Home ইসলাম মুসলমানের জীবনার্দশের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঈমান ঈমান এবং আমল আপনাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে

মুসলমানের জীবনার্দশের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঈমান ঈমান এবং আমল আপনাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে

by admin
0 comment

মুসলমানের জীবনার্দশের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঈমান
ঈমান এবং আমল আপনাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

ঈমান

ঈমান আরবী শব্দ। শাব্দিক অর্থ হলো বিশ্বাস স্থাপন। শরীয়তের ভাষায় ঈমান হলো অন্তরে বিশ্বাস, মৌখিক ¯^ীকৃতি ও কার্যে পরিণত করার নাম। অর্থাৎ কোন বিষয়কে গ্রহণ ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও ¯^ীকৃতি দানই ঈমান। গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সদিচ্ছা না থাকলে মৌখিক ¯^ীকৃতির দ্বারা মু’মিন হওয়া যায়না। যা দেখা যায়না বা সরাসরি যে বিষয়ে জ্ঞান নেই পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার নাম ঈমান। মুসলমানের জীবনার্দশের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঈমান। গাছ যেমন তার মূলের উপর দাঁড়িয়ে থাকে, কোন অট্টালিকা যেমন তার ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তেমনি একজন মুসলিম প্রতিষ্ঠিত থাকে ঈমানের ভিতের উপর। যার ঈমান হবে যতো মজবুত মুসলমান হিসাবে তিনি হবেন ততোটা খাঁটি ও উন্নত। প্রত্যেক মুসলমানের সে সর্ম্পকে ¯^চ্ছ ধারণা থাকা দরকার ঈমানিয়াতের প্রতিটি দিক ও সেগুলোর শাখা-প্রশাখা সর্ম্পকে অনাবিল বুঝ ও ধারণা না থাকলে মুসলমানের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার সমূহ আশংকা থেকে যায়। আল্লাহেক এক বলে জানা, মানা, ঘোষণা করা এবং আল্লাহ হুকুম মতো জীবন যাপন করা । ‘ইলাহ’ মানে-উপাস্য, হুকুমকর্তা, ত্রাণকর্তা, মুক্তিদাতা, দোয়া শ্রবণকারী, সাহায্যকারী এবং আইন ও বিধানদাতা। এই ঘোষণা দেয়াকে বলা হয় ‘শাহাদাহ’। ‘শাহাদাহ’ মানে-সাক্ষ্য দেয়া বা সত্য বলে ঘোষণা করা। সে জন্যে এই বাক্যটিকে বলা হয় ‘কালেমায়েশাহাদাহ’।

ঈমান কিভাবে আনবেন

কালেমা তাইয়্যেবার ঘোষণা দিয়ে ঈমান আনতে হয়। ‘কালেমা তাইয়্যেবা’ মানে-‘উত্তম ও পবিত্র বাক্য’। ইসলামের পবিত্র বাক্য বা মূল কথা হলো : লাইলাহা ইল্লাহ অর্থ : ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই।’ কালেমার ঘোষণা দিয়েই ঈমান আনতে হয়। ঘোষণা দিতে হয় এভাবে : আশহাদু আল্লালাইলাহাহু ওয়া’আশহাদুআন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রসূল।’ এই ঘোষণার মূল কথা হলো, আল্লাহকে ইলাহ মেনে নেয়া এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে তাঁর রসূল মেনে নেয়া। এই কালেমা বা পবিত্র বাক্য উচ্চারণ করে যে ঘোষণা ও সাক্ষ্য দেয়াা হয়, তার মূল কথা হলো : আমি জেনে বুঝে ¯^ীকার করছি এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে : আল্লাহই আমার একমাত্র উপাস্য, হুকুমদাতা ও ত্রাণকর্তা। একমাত্র তিনিই আমার মুক্তিদাতা। শুধু তিনিই আমার প্রার্থনা শ্রবণকারী। কেবল তিনিই আমার সাহায্যকারী। আমি সারা জীবন কেবল তাঁরই হুকুম পালন করবো এবং কেবল তাঁরই দাসত্ব করে চলবো। আমি কখনো আল্লাহ্কে ছাড়া কাউকেও ইলাহ মানবোনা। আল্লাহর সাথে আর কাউকেও ইলাহ ¯^ীকার করবোনা। আর কাউকেও হুকুমদাতা ও ত্রাণকর্তা মানবোনা। আর কাউকেও মুক্তিদাতা, সাহায্যকারী এবং প্রার্থনা শ্রবণকারী মানবোনা। আমি আল্লাহ ছাড়া আর কারো বিধান মানবোনা। ঈমান হলো একটি ঘোষণা যা আমরা কালেমা কালিমা তাইয়্যিবা “লা-ইলাহা ইল্ল¬াল্ল¬াহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” অর্থাৎ “আল্ল¬াহ ছাড়া আর কেউ সার্বভৌমত্বের মালিক নয়, হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্ল¬াহর রাসূল”। ঘোষণা দিয়ে ঈমান আনতে হবে। ১. ঈমান আনতে হবে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে। ২. ঈমান হতে হবে খালেস ও শিরক মুক্ত। ৩. ঈমান হতে হবে ঘোষণার বাস্তবায়ন।
কালেমার ঘোষণায় দুইটি অংশ আছে –
১। “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু”
২। “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”

