতুনাস্সালাতা ইল্লা ওয়াহুম কুসালা ওয়ালা উনফিকুনা ইল্লা ওয়াহুম কারিহুন।
অর্থ : তাদের দেয়া সম্পদ গৃহীত না হবার এছাড়া আর কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে, নামাযের জন্য যখন আসে আড়মোড় ভাংতে আসে এবং আল্লাহর পথে খরচ করলে তা করে অনিচ্ছাকৃত।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
১.যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত পরিত্যাগ। (সহীহ মুসলিম)
২.বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের ও তাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার আছে, তাহলো সালাত । সুতরাং যে সালাত ত্যাগ করবে সে (প্রকাশ্যে) কুফরি করছে। (মুসনাদে আহমদ, জামে আত-তিরমিযী, আন-নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ)
৩.একবার রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে আল্লাহ আমাদের মধ্যে কাউকে বঞ্চিত হতভাগা বানিওনা, তরপর উপস্থিত সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন : তোমরা কি জান বঞ্চিত হতভাগা কে? সাহাবীগণ বললেন : হে আল্লাহর রাসূল! সে কে ? তিনি বললেন: নামায তরককারী।
৪.অপর এক হাদীসে আছে, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাদের মুখ কালো হবে, তারা হলো নামায তরককারী। জাহান্নামে মালহাম’নামক একটা অঞ্চল আছে। সেখানে বহু সাপ থাকে। তার প্রতিটি সাপ উটের ঘাড়ের মত মোটা এবং প্রায় এক মাসের পথের সমান লম্বা। এই সাপ নামায তরককারীকে দংশন করবে। এর বিষ তার শরীরে ৭০ বছর ধরে যন্ত্রণা দিতে থাকবে। অবশেষে তার গোশত খসে খসে পড়বে।
৫.রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অমুসলিমদের ও আমাদের মাঝে যে অঙ্গীকার, তা হচ্ছে নামায সংক্রান্ত। নামাযকে যে ত্যাগ করলো, সে কাফের। তিনি আরো বলেছেন : বান্দার ও তার কাফের হওয়ার মাঝে কেবল নামায তরকের ব্যবধান।
৬.ইমাম ইবনে হাযম বলেছেন : আল্লাহর সাথে শরীক করা ও অন্যায়ভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করার পরেই সবচেয়ে বড় গুনাহর কাজ হলো নামায তরক করা।
৭. ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : যখন কেউ ফযর ও এশার নামাযে অনুপস্থিত থাকতো, তখন আমরা মনে করতাম সে মুনাফিক হয়ে গেছে।
ইব্রাহিম নাগয়ী, আইয়ূব সাখতিয়ানী, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক, আহমাদ ইবনে হাম্বল ও ইসহাক বিন রাহয়েল মতে বিনা ওযরে স্বেচ্ছায় নামায তরককারীকে নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর কাফের গণ্য করতে হবে।
আল কুরআনে নামায কায়েমের নির্দেশ
নামায সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলেনÑ
وَ أَقِيْمُوالصَّلَاةَ وَآتُوْا الزَّكَاةَ وَ ارْكَعُوْ امَعَ الرَّاكِعِيْنَ
উচ্চারণ : ওয়া আক্বীমুস সালাতা ওয়া আতুয-যাকাতা, ওয়ারকা‘য়ু মা‘আর রাকি‘ঈন।
অর্থ : তোমরা নামায কায়েম করো ও যাকাত আদায় করো এবং যারা আমার সামনে অবনত হচ্ছে তাদের সাথে তোমরাও অবনত হও (রুকূকারীদের ন্যায় কুকূ কর)। (সূরা ২ আল বাকারাহ : আয়াত ৪৩)
وَأَقِيْمُوْاالصَّلَاةَوَآتُواالزَّكَاةَ ۚ وَمَاتُقَدِّمُوْا لِأَنفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللهِ ۗ إِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
উচ্চারণ : ওয়া আক্বীমুস সালাতা ওয়াআতুয-যাকাতা, ওয়ামা তুক্বাদ্দিমু লিআনফুসিকুম্ মিন খায়রিন্ তাজিদূহু ইনদাল্লাহি ইন্নাল্লাহা বিমা তা‘মালূনা বাসীর।
অর্থ : তোমরা সালাত কায়েম করো ও যাকাত আদায় করো এবং নিজেদের পরকালের জন্য তোমরা যাকিছু সৎকাজ করে আগে পাঠিয় দেবে, তা সবই আল্লাহ্র ওখানে মজুদ পাবে। তোমরা যাকিছু করো সবই আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে। (সূরা ২ আল বাকারাহ : আয়াত ১১০)
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ
উচ্চারণ : হাফিজু ‘আলাস সলাওয়াতি ওয়াসসালাতিল উস্ত্বা।
অর্থ : তোমরা নামাযগুলো সংরক্ষণ করো (নামাজের প্রতি যতœবান হও), বিশেষ করে মধ্যবর্তী (আসরের) নামাযের। (সূরা ২ আল বাকারাহ : আয়াত ২৩৮)
