Home ইসলাম নামায পড়ার নিয়ম

নামায পড়ার নিয়ম

by admin
0 comment

নামায পড়ার নিয়ম

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

চার রাকা’আত নামাযের নিয়ম কানুন জানলে দুই রাকা’আত ও তিন রাক’আতের নিয়ম কানুনও জানা হয়ে যাবে তাই চার রাকা’আত নামায কিভাবে পড়তে হবে তার বিস্তারিত নিয়ম কানুন তুলে ধরা হলো :

প্রথম রাকা’আতে রুকুর আগের মাসআলাহ সমূহ :

১. হাত উঠানো (হাতের তালু ও আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে কাঁধ কিংবা কান পর্যন্ত উঠানো) (সুন্নাত)।

২. তাকবীরে তাহরীমা বলা (ফরজ)اَللهُ اَ كْبَرُ   “আল্ল¬াহই সর্বশ্রেষ্ঠ বলা”

৩.হাত বাঁধা (তাকবীরে তাহরীমা উচ্চারণের সময় হাত উঠাবার পর হাত নামিয়ে ডান হাত বাম হাতের পিঠের উপর স্থাপন করা)। ডান হাতের আঙ্গুলগুলি দিয়ে বাম হাতের কব্জীকে শক্ত করে ধরা (সুন্নাত)।

৪.দুই হাত নাভির উপরে বুকের উপরও বাঁধা যাবে (সুন্নাত)।

৫.মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে রাখা।

৬.দু’চোখের নজর (দৃষ্টি) সেজদার জায়গায় রাখা।

৭.সানা পড়া (সুন্নাত)    سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَاَلَ جَدُّكَ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা”।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার পবিত্রতা এবং প্রশংসা বর্ণনা করছি : আপনার নাম বড়ই মহান। আপনার মাহাত্ম্য ও সম্মান অতীব উচ্চ এবং আপনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, যার সামনে মাথা নত করা যায়।

৮.তা‘উজ (আউযুবিল্ল¬াহ) পড়া (সুন্নাত)।                                       اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الْشَّيطَانِ الرَّجِيْمِ

উচ্চারণ : আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।

অর্থ : আমি বিতাড়িত শয়তানের (ওয়াসওয়াসা) কুমন্ত্রণা হতে একমাত্র আল্ল¬াহতায়ালার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

৯.তাসমিয়া (বিসমিল্লাহ) পড়া (সুন্নাত)। بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

অর্থ : আমি পরম দাতা দয়াময় আল্লাহতাআলার নামে আরম্ভ করছি।

১০.আলহামদু সূরা সম্পূর্ণ অংশ পড়া (ওয়াজিব)।

ا َ لْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ﴿٢﴾ ا َلرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ ﴿٣﴾ مَالِك يَوْم ِالدِّينِ ﴿٤﴾ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ﴿٥﴾ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ﴿٦﴾ صِرَاطَ الَّذِين أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِالْمَغْضُوب عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ ﴿٧﴾

উচ্চারণ : আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আর রাহমানির রাহীম। মালিকি ইয়াওমিদ্দীন। ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন। ইহদিনাস সিরাত্বাল মুসতাক্বীম। সিরাত্বাল লাযীনা আন‘আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদদ্বোয়াল্লিন। আমীন”।

অর্থ : সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহতায়ালার জন্য যিনি সকল সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা। যিনি দাতা, দয়াময় মেহেরবান। যিনি বিচার দিনের মালিক (অধিপতি), আমরা সর্বাবস্থায় একমাত্র তোমারই ইবাদত (দাসত্ব) করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ দেখাও, সেসব লোকের পথ যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছো। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গযব (অভিশম্পাৎ) নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

সারাদিন কমপক্ষে ৩২ বার (অর্থাৎ ফরয ১৭ রাকা’আতে, সুন্নাত ১২ রাকা’আতে এবং বিতর ৩ রাকা’আতে) আমরা নামাযে কি ওয়াদা করছি আর বাস্তবে কি করছি তা ভেবে দেখা দরকার।