উপরোক্ত দুইটি দিককে
১। গ্রহন করা-মানিয়া লওয়া।
২। এলমী দিক-আমলি দিক।
কালেমা তাইয়্যেবার প্রথম অংশের অর্থ –
ক্স    আরবি ভাষায় ইলাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে-ইবাদতের যোগ্য। শ্রেষ্ঠত্ব, গৌরব মহত্বে সে সত্তা উপাসনার যোগ্য। বন্দেগী ও ইবাদতের যার সামনে মাথা নত করা যায়।
ক্স    ইলাহ শব্দের অর্থ তিনি হবেন অনন্ত শক্তির অধিকারী, যে শক্তির উপলব্দি মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির সীমানা অতিক্রম করে যায়।
ক্স    ইলাহ শব্দের অর্থ আইনদাতা, হুকুমদাতা। জীবনের সকল ক্ষেত্রে তার মুখাপেক্ষী হবে। তাঁর কাছেই সাহায্য ভিক্ষা করতে হবে।
কালেমার প্রথম অংশকে দুইভাবে ভাগ করা যায়-
১। প্রথমভাগ হচ্ছে “নীতিবাচক” বা ‘তাত্তি¡ক’ দিক না বোধক অর্থে অর্থাৎ কোন মাবুদ নেই, প্রভু নেই, সৃষ্টিকর্তা নেই, আমি কাউকে মানিনা। কারো দয়া অনুগ্রহ সাহায্য আমি চাইনা। কাউকেও উচ্চতর ক্ষমতার অধিকারী স্বীকার করি না। কারো ইবাদত বন্দেগী করিনা, কারো সাথে আমার কোন সর্ম্পক নেই।
২। আর দ্বিতীয় দিকে হচ্ছে ‘আস্থা বাচক’ বা ‘বাস্তবিক দিক’ হ্যাঁ বাচক অর্থে অর্থাৎ এসব দিক দিয়ে আমি একমাত্র আল্লাহকেই স্বীকার করি ও মানি।
কালেমা তাইয়্যেবার দ্বিতীয় অংশের অর্থ
লা-ইলাহা ইল¬াল্ল¬াহু বলার পর মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার রিসালত বা শরীয়ত মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন। একথা ¯^ীকার করি। আল্লাহকে নিজেদের মনিব মালিক বাদশাহ ¯^ীকার করার পর একথা অবগত হওয়া একান্ত দরকার যে, সেই বাদশাহর আইন ও হুকুম কী ? আমরা কোন কাজ করলে আল্ল¬াহ খুশি হবেন আর কোন কাজ করলে আল্ল¬াহ নারাজ হবেন। কোন আইন অনুসরণ করলে তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন, আর কোন আইনের বিরোধিতা করলে তিনি আমাদের শাস্তি দিবেন। এসব জানার জন্য আল্লাহতায়ালা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার নবী হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাঁর মাধ্যমে তিনি আমাদের প্রতি তার কিতার (আল কুরআন) নাযিল করেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর হুকুমমত কিরুপে জীবন যাপন করতে হয় তা বাস্তব ক্ষেত্রে দেখিয়ে গেছেন। কাজেই আমরা যখন বলি “মুহাম্মদুর রাসূলূল্লাহ  তখন এ দ্বারা একথাই স্বীকার করা হয় যে, যে আইন যে নিয়মে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবন যাপন করতে বলেছেন সেই নিয়মেই আমরা অনুসরণ করে চলবো। আর সে আইন এর বিপরীত হলে তাকে অমান্য করব।

