Home ইসলাম সংক্ষেপে ক্বিরান, ইফরাদ ও তামাত্তু হজ্জ

সংক্ষেপে ক্বিরান, ইফরাদ ও তামাত্তু হজ্জ

by admin
0 comment

abcd

সংক্ষেপে ক্বিরান, ইফরাদ ও তামাত্তু হজ্জ

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

হজ্জ সমাপ্ত করতে (৮ যিলহজ্জ থেকে ১২ যিলহজ্জ) ৫ দিনে (মিনা, আরাফাহ, মুযদালিফা ও খানায়ে ক্বাবা) ৪ জায়গায় (১.ইহরাম বাঁধা, ২.আরাফায় অবস্থান, ৩. মুজদালিফায় অবস্থান, ৪. বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ, ৫. কুরবানী করা, ৬. হলক বা কছর করা, ৭. তাওয়াফ করা, ৮. সায়ী করা, ৯. শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করা ও ১০. বিদায়ী তাওয়াফ করা) ১০টি কাজ করতে হয়। সংক্ষেপে ৫ দিনে ৪ জায়গায় ১০টি কাজের বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

৮ যিলহজ্জ (১ম দিন))

অবস্থানঃ মক্কা ও মিনায়

প্রথম কাজ
১। ইহরাম বাঁধা (ফরজ)

ক্বিরান হজ্জ

 মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধার সময় হজ্জ ও ওমরাহ উভয়টার নিয়ত করে ইহরাম বাঁধুন।
 মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহ ও সায়ী আদায় করুন। তবে এরপর চুল ছাঁটবেন না
 ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করুন।

ইফরাদ হজ্জ

 মীকাত থেকে শুধু হজ্জের নিয়তে (আগে বর্ণিত) ইহরাম বাঁধুন।
 মক্কা শরীফ পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) করুন।
 ইচ্ছা করলে এ তাওয়াফের পর সায়ী করুন। সে ক্ষেত্রে হজ্জের ফরজ-তাওয়াফের পর আর সায়ী করতে হবে না।
 তাওয়াফ ও সায়ী করার পর চুল ছাঁটবেন না।
 তাওয়াফে কুদুমের পর ইহরাম অবস্থায় হজ্জের অপেক্ষায় থাকুন।

তামাত্তু হজ্জ

 তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগন মীকাত থেকে প্রথমে ওমরাহর ইহরাম বাঁধুন।
 মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী আদায় করুন।
 তার পর পর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
 হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
দ্বিতীয় কাজ

মিনা

 ৮ যিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর ক্বিরান ও ইফরাদ হজ্জপালনকারীগণ একই ইহরামের এবং তামাত্তু হজ্জপালনকরীগণ ঐ দিন নতুন করে ইহরাম বেঁধে হজ্জের নিয়ত করবেন (হেরেম শরীফের এলাকা থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে)।
 মুয়াল্লেমের বাসে করে অথবা হেঁটে মিনায় আসুন।
 মিনায় যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার নামাজ মিনায় আদায় করুন।
 রাতে মিনায় অবস্থান করুন।
৯ যিলহজ্জ (২য় দিন)
অবস্থানঃ মিনা-আরাফাহ, আরাফাহ-মুযদালিফা