১১.সূরা ফাতিহা পড়া শেষে اَمِيْن ‘আমিন’ বলা (সুন্নাত)।

১২.সূরার শুরুতে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া (সুন্নাত)।

১৩.ক্বিরাত পড়া (ফরজ)। قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ ﴿١﴾ اَللهُ الصَّمَدُ ﴿٢﴾ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ﴿٣﴾ وَلَم ْيَكُنْ لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ﴿٤﴾

উচ্চারণ : ক্বুল-হুওয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুস সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ”।

অর্থাৎ : বলুন, তিনি আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তার মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেন নাই এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নাই এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নই। (সূরা ১১২ ইখলাছ : আয়াত ১-৪)

১৪.সূরা মিলানো (ওয়াজিব)।

১৫.প্রথম রাকা’আতে সূরা/আয়াত বড় পড়া।

রুকূর মধ্যে : প্রথম রাকা’আতের রুকুর মাসআলাহ সমূহ

১.রুকুতে যাবার সময় اَللهُ اَكْبَرُ আল্ল¬াহু আকবার’ বলা (সুন্নাত)।

“আল্ল¬াহু আকবার”-আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ

২.রুকু করা (ফরজ)।

৩.রুকুতে দেরী করা (ওয়াজিব)।

৪.রুকুতে থেকে তাসবিহ পড়া কমপক্ষে ৩ বার (সুন্নাত)।

রুকুর তাসবীহ হলো- سُبحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْم “সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম”-আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

এছাড়াও পড়া যায়- سُبْحَنَاكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّناَ وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِي

উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ-ফিরলী।

অর্থ : হে আল্লাহ তুমি পাক পবিত্র, হে আমাদের রব তোমার প্রশংসা সহকারে ফরিয়াদ করছি! তুমি আমাকে মাফ কর।

রুকুতে যাবার নিয়ম :

ক. রুকুতে গিয়ে জড়িয়ে ধরার মত দু’হাত হাঁটুতে স্থাপন করা। (হাঁটুতে হাতের তালু রেখে হাত দিয়ে হাঁটুকে মজবুতভাবে ধরতে হয়) তাতে শরীরের ভারটা হাতের উপর পড়ে এবং কনুই ও হাঁটু সোজা থাকে।

খ. পুরুষের ক্ষেত্রে দুই বাহু পাঁজর থেকে আলাদা করে ফাঁক করে রাখা।

গ. পিঠ সোজাসুজি লম্বা করে বিছিয়ে রাখা। কোমর, পিঠ ও মাথা এক রেখা বরাবর সমান থাকবে এবং মাটির সমান্তরাল থাকে। মাথা পিঠ থেকে নিচু হয় না এবং পিঠ বাঁকা অবস্থায় থাকে না। অর্থাৎ মাথা পিঠের বরাবর রাখা।

ঘ.রুকুতে কোমর ও মাথা একসমান থাকবে। মাথা কোমর থেকে উঁচুও হবেনা, নিচুও হবে না।

রুকু হতে উঠার নিয়ম :

ক. রুকু হতে উঠার সময়- ‘সামিআল্ল¬াহু লিমান হামিদাহ’ বলা সুন্নাত।   سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

উচ্চরণ : “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা”

অর্থ : আল্ল¬াহতায়ালা প্রশংসাকারীর প্রশংসা শোনেন।

খ. রুকু হতে সোজা হয়ে খাড়া হওয়া (ওয়াজিব)।

গ. রুকু হতে সোজা হয়ে খাড়া হওয়ার পর দোয়া পড়া।

رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ – حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা লাকাল হামদ, হামদান কাছিরান, ত্বাইয়্যেবান, মোবারাকান ফীহি’।

অর্থ : হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য, এমন ব্যাপক প্রশংসা, যাতে রয়েছে খুবই উত্তম বরকত। এ প্রশংসায় মঙ্গল হোক বরকত হোক।

১. হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (নামাযে রুকু হতে মাথা উঠানোর সময়) ইমাম যখন সামিআল্লাহু-লিমান হামিদাহ বলবে, তোমরা তখন আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ বল। কেননা, যে ব্যক্তির এ কথা ফেরেশতাদের এ কথার সাথে (অর্থাৎ একই সময়ে) উচ্চারিত হবে, তার অতীতের সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (সহীহ আল বোখারী -৭৫২)

২. হযরত রিফ’আ ইবনে রাফে’ যুরাকী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে নামায আদায় করছিলাম। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের জামায়াতে ইমামতি করছিলেন, যখন তিনি নামাযে রুকু থেকে সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে দাঁড়ালেন, তখন এক সাহাবী পিছন থেকে রাব্বনা লাকাল হামদ বলার পর হামদান কাছীরান ত্ব্যায়্যিবান মুবারকান ফিহি এই শব্দগুলিও বললেন। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন যে, কওমের মধ্যে উক্ত কালেমাগুলি কে বলেছিলেন? এক সাহাবী বললেন হুযুর! এই কালিমাগুলি আমি আদায় করেছিলাম। হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যখন তুমি এই কালেমাগুলি আদায় করতেছিলে-তখন আমি দেখলাম ৩০ জন ফেরেশতা ঐ কালেমাগুলি লুফে নেয়ার জন্য লাফিয়ে দ্রুত ধাবিত হচ্ছেন কার আগে কে ঐ কালেমাগুলি নিয়ে তার সওয়াব লিখবেন। (সহীহ আল বোখারী-৭৫৫)

ঘ.দুই হাত দু‘পাশে সোজা করে রাখা।

ঙ.রুকু হতে সোজা হয়ে খাড়া হওয়ার সময় রুকুর সমান হওয়া।

চ.রুকুতে দৃষ্টি পায়ের পাতার উপর রাখা।

সেজদায় : প্রথম রাকা’আতের প্রথম সেজদার মাসআলাহ সমূহ

১.সেজদাতে যাবার সময় اَللهُ اَكْبَرُ ‘আল্ল¬াহু আকবার’ বলা (সুন্নাত)।

২.সেজদা করা (ফরজ)।

৩.সেজদাতে দেরী করা (ওয়াজিব)।

৪.সেজদাতে থেকে তাসবিহ পড়া কমপক্ষে ৩ বার (সুন্নাত)।

سُبحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلَي “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা”-আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

এছাড়াও পড়া যায়-سُبحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّناَ وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِيْ ْ

উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা, রাব্বানা, ওয়াবিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগ-ফিরলী।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি পাক পবিত্র, হে আমাদের রব! তোমার প্রশংসা সহকারে ফরিয়াদ করছি, তুমি আমাকে মাফ কর।

সেজদায় যাওয়ার নিয়ম :

ক. হাতের পূর্বে হাঁটু যমীনে রাখা।

খ. তারপর দুই হাত রাখা।

গ. অতঃপর নাক রাখা।

ঘ. সবশেষে কপাল রাখা।

ঙ. পুরুষের দুই কনুই উপরে উঠিয়ে রাখা।

চ. পিঠ সোজা করে রাখা।

ছ. দুই পায়ের পাতা খাড়া করে রাখা।

জ. দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো ভাঁজ করে কেবলামুখী করে রাখা।

ঝ. হাতের তালু ও আঙ্গুলগুলো বিছিয়ে রাখা।

ঞ.তালু থেকে কনুই পর্যন্ত দুইহাত মাটি থেকে উঁচু করে রাখা।

ট. একবারে মিলিয়ে না রাখা আবার বেশী ফাঁকও না রাখা।

ঠ. কেবলামুখী রাখার জন্য মিলিয়ে রাখা।

ড. সিজদায় দুই হাতের তালু ঘাড় অথবা কান বরাবর রাখা।

ঢ.এ সময় দৃষ্টি নাকের ডগার ওপর রাখা।

৫.সেজদা হতে উঠার সময়اَللهُ اَكْبَرُ   ‘আল্ল¬াহু আকবার’ বলা।

সেজদা হতে উঠার নিয়মসমূহ :