১.  তাই সকল অবস্থাতেই আল্লাহর আইন মেনে চলা আমাদের একান্ত কর্তব্য।

২. শুধু মেনে চললে দায়িত্ব শেষ হবে না। আল্লাহর আইন জারী না থাকলে আমাদের তা জারী করার জন্য চেষ্টা করতে হবে।

৩. আর এই চেষ্টা করাটাই ফরয।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর তাৎপর্য

সবার ওপরে রয়েছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কথাটির স্থান। এ হচ্ছে সেই জ্ঞান, যা খোদ আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক যুগে তার নবীদের মাধ্যমে মানুষের কাছে প্রেরণ করেছেন। এ জ্ঞান সবার আগে তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম-কে দিয়ে তাকে দুনিয়ায় অবতীর্ণ করেছিলেন। আদম আলাইহিস সালাম-এর পরে এ জ্ঞান লাভ করেছিলেন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও অন্য সব পয়গাম্বর। আবার এ জ্ঞান নিয়েই সবার শেষে দুনিয়ায় তাশরিফ এনেছিলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ নির্ভুল জ্ঞানের মধ্যে কোনো অজ্ঞতার স্পর্শ নেই। শিরক, মুনাফেকি ও কুফরের যত রূপ আছে, মানুষ পয়গাম্বরদের শিা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজ¯^ উপলব্ধি ও বুদ্ধিবৃত্তির ওপর নির্ভর করেছে বলেই তাতে জড়িত হয়েছে।