আরাফাহ

আরাফাহ অভিমুখে রওয়ানা
 মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করুন।
 বাদ ফজর সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে মুয়াল্লিমের গাড়িযোগে অথবা হেঁটে আরাফাহ’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা করুন।
 পথে তালবিয়া, দোয়া, তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), পড়তে পড়তে দুপুরের পূর্বেই মিনা থেকে ৬ মাইল দূরে অবস্থিত আরাফাহ ময়দানে পৌঁছুন।
 শক্ত-সবল এবং মাইলের পর মাইল হেঁটে অতিক্রম করায় অভ্যস্ত না হলে মিনা পায়ে হেঁটে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন না।
প্রথম কাজ
২। আরাফাতে অবস্থান ঃ (ফরজ)
 আরাফাতে মসজিদে নামিরা (যা আরাফাতের প্রান্তরে মক্কা মোকাররমার দিকে অবস্থিত) এর নিকট অবস্থান করবেন।
 যদি জাবালে রহমতের নিকটবর্তী স্থান, যেখানে কালো পাথরের বিছানা রয়েছে সেখানে যদি জায়গা পাওয়া যায় তবে সেখানেই অবস্থান করবেন। এটি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অবস্থান করার জায়গা। নতুবা যেখানে সম্ভব নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান করবেন।
 যোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করুন।
 পানাহার শেষ করে সূর্য হেলে পড়ার পূর্বে গোসল করবেন।
 তারপর মসজিদে নামিরায় গিয়ে বসবেন।
 আরাফাহ ময়দানের মসজিদে যেতে পারলে যোহর ও আসর একসাথে কছর করে আদায় করবেন।
 যখন ইমাম খুৎবা পাঠ করবেন, তখন তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করবেন।
 অন্যথায় তাঁবুতে যোহরের সময় যোহর এবং আসরের সময় আসর আদায় করবেন।
 আরাফাহ ময়দানে নিজের অবস্থানস্থলে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের অনুকরণ ও অনুসরণে দু’হাত উঠিয়ে অতি বিনয়ের সাথে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর দরবারে দোয়া ও মুনাজাত করুন।

দ্বিতীয় কাজ

মুযদালিফা

মুযদালিফা অভিমুখে রওয়ানা
 সূর্যাস্তের পর আরাফাহ বা রাস্তার কোথাও মাগরিবের নামাজ না পড়ে সোজা মুযদালিফার দিকে চলুন।
৩। মুজদালিফায় অবস্থানঃ (ওয়াজিব)
 মুযদাফিলায় শেষ প্রান্তে মিনা প্রান্তরের কাছাকাছি অবস্থান নিতে পারলে ভাল।
মুজদালিফায় করণীয়
 মুজদালিফায় এসে এক আজান ও দুই ইকামাতে এশার ওয়াক্তে প্রথমে মাগরিবের ৩ রাকাত ফরয নামাজ আদায় করুন এবং পরে এশার ৪ রাকাত ফরয ও তিন রাকাত বেতের নামাজ আলাদা আলাদা আদায় করুন।
 ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরীফ পড়ুন।
 দুই নামাজের মাঝে কোন প্রকার সুন্নত ও নফল পড়বেন না।
 এবার মাগরিব ও এশার সুন্নত পড়ুন এবং এবাদতে মশগুল হন।
 রাতে মুযদালিফায় অবস্থান করুন।
১০ যিলহজ্জ ইয়াওমুন নাহার (৩য় দিন)
স্থানঃ মুজদালিফা-মিনা, মিনা-মক্কা শরীফ, মক্কা শরীফ-মিনা
 ১০ যিলহজ্জ সুবহে সাদেক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান।
 সুবহে সাদেকের পর অন্ধকার থাকতে প্রথম সময় ইমামের সাথে অথবা একাকী যেমন সুযোগ হয়, ফজরের নামাজ আদায় করুন।
 ফজরের নামাজ পড়ে মাশআরে হারামের কাছে কেবলামুখী হয়ে লাব্বাইকা অথবা তস্বীহ তাহলীল পড়বেন এবং হাত উপরে তুলে দোয়ায় লিপ্ত হবেন।
 এখান হতে মীনায় “জমরাতুলআ ক্বাবা” “জামরাতুল উলা”ও “জামরাতুল ছোগরা” কে মারার জন্য কংকর (মটর অথবা ছোলার দানার সমান) খুঁজে নিন।

