Home ইসলাম যানবাহনে নামায পড়ার নিয়ম

যানবাহনে নামায পড়ার নিয়ম

by admin
0 comment

যানবাহনে নামায পড়ার নিয়ম

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

পূর্বে সফরের জন্য যানবাহন ছিল পশু অথাৎ ঘোড়া, উট, গাধ ইত্যাদি। বর্তমানে সময়ে জন্য হলো বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও উড়ো জাহাজ। পূর্বে যেহেতু যানবাহনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় কেরেছেন আমাদেরকেও যানবাহনে সে ভাবে নামায আদায় করতে হবে। নামায না পড়ার কোন অবকাশ নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যানবাহনে নামায কি ভাবে পড়েছেন তা নি¤েœ বনর্ণা করা হলো-
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রীতি ছিলো যে, তিনি যখন সোয়ারী বা যানবাহনে ভ্রমনরত থাকতেন, তখন বাহনের উপরই নফল নামায পড়তেন। এ সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য গ্রন্থে ইবনে ওমর, জাবের, আমের প্রমূখ রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ফরয নামাযের জন্যে যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামায়াত কায়েম করতেন আর তখন কার বাহন পশুর পিঠে জামায়াত কায়েম করা সম্ভব ছিলনা, তাই ফরয নামাযের সময় বাহন থেকে নেমে জামায়াত কায়েম করতেন। বাহন যে দিকেই চলতো, ঘুরতো, স্বাভাবিকভাবে তিনি সেদিকে ফিরেই নামায পড়তেন। এ সময় তিনি ইশারায় মাথা নুইয়ে রুকূ সেজদা করতেন। তবে রুকূর চাইতে সেজদায় মাথা বেশি নোয়াতেন।
২. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সওয়ারীর উপর নামায পড়ার ইচ্ছা করতেন তখন তাকে কেবলা মুখী করে নিতেন। নিয়ত বাঁধার পর সওয়ারী যে দিকে যেতে চাইত যেতে দিতেন এবং নিজে নামায পড়ে নিতেন। (আবু দাউদ)।
৩. হযরত মালেক ইবনে হুয়াইরিছ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, দুই ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, যখন নামাযের সময় হবে তখন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে নামায পড়াবে। (সহীহ আল বোখারী)
৪. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি বর্ণনা উদ্ধৃতি হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তাকবীরে তাহরীমার সময় তিনি বাহনকে কিবলামুখী করে নিতেন। তারপর বাকি নামায বাহন যেদিকে যেতো সেদিকে ফিরেই পড়তেন। (মুসনাদে আহম এবং আবু দাউদ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাহনে নামায পড়ার বিষয়ে অন্য যারা বর্ণনা করেছেন তাদের সকলের বর্ণনার মধ্যে মিল আছে। তাঁরা সকলেই বলেছেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনে নামায পড়েছেন এবং বাহন যে মুখী হতো, তিনিও সে মুখীই নামায পড়তেন।” এসব বর্ণনায় তারা এমন কোনো কথা উল্লেখ করেননি যে, তাকবীরে তাহরীমার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনকে কিবলামুখী করে নিতেন। এসব হাদীস বর্ণনা করেছেন আমের ইবনে রাবীয়া, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, জাবের ইবনে আবদল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুম। এই হাদীসগুলো আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত উক্ত হাদীস থেকে অধিকতর সহীহ-শুদ্ধ।
৫. বৃষ্টির সময় এবং কাদামাটির স্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিগণকে সাথে নিয়ে ফরয নামাও যানবাহনে পড়েছেন। অবশ্য এ বিষয়ে একাধিক সূত্রের বর্ণনা নেই। কেবল একজন সাহাবিই এ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসটি মুসনাদে আহমদ, জামে আত তিরমিযি ও নাসায়ীদে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটি হলো : একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিগণকে নিয়ে একটি অপ্রশস্ত জায়গায় উপনীত হন। সেখানে তাঁদের উপর থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল আর নিচে ছিলো কাদামাটি। এমন সময় নামাযের ওয়াক্ত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে মুয়াযযিন আযান এবং একামত দিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের বাহনে করে সবার সামনে চলে গেলেন এবং ঈমাম হিসেবে সাহাবিগণকে সাথে নিয়ে নামায পড়েন। তাঁরা সবাই নিজ নিজ বাহন থেকে নামায পড়েন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারায় রুকূ-সেজদা করেন। তবে রুকূর চাইতে সেজদায় মাথা অধিকতর নিচু করেন।” ঈমাম তিরমিযি বলেছেন হাদীসটি গরীব। অর্থাৎ এক পর্যায়ে হাদীসটির বর্ণনাকারী মাত্র একজন ছিলেন। এক পর্যায়ে উমর ইবনে ডিরমাহ একাই হাদীসটির বর্ণনা করেছেন। অবশ্য হযরত আনাস বাহনে ফরয নামায পড়েছেন বলে প্রমাণ আছে। হাদীসটি একক সূত্রে বর্ণিত হলেও যুক্তিগসংগত। কারণ, বাহন থেকে নেমে জমীনে জামায়াত কায়েম করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে বাহনে নামায পড়াটাই যুক্তিসংগত। আধুনিক কালে যানবাহনের ক্ষেত্রে হাদীসটি খুবই প্রযোজ্য ।

 

You may also like