ঈমানদারকে পুনরায় ঈমান আনতে বলার তাৎপর্য

মুখে মুখে শুধু ঈমানের দাবীকেই যথেষ্ট মনে করা ঠিক হবে না, বরং ঈমানের উপর টিকে থাকার জন্য সকল প্রকার ত্যাগ ও কুরবানীর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আখেরাতের কঠিন আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সুখময় জান্নাত পাওয়ার জন্য যে ব্যবসার কথা আল্ল¬াহতায়ালা ঘোষণা করেছেন তার মূল পুঁিজ হলো ঈমান ও জিহাদ। দুর্বল ঈমান নিয়ে আল্লাহর ঘোষিত ব্যবসা করা কোন মুসলমানের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই আল্লাহতায়ালা ঈমানদার লোকদেরকে জিহাদের ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য প্রথমেই “ত’ুমিনুনা বিল্ল¬াহি ওয়ারাসূলিহি” বলে মযবুত ঈমান আনার শর্ত আরোপ করেছেন। আল্ল¬াহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান কালে ইসলামী আন্দোলনই এই জেহাদের একটি স্তর।
ঈমানের ব্যাপারে কুরআনের ভাষ্য :
১.“কুরআন সৃষ্ট নয়; বরং তা আল্লাহ পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।”
২.“নিশ্চয়ই আমরা আপনার প্রতি কুরআনকে সুস্পষ্টভাবে অবতীর্ণ করেছি” (ইনসান : ২৩)।
২.“নিশ্চয়ই আমরা কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমরা নিজেরাই এর সংরক্ষক” (হিজর : ৯)।
৩. কুরআন হেদায়াত দান করে সে সমস্ত লোকদের যারা মুত্তাকীন, যারা গায়েবে বিশ্বাস করে, নামায কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে। যারা ঈমান আনে আপনার উপর অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের উপর অবতীর্ণ কিতাব সমূহের প্রতি আর যারা বিশ্বাস রাখে পরকালের প্রতি। (বাকারা :  ২-৪)
৪. অত:পর যে তাগুতকে অ¯^ীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে সে এমন এক মজবুত অচ্ছেদ্য রজ্জু ধারণ করে যা কখনো ছিড়বার নয়। (বাকারাহ : ২৫৬)
৫. যারা ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি আর নেক আমল করে তাদের রবের নিকট থেকে তাদের জন্যে রয়েছে পুরস্কার। আর তাদের কোনো ভয় নেই চিন্তাও নেই। (বাকারাহ : ৬২)
৬. অত:পর ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি ও রাসূলের প্রতি। যদি তোমরা ঈমান আনো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে তোমাদের জন্যে বিরাট পুরস্কার রয়েছে। (ইমরান : ১৭৯)
৭. এরা সকলেই আল্লাহ, ফেরেশতা, কিতাব ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান পোষণ করে। (বাকারা : ২৮৫)
৮. মু’মিন মূলত: তারাই আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি যাদের দৃঢ় ঈমান রয়েছে। (নূর : ৬২)
৯. ঈমান আনো আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি এবং আমার অবতীর্ণ নূরের প্রতি। (তাগাবুন : ৮)
১০.যারা আখিরাতে অবিশ্বাসী তাদের আমলসমূহ আমি খুবই চিত্তাকর্ষক করে দিই। অতএব তারা পথভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। (নমল : ৪)
১১.হে নবী আপনি বলুন, আমরা ঈমান আনলাম আল্লাহর প্রতি আর উহার প্রতি যা আমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে, আর উহার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং ইয়াকুবের সন্তানদের প্রতি। (ইমরান : ৮৪)
ঈমানের ব্যাপারে হাদীসের ভাষ্য :
১.     হযরত উবাদা ইবনে সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন : আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্ল¬াহ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই এবং মুহাম্মদ আল্ল¬াহর রাসূল আল্ল¬াহ তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।
২.     হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সত্তরের ও কিছু বেশি ঈমানের শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ শাখাটি হচ্ছে, কালেমা শরীফ লা-ইলাহা ইল¬াল্ল¬াহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর ¯^ীকৃতি আর সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র শাখাটি হচ্ছে, মানুষের চলাচলের রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া এবং লজ্জা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
৩.     হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ব্যক্তি আল্ল¬াহর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য করেই কাউকে ভালোবাসলো বা কারও প্রতি শক্রতা পোষন করলো, আল্ল-াহর ওয়াস্তেই কাউকে দিল এবং গোনাহর পথে কিছু দেওয়া বা গোনাহর পথে খরচ করতে পারে এই আশঙ্কায় কাউকে কিছু দেওয়া থেকে বিরত রইল, সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করে নিল। (আবু দাউদ)