          ক. প্রথম মাথা ও কপাল উঠাতে হয়।

          খ. অতঃপর নাক উঠাতে হয়।

          গ. সবশেষে হাত উঠাতে হয়।

৬.       সেজদা হতে সোজা হয়ে বসা (ওয়াজিব)।

সেজদা হতে সোজা হয়ে বসার নিয়ম :

          ক. বাম পা মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতে হয়।

          খ. ডান পায়ের আঙ্গুলের উপর পাতা দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়।

          গ. পায়ের আঙ্গুলগুলো ভাঁজ করে কিবলামুখী করে রাখতে হয়।

          ঘ. বসা অবস্থায় দৃষ্টি কোলের দিকে অথবা শাহাদাত অঙ্গুলির দিকে রাখা।

          ঙ. বসার সময় সেজদার মত লম্বা করা।

চ. বসা অবস্থায় দোয়া পড়া-

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَاعْفِنِيْ وَارْزُقْنِيْ وَازْبِرْنِيْ وَارْفَعْنِيْ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগ ফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়া’ফিনী, ওয়ার জুকনী, ওয়াজ বিরণী, ওয়ার ফানি।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি দয়া কর, আমাকে হেদায়েত দান কর (অর্থাৎ দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ) আমাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখ, আমার রুজির ব্যবস্থা করে দাও, আমাকে সুস্থতা দান কর, আমার মান মর্যাদা বাড়িয়ে দাও।

প্রথম রাকাতের দ্বিতীয় সেজদার মাসআলাহ সমূহ

১.সেজদাতে যাবার সময় اَللهُ اَكْبَرُ ‘আল্ল¬াহু আকবার’বলা।

২.সেজদা করা (ফরজ)।

৩.সেজদাতে দেরী করা (ওয়াজিব)।

৪.সেজদাতে থেকে তাসবিহ পড়া কমপক্ষে ৩ বার।                                   سُبحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلَي

উচ্চারণ : “সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা”-

অর্থ : আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

এছাড়াও পড়া যায় –                                       سُبحَانَكَ اَللّٰهُمَّ ّرَبَّناَوَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِيْ

উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ-ফিরলী।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি পাক পবিত্র, হে আমাদের রব, তোমার প্রশংসা সহকারে ফরিয়াদ করছি! তুমি আমাকে মাফ কর।

সেজদাতে যাওয়ার নিয়ম :

ক.হাতের পূর্বে হাঁটু যমীনে রাখা।

খ.তারপর দুই হাত রাখা।

গ.অত:পর নাক রাখা।

ঘ.সবশেষে কপাল রাখা।

ঙ.দুই কনুই উপরে উঠিয়ে রাখা।

চ.পিঠ সোজা করে রাখা।

ছ.দুই পায়ের পাতা খাড়া করে রাখা।

জ.দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো ভাঁজ করে কেবলামুখী করে রাখা।

ঝ.হাতের তালু ও আঙ্গুলগুলো বিছিয়ে রাখা।

ঞ. তালু থেকে কনুই পর্যন্ত দুইহাত মাটি থেকে উঁচু করে রাখা।

ট.একবারে মিলিয়ে না রাখা আবার বেশী ফাঁকও না রাখা।

ঠ.কেবলামুখী রাখার জন্য মিলিয়ে রাখা।

ড.সিজদায় দুই হাতের তালু ঘাড় অথবা কান বরাবর রাখা।

ঢ.এ সময় দৃষ্টি নাকের ডগার ওপর রাখা।

৫.সেজদা হতে উঠার সময়اَللهُ اَكْبَرُ   ‘আল্লাহু আকবার’ বলা (সুন্নাত)।

সেজদা হতে উঠার নিয়ম :

ক.প্রথম মাথা ও কপাল উঠাতে হয়।

খ.অতঃপর নাক উঠাতে হয়।

গ.সবশেষ হাত উঠাতে হয়।

ঘ.তারপর হাঁটু উঠাতে হয়।

৬.সেজদা হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো (ওয়াজিব)।

সেজদা হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর নিয়ম :