মিনা

মিনা অভিমুখে রওয়ানা
 ১০ যিলহজ্জ ফজরের নামাজান্তে কিছুক্ষণ অবস্থান করে মিনার দিকে যাত্রা করবেন।
 মুজদালিফা থেকে সূর্যোদয়ের একটু আগে যাত্রা করা সুন্নত।
 মিনায় আগমন।
কংকর নিক্ষেপ
প্রথম কাজ
৪। বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপঃ (ওয়াজিব)
 যোহরের পূর্বে (তবে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বিলম্ব করা যায়) ভিড় বা দুর্বলতার কারণে অসুস্থ ও দুর্বল হাজীরা রাতে ৩টি জামরার মধ্যে ১ম টিতে অর্থাৎ জামরাতুল আক্বাবায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করুন।
 অসুস্থ ও দুর্বল হাজীরা তাদের প্রতিনিধিদের দ্বারা কংকর নিক্ষেপ করে দিতে পারবেন। আর এক্ষেত্রে প্রতিনিধিরা প্রথমে নিজেদের তরফ থেকে কংকর মারবেন তার পর তাদের জন্য মারবেন।
 কঙ্কর নিক্ষেপের পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ করুন। কুরবানী
দ্বিতীয় কাজ
৫। কুরবানী করাঃ (ওয়াজিব)
কংকর মারার পর কুরবানী করুন।
 ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা করে কুরবানী করতে পারেন। তবে কুরবানীর সময় জেনে নিবেন।
 সম্ভব হলে নিজের কুরবানীর পশু নিজ হাতে যবেহ করুন।
 নিজে যবেহ করতে না পারলে পশুর কাছে হাজির থাকুন।
 কুরবানীর গোশত নিজে খাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
 তামাত্তো এবং ক্বিরান হজ্জযাত্রীদের জন্য ইহা শুকরিয়া স্বরূপ ওয়াজেব কুরবানী। ইফরাদ হজ্জযাত্রীদের জন্য ইহা মুস্তাহাব।

হলক বা কছর করা
তৃতীয় কাজ
৬। হলক বা কছর করাঃ (ওয়াজিব)
 কুরবানী করার পর মাথা মুন্ডান বা চুল ছেঁটে ফেলুন।
হজ্জের ইহরাম থেকে হালাল
 কুরবানী করার পর মাথা মুন্ডানোর বা চুল ছেঁটে ফেলার মাধ্যমে আপনি এখন হজ্জের ইহ্রাম থেকে সম্পূর্ণ হালাল হয়ে গেলেন।
 মহিলাদের সমগ্র চুলের অগ্রভাগ হাতের অঙ্গুলির এক কড়া পরিমাণ ছেঁটে হালাল হোন। চুল ছেঁটে ফেলার মাধ্যমে ইহরামের সমুদয় কাজ সমাপ্ত হল। এখন গোসল করে সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করুন।