৪.     কোন সৎকাজ করতে পারলে যদি মনে প্রফুল্ল¬তা সৃষ্টি হয়, আর কোন মন্দ কাজ করে ফেললে যদি মনের মধ্যে অনুশোচনা সৃষ্টি হয় তবে বুঝতে হবে; তুমি ঈমানদার।
৫.     হযরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-ঈমানদার ব্যক্তি ও ঈমানের দৃষ্টান্ত হচ্ছে খুঁটির সাথে (রশি দিয়ে বাঁধা) ঘোড়া, যা চতুর্দিকে ঘুরতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত খুটির দিকেই ফিরে আসে। অনুরূপভাবে ঈমানদার ব্যক্তিরাও ভুল করে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে ঈমানের দিকেই ফিরে আসে। অতএব তোমরা মুত্তাকী লোকদেরকে তোমাদের খাদ্য খাওয়াও এবং ঈমানদার লোকদের সাথে ভালো ব্যবহার কর। (বায়হাকী)
৬. হযরত আমর বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ঈমান কি? জবাবে তিনি বললেন ‘ছবর’ (ধৈর্য ও সহনশীলতা এবং ছামাহত দানশীলতা, নমনীয়তা ও উদারতা) হচ্ছে ঈমান। (সহীহ মুসলিম)
৭. হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে কবুল করেছে, সেই ব্যক্তি ঈমানের প্রকৃত ¯^াদ লাভ করেছে। (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
৮. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্য হতে কেহই ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। (সহীহ আল বুখারী ও  মুসলিম)
৯.হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে কেহই ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কামনা বাসনাকে আমার উপস্থাপিত দ্বীনের অধীন করতে না পারবে। (শরহুস সুন্নাহ)
১০. হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল যে ঈমান কাকে বলে উহার নিদর্শন বা পরিচয় কি? উত্তরে তিনি বলেছেন তোমাদের ভাল কাজ যখন তোমাদিগকে আনন্দ দান করবে এবং খারাপ ও অন্যায় কাজ তোমাদিগকে অনুতপ্ত করবে তখন তুমি বুঝবে যে তুমি মু’মিন ব্যক্তি। (মুসনাদে আহমদ)
১১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : “ইসলাম হচ্ছে এই-তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত আদায় কর, রমাদানে সওম সাধনা কর এবং যদি সামর্থ থাকে তবে (আল্লাহর ঘরের হজ্জ কর। তিনি (লোকটি) বললেন; আপনি ঠিক বলেছেন। আমরা বিস্মিত হলাম, সে নিজে তার নিকট জিজ্ঞাসা করেছে আবার নিজেই তার জবাবকে ঠিক বলে ঘোষণা করছে। এরপর বলল : আচ্ছা আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। তিনি (রাসূল) বললেন, তা হচ্ছে এই আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও আখেরাতের উপর ঈমান আনা এবং তাকদীরের ভাল মন্দের উপর ঈমান আনা। সে (আগুন্তক) বলল : আপনি ঠিক বলেছেন। তারপর বলল: আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন। তিনি বলেন : তা হচ্ছে এই তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর তুমি যদি তাকে দেখতে নাও পাও তবে তিনি তোমাকে দেখছেন। সে (আগন্তুক) বলল: আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে বলুন। তিনি (রাসূল) বললেন : যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশী কিছু জানে না। (আগন্তুক) বলল : আচ্ছা, তার লক্ষণ সম্পর্কে বলুন। তিনি (রাসূল) বললেন : তা হচ্ছে এই দাসী নিজের মালিককে জন্ম দেবে, সম্পদ ও বস্ত্রহীন রাখালগণ উচু উচু প্রাসাদে দম্ভ করবে। তারপর ঐ ব্যক্তি চলে যায়, আর আমি আরো কিছুক্ষণ বসে থাকি। তখন তিনি (রাসূল) আমাকে বললেন : হে উমার, প্রশ্নকারী কে ছিলেন, তুমি কি জান? আমি বললাম: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলঅধিক ভাল জানেন। তিনি বলেন : তিনি হলেন জিবরীল। তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে তোমাদের কাছে এসেছিলেন। (সহীহ মুসলিম)
১২. রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মু’মিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তস্থল। যখন তারা এর ওপর আমল করল, আল্লাহ তা রহিত করবেন, অত:পর নাযিল করলেন। আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যরে বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। তিনি বলেন-হ্যাঁ। হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন : হ্যা। হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। তিনি বলেন-হ্যাঁ। আর আপনি আমাদেরকে মার্যনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। তিনি বলেন : হ্যা।  (সহীহ মুসলিম)