সেজদা হতে দাঁড়াবার সময় দুইহাত পা ও হাঁটু ধরে উরুর উপর ভর করে দাঁড়াতে হয়।

বিঃদ্রঃ দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত নামায প্রথম রাকা’তের মতই পড়তে হবে ।

শুধুমাত্র তিন ও চার রাকা’ত নামাযে দ্বি তীয় রাখাতে তাশাহুদ পড়তে হবে।

তাশাহহুদের বৈঠকে বসার নিয়ম :

ক.বাম পায়ের পাতা মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতে হয়।

খ.ডান পায়ের পাতা দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়।

গ.পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে রাখতে হয়।

৭.তাশাহহুদ পড়া (ওয়াজিব)।

اَلتَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ وَالصَّلَوْاةُ والْطَيِّبَاتُ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ – اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَ عَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ اَشْهَدُاَن ْلَّا اِلٰهَ اِلَّاالله ُوَاَشْهَدُ اَنّ َمُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُهُ –

উচ্চারণ : আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্সালাওয়াতু ওয়াত তাইয়্যিবাত। আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবীয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আসসালামু আলাইনা ওয়া আ‘লা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন। আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদুআন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

অর্থ : সমস্ত সম্মান মর্যাদা আল্লাহতায়ালার জন্য এবং নামায (শারীরিক ইবাদাত) এবং আত্মিক (জীবাত্মার) মানসিক (বক্ষস্থিতঅদৃশ্য গোশত পিন্ড কলব) ও শারীরিক (দেহাভ্যন্তরস্থ রিপুর অনিষ্টমুক্ত) পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধতা শুধুমাত্র আল¬াহতায়ালার জন্য নিবেদিত। হে নবী! আপনার প্রতি সালাম (শান্তি) রহমত (করুণা) এবং বরকত (অনুগ্রহ) অবারিত ধারায় বর্ষিত হোক। আমাদের প্রতি এবং সালিহীন (আত্মিক মানসিক শারীরিক পরিশুদ্ধসম্পন্ন) বান্দাদের প্রতিও সীমাহীন সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্ল¬াহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দাহ ও রাসূল (প্রেরিত পুরুষ)।

তাশাহহুদের বৈঠক হতে উঠে দাঁড়াবার নিয়ম :

ক.তাশাহহুদের বৈঠক শেষে اَللهُ اَكْبَرُ ‘আল্ল¬াহু আকবার’ বলে উঠে দাঁড়াতে হয়।

খ. পায়ের পাতার অগ্রভাগে এবং হাঁটু যমীনে ঠেকিয়ে দুই উরুতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে হয়।

দুই, তিন ও চার রাকা’আত বিশিষ্ট নামায আখেরী বৈঠকের মাধ্যমে শেষ করতে হবে।

আখেরী বেঠকের মাসমালাসমূহ

১.আখেরী বৈঠক (ফরজ)।

২.আত্তাহিয়্যাতু পড়া (ওয়াজিব)।

اَلتَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ وَالصَّلَوْاةُ وَالْطَيّبَاتُ – اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ ا َيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ ا َلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَ عَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ – اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّااللهُ وَاَشْهَدُاَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ هْ وَرَسُوْلُهُ –

উচ্চারণ : আত্তাহিয়্যাতু লিল্ল¬াহি ওয়াছছালাওয়াতু ওয়াত তাইয়্যিবাত। আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবীয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লা¬হি ওয়াবারাকাতুহু। আসসালামু আলাইনা ওয়া আ‘লা ইবাদিল্ল¬াহিছ ছালিহীন। আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্ল¬াহু ওয়া আশহাদুআন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

