Home ইসলাম নামায কিভাবে পড়বো পর্ব-৫ (নামাযে কি কি পড়তে হয়)

নামায কিভাবে পড়বো পর্ব-৫ (নামাযে কি কি পড়তে হয়)

by admin
0 comment

নামায

নামায কিভাবে পড়বো পর্ব-৫

(নামাযে কি কি পড়তে হয়)

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

নামাযের ব্যাপারে রাসূল (সা.)-এর বাণী

. নামাযের ব্যাপারে রাসূল (সা:)-এর বাণী      

কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হিসাব নেয়া হবে নামাযের

নামায জানমালের নিরাপত্তা লাভের উপায়

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত

সময়মতো নামায পড়ার ফযীলত

সময়মত নামায না পড়ার পরিণতি

যথাযথভাবে নামায পড়ার পদ্ধতি

জামায়াত কায়েমের ফযীলত

এক নজরে জামায়াতে নামাযের ফযীলত

তাকবীরে উলার সাথে নামায পড়া

নামায গুনাহ মাফের উসিলা

নামাযি আল্লাহর সান্নিধ্য এবং আরশে ছায়া পাবে

নামায মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে

নামাযে অবহেলা/শৈথিল্য প্রদর্শনের শাস্তি

নামায নষ্ট করা

নামাযে চুরি

মসজিদে নামায

মসজিদে যাওয়ার ফযীলত

নামাযের জন্য অপেক্ষা করার ফযীলত

ফযর ও এশার জামায়াতে হাযির হওয়া

আছরের নামাযে হাজির হওয়া

জামায়াত আরম্ভ হলে সুন্নাত নেই

তাহাজ্জুদের চাইতে ফজরের জামায়াতের গুরুত্ব বেশি

জামায়াতে উপস্থিতির ক্ষেত্রে বিলম্ব ও ব্যতিক্রমের অবকাশ

নামাযে কাতার সোজা করা

প্রথম কাতারের ফযীলত

নামাজের সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া

সুন্নাতে মুয়াক্কাদার পুরস্কার

নামাযের সময়

কেরাত পড়ার বিধান

কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হিসাব নেয়া হবে নামাযের

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্য থেকে যে আমলটির হিসেব সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে তা হলো নামায। যদি এ হিসাবটি নির্ভুল পাওয়া যায় তাহলে সে সফলকাম হবে ও নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। আর যদি এহিসাবটিতে গলদ বা গড়মিল দেখা যায় তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তার ফরযগুলির মধ্যে কোনো কমতি থাকে তাহলে মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কিছু নফলও আছে নাকি, তার সাহায্যে তার ফরযগুলির কমতি পূরণ করে দাও।’

নামায জানমালের নিরাপত্তা লাভের উপায়

আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যতোক্ষণ না তারা বলবে ‘আল্লাহ্ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং নামায কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে।’ এই কাজ করলে তারা আমার পক্ষ থেকে জানমালের নিরাপত্তা লাভ করবে। তবে ঐগুলো ছাড়া অন্য কোনো হক থাকলে তা ভিন্ন এবং তাদের হিসাব আল্লাহর যিম্মায় থাকবে। (সহীহ আল বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত

১.হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত হচ্ছে-যেমন একটি বড় নদী প্রবাহিত হয়ে গেছে তোমাদের কারো ঘরের দরজার সামনে দিয়ে তাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে।

২.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কারো বাড়ীর সামনে যদি একটা পানির ফোয়ারা (খাল-বিল, পুকুর, প্রবাহমান নদী) থাকে এবং সে তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে : তবে তার শরীরে কেনো ময়লা অবশিষ্ট থাকতে পারে কি? সাহাবাগণ বললেন : না, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এই হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত, এর সাহায্যে আল্লাহতায়ালা (নামাযির) যাবতীয় গুনাহ-খাতা মাফ করে দেন।

ঈমানের পর ইসলামের প্রধান স্তম্ভ ও শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো নামায। ঈমানের বহিঃপ্রকাশের জন্য ইসলামের অপর চারটি রুকনের মধ্যে নামাযই সার্বজনীন। মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচ্য উপরোক্ত হাদীসে চমৎকার দৃষ্টান্তের মাধ্যমে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও উপকারিতা তুলে ধরেছেন। সত্যিকার অর্থেই যদি কারো বাড়ির আঙ্গিনায় পুকুর বা নদী-নালা থাকে আর সে তাতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে তা হলে তার শরীরে ময়লা থাকতে পারে না। তদ্রƒপ কেউ যদি পাঁচবার মনের সকল কূটিলতা দূর করে খুশু-খুজুর সাথে একাগ্রচিত্তে সালাত আদায় করে তাহলে তার পাপ পঙ্কিলতা দূরীভূত হয়ে সে হতে পারে একজন নিষ্কলুষ মানুষ।

সময়মতো নামায পড়ার ফযীলত

১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন : আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলাম : কোন কাজটি সবচেয়ে ভাল? তিনি জবাব দিলেন : যথাসময়ে নামাযপড়া। জিজ্ঞেস করলাম : তারপর কোন কাজটি সবচেয়ে ভাল? তিনি জাবাব দিলেন : পিতামাতার সাথেভাল ব্যবহার করা। জিজ্ঞেস করলাম : তারপর কোনটি? জবাব দিলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা।

২.হযরত আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে খোদা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন: আমি তোমার উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং আমি নিজের নিকট অঙ্গীকার করেছি, যে ব্যক্তি সময়ানুবর্তিতার সাথে নামায সমূহের পূর্ণ হিফাযতকারী হিসাবে আমার কাছে আসবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে নামায সমূহের হিফাযত করবেনা তার জন্য আমার নিকট কোন অঙ্গীকার নেই।

৩.হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো : হে রাসূল! ইসলামের কোন কাজ আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয়? রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যথাসময়ে নামায পড়া। যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল তার ধর্ম নেই। নামায ইসলামের খুঁটি। (বায়হাকী)

৪.হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন আততায়ীর আঘাতে আহত হলেন, তখন তাঁকে জানানো হলো যে, হে আমীরুল মুমিনীন! নামাযের সময় উপস্থিত। তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমি নামায পড়বো। নামায যে ছেড়ে দেয় ইসলামের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। অতঃপর তিনি নামায পড়লেন, তখনো তাঁর ক্ষতস্থান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল।

সময়মত নামায না পড়ার পরিণতি

১.রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন : যে ব্যক্তি যথারীতি নামায আদায় করবে না, তার জন্য তা আলোকবর্তিকাও হবে না, যুক্তিপ্রমাণও হবেনা, মুক্তির ওসীলাও হবেনা। অধিকন্তুু সে কিয়ামতের দিন ফিরাউন, কারূন, হামান ও উবাই বিন খালাফের সঙ্গী হবে।

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় কোনো কোনো মুসলিম মনীষী বলেছেন যে, উল্লেখিত চারজন কুখ্যাত কাফেরের সাথে বেনামাযীর হাশর হওয়ার কারণ এই যে, নামায তরকের কারণ চার রকমের হয়ে থাকে। অর্থসম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ, রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততা, প্রশাসনিক ব্যস্ততা ও বাণিজ্যিক ব্যস্ততা। নামায পরিত্যাগের কারণ প্রথমটি হলে কারূণের সাথে, দ্বিতীয়টি হলে ফেরাউনের সাথে, তৃতীয়টি হলে হামানের সাথে এবং চতুর্থটি হলে মক্কার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী উবাই বিন খালাফের সাথে তার হাশর হবে।

২.হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললো: হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামের কোন কাজ আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয়? রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি             ওয়াসাল্লাম বললেন : যথাসময়ে নামায পড়া। যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল তার ধর্ম নেই। নামায ইসলামের খুঁটি। (বায়হাকী)

৩.ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, কিয়ামাতের দিন এক ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে দাঁড় করিয়ে জাহান্নামে যাওয়ার আদেশ দেয়া হবে। সে জিজ্ঞেস করবে : হে আমার প্রতিপালক! কি কারণে (আমাকে জাহান্নামের নির্দেশ দেয়া হলো)? আল্লাহ বলবেন : নামায নির্ধারিত সময়ের পরে পড়া ও আমার নামে মিথ্যা কসম খাওয়ার কারণে।

বিশিষ্ট তাবেয়ী (যিনি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেননি, কিন্তু সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন তাকে-তাবেয়ী বলা হয়) আব্দুল্লাহ বিন শাকীফ (রহ.) বলেন : রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ নামায ছাড়া আর কোনো কাজকে ছেড়ে দিলে মানুষ কাফের হয়ে যায় বলে মনে করতেন না। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বে-নামাযীকে সুস্পষ্টভাবে যথাক্রমে কাফের ও বেদ্বীন বলেছেন। ইবনে আব্বাস বলেছেন : ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত নামায তরক করলেও আল্লাহর সাথে যখন সাক্ষাত হবে তিনি ক্রুদ্ধ থাকবেন।