১৩. আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দাবি নিয়ে দুনিয়াতে তোমাদের যেমন ঝগড়া হয়, তা মু’মিনগণ কর্তৃক তাদের ভাইদের সম্পর্কে যাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করা হয়েছে, তাদের রবের সাথে ঝগড়ার চেয়ে অধিক কঠিন নয়। তিনি বলেন, তারা বলবে; হে আমাদের রব, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করতো, আমাদের সাথে সিয়াম পালন করতো ও আমাদের সাথে হজ্জ করতো, কিন্তু আপনি তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়েছেন। তিনি বলেন : আল্লাহ বলবেন: যাও তাদের থেকে যাকে তোমরা চিনো তাকে বের কর। তিনি বলেন : তাদের নিকট তারা আসবে, তাদের চেহারা দেখে তাদেরকে তারা চিনবে, তাদের কাউকে আগুন পায়ের গোছার অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে, কাউকে পায়ের টাকনু পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে, তাদেরকে তারা বের করবে অত:পর বলবে; হে আমাদের রব, যাদের সম্পর্কে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আমরা বের করেছি। তিনি বলেন : আল্লাহ বলবেন: বের কর যার অন্তরে এক দিনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে। অত:পর বলবেন: যার অন্তরে অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে এক সময় বলবেন, যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান রয়েছে। (নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ)
১৪. আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; জান্নাতিরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, অত:পর আল্লাহতায়ালা বলবেন, বের কর যার অন্তরে সর্ষে পরিমাণ ঈমান রয়েছে, ফলে তারা সেখান থেকে বের হবে এমতাবস্থায় যে কালো হয়ে গেছে, অত:পর তাদেরকে বৃষ্টির নহর অথবা সঞ্জিবনী নহরে নিক্ষেপ করা হবে, ফলে তারা নতুন জীবন লাভ করবে যেমন নালার কিনারায় ঘাস জন্মায়। তুমি দেখনি তা হলুদ আকাবাকা গজায়? (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
১৫.হযরত আবু বকর ইবনআবু শায়বা (রহ:) ও হযরত যুহায়র ইবন হারব (রহ:) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা রাসুলুল্লাহ লোকসমক্ষে ছিলেন, এমতাবস্হায় তাঁর কাছে একজন লোক হাযির হলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান কী? রাসুলুল্লাহ বললেন : ঈমান হলো, আল্লাহ, তার ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমুহ, তাঁর সঙ্গে মুলাকাত, তাঁর প্রেরিত রাসুলদের প্রতি ঈমান আনা এবং শেষ উত্থানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। তারপর আগন্তুক প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইসলাম কী? রাসুল  বললেন : ইসলাম হলো, আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা, ফরয নামায কায়েম করা, নির্ধারিত যাকাত আদায় করা এবং রামাযানের রোযা পালন করা। আগন্তুক আবার প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহসান কী? রাসুল বললেন : ইহসান হলো, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করবে যেন তাঁকে দেখছ; যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে ভাববে যে, তিনি তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক প্রশ্ন করলেন, কিয়ামত কখন হবে? রাসুল বললেন : এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, তিনি অধিক অবহিত নন। তবে হ্যা কিয়ামতের কিছু আলামত বর্ণনা করছি, দাসী তার প্রভূকে জনা দেবে। এটি কিয়ামতের আলামতের একটি। বিবস্ত্রদেহ, নগ্নপদ লোক হবে জনগণের নেতা; এটা কিয়ামতের আলামতের একটি। আর রাখালদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত। পাঁচটি বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত কেউ কিছু জাননা। এ বলে রাসুলুল্লাহ     (এ আয়াতটি) তিলাওয়াত করেন : নিশ্চয়ইই আল্লাহ, তাঁরই কাছে রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান। তিনি নাযিল করেন বৃষ্টি এবং তিনি জানেন, যা রয়েছে মাতৃগর্ভে। আর কেউ জাননা কি কামাই করবে সে আগামীকাল এবং জাননা কেউ কোন মাটিতে সে মারা যারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব জানেন, সব খবর রাখেন। (সূরা লূকমান : ৩৪) রাবী বলেন, তারপর লোকটি চলে গেল। রাসুলুল্লাহ বললেন : লোকটিকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁরা তাকে আনার জন্য গেলেন। কিন্তু কাউকে পেলেন না। তারপর রাসুলুল্লাহ বললেন : ইনি জিবরাঈল আলাইহিস সালাম লোকদের দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছিলেন।
মযবুত ঈমানের প্রধান শর্ত দু’টো : ১। শিরকমুক্ত ঈমান বা নির্ভেজাল তাওহীদ। ২। ইমানের দাবিদারকে তাগুতের কাফির হতে হবে। সুতারং মযবুত ঈমানের  অধিকারীকে,  ১) শিরক  ২) তাওহীদ ও  ৩) তাগুত সর্ম্পকে সুষ্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে ।

You may also like