অর্থ : সমস্ত সম্মান মর্যাদা, নামায এবং আত্মিক, মানসিক, অদৃশ্য গোশত পিন্ড কলব ও শারীরিক পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধতা শুধুমাত্র আল্লাহতায়ালার জন্য নিবেদিত। হে নবী! আপনার প্রতি সালাম (শান্তি) রহমত (করুণা) এবং বরকত (অনুগ্রহ) অবারিত ধারায় বর্ষিত হোক। আমাদের প্রতি এবং সালিহীন (আতিœক মানসিক শারীরিক দিক থেকে পরিশুদ্ধ) বান্দাদের প্রতিও সীমাহীন সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্ল¬াহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দাহ ও রাসূল।

৩.দরূদ শরীফ পড়া (সুন্নাত)।

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَهِيْمَ وَعَلٰى اَلِ اِبْرٰهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ                                                                  اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَ هِيْمَ وَعَلٰى اَلِ اِبْرٰهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ –

উচ্চারণ : আল্ল¬াহুমা সালি¬ আ‘লা মুহাম্মদিওঁ ওয়া আ‘লা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্ল¬াইতা আ’লা ইবরাহীম ওয়া আ’লা আলি ইবরাহীমইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্ল¬াহুমা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আ’লা ইবরাহীম ওয়া আ’লা আলি ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অর্থ : হে আল্ল¬াহ! তুমি হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার বংশধরদের প্রতি রহমত বর্ষণ করো। যেমন রহমত বর্ষণ করেছো হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এবং তার বংশধরদের প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি অত্যন্ত প্রশংসিত এবং মহান। হে আল্ল¬াহ হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবংতাঁর বংশধরদের প্রতি বরকত (অনুগ্রহ) বর্ষণ করো যেমন বরকত (অনুগ্রহ) বর্ষণ করেছো হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তার বংশধরদের প্রতি। হে মহিমাময়! নিশ্চয়ই সকল প্রকার প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য।

৪.দোয়ায়ে মাছুরা পড়া (সুন্নাত)।

اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ ظَلَمتُ نَفْسِيْ ظُلْمًاكَثِيْرًا وَّ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلاَّ اَنْتَ فَاغْفِرْلِي ْمَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِىْ اِنَّكَ ا َنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণ : আল্ল¬াহুম্মা ইন্নী জালামতু নাফসী জুলমান কাসীরাওঁ ওয়া লা-ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্ল¬া আনতা, ফাগফিরলী, মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা, ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।

অর্থ : হে আল্ল¬াহ! আমি আমার আত্মার উপর বড়ই অত্যাচার করেছি এবং তুমি ভিন্ন কেউই পাপসমূহ ক্ষমা করতে পারে না। অতএব তুমি নিজ হাতে আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার উপর রহমত (করুণা) বর্ষণ করো। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।

৫.সালাম দিয়ে নামায শেষ করা (ওয়াজিব)।اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ

উচ্চারণ : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্ল¬াহ

অর্থ : তোমার প্রতি আল্ল¬াহর সালাম (শান্তি) ও রহমত (করুণা) বর্ষিত হোক) বলে নামায শেষ করা।

৬.প্রথমে ডান দিকে ফেরা।

৭.তারপর বামদিকে ফেরা।

৮.ডানদিকে ও বাম দিকে ফেরার সময় দেহ কেবলামুখী থাকা।

৯.মাথা নিচু করতে হবে না।

১০.স্থির সোজা বসা অবস্থায় শুধু চেহারা ডানে-বামে ঘুরাতে হবে।

আখেরী বৈঠকে বসার নিয়ম :

ক. বাম পায়ের পাতা মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতে হয়। খ. ডান পায়ের পাতা দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়।

গ. পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে রাখতে হয়।

ঘ. বাম উরুর উপর বাম হাত এবং ডান উরুর উপর ডান হাত রাখা।

ঙ. ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা কিবলার দিকে ইঙ্গিত করা।

চ. আঙ্গুল হাঁটুর নীচে ঝুঁকে না পড়া।

ছ. বুড়ো আঙ্গুল মধ্যমার উপর রেখে একটা বৃত্তের মতো বানানো।

জ. দৃষ্টি শাহাদাত আঙ্গুলটির দিকে থাকা।

You may also like