তাওয়াফ

মক্কায়

৪র্থ কাজ
৭। তাওয়াফ করা (ফরজ)
 এরপর মিনা থেকে মক্কায় এসে (নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সুবিধাজনক সময়) তাওয়াফের যিয়ারত পূর্ণ করুন।
 মনে রাখবেন সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে যিয়ারত করে নিতে হবে।
 তবে নারীরা প্রাকৃতিক কারণে করতে না পারলে পবিত্র হওয়ার পরে করবেন।
মসজিদে হারামের দিকে অগ্রসর হওয়া
মক্কায় আসার পর শারীরিক ক্লান্তি বা ক্ষুধা থাকলে কিংবা অন্য কোন জরুরী কাজ থাকলে সব সেরে শান্ত হোন। অতঃপর গোসল অথবা ওজু করে মসজিদে হারামের দিকে অগ্রসর হোন। তালবিয়া পড়তে পড়তে ডান পা রেখে এই দোয়া পড়ুনঃ “বিসমিল্লাহি ওয়াস্সালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহি আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক”।
তাওয়াফের নিয়মাবলী
 নিয়ত করা।
নিয়তঃ (“আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারামি ফা-ইয়াস্সিরহু লী ওয়া-তাক্কাব্বালহু মিন্নী, সাব্আতা আশওয়াতিন লিল্লাহি তায়ালা আজ্জ ওয়া-জাল্লা”)।
 ক্বাবা শরীফের দিকে ফিরে হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করুন। অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ বরাবর তাওয়াফের জায়গায় যে মোটা দাগ টানা আছে। সেটাকে আপনার ডান পার্শ্বে রাখুন।
 তারপর নামাজের মতো উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাবেন এবং বলবেন “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” এবং অত্যধিক ভিড় বা ধাক্কাধাক্কি না থাকলে সামনে এগিয়ে অতি ভক্তি ও বিনয়ের সাথে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করুন। এটা সম্ভব না হলে যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখান থেকে উভয় হাতের তালু পাথরের দিকে ইঙ্গিত করে হাতে চুম্বন করে তাওয়াফ শুরু করুন।
 হাজরে আসওয়াদের ইস্তিলামের পর বায়তুল্লাহ শরীফের দরজার দিকে অর্থাৎ নিজের ডান দিকে অগ্রসর হবেন এবং তাওয়াফে হাতীমকেও শামিল করবেন।
 তাওয়াফের সময় সহজ দোয়া পাঠ।
দোয়াঃ (“সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া-লাহাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিল্লাহি আরাফাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম”)।
 তাওয়াফ আরম্ভ করার পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ রাখুন।
 যখন রোকনে ইয়ামীনে অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের আগের (বায়তুল্লাহ্র পশ্চিম-দক্ষিণ) কোণে পৌঁছবেন তখন নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হোন-
দোয়াঃ “রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া-হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল্ আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়া কিন্না আযাবান্ না-রি ওয়াদ খিলনাল জান্নাতা মা’আল আবরার ইয়া আজিজু ইয়া-গাফ্ফারু ইয়া-রাব্বাল আলামীন”।
 এই দোয়া পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদ বরাবর পৌঁছলে (মোটা দাগ দেখে নিন) এক চক্কর পূর্ণ হয়ে গেল।
 এভাবে মোট সাত চক্কর পূর্ণ করে নিন।
 সাত চক্কর পূর্ণ করার পর অষ্টমবারে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করবেন এতে তাওয়াফ সমাপ্ত হয়ে গেল।
 ১ম তিন চক্করে ‘রমল করা’ অর্থাৎ বীরের মত হেলে-দুলে জোর কদমে চলুন।
 বাকি চার চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করুন।
 তাওয়াফ শেষে আবার তালবিয়া পাঠ শুরু করুন।
রোকনে ইয়ামীনে দোয়া
যখন রোকনে ইয়ামীনে অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের আগের (বায়তুল্লাহ্র পশ্চিম-দক্ষিণ) কোণে পৌঁছবেন তখন নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হোন-
দোয়াঃ“রাব্বানা-আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া-হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল্ আ-খিরাতি হাসানাতওঁ ওয়া কিনা আযা-বান্ না-র। ওয়াদখিলনাল জান্নাতা মাআল আবরার ইয়া -আজিজু ইয়া-গফ্ফারু ইয়া-রাব্বাল্ আলামীন”।
মাকামে ইব্রাহিমে নামাজ
তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমে দুই রাকাত নামায পড়ুন।
তার পর যমযমের পানি পান করুন। যমযমের পানি পান করার সময় এই দোয়া পড়ুনঃ
দোয়াঃ (“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান ওয়া-রিযক্কান ওয়া-সিয়ান ওয়া-শিফায়াম মিন কুল্লি দায়িন”)

সাফা মারওয়ায় সায়ী

পঞ্চম কাজ
৮। সায়ী করাঃ (ওয়াজিব)
 তাওয়াফ শেষে নামাজ পড়ে (যমযম থেকে) সায়ীর জন্য সাফা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হোন।
 সাফা পাহাড়ের কিছুটা ওপরে উঠে (এখন আর পাহাড় নেই, মেঝেতে মার্বেল পাথর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) পাহাড়ের চিহ্নস্বরূপ উঁচু জায়গা রয়েছে। এখানে উঠলে আপনার নজরে ক্বাবা শরীফ আসবে।
 এখানে ক্বাবা শরীফের দিকে মুখ করে সায়ী-এর নিয়ত করে, দোয়ার মতো করে হাত তুলে তিনবার “আলহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে দোয়া করুন।
 অতঃপর অন্তরের আবেগ অনুযায়ী দোয়া কালাম পাঠ করতে করতে মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হোন।
 সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সায়ী করার সময় এ দোয়া পড়ুন
১. (“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া-লাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুয়া হাইয়ুন লা-ইয়ামুতু-আবাদান আবাদা, বে ইয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদীর লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াহদাহু, ওয়া নাছারা আব্দাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ”।)
২. (“সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া লাহাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম”)।
 এখানে সবুজ দুটি স্তম্ভ আপনার নজরে পড়বে। এই স্তম্ভদ্বয়ের মাঝখানে কিছুটা দ্রুতগতিতে চলুন এবং এই দোয়া পড়ুনঃ “রাব্বিগফির ওয়ারহাম ইন্নাকা আন্তাল আয়া যযুল আকরাম”।
 এরপর স্বাভাবিক গতিতে চলতে চলতে মারওয়া পাহাড়ের সামান্য উঁচুতে উঠে কিবলামুখী হয়ে উভয় হাত বুক পর্যন্ত উঠিয়ে তিন বার “আলহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলুন।
 এতে সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত এক চক্কর হয়ে গেল। আবার মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত পূর্বের নিয়মে যাবেন, তাতে দ্বিতীয় চক্কর হয়ে যাবে। এভাবে ৭ চক্কর পূর্ণ করুন।
সায়ীর পর নফল নামাজ
সায়ী শেষে মসজিদে হারামে এসে মাতাফে অথবা হাজরে আসওয়াদের সামনে অথবা তাওয়াফ করার স্থানে কিংবা যেখানে স্থান পাওয়া যায় সেখানে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করুন।