وَقَالَ اللهُ إِنِّي مَعَكُمْ ۖ لَئِنْ أَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَآتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَآمَنتُم بِرُسُلِي وَعَزَّرْتُمُو هُمْ وَأَقْرَضْتُمُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا لَّأُكَفِّرَنَّ عَنكُم ْسَيِّئَاتِكُمْ وَ لَأُدْخِلَنَّكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
উচ্চারণ : ওয়াক্বলাল্লাহু ইন্নি মা‘আকুম, লাইন্ আক্বাম্তুমুস্সালাতা ওয়া আতাইতুমুয্ যাকাতা ওয়াআমানতুম্ বিরুসূলী ওয়াআয্যারতুমূহুম, ওয়াআক্বরাদ্ব তুমুল্লহা ক্বরদ্বান হাসানাল্ লা’উকাফফিরান্না ‘আনকুম সাইয়্যিয়াতিকুম ওয়ালা উদখিলান্নাকুম জান্নাতিন তাজ্রী মিন্ তাহ্তিহাল আনহার।
অর্থ : আর আল্লাহ্ বলেছিলেন, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, যদি তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত দাও, আমার রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনো ও তাদেরকে সম্মান করো এবং আল্লাহকে ‘করযে হাসানা’ (উত্তম ঋণ) দিতে থাকো, তাহলে নিশ্চিত বিশ্বাস করো আমি তোমাদের থেকে তোমাদের পাপগুলো মোচন করে দেবো এবং তোমাদের এমন সব বাগানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবো যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। (সূরা ৫ আল মায়েদাহ : আয়াত ১২)
وَأَنْ أَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَاتَّقُوهُ ۚ وَهُوَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
উচ্চারণ : ওয়াআন আক্বীমুস্ সালাতা ওয়াত্তাকূহু ওয়াহুয়াল্লাযী ইলাইহি তুহ্শারূন।
অর্থ : নামায কায়েম করো এবং তাঁর নামফরমানী করা থেকে দূরে থেকো। তাঁরই কাছে তোমাদের সমবেত করা হবে। (সূরা ৬ আন‘আম : আয়াত ৭২)
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۗ وَبَشِّرِالْمُؤْمِنِينَ
উচ্চারণ : ওয়াআক্বীমুস্ সালাতা ওয়াবাশ্শিরিল্ মু’মিনীন।
অর্থ নামায কায়েম করো আর ঈমানদার লোকদের সুসংবাদ দাও। (সূরা ১০ ইউনুস : আয়াত ৮৭)
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ ۚ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ۚ ذَ‌ٰلِكَ ذِكْرَىٰ لِلذَّاكِرِينَ
উচ্চারণ : ওয়া আক্বীমিস্সালাতা তরাফাইন নাহারি ওয়া যুলাফাম মিনাল্ লাইলি, ইন্নাল হাসানাতি য়ুয্হিবনাস সায়্যিয়াতি যালিকা যিক্র লিয্ যাকিরীন।
অর্থ : নামায কায়েম করো দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথমাংশে। নিশ্চয়ই সৎকাজগুলো অসৎকাজকে দূর করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা ১১ হুদ : আয়াত ১১৪)
أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا
উচ্চারণ : আক্বীমিস্ সালাতা লিদুলুকিশ্ শামসি ইলা গাসাক্বিল্ লাইলি ওয়াকুরআনাল ফাজরি, ইন্না কুরআনাল্ ফাজরি কানা মাশহূদা।
অর্থ : নামায কায়েম করো সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ার সময় থেকে নিয়ে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত। আর ফজরে কুরআন পড়ার ব্যবস্থা করো। নিশ্চয়ই ফজরের কুরআন পাঠ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে (আল্লাহর ফিরিশ্তাগণ উপস্থিত হয়ে থাকেন)। (সূরা ১৭ বনী ইসরাঈল : আয়াত ৭৮)
إِنَّنِي أَنَا اَللهُ لَاإِلـٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي
উচ্চারণ : ইন্নানী আনাল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা আ-না ফা‘বুদনি ওয়াআক্বীমিস্ সালাতা লিযিকরী।
অর্থ : আমিই আল্লাহ্। আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। কাজেই তুমি আমার ইবাদত করো এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য নামায কায়েম করো। (সূরা ২০ তোয়াহা : আয়াত ১৪)
فَأَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوا بِاللهِ هُوَ مَوْلَا كُمْ ۖ فَنِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ
উচ্চারণ : ফা আক্বীমুস্ সালাতা ওয়াআতুয-যাকাতা ওয়াতা‘সিমু বিল্লাহি হুয়া মাওলাকুম ফানি‘মাল্ মাওলা ওয়ানি‘মান নাসীর।
অর্থ : অতএব তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারন করো (অর্থাৎ আল্লাহর নিকট হতে হিদায়াত ও জীবন বিধান গ্রহণ করো)। তিনি তোমাদের অভিভাবক, কতো উত্তম অভিভাবক তিনি, কতো উত্তম সাহায্যকারী তিনি। (সূরা ২২ আল হাজ্জ : আয়াত ৭৮)
وَأَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
উচ্চারণ : ওয়াআক্বীমুস্ সালাতা ওয়াআতুয-যাকাতা ওয়াআত্বির্উ রাসূলা লা‘আল্লাকুম্ তুরহামূন্।
অর্থ : নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রসূলের আনুগত্য করো। আশা করা যায় যে, তোমাদের প্রতি রহম (করুণা) করা হবে। (সূরা ২৪ আন্ নূর : আয়াত ৫৬)
مُنِيْبِيْنَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوْ هُ وَأَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَ لَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
উচ্চারণ : মুনীবীনা ইলাইহি ওয়াত্তাকূহু ওয়াআক্বীমুস্ সালাতা ওয়ালা তাকূনূ মিনাল্ মুশরিকীন।
অর্থ : (প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও একথার ওপর) আল্লাহ্ অভিমুখী হয়ে এবং তাঁকে ভয় করো, আর নামায কায়েম করো এবং মুশরিকদের মধ্যে শামিল হয়ো না। (সূরা ৩০ আর রূম : আয়াত ৩১)
فَأَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيْعُو اللهَ وَرَسُوْلَهُ ۚ وَاللهُ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
উচ্চারণ : ফাআক্বীমুস্সালাতা ওয়াআতুয-যাকাতা ওয়াআত্বীউল্লাহ ওয়ারাসূলাহু ওয়াল্লাহু খাবীরুম্ বিমা তা‘মালূন।
অর্থ : তাহলে নামায কায়েম করো ও যাকাত দিতে থাকো এবং আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে থাকো। (মনে রেখো) তোমরা যা কিছু করো সে বিষয়ে আল্লাহ পুরাপুরি ওয়াকিফহাল। (সূরা ৫৮ আল মুজাদালাহ : আয়াত ১৩)
وَأَقِيْمُوْا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُواللهَ قَرْضًا حَسَنًا
উচ্চারণ : ওয়া আক্বীমুস্ সালাতা ওয়াআতুয-যাকাতা ওয়াআক্বরিদ্বুল্লাহা ক্বারদ্বান হাসানা।
অর্থ : নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে ‘করযে হাসানা’ দিতে থাকো (অর্থাৎ উত্তম ঋণ দাও)। (সূরা ৭৩ আল মুয্যাম্মিল : আয়াত ২০)
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
উচ্চারণ : ফাসাল্লিলি রব্বিকা ওয়ার্ন্হা।
অর্থ : সুতরাং তুমি তোমার প্রভুর জন্য নামায পড়ো এবং কুরবানী করো। (সূরা ১০৮ আল কাউসার : আয়াত ২)
اَنَا فَاعْبُدْنِ -وَاَقِمِ الصَّلَوٰةَ لِذِكْرِىْ
উচ্চারণ : আনা ফা’বুদনি ওয়া আকি¡িমস সালাতা লি যিকরি।
অর্থ : আমি (আল্লাহ) আমার ইবাদত কর। আর আমার স্মরণের জন্য নামায কায়েম করো। (সূরা ২০ তোয়াহা : আয়াত ১৪)
قُلْ يَا أَهْل َالْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلٰى شَيْءٍ حَتَّى تُقِيمُوا التَّوْرَاةَ وَالْإِنجِيلَ
উচ্চারণ : ক্বুল ইয়া আহলাল কিতাবি লাসতুম আলা শাইয়্যিন হাত্তা তুকিমুত্ তাওরাতা ওয়াল ইঞ্জিল।
অর্থ : হে আহলে কিতাবীগণ! তোমাদের কোনই মূল্য নেই যে পর্যন্ত না তোমরা তাওরাত এবং ইঞ্জিলকে কায়েম করবে। (সূরা ৫ মায়েদা : আয়াত ৬৭)
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ ﴿٣﴾ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا ۚ لَّهُمْ دَرَجَاتٌ عِندَرَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
উচ্চারণ : আল্লাযীনা ইয়ুক্বীমূনাস সালাতা ওয়মিম্মা রাজাক্কনাহুম ইয়ুনফিক্বুন। উলাইকা হুমুল মু’মিনুনা হাক্বক্ব¡া লাহুম দারাজ্বাতুন ইনদা রাব্বিহিম ওয়া মাগফিরাতুঁও ওয়ারিযক্বুন কারীম।
অর্থ : যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক। (সূরা ৮ আনফাল: আয়াত ৩-৪)
وَالَّذِين َهُمْ عَلٰى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ ﴿٩﴾ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ ﴿١﴾ الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
উচ্চারণঃ ওয়াল্লাযীনাহুম আলা সলাওয়াতিহিম ইয়ু হাফিযুন। উলাইকা হুমুল ওয়ারিছুনা। আল্লাযীনা ইয়ারিছুনাল ফিরদাউসা হুম ফীহা খালিদূন।
অর্থ : আর যারা তাদের নামাযসমূহের হিফাযত করে তারাই হবে উত্তরাধিকারী। তারা জান্নাতুল ফেরদাউসের অধিকারী হবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা ২৩ মুমিনুন: আয়াত ৯-১১)

You may also like