উড়োজাহাজ বা ট্রেন বিমান বন্দর বা রেলস্টেশন ছেড়ে যাবার ৫/৭ মিনিট পরে সেখানে পৌঁছলে আপনি কি ভ্রমণ করতে পারবেন? উড়োজাহাজ বা ট্রেন কি আপনার জন্য অপেক্ষা করবে? কখনো নয়। তাই যারা জেনে-শুনে, বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে নামায অসময়ে আদায় করছেন, তারা অন্যায় কাজ করছেন। তাই নামায প্রকৃত সময়েই আদায় করতে হবে। নামাযকে যারা এর নির্দিষ্ট সময় থেকে পিছিয়ে অসময়ে আদায় করে, তাদেরকে আল্লাহ হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেছেন, “হজ্জের মতো নামাজেরও সময় নির্ধারিত।” অপর সাহাবী ইবনে মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন-এর মতও এমনটিই। তিনি বলেছেন, “হজ্জের মতো নামাজেরও একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে।” তাই হজ্জ যেমন নির্ধারিত সময়ে আদায় না করে অন্য সময়ে আদায় করা যায় না, তেমনি নামায ও নির্ধারিত সময় ছাড়া আদায় করা যায় না। শরয়ী ওজর ব্যতীত নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় না করলে আল্লাহ্ তা কবুল নাও করতে পারেন।

ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ উবাইদুল্লাহ বিন উমার কাওয়ারী বলেন যে, আমি কখনো এশার নামায জামায়াতে পড়তে ভুলতাম না। কিন্তু একদিন আমার বাড়ীতে এক মেহমান আসায় তাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার কারণে এশার জামায়াত ধরতে পারলামনা। পরে এশার নামায ২৭ বার পড়লাম। কারণ হাদীসে আছে, জামায়াতে নামাযের সওয়াব ২৭ গুণ বেশি। কিন্তু রাতে স্বপ্নে দেখলাম, আমি এক দল ঘোড় সওয়ারের সাথে দৌড়ে পাল্লা দিচ্ছি। কিন্তু আমি পেছনে পড়ে যাচ্ছি। যারা আগে ছিল তারা বললো, তুমি কখনো আমাদেরকে ধরতে পারবেনা। কারণ আমরা এশার নামায জামায়াতে পড়েছি আর তুমি পড়েছো একাকী।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা যারা নামায পড়ে বা আদায় করে বটে তবে তা যথাসময়ে ও সঠিক নিয়মে করেনা। নামাযের ব্যাপারে আলস্য ঔদাসীন্য, অনীহা প্রদর্শন করে থাকে। তারা কিয়ামতের দিন শাস্তির সম্মূখীন হবে।

যথাযথভাবে নামায পড়ার পদ্ধতি

১.আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। একদিন রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথীদের নিয়ে নামায আদায়ের পরে বসলেন। এ সময়ে এক ব্যক্তি এসে তাড়াতাড়ি রুকু সিজদা করে নামায পড়লো। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরা ওই ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছো? সে যদি এই অবস্থায় মারা যায় তবে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মাতের বহির্ভূত অবস্থায় মারা যাবে। কাক যেমন তার চঞ্চু দিয়ে রক্তে ঠোকর মারে, সে সেই রকম ঠোকর মেরে নামায সারলো। (সহীহে আবু বকর বিন খুযাইমা)

২.একদিন এক ব্যক্তি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলো। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মসজিদেই বসেছিলেন। লোকটি নামায পড়লো। অতঃপর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে সালাম করলো। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন : তুমি ফিরে যাও এবং নামায পড়। কারণ তুমি নামায পড়নি। সে চলে গেল এবং আগের মতো আবার নামায পড়ে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে সালাম করলো। তিনি সালামের জবাব দিয়ে আবার বললেন : তুমি ফিরে যাও এবং নামায পড়। কেননা তুমি নামায পড়নি। এরূপ তিনবার নামায পড়ার পর লোকটি বললো : হে আল্লাহর রাসূল। আমি এর চেয়ে ভালোভাবে নামায পড়তে পারি না। আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন : প্রথমে নামাযে দাঁড়িয়ে তাকবির বলো। অতঃপর যতোটুকু পারো কুরআন পাঠ করো। অতঃপর রুকু করো এবং রুকুতে গিয়ে স্থির হও। অতঃপর উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াও। তারপর সিজদা দাও এবং সিজদায় গিয়ে স্থির হও। তারপর স্থির হয়ে বসো অতঃপর আবার সিজদা দাও এবং সিজদায় স্থির হও। এভাবে নামায শেষ করো। (সহীহ আল বোখারী, ১ম খ-, পৃষ্ঠা- ৮৮ ও ২য় খ-, পৃষ্ঠা-৮৮৮, হাদীস নং- ৬৩১ ও ৭২৪৬ ও সহীহ মুসলিম)

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

৩.যে ব্যক্তি রুকু ও সিজদার মধ্যবর্তী স্থানে পিঠটান করে দাঁড়ায়না, আল্লাহ তাঁর দিকে দৃষ্টি দেবেন না। (মুসনাদে আহমাদ)

৪. সেই ব্যক্তির নামায মুনাফিকের নামায, যে বসে বসে সূর্যকে প্রত্যক্ষ করতে থাকে, আর যেই সূর্য শয়তানের দুই শিং এর মাঝে পৌঁছে যায় (অর্থাৎ অস্ত যাওয়ার অব্যবহিত পূর্বে) অমনি উঠে দাঁড়ায় এবং চারবার মাথা ঠুকে। ঐ সময়ে আল্লাহকে সে খুব কমই স্মরণ করতে পারে। (সহীহ আল বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

৫.যখনই কেউ নামায পড়ে তখন একজন ফিরিশতা তার ডানে এবং একজন ফিরিশতা তার বামে থাকে। সে যদি সুষ্ঠুভাবে নামায শেষ করে তবে তারা উভয়ে সেই নামাযকে নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌছায়। নচেত তারা তা তার মুখের ওপর ছুঁড়ে মারে। (দারকুতনী)

৬.যে ব্যক্তি সুষ্ঠুভাবে ওযু করে, অতঃপর নামাযে দাঁড়ায়, সুষ্ঠুভাবে-রুকূু সিজদা ও কুরআন পাঠ দ্বারা নামায সম্পন্ন করে, তার নামায তাকে বলে : তুমি যেমন আমাকে সংরক্ষণ করেছ, তেমনি আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করুন। অতঃপর তার জন্য আকাশের দুয়ার খুলে যায় এবং আল্লাহর নিকট পৌছে গিয়ে উক্ত নামাযির পক্ষে সুপারিশ করে। আর যখন কেউ রুকু-সিজদা ও কুরআন পাঠ সুষ্ঠুভাবে করেনা তখন নামায তাকে বলে : তুমি যেমন আমাকে নষ্ট করলে, আল্লাহও তেমনি তোমাকে নষ্ট করুক। অতঃপর তা অন্ধকারে আচ্ছন্ন অবস্থায় আকাশে উঠে যায়। তার জন্য আকাশের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর তাকে পুরানো কাপড়ের মতো গুটিয়ে নামাযির মুখের ওপর ছুঁড়ে মারা হয়।

৭.নামায একটি দাঁড়িপাল্লাস্বরূপ। যে ব্যক্তি এই দাঁড়িপাল্লা পুরোপুরিভাবে মেপে দেয়, তাকে তার পুরস্কারও পুরোপুরিভাবে দেয়া হবে। আর যে কম মেপে দেবে তার সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে যে, যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য ‘ওয়েল’ নির্দিষ্ট রয়েছে। মাপে কম দেয়া যেমন অন্যান্য জিনিসে হতে পারে, তেমনি নামাযেও হতে পারে। আর ‘ওয়েল’ হচ্ছে জাহান্নামের এমন উত্তপ্ত জায়গা, যার উত্তাপ থেকে জাহান্নাম নিজেও আল্লাহর কাছে পানাহ চায়। (মুসনাদে আহমাদ)

৮.সিজদার সময় তোমরা মুখম-ল, নাক ও দুই হাত মাটিতে রাখবে। কেননা আল্লাহতায়ালা আমাকে সাতটি অঙ্গ দিয়ে সিজদা করতে আদেশ দিয়েছেন : কপাল, নাক, দুইহাতের তালু, দুই হাটু ও দুই পায়ের পিঠ। সিজদার সময়ে কাপড় ও চুল সামলাতে নিষেধ করেছেন। যে ব্যক্তি প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে তার অধিকার না দিয়ে নামায পড়ে, তাকে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ পুরো নামাযের সময়টা ধরে অভিশাপ দিতে থাকে। (সহীহ আল বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

৯.হযরত হুযায়ফা এক ব্যক্তিকে দেখলেন ভালোভাবে রুকু সিজদা না করে নামায পড়ছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এভাবে কতদিন যাবত নামায পড়ছ? সে বললো : চল্লিশ বছর। তিনি বললেন : তুমি চল্লিশ বছর যাবত কোন নামাযই পড়নি। এ অবস্থায় মারা গেলে তুমি অমুসলিম অবস্থায় মারা যাবে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা! নামায যদি আমাদের কাছে গুরুত্বহীন কাজ হয়, তাহলে ইসলামের আর কোন কাজটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হবে? কিয়ামতের দিন বান্দাকে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব দিতে হবে। সুতরাং নামাযের প্রতি সর্বাগ্রে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে, যতœশীল হতে হবে, কোনো মতে নামায বাদ দেয়া যাবে না, সময়মত নামায পড়তে হবে, যথাসময়ে নামায আদায় করতে হবে।

জামায়াত কায়েমের ফযীলত

১.আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: -কোনো জনবসতি কিংবা কোনো জনবিরল এলাকায় যদি তিনজন ব্যক্তিও বাস করে, আর তারা যদি নামাযের জামায়াত কায়েম না করে, তবে অবশ্যি শয়তান তাদের উপর চড়াও হবে। সুতরাং অবশ্যি তুমি জামায়াত কায়েম করবে। কারণ দলছাড়া ভেড়া-বকরীকে তো অবশ্যি নেকড়ে তার গ্রাস বানাবে। (মুসনাদেআহমদ, আবু দাউদ ও সুনানে নাসায়ী)

২.আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দুই বা দুইয়ের অধিক লোক হলেই একটি জামায়াত করতে হবে। (ইবনে মাজাহ)

৩.হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি আযান শুনলো, অথচ জামায়াতে হাযির হলোনা, তার নামায নাই। তবে কোনো ওযর থাকলে ভিন্ন কথা। (আবু দাউদ ও দারু কুতনি)

৪.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার জীবন! আমার ইচ্ছা হয়, কাঠ-খড়ি জমা করার নির্দেশ দিতে। অত:পর যখন সেগুলো কুড়িয়ে একত্র করা হবে, তখন নামাযের আযান দেবার নির্দেশ দিতে। অতঃপর কোনো একজনকে ইমামতি করার নির্দেশ দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখতে-কে কে নামায পড়তে আসেনি। অপর বর্ণনায় বলা হয়েছে : আমার ইচ্ছে হয়, যারা আযান শুনেও মসজিদে হাযির হয়না, তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে। (সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

৫.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি লোকদের ঘরে নারী ও শিশু না থাকতো, তাহলে আমি যুবকদের আদেশ দিতাম, সেইসব ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে, যেসব ঘরের লোকেরা এশার জামায়াতে হাযির হয়নি। (মুসনাদে আহমদ)

৬.হযরত উম্মুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একদিন আবু দারদা অত্যন্ত রাগান্বিত অবস্থায় ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন জিনিসি আপনাকে রাগান্বিত করেছে? তিনি বললেন: আল্লাহর কসম, আমি উম্মতে মুহাম্মদীর পরিচয় এছাড়া আর কিছুই জানিনা যে, তারা সবাই মিলে জামায়াতে নামায পড়ে। (সহীহ আল বোখারী)

৭.আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো : ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এমন কেউ নেই, যে আমাকে হাত ধরে মসজিদে আনবে। অতঃপর লোকটি মসজিদে উপস্থিত হওয়া থেকে অব্যাহতি চায় এবং ঘরে নামায পড়ার অনুমতি চায়। তিনি তাকে ঘরে নামায পড়ার অনুমতি দিয়ে দেন। অনুমতি পেয়ে লোকটি ফিরে রওয়ানা করে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনরায় ডেকে পাঠান। সে ফিরে আসে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন : তুমি কি আযান শুনতে পাও? সে বললো : জী-হ্যা, শুনতে পাই। তিনি বললেন : তবে তুমি মসজিদে উপস্থিত হবে। (সহীহ মুসলিম)

৮.হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! মদীনায় ক্ষতিকর জীব- জানোয়ার এবং বন্য পশুদের আধিক্য, আর আমি অন্ধ মানুষ, আমার বাড়ীও বেশ দূরে এবং আমার হাত ধরে আনারও লোক নেই। আমি কি নিজের ঘরে নামায পড়তে পারি? তিনি বললেন; তুমি কি আজানের শব্দ শুনতে পাও? উত্তরে তিনি বললেন; জ্বি হাঁ। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি সাড়া দেবে তোমার রুখসতের কোনো উপায় আমার নিকট নেই।

একজন অন্ধ মুসল্লীর ব্যাপার, যার কষ্টের কথা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সরাসরি বলার পরও রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে নামায পড়ার রুকসত বা অনুমতি দেননি। তাহলে আমরা জামায়াত ছাড়া কি ঘরে নামায পড়তে পারি?

৯.রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মসজিদে নামায পড়ার মর্যাদা একা পড়ার চাইতে সাতাশ গুণ উর্ধ্বে। (সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

১০.হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ১. কারও ঘরের নামায এক ওয়াক্ত নামাযের সমান ২. পাঞ্জেগানা মসজিদের নামায ২৫ নামাযের সমান ৩. জুম’আর মসজিদের নামায ৫০০ নামাযের সমান ৪. মসজিদে আকসার নামায ১ হাজার নামাযের সমান ৫. মসজিদে নববীর নামায ৫০ হাজার নামাযের সমান ৬. মসজিদে হারামের নামায ১ লক্ষ নামাযের সমান। (ইবনে মাজাহ)

১১.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোনো ব্যক্তির জামায়াতের সাথে নামায তার ঘরে বা বাজারের নামাযের চাইতে পঁচিশগুণ বেশি সওয়াবের অধিকারী। আর এটা তখন হয় যখন সে অযু করে এবং ভাল করে অযু করে তারপর বের হয়ে মসজিদের দিকে চলতে থাকে, একমাত্র নামাযের জন্যই সে ঘর থেকে বের হয়। এ অবস্থায় সে যতবার পা ফেলে তার প্রতিবারের পরিবর্তে একটি করে মর্যদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে গুনাহ মাফ করা হয়। তারপর যখন সে নামায পড়তে থাকে, ফিরিশতারা তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকে যতোক্ষণ সে নামাযের মুসল্লার ওপর থাকে এবং তার অযু না ভাঙ্গে। ফিরিশতাদের সেই দোয়ার শব্দাবলী হচ্ছে : হে আল্লাহ! এই ব্যক্তির ওপর রহমত নাযিল করো! হে আল্লাহ! এর ওপর রহম কর। আর যতোক্ষণ সে নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে নামাযের অন্তর্ভূক্ত গণ্য হতে থাকে।

১২.হযরত উব্বাই ইবনে কা’আব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নামাযের প্রথম সারি হলো ফেরেশতাদের সারির মতো। তোমরা যদি প্রথম সারির মর্যাদা সম্পর্কে জানতে, তবে তা পাওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তে। মনে রেখো, একা নামায পড়ার চাইতে দুই ব্যক্তির একত্রে নামায পড়া উত্তম। আর দুই ব্যক্তির একত্রে নামায পড়ার চাইতে তিন ব্যক্তির একত্রে নামায পড়া উত্তম। এভাবে যতো বেশি লোকের জামায়াত হবে, তা আল্লাহর কাছে ততো বেশি প্রিয় হবে। (আবু দাউদ, আন-নাসায়ী)

১৩.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত : যে ব্যক্তি উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে (জামায়াতে নামায পড়ার জন্য) কোনো একটি মসজিদের দিকে পা বাড়াবে, তার প্রতিটি কদমে আল্লাহ পাক তার জন্য একটি করে পণ্য লিখে দেবেন, তার একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি করে পাপ মুছে দেবেন। (সহীহ মুসলিম)

১৫.ইমাম তিরমিযী (রহ.) মওকুফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন-যখন হযরত ইবনে আব্বাস মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যে দিনে রোজা রাখে এবং রাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে কিন্তু জামায়াতের সাথে নামায পড়ে না-তার সম্বন্ধে তিনি বললেন-এই অবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে যাবে।

১৬.রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায ঠিকমত আদায় করেব, আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কারে সম্মানিত করবেন। ১. তার অভাব দূর করে দেবেন ২. কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেবেন ৩. ডান হাতে আমলনামা দেবেন ৪. বিজলীর ন্যায় পুলসিরাত পার করাবেন ও ৫. বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

১৭.নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে নামায আদায় করবে, বিচার দিবসে তার জন্য নামায নূর হবে এবং মুক্তির উপায় হবে । (আহমাদ ও মুসনাদে তিবরানী)

১৮.হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একবার হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খেজুর বাগান পরিদর্শনে গেলেন। ফিরে এসে দেখেন আসর নামাযের জামায়াত ছুটে গেছে। তিনি তখন জামায়াত ছুটে যাওয়ার কাফফারাস্বরূপ খেজুর বাগনটি সদকা করে দেন।

এক নজরে জামায়াতে নামাযের ফযীলত :

১.একাকী নামাযের চেয়ে সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব।

২.মসজিদে যাবার পথে প্রতি কদমে একটি পূণ্য।

৩.প্রতি কদমে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি।

৪.প্রতি কদমে একটি করে পাপ মোচন।

৫.প্রথম সারিতে দাঁড়ালে ফেরেশতাতুল্য মর্যাদা লাভ।

৬.জামায়াতে যতো বেশি লোককে শামিল করা যাবে ততো বেশি আল্লাহর ভালোবাসা লাভ।

৭.জু’মআর মসজিদের নামায ৫০০ নামাযের সমান।

৮.মসজিদে আকসার নামায ১ হাজার নামাযের সমান।

৯.মসজিদে নববীর নামায ৫০ হাজার নামাযের সমান।

১০.মসজিদে হারামের নামায ১ লক্ষ নামাযের সমান।

১১.আল্লাহ অভাব দূর করে দিবেন।

১২.আল্লাহ কবর আযাব মাফ করে দিবেন।

১৩.আল্লাহ ডান হাতে আমলনামা দিবেন।

১৪.আল্লাহ বিনা হিসাবে জান্নাত দান করবেন।

১৫.জামায়াতের প্রথম কাতার বেহেস্তের প্রথম কাতার।

তাকবীরে উলার সাথে নামায পড়া

১.হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি চল্লিশদিন পর্যন্ত তাকাবীরে উলার সাথে নামায আদায় করতে পারে, তার জন্য দু’টি ফরমান লিখে দেয়া হয়। প্রথমত: তাকে দোযখ থেকে মুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয়ত: এ মর্মে ফরমান দেয়া হয় যে, এ ব্যক্তি মুনাফেক নয়। (জামে আত-তিরমিযী)

আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত তাকবীরে উলার সাথে জামায়াতে নামায আদায় করা।

নামায গুনাহ মাফের উসিলা

১.উবাদা ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে সময়মত সালাত আদায় করেছেন এবং রুকু সেজদায় খেয়াল রেখে মনোনিবেশের সাথে সালাত আদায় করে, অবশ্যই আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন। আর যে তা করবে না, তার অপরাধ মাফ করে দেয়া সম্পর্কে আল্লাহর কোনো দায়িত্ব নেই। ইচ্ছা করলে তিনি মাফ করতে পারেন এবং ইচ্ছা করলে আযাবও দিতে পারেন। (আবু দাউদ)

২.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও এক জু’মআ থেকে আরেক জু’মআ পর্যন্ত পঠিত নামাযের মধ্যকার (সব গুনাহ) জন্য কাফফারাহ, যে পর্যন্ত কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।

৩.হযরত উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : যদি কোনো মুসলমান ফরয নামাযের সময় হলেই ভাল করে অযু করে তারপর খুশু ও খুশু সহকারে নামায পড়ে তার এ নামায তার আগের সমস্ত গুনাহের কাফফারাহ হয়ে যায়। যে পর্যন্ত সে কবীরা গুনাহ থেকে দূরে থাকে। আর এ অবস্থা চলতে থাকে সমগ্র কালব্যাপী।

৪.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাল্লাম বলেছেন: পাঁচ ওয়াক্তের সালাত, এক জুম’আর নামায থেকে আর এক জু’মআ পর্যন্ত পঠিত নামায ও এক রমযানের রোযা থেকে অপর রমযানের রোযার কাফফারা হয় সে সব গুনাহের জন্য যা এদের মধ্যবর্তী সময় হয় যখন কবীরাগুনাহ থেকে বেঁেচ থাকা হয়। অর্থাৎ নামায ও রোযা মানুষের সকল সগীরা গুনাহ মাফ করে দেয়। কিন্তু কবিরা গুনাহ মাফ হয় না।

৫.রাসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সর্বদা গুনাহর আগুনে জ্বলছো। তোমরা যখন ফজরের নামায আদায় করো, তখন তা নিভে যায়। ফজর হতে জোহর পর্যন্ত আবার পাপের আগুনে জ্বলতে থাকে। যখন জোহরের নামায শেষ করো তখন তা নিভে যায়। পুনরায় জোহর হতে আসর পর্যন্ত আগুন জ্বালিয়ে তার মধ্যে পোড়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করতে থাকে; কিন্তু আসরের নামায সমাপ্ত করার সঙ্গে সঙ্গে তা নিভে শীতল হয়ে যায়। আবার আসর হতে মাগরিব পর্যন্ত সময় তা এমনভাবে জ্বলে উঠে যে, তার শিখা তোমাদেরকে ছাই করে ফেলতে চায়। কিন্তু মাগরিবের নামায আদায় করা মাত্রই তা নিভে যায়। তারপর এশা পর্যন্ত তোমাদের পাপের আগুন আবার তীব্রভাবে জ্বলতে থাকে এবং যখন তোমরা এশার নামায সম্পন্ন করো তখন তা সম্পূর্ণরূপেই নিভে যায়। তখন তোমরা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ হয়ে ঘুমিয়ে থাকো। ঘুম ভাঙ্গা পর্যন্ত তোমাদের আমল নামায় আর কোনো প্রকার গুনাহ লিখা হয় না। (তারগীব ওয়াত তারহীব)

৬.হযরত আবুযার গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: একবার শীতের সময় যখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল, তখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বাইরে তাশরীফ আনলেন এবং গাছের দু’টি ডাল ধরে ঝাঁকি দেয়া শুরু করলেন এবং ঝর ঝর করে (শুকনো) পাতা পড়তে লাগল। তখন নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বললেন, হে আবুযর! যখন কোনো মুসলমান একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকতার সাথে নামায পড়ে, তার গুনাহসমূহ ঠিক এভাবে ঝরে পড়ে যেমন এ গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ছে। (মুসনাদে আহমদ)

.বান্দার চারটি আমল নিয়ে ফেরেশতারা পরস্পরে বলাবলি করে। আমল সমূহ নিম্মরূপ :

১. নামাযের পর মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করা।

২.এক নামায শেষ করে পরবর্তী নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকা।

৩.জমায়াতে নামায পড়ার আশায় পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া। এবং

৪.অসুস্থ অবস্থায় শীতের কষ্ট উপেক্ষা করেও পরিপূর্ণ অযু করা।

এ চারটি কাজের মাধ্যমে নামাযি ব্যক্তি সুখে-শান্তিতে বাস করবে এবং নেককার বান্দা হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। আর সে সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হবে। (মিশকাত)

নামাযি আল্লাহর সান্নিধ্য এবং আরশে ছায়া পাবে

১. বান্দা তার প্রভুর সবচেয়ে বেশী নিকটবর্তী হয় তখন, যখন সে সেজদায় যায়। (সহীহ মুসলিম)

২. অবশ্যই তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নামায আদায় করে, তখন সে তার প্রভুর সাথে কথা বলে। (সহীহ আল বোখারী)

৩.হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি নামায পড়ে মসজিদ হতে বের হয়, কিন্তু পরবর্তী নামাযে শরীক না হওয়া পর্যন্ত তার অন্তঃকরণ মসজিদের দিকেই থাকে এবং সে যথাসময়ে নামায সম্পন্ন করে। সে ব্যক্তি কিয়ামতের কঠিন দিবসে আল্লাহ আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে।

নামাজ মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে

১.হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং আমি আমার নিজের সাথে অঙ্গীকার করেছি, যে ব্যক্তি যথাসময়ে নামাযসমূহের পূর্ণ হিফাযত করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে নামায সমূহের হিফাযত করবে না তার জন্য আমার কাছে কোনো অঙ্গীকার নেই। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

২. হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায যথারীতি আদায় করবে, আল্লাহ তাকে পাঁচটি মর্যাদা দান করবেন :

ক. তার দারিদ্র দূর করবেন।

খ. তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেবেন।

গ. তার আমমলনামা ডান হাতে দেবেন।

ঘ. বিদ্যুৎবেগে তাকে পুলসিরাত পার করাবেন। এবং

ঙ. তাকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

নামাযে অবহেলা/শৈথিল্য প্রদর্শনের শাস্তি

১. হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস বলেন : আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, (নামাযে) এই শিথিলতা কি? তিনি বলেন : নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্বিত করা। তাদেরকে নামাযি বলা হয়েছে। কিন্তু উদাসীনতা ও বিলম্বের কারণে তাদেরকে ‘ওয়েল’ এর হুমকি দেয়া হয়েছে। ওয়েল অর্থ আযাবের কঠোরতা। কারো কারো মতে ওয়েল হচ্ছে জাহান্নামের এমন উত্তপ্ত একটি জায়গা যেখানে পৃথিবীর সমস্ত পাহাড়-পর্বত ফেলে দিলেও তা তীব্র দহনে গলে যাবে। তাওবা ও অনুতাপ সহকারে ক্ষমা না চাইলে নামায কাজাকারী ও নামাযে অলস্যকারীর জন্য এই জায়গা বাসস্থান হিসেবে নির্ধারিত রয়েছে।

২.ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে দাঁড় করিয়ে জাহান্নামে যাওয়ার আদেশ দেয়া হবে। সে জিজ্ঞোস করবে : হে আমার প্রতিপালক! কি কারণে (আমাকে জাহান্নামে যাওয়ার আদেশ দেয়া হলো)? আল্লাহ বলবেন : নামায নির্ধারিত সময়ের পরে পড়া ও আমার নামে মিথ্যা কসম খাওয়ার কারণে।

৩.রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায ঠিকমত আদায় করবে না অর্থাৎ নামাযে অবহেলা করবে, আল্লাহ তাকে ১৪টি শাস্তি দেবেন। ক. দুনিয়াতে পাঁচটি, খ. মৃত্যুর সময় তিনটি, গ. কবরে তিনটি, ঘ. কবর থেকে উঠানোর সময় তিনটি।

. দুনিয়াতে পাঁচটি :

১.তার হায়াত থেকে বরকত কমে যাবে।

২.চেহারা থেকে নেককারের নিদর্শন লোপ পাবে।

৩.তার কোনো নেক আমলের প্রতিদান দেয়া হবে না।

৪. তার কোনো দু‘আ কবুল হবে না।

৫.নেককারদের দু‘আ থেকে সে বঞ্চিত হবে।

. মূত্যুর সময় তিনটি :

১.সে অপমানিত হয়ে মারা যাবে।

২. অনাহারে মারা যাবে

৩. মৃতুর সময় সে এমন পিপাসার্ত হয়ে মারা যাবে যে, পৃথিবীর সব সমুদ্রের পানি তাকে পান করালেও তার পিপাসা মিটবে না।

. কবরে থাকাকালে তিনটি :

১. কবর সংকীর্ণ হয়ে এতো জোরে চাপ দেবে যে, তার পাঁজরের একদিকের হাড় অপরদিকে ঢুকে যাবে।

২. কবরে আগুন ভর্তি করে রাখা হবে, যে আগুনের জ্বলন্ত কয়লায় সে রাতদিন জ্বলতে থাকবে।

৩.তার কবরে ভয়ংকর বিষধর সাপ রাখা হবে, যেগুলো তাকে বিলম্বে নামায পড়ার কথা উল্লেখ করে কিয়ামত পর্যন্ত দংশন করতে থাকবে।

ঘ.কবর থেকে বেরুবার সময় তিনটি :

১.কঠোরভাবে হিসাব নেয়া হবে।

২.আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন।

৩.জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

৪.অন্য রেওয়াতে আছে যে, কিয়ামতের দিন তার কপালে তিনটি কথা অংকিত থাকবে। একটি কথা হবে: হে আল্লাহর হক বিনষ্টকারী, দ্বিতীয় কথাটি হবে : হে আল্লাহর গযবের উপযুক্ত ব্যক্তি। তৃতীয়টি কথাটি হবে: তুমি পৃথিবীতে যেমন আল্লাহর অধিকার দাওনি, আজ তেমনি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে।

নামায নষ্ট করা

১.হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : নামাযকে নষ্ট করার অর্থ পুরোপুরি তরক করা বা বর্জন করা নয়। এর অর্থ হলো নির্দিষ্ট সময়ের পরে পড়া বা কাযা করা।

২. হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব বলেন : এর অর্থ পরবর্তী নামাযের সময় না এসে পড়া পর্যন্ত নামায বিলম্বিত করা। এটা করতে যে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং এই অভ্যাসের ওপর তাওবা না করেই মারা যায় আল্লাহ তাকে ‘গায়’ নামক স্থানে নিক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন। ‘গায়’ দোজখের অত্যন্ত নিচু ও নোংরা একটি গহবরের নাম।

নামাযে চুরি

১.হযরত আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন : সর্বাপেক্ষা বড় চোর সেই ব্যক্তি যে নামাযে চুরি করে। লোকেরা আরয করলো : ইয়া রাসূলুল্লাহ! নামাযে চুরি হয় কিভাবে? রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ‘এরা রুকু এবং সেজদা ঠিকমত করে না। (মুসনাদে আহমেদ)

মসজিদে নামায

১.হযরত আলী ইবনে আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন : মসজিদের প্রতিবেশীর নামায মসজিদ ছাড়া আদায় হয়না। জিজ্ঞেস করা হলো; মসজিদের প্রতিবেশী কে? তিনি বললেন : যে ব্যক্তি আজান শুনে। (মুসনাদে আহমাদ)

২.হযরত উব্বাই ইবনে কা’আব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নামাযের প্রথম সারি হলো ফেরেশতাদের সারির মতো। তোমরা যদি প্রথম সারির মর্যাদা সম্পর্কে জানতে, তবে তা পাওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তে। মনে রেখো, একা নামায পড়ার চাইতে দুই ব্যক্তির একত্রে নামায পড়া উত্তম। আর দুই ব্যক্তির একত্রে নামায পড়ার চাইতে তিন ব্যক্তির একত্রে নামায পড়া উত্তম। এভাবে যতো বেশি লোকের জামায়াত হবে, তা আল্লাহর কাছে ততো বেশি প্রিয় হবে। (আবু দাউদ ও আন নাসায়ী)

৩.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত : যে ব্যক্তি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (জামায়াতে নামায পড়ার জন্য) কোনো একটি মসজিদের দিকে পা বাড়াবে, তার প্রতিটি কদমে আল্লাহ পাক তার জন্য একটি করে পূণ্য লিখে দেবেন, তার একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি করে পাপ মুছে দেবেন। (সহীহ মুসলিম)

৪.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: জনৈক অন্ধ নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! আমার এমন কোনো লোক নেই যে আমাকে ধরে মসজিদে আনতে পারে! কাজেই রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইল যাতে সে মসজিদে না এসে ঘরেই নামায পড়তে পারে। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। তারপর যখন লোকটি চলে যাচ্ছিল, তখন তিনি তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কি নামাযের আযান শুনতে পাও? সে বলল: হাঁ, তিনি বললেন, তাহলে তুমি আওয়াজে সাড়া দাও। (অর্থাৎ জামায়াতের সাথে নামায পড়ার জন্য মসজিদে চলে এসো) (সহীহ মুসলিম)

৫.উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মসজিদে আযান হবার পর যে ব্যক্তি বিশেষ জরুরি কাজ ছাড়া বেরিয়ে যায় এবং মসজিদে প্রত্যাবর্তণের ইচ্ছা রাখে না, সে মুনাফিক। (মিশকাত)

মসজিদে যাওয়ার ফযীলত

১.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় মসজিদে যায়, আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে মেহমানদারীর সরঞ্জাম তৈরি করেন। সে সকালে বা সন্ধ্যায় যতোবার যায় ততোবারই।

২.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি নিজের গৃহ থেকে পাক-পবিত্রতা অর্জন করে (অর্থাৎ অযু ও প্রয়োজনে গোসল সেরে) আল্লাহর গৃহের মধ্য থেকে কোনো একটি গৃহের দিকে যায়, আল্লাহর ফরযের মধ্য থেকে কোনো একটি ফরয আদায় করার উদ্দেশ্যে, তার প্রতিটি পদক্ষেপে একটি গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং অন্য পদক্ষেপটি তার একটি মর্যাদা বুলন্দ করে।

৩.হযরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নি:সন্দেহে নামাযের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রতিদান পাবে সেই ব্যক্তি যে, সবচেয়ে বেশী দূর থেকে হেঁটে নামাযে আসে। তারপর যে ব্যক্তি আরো বেশি দূর থেকে আসে সে আরো বেশি প্রতিদান পাবে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সাথে নামায পড়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে তার চাইতে প্রতিদান পাবে, যে একাকী নামায পড়ে নেয়, তারপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

৪.হযরত বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন। তিনি বলেছেন: অন্ধকারে পায়ে হেঁটে মসজিদের দিকে আগমনকারীকে কিয়ামতের পরিপূর্ণ আলোর সুখবর দাও।

৫.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় জানাবো না, যার মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহসমূহ খতম করে দেন এবং মর্যাদাবৃদ্ধি করেন? সাহাবাগণ বললেন : হাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন : তা হচ্ছে কঠিন অবস্থায় পুরোপুরি ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করা (অর্থাৎ বেশী দূর থেকে মসজিদে আসা) এবং এক নামাযের পর আরেক নামাযের জন্য অপেক্ষা করা। এটিই হচ্ছে তোমাদের সীমান্ত প্রহরী। এটিই হচ্ছে তোমাদের সীমান্ত প্রহরী।

৬.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোনো ব্যক্তির জামায়াতের সাথে নামায তার ঘরে বা বাজারের নামাযের চাইতে পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াবের গুরুত্বপূর্ণ। আর এটা তখন হয় যখন সে ভাল করে অযু করে তারপর বের হয়ে মসজিদের দিকে চলতে থাকে, একমাত্র নামাযের জন্যই সে ঘর থেকে বের হয়। এ অবস্থায় সে যতবার পাফেলে তার প্রতিবারের পরিবর্তে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। তারপর যখনসে নামায পড়তে থাকে, ফিরিশতারা তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকে যতোক্ষণ সে নামাযের মুসল্লারওপর থাকে এবং তার অযু না ভাঙ্গে। ফিরিশতাদের সেই দোয়ার শব্দাবলী হচ্ছে : হে আল্লাহ! এই ব্যক্তির ওপর রহমত নাযিল করো। হে আল্লাহ! এর ওপর রহম করো। আর যতোক্ষণ সে নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে নামাযের অর্ন্তভূক্ত গণ্য হতে থাকে। (সহীহ আল বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

নামাযের জন্য অপেক্ষা করার ফযীলত

১.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় জানাব না, যার মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহসমূহ খতম করে দেন এবং মর্যাদাবৃদ্ধি করেন? সাহাবাগণ বললেন: হাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন : তা হচ্ছে কঠিন অবস্থায় পুরোপুরি ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশী পদক্ষেপ গ্রহণ করা (অর্থাৎ বেশী দূর থেকে মসজিদে আসা) এবং এক নামাযের পর আর এক নামাযের জন্য অপেক্ষা করা। এটিই হচ্ছে তোমাদের সীমান্ত প্রহরী।এটিই হচ্ছে তোমাদের সীমান্ত প্রহরী।

২.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন:যতক্ষণ নামাযের জন্য প্রতীক্ষা কোন ব্যক্তিকে আটকে রাখে এবং যতক্ষণ নামায ছাড়া অন্য কিছু তাকে গৃহে পরিজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার পথে বাধা দেয়না, ততক্ষণ সে নামাযের মধ্যেই থাকে।

৩.হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামায মধ্যরাত পর্যন্ত দেরী করে পড়লেন। নামাযের পর আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন : সমস্ত লোক নামায পড়ার পর ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু তোমরা যখন থেকে নামাযের অপেক্ষায় আছ তখন থেকে নামাযের মধ্যেইআছ।

চেষ্টা করার পরও যদি জামায়াত পাওয়া না যায়

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন : কেউ যদি ঘর থেকে উত্তমরূপে অযু করে জামায়াতে নামায পড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে মসজিদের দিকে ওয়ানা হয় এবং গিয়ে দেখে যে, মসজিদে জামায়াত হয়ে গেছে, তবুও সে জামায়াতের পূর্ণ সওয়াব পাবে। কেননা সে জামায়াতে শামিল হওয়ার নিয়ত করেছিল এবং জামায়াত ধরার পরিপূর্ণ চেষ্টা করেছে। (আবু দাউদ)

ফযর ও এশার জামায়াতে হাযির হওয়া

১.হযরত উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি এশার নামায জামায়াতের সাথে পড়ল সে যেন অর্ধরাত অবধি নামায পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামায়াতের সাথে পড়ল সে যেন সারা রাত নামায পড়ল।

২.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যদি তারা এশা ও ফজরের নামাযের মধ্যে কি আছে তা জানতে পারত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এই দুটি নামাযের (জামায়াতে) শামিল হত।

৩.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: এশার ও ফজরের নামাযের মত আর কোন নামায মুনাফিকদের কাছে বেশী ভারী বোঝাা বলে মনে হয়না। তবে যদি তারা জানত এই দুই নামাযের মধ্যে কি আছে তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এই দুই নামাযে শামিল হত।

৪.জামায়াতে নামায পড়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত এশা ও ফজরের নামাযকে। কেননা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : এই দুইটি নামায অর্থাৎ ফযর ও এশা মুনাফিকের জন্য সবচেয়ে কঠিন। এই দুইটি নামায জামায়াতে পড়ার সওয়াব কত তা জানালে লোকেরা কিছুতেই তা ত্যাগ করতো না । (সহীহ আল বোখারী)

আছরের নামাযে হাজির হওয়া

১.হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যার আসরের নামায ছুটে গেল তার সমস্ত পরিবার ও সম্পদ লুট হয়ে গেল। (সহীহ আল বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

২.সহীহ আল বোখারীতে আছে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যার আসরের নামায ছুটে যায়, তার সমস্ত সৎ কাজ বৃথা হয়ে যায়। সহীহ আল বোখারীতে আছে অপর হাদীসে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করে, আল্লাহ তার দায়িত্ব থেকে মুক্ত।

৩.হযরত আবু বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে আসরের নামায ত্যাগ করেছে তার আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে। (সহীহ আল বোখারী)

৪.হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর এক দেয়াল ঘেরা খেজুরের বাগানের দিকে গমন করেন। যখন ফিরে আসলেন তখন তিনি দেখলেন লোকেরা আছরের নামাযের জামায়াত পড়ে ফেলেছেন। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন-ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন, আমার আছরের নামাযের জামায়াত ছুটে গিয়েছে! আপনারা সাক্ষী থাকুন, ওমর জামায়াতে নামায হারিয়ে যে অন্যায় করেছে, তাঁর সেই অপরাধের কাফফারা স্বরূপ তাঁর খেজুরের বাগান মিসকিনদের জন্য সদকা করে দেয়া হল।

৫.হযরত আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি দুটি ঠা-া সময়ের নামায পড়ে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ আল বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

৬.হযরত আবু যুহাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি “যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে নামায পড়ে সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না”। অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামায। (সহীহ মুসলিম)

জামায়াত আরম্ভ হলে সুন্নাত নেই

১.আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন জামায়াতের জন্য ইকামত বলা হবে (অর্থাৎ যখন ফরয নামাযের জামায়াত আরম্ভ হবে) তখন ঐ (ফরয) নামাযটি ছাড়া আর কোনো নামায নেই। (সহীহ মুসলিম)

এই হাদীসের ‘আর কোন নামায নেই’ কথাটির অর্থ হলো, ফরয নামাযের জামায়াত দাঁড়িয়ে গেলে আর অন্য কোনো নামায পড়া যাবে না। এই হাদীসের ভিত্তিতে-

-ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেছেন : ফরয নামাজের জামায়াত দাঁড়িয়ে গেলে সুন্নাত নামায ত্যাগ করতে হবে এবং জামায়াতে শামিল হয়ে যেতে হবে।

– ইমাম আবু হানীফা (রহ.) বলেছেন : ফজরের জামায়াত এক রাকাত পাবার সম্ভাবনা থাকলেও সুন্নাত পড়ে নেয়া যাবে। তবে সফের নিকট থেকে দূরে দাঁড়াতে হবে। তার মতে সফের মধ্যে বা নিকটে দাঁড়ানো মাকরূহ।

-হাদীস বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হাদীস অনুযায়ী জামায়াত দাঁড়িয়ে যাবার পর সুন্নাত নামায পড়ার কোনো অবকাশ দেখা যায় না। কারণ-

– এমনটি করার অনুমতি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেননি।

-সাহাবায়ে কিরাম থেকেও এমনটি করার নযীর নেই।

-ফজরের সুন্নতের গুরুত্ব অন্যান্য সুন্নাত নামাযের তুলনায় বেশি হলেও সেটা সুন্নাতই, ফরয নয়।

-মুয়াযযিনের ইকামত দেয়ার অর্থই হলো, ইমামের পক্ষ থেকে জামায়াতে শরীক হবার আহ্বান। আর (ফরয নামাজের জন্য) ইমামের আহ্বানে সাড়া দেয়া তো ওয়াজিব।

সুতরাং এ হাদীসটির স্পষ্ট অর্থ এবং যুক্তি অনুযায়ী জামায়াত শুরু হয়ে গেলে সুন্নাত পড়ার অবকাশ থাকে না।

তাহাজ্জুদের চাইতে ফজরের জামায়াতের গুরুত্ব বেশি

আবু বকর ইবনে সুলাইমান ইবনে আবি হাছমা থেকে বর্ণিত। একদিন খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ফজরের জামায়াতে (আমার পিতা) সুলাইমান ইবনে আবি হাছমাকে দেখতে পেলেন না। সেদিন সকালে ওমর বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। বাজারের পথেই ছিলো আমার পিতা সুলাইমানের বাসস্থান। খলিফা আমাদের বাড়িতে এসে আমার দাদী শিফা বিনতে আব্দুল্লাহ কে জিজ্ঞেস করেন: কী ব্যাপার, আজ ফজরের নামাযে তোমার ছেলে সুলাইমানকে দেখতে পেলাম না কেন? আমার দাদী বললেন : ও রাত জেগে (তাহাজ্জুদ) নামায পড়েছে। ফলে তার চোখে ঘুম চেপে বসেছে (এবং ঘরে নামায পড়ে) শুয়ে পড়েছে। একথা শুনে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন : আমার কাছে সারারাত জেগে নফল নামায পড়ার চাইতে ফজরের জামায়াতে হাযির হওয়া অধিক পছন্দনীয় (মু’আত্তা ইমাম মালিক)

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর এই বক্তব্যে তাহাজ্জুদ বা রাত্রের নফল নামায পড়তে নিরুৎসাহিত করেননি, বরং তিনি এখানে জামায়াতে নামায এবং নফল নামাযের মধ্যে গুরুত্বের উপায় তুলে ধরেছেন।

১.সুন্নাত নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ বা রাত্রের নামাযের মর্যাদা অনেক বেশি হলেও, ফরয নামায জামায়াতে পড়ার চাইতে এর মর্যাদা বেশি নয়।

২.ফজরের জামায়াত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকলে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগি বা অন্য কোন দ্বীনি কাজও করা ঠিক নয়।

৩.এমনকি ফজরের জামায়াত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকলে রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামায পড়াও ঠিক নয়। তবে ফজরের জামায়াতে হাযির হবার ব্যাপারে আশংকা না থাকলে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম।

জামায়াতে উপস্থিতির ক্ষেত্রে বিলম্ব ও ব্যতিক্রমের অবকাশ

১.উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : খাবার উপস্থিত করা হলে এবং পায়খানা প্র¯্রাবের বেগ সৃষ্টি হলে-এগুলো সেরে নেয়ার আগ পর্যন্ত নামাযে যাবে না। (সহীহ মুসলিম)

২.আব্দুল্লাহ ইবনে আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : যখন নামাযের ইকামত বলা হয়, তখন যদি তোমাদের কেউ পায়খানা-প্র¯্রাবের বেগ অনুভব করে, তাহলে সে যেনো আগে পায়খানা প্র¯্রাব সেরে নেয়। ( জামে আত-তিরমিযী, আবু দাউদ, আন- নাসায়ী ও মুআত্তায়ে মালিক)

৩.আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যদি তোমাদের কারো রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়, আর তখন নামাযের ইকামত দেয়া হয়, তবে তাড়াহুড়া না করে প্রথমে প্রশান্তির সাথে খেয়ে নেবে (তারপর নামাযে যাবে)। (সহীহ আল বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

৪.জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা খাওয়া বা অন্য কোনো কিছুর জন্য নামায (অর্থাৎ নামাযের জামায়াত) পিছিয়ে দিওনা। (শারহে সুন্নাহ)

৫.আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : প্রবল শীত ও বৃষ্টির রাতে তোমাদের কেউ যদি আযান দেয়, তখন সে যেনো একথাও বলে দেয়: আপনার নিজ নিজ আবাসে নামায পড়–ন। (সহীহ আল বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

এই হাদীসগুলো থেকে জানা গেলো :

১. খাবার সামনে এলে নামাযের ইকামত দিলেও খেয়ে নামাযে যাওয়া উচিত।

২. পায়খানা প্র¯্রাব চাপলে নামায শুরু হলেও এগুলো আগে সেরে নিতে হবে।

৩. জামায়াতের সময় নির্ধারিত থাকলে খাওয়া বা অন্য কারণে জামায়াত পিছানো ঠিক নয়।

৪. প্রচ- শীত বৃষ্টি ও ঝড় তুফানের রাত্রের ঘরে নামায পড়ার অবকাশ আছে।

৫. রোগ ও শত্রুর ভয় থাকলে ঘরে নামায পড়ার অবকাশ আছে।

নামাযে কাতার সোজা করা

জামায়াতের নামাযে কাতার সোজা করা এবং সোজা রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয় সকল রেওয়ায়েত সামনে আনলে দেখা যায়, নামাযে সবার পায়ের টাখনু, কাঁধ ও ঘাড় এক সমান্তরালে থাকা চাই। যারা কাতারের মধ্যে শূন্যস্থান রাখেনা তাদের জন্য মাগফেরাত ও গুনাহ মাফের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

১.হযরত নুমান ইবনে বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তীর সোজা করার মতোই আমাদের (নামাযের) সফ সোজা করে দিতেন। আমাদের সফ সোজা হলে তিনি তাকবীর (তাহরীমা) বলতেন। (সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ)

২.হযরত নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন : আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: তোমাদের সারিগুলি সোজা করবে। অথ্যথায় আল্লাহ তোমাদের চেহারার মধ্যে অনৈক্য ও মতবিরোধ সৃষ্টি করে দেবেন।

৩.হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত : একদিন নামাযের ইকামত হলে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে বললেন : তোমাদের সফ সোজা করো এবং পরষ্পরের সাথে মিলে দাঁড়াও। (সাহীহ আল বোখারী)

৪.হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা সকলে নামাযের কাতারসমূহ সমান সমান করে লও। কেননা কাতার সোজা ও সমান করার ব্যাপারটি সঠিকভাবে নামায কায়েম করা একটি অংশ বিশেষ। (সহীহ আল বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

৫.হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন : নামায দাঁড়িয়ে গিয়েছিল (অর্থাৎ নামাযের ইকামত শেষ হয়ে গিয়েছিল) এমন সময় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমদের দিকে মুখ ফিরিয়েবললেন : তোমাদের সারিগুলি সঠিক ও সোজাভাবে কায়েম কর এবং ঘেঁসে ঘেঁসে দাঁড়াও। কারণ আমি তোমাদেরকে আমার পেছন থেকে দেখি।

৬.হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : প্রথম সারি পূর্ণ কর, তারপর তারপরের সারি। যদি কোন কমতি থাকে তাহলে সেটা থাকবে শেষ সারিতে।

৭.আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান দিকে লক্ষ্য করে বলতেন ঃ সোজা হও,তোমাদের সফ বরাবর করো। আবার বাম দিকে লক্ষ্য করে বলতেন : সোজা হও, তোমাদের সফ বরাবর করো। (আবু দাউদ)

৮.আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : প্রথমে পয়লা সফ পূর্ণ করো, তারপর দ্বিতীয় সফ। এভাবে পূর্ণ করে যাও। যদি কোনো অপূর্ণতা থাকে, তবে তা যেনো সর্বশেষ সফে থাকে। (আবু দাউদ)

৯.আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পুরুষদের সফ সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো প্রথম সফ, আর নারীদের সফ সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো সর্বশেষ সফ। (সহীহ মুসলিম)

১০.আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও বুঝ সমুঝের অধিকারী, তারা যেনো আমার (ইমামের) নিকটে দাঁড়ায়। অত:পর, যারা তাদের নিকটবর্তী। অতপর তারা, যারা তাদের নিকটবর্তী। সাবধান মসজিদে বাজারের ন্যায় হৈ চৈ করা থেকে বিরত থাকো। (সহীহ মুসলিম)

১১.হযরত আবু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে আমাদের কাঁধে হাত দিয়ে বলতেন : সমান হয়ে দাঁড়াও, আগে-পিছে হয়ে যেয়োনা, তাহলে তোমাদের মনের মধ্যে অনৈক্য দেখা দেবে। বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ লোকদের আমার নিকট থাকা উচিত। তারপর থাকবে তারা যারা বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার দিক দিয়ে তাদের কাছাকাছি। তারপর তারা যারা তাদের কাছাকাছি।

১২.বারা ইবনে আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন: আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ ঐ লোকদের প্রতি সালাম করেন (অর্থাৎ রহমত বর্ষণ ও দোয়া করেন), যারা প্রথম দিকের সফগুলোতে এগিয়ে আসে। আল্লাহর কাছে সেই পা বাড়ানোর চাইতে আর কোনো পা বাড়ানোই এতো অধিক প্রিয় নয়, যে পা সফ মিলানো ও পূর্ণ করার জন্য বাড়ে। (আবু দাউদ)

১৩. আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা সফ সোজা করবে, বাহু বরাবর করবে, ফাঁক পূর্ণ করবে, পরষ্পরের বাহু নরম রাখবে এবং মাঝখানে শয়তানের জন্য জায়গা রাখবেনা। যে ব্যক্তি সফ মিলিয়ে দাঁড়ায়, আল্লাহ তাকে মিলিয়ে দেন। আর যে সফ বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। (আবু দাউদ ও আন-নাসায়ী)

১৪.হযরত জাবির ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে বললেন : তোমরা কি তেমনিভাবে সারিবদ্ধ হবেনা যেমন ফিরিশতারা তাদের রবের সামনে সারিবদ্ধ হয়? আমরা জিজ্ঞেস করলাম : হে আল্লাহর রাসূল! ফিরিশতারা আবার তাদের রবের সামনে কিভাবে সারিবদ্ধ হয়? তিনি জবাবে বললেন : তারা সামনের কাতারগুলো পুরো করে এবং দু’জনের মধ্যে কোন প্রকার ব্যবধান না রেখে লাইনে ঘেঁসে ঘেঁসে দাঁড়িয়ে যায়।

১৫.হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কোনো সাহাবীর মধ্যে উদাসীনতা ও পিছনে থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করলেন। তখন তিনি সতর্ক করে বললেন, সামনে আসো এবং আমার পথ অনুসরণ কর, যাতে পরবর্তীরা তোমাদের অনুসরণ করতে পারে। কোনো জাতি যখন পশ্চাৎপদতা অবলম্বন করে তখন আল্লাহও তাদেরকে পশ্চাৎপদ করে দেন। (সহীহ মুসলিম)

প্রথম কাতারের ফযীলত

১.প্রথম কাতারের উপর আল্লাহ এবং ফেরেশতাগণ সালাম পাঠিয়ে থাকেন। এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন : দ্বিতীয় কাতারের সম্বন্ধে কী? হযরত নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : প্রথম কাতারে উপরই আল্লাহ এবং তার ফেরেশতাগণ রহমত ও সালাম প্রেরণ করে থাকেন। তৃতীয় বারও তিনি একইরূপ উত্তর দিলেন। চতুর্থবার তিনি বললেন : দ্বিতীয় কাতারের উপরও। (মুসনাদে আহমদ)

২.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে বললেন : লোকেরা যদি জানতো আযান ও প্রথম সারিতে দাঁড়ানোর মধ্যে কি আছে (অর্থাৎ কি পরিমাণ সওয়াব আছে) আর লটারীর মাধ্যমে ছাড়া তা অর্জন করার দ্বিতীয় কোন পথ না থাকলে তারা অবশ্যই লটারী করত।

৩.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে বললেন : পুরুষদের সারিগুলির মধ্যে প্রথম সারিটি হচ্ছে সবচেয়ে ভাল এবং শেষ সারিটি হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ। আর মেয়েদের সারিগুলির মধ্যে শেষ সারিটি হচ্ছে সবচেয়ে ভাল এবং প্রথম সারিটি হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ।

নামাজের সামনে দিয়ে আসাযাওয়া

১.হযরত আবু জুহাইম আবদুল্লাহ ইবনে হারেস ইবনে ছাম্মাহ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নামাযের সামনে দিয়ে যাতায়াতকারী যদি জানতো এতে তার কি পরিমাণ গুনাহ হয়, তবে চল্লিশ বছর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকাকে কল্যাণকর মনে করত। বর্ণনাকারী বলেন: রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি চল্লিশ মাস না চল্লিশ দিন না চল্লিশ বৎসরের কথা বলেছেন, তা আমার মনে নেই। (সহীহ আল বোখারী ও সহীহ মুসলিম)

২.হযরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কোন কিছুই নামায নষ্ট করতে পারে না, তথাপি সম্মুখ দিয়ে গমনকারীকে সাধ্যানুযায়ী বাধা দিবে। নিশ্চয়ই উহা শয়তান। (আবু দাউদ)

৩.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নামাযের সামনে গমন করা অপেক্ষা একশত বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। (ইবনে মাজাহ)

সুন্নাতে মুয়াক্কাদার পুরস্কার

১.রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি (পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে) দিন ও রাতে ফরয ব্যতীত ১২ রাকায়াত সুন্নাত নামায পড়বে তার জন্য জান্নাতে একখানি গৃহ নির্মাণ করা হবে। (সহীহ মুসলিম)

২.উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি দিন ও রাতের মধ্যে মোট ১২ রাকাত নামায (সুন্নাত) পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একখানি ঘর নির্মিত হবে। তা জোহুরের পূর্বে ৪ রাকা’আত, পরে ২ রাকা’আত, মাগরীবের পর ২ রাকা’আত, এশার পর ২ রাকা’আত আর ফজরের পূর্বে ভোরের ২ রাকা’আত। (জামে আত-তিরমিযী)

ক.ফজরের সুন্নাত : আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফজরের দু’রাকাআ’ত সুন্নাত সমস্ত দুনিয়া ও উহার মধ্যবর্তী সকল নিয়ামত হতে উত্তম। (সহীহ মুসলিম)

খ.জোহরের সুন্নাত : উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জোহরের (ফরযের) পূর্বের চার রাকা’আত এবং পরে দু’রাকা’আত সুন্নাত যথারীতি আদায় করে আল্লাহতায়ালা তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন। (জামে আত-তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি যোহরের ২ রাকা’আত নামায সংরক্ষণ করবে, তার পাপরাজি মাপ করা হয়। যদিও উহা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়। (মুসনাদে আহমদ ও জামে আত-তিরমিযী)

গ.আসরের সুন্নাত : ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আসরের (ফরযের) পূর্বে চার রাকাআ’ত সুন্নাত পড়ে আল্লাহ তার প্রতি রহম করেন। (আবু দাউদ, জামে আত-তিরমিযী ও মুসনাদে আহমদ)

ঘ.মাগরিবের সুন্নাত :যে ব্যক্তি মাগরিবের (ফরযের) পর দু’রাকা’আত সুন্নাত পড়ে তার সে নামায উপরস্থ ইল্লিয়ীনে পৌছানো হয়। (আবু দাউদ)

ঙ.ইশার সুন্নাত : যে ব্যক্তি দিন-রাত ১২ রাকাত নামায (সুন্নাত) পড়বে। তার জন্য বেহশতে ঘর নির্মণ করা হবে। তা ৪ রাকা’আত জোহুরের পূর্বে, ২ রাকা’আত জোহুরের পরে, ২ রাকা’আত মাগরীবের পরে, ২ রাকা’আত এশার পরে, এবং ২ রাকা’আত ফজরের পূর্বে। (বায়হাকী)

সুন্নাত বা নফল : মসজিদে (ফরয) নামায পড়ার পর বাসগৃহেও কিছু (সুন্নাত বা নফল) নামায পড়ো। তাহলে আল্লাহতায়ালা সে নামাযের প্রতিদান বাসগৃহের মঙ্গল সাধন করবে। (সহীহ মুসলিম)

সুন্নাত বা নফল নামায ফরয নামাযের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করেব। তাই আমাদের উচিৎ বেশী বেশী করে সুন্নাত নামায পড়া।

নামাযের বয়স : ওমর ইবনে শোয়াইব তার পিতা থেকে এবং তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের সালাতের জন্য নির্দেশ দাও, যখন তারা সাত বছরে উপনীত হয়। আর দশ বছর হলে তাকে প্রহার কর, আর তাকে তাদের মাঝ থেকে পৃথক করে দাও। (আবু দাউদ)

ইমাম খাত্তাবী বলেন : এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, প্রাপ্ত বয়স্কের নামায তরকের জন্য আরো কঠোর শাস্তি প্রযোজ্য। শাফেয়ী মাযহাবের কারো কারো মতে ইচ্ছাকৃতভাবে নামায তরককারী প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড দেয়া যাবে। ইমাম মালেক, শাফেয়ী ও ইমাম আহমাদের মতে সে হত্যাযোগ্য।

নামাযের সময়

১.আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। নবী করৗম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : প্রত্যেক নামাযেরই একটা প্রথম সময় রয়েছে এবং একটা শেষ সময় রয়েছে। তার বিবরণ এই যে-

ক.জোহরের নামাযের প্রথম সময় শুরু হয় তখন, যখন সূর্য মধ্য আকাশ হতে পশ্চিমের দিকে ঢলে পড়ে। তার শেষে সময় আসরের নামাযের শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত থাকে।

খ.আসরের নামাযের সময় শুরু হয় তার সময় সূচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। আর তার শেষ সময় তখন, যখন সূর্যরশ্মি হরিৎ বর্ণ ধারণ করে।

গ.মাগরিব নামাযের সময় শুরু হয় যখন সূর্যাস্ত ঘটে। আর তার শেষ সময় তখন পর্যন্ত থাকে, যখন সূর্যাস্তকালীন রক্তিম লালিমা নিঃশেষে মুছে যায়।

ঘ.এশার নামাযের প্রথম সময় থাকে, যখন সুর্যাস্ত কালীন রক্তিম আভা নিঃশেষ হয়ে যায় এবং তার শেষ সময় দীর্ঘায়িত হয় অর্ধেক রাত পর্যন্ত।

ঙ.আর ফযরের নামাযের প্রথম সময় শুরু হয় প্রথম উষার উদয় লগ্নে তার শেষ সময় সূর্যোদয় পর্যন্ত থাকে।(জামে আত-তিরমিযী)

২.হযরত বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,এক ব্যক্তি নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি দু’দিন আমাদের সঙ্গে নামায পড়বে। প্রথম দিন মধ্যাহ্নের সূর্য কিছুটা পশ্চিমে হেলে যাওয়ার পর হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে যোহরের আযান দিলেন অতঃপর ইকামত দিলেন। এরপর সূর্য সাদা থাকা অবস্থায়ই হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে আসরের আযান দিলেন এবং ইকামত দিলেন। এরপর সূর্যাস্তের পর হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে মাগরিব এবং পশ্চিমাকাশের আলোক-আভা অস্তমিত হওয়ার পর এশার নামাযের আযান দিলেন এবং ইকামত দিয়ে নামায পড়ালেন।

দ্বিতীয় দিন হযরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে যোহরের আযানে বিলম্ব করলেন। রৌদ্রের তাপ অনেকটা ঠান্ডা হওয়ার পর যোহরের নামায আদায় করা হল। এরপর আসরের নামাযও বিলম্বিত করা হল এবং সূর্য কিছুটা উচ্চতায় থাকা অবস্থায় নামায আদায় করা হল। এরপর মাগরিব পশ্চিমাকাশের আলোক-আভা অস্তমিত হওয়ার কিছু আগে আদায় করা হল এবং এশা রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্বিত করা হল। ফজরের নামায চারদিক ভালোভাবে ফর্সা হওয়ার পর আদায় করা হল। এরপর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই প্রশ্নকারীকে ডাকলেন। সাহাবী উপস্থিত হলে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,এই দুই সময়ের মধ্যেই তোমাদের নামাযের সময় নির্ধারিত। (সহীহ মুসলিম)

কিরাত পড়ার বিধান

হযরত নাফে (রহ.) থেকে বর্ণিত। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যদি জিজ্ঞেস করা হতো, মুকতাদী ইমামের পিছনে কিরআত পড়বে কি না, তাহলে তিনি বলতেন, ‘ইমামের কিরাআতই মুকতদীর জন্য যথেষ্ট। তবে মুকতাদী যখন একা নামায পড়বে তখন তাকে কুরআন পড়তে হবে। ‘কিরাআত’ শব্দে সূরা ফাতেহা ও অন্য সূরা দুইটিই শামিল রয়েছে।

জামায়াতের নামাযে কুরআন পড়া ইমামের দায়িত্ব। আর মুকতাদীর কর্তব্য হল চুপ থাকা। মনোযোগ সহকারে শুনা। মুকতাদী সূরা ফাতেহা ও পড়বে না এবং অন্য সূরাও মিলাবে না। মুকতাদীর জন্য সূরা ফাতিহা পড়ার বিধান নেই, শুধু জোরে কিরআতের নামাযে যখন ইমামের সূরা ফাতিহা সমাপ্ত হয় তখন মুকতাদী ‘আমীন বলবে’।

. আমীন বলা : হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-যখন তোমাদের কেউ আমীন বলে এবং আসমানের ফিরিশতাও আমীন বলেন আর পরস্পরের আমীন মিলে যায় তখন পিছনের গুনাহসমুহ মাফ করে দেয়া হয়’। (সহীহ আল বোখারী)

ইমাম সূরা ফাতিহা সমাপ্ত করার পর মুকতাদী অন্চ্চু স্বরে ‘আমীন’ বলবে। এটিই উত্তম।

.শুয়ে নামায পড়া : হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন থেকে বর্ণিত। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দাঁড়িয়ে নামায পড়। তবে যদি অক্ষম হও, বসে নামায পড়। আর তাও যদি সম্ভব না হয়, কাত হয়ে শুয়ে নামায পড়। (সহীহ আল বোখারী)

১৪২৪ বছর আগে কুরআন যে জাতির ওপর নাজিল হয় সে জাতির ভাষা ছিল আরবী। তারা সালাতে যা কিছু কোরআন থেকে পাঠ করতেন নিজেদের মাতৃভাষা আরবী হওয়ায় তা তারা সহজেই বুঝতে পারতেন। কিন্তু তারা যখন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযে দাঁড়াতেন তখন নেশাচ্ছন্ন থাকায় নামায সুষ্ঠুভাবে আদায় এবং পঠিত বিষয় হৃদয়ঙ্গম করতে পারতেন না। আমরা যারা বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান তারা কি