১১ ও ১২ যিলহজ্জ (৪র্থ ও ৫ম দিন)

অবস্থানঃ মিনা

৯। শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করাঃ (ওয়াজিব)
 প্রতিদিন তিন জামরায় ৭টি করে মোট ২১টি কংকর নিক্ষেপ (দুপুরের পর) করুন।
 সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ (১২ জিলহজ্জ) করুন।
 ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত কংকর সংখ্য = (৭+২১+২১) = ৪৯ টি
বিঃ দ্রঃ কোন কারণে ১২ যিলহজ্জ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ না করতে পারেল ১৩ তারিখও মিনায় অবস্থান করুন। একই নিয়মে ১৩ তারিখ তিন জামরায ৭টি করে মোট ২১টি কংকর নিক্ষেপ (দুপুরের পর) করুন।
 ১০ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত কংকর সংখ্যা = (৭+২১+২১+২১) = ৭০ টি
 সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করুন।
 মিনা থেকে মক্কাশরীফ আগমন।
 যে তারিখ মক্কা থেকে মদীনা অথবা মক্কা থেকে জেদ্দা যাবেন সে তারিখ
 অবস্থানঃ মক্কা শরীফ
সর্বশেষ কাজ
১০। বিদায়ী তাওয়াফ করাঃ (ওয়াজিব)
 মক্কা থেকে জেদ্দা যাওয়ার পূর্বে অথবা মক্কা থেকে মদীনায় যাওয়ার পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফ করুন।
 যারা মক্কাবাসী নন, তারা সকলে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন। এটা করা ওয়াজিব।
 এ তাওয়াফে সায়ী করতে হবে না। অর্থাৎ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌঁড়াতে হবে না।
 জেদ্দা অথবা মদীনা শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করুন।
মহানবী (রাঃ) এর শেখানো হজ্জের নীতি অনুসারে প্রতিটি বিধানের হাকীকত উপলব্ধি করে তা পালন করা এবং বাকী জীবনে তা কার্যকর করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যেতে পারে। আর পরবর্তী জীবনে হজ্জের শিক্ষা কার্যকর করে সর্বপ্রকার পাপাচার ও আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা থেকে বিরত থাকার নামই হলো হজ্জে মবরুর। এই হজ্জে মাবরুরের প্রতিদানই হলো জান্নাত।

 উল্লেখ্য, ইফরাদ ও ক্বিরান হজ্জকারী তাওয়াকে কুদুম করবেন। তাওয়াফে কুদুমের সঙ্গে সায়ী করলে তাওয়াফে জিয়ারতের পর আর সায়ী করতে হবে না।
 তবে ক্বিরান হজ্জকারীদের জন্য তাওয়াফে কুদুমের সঙ্গে সায়ী করা, ইফরাদ হজ্জকারীদের জন্য তাওয়াফে জিয়ারতের সঙ্গে সায়ী করা উত্তম।
 তামাত্তুকারীরা হজ্জের ইহরামের পর নফল তাওয়াফ করে সায়ী করে নিলে তাওয়াফে যিয়ারত বা ইফাজের সময় আর সায়ী করতে হবে না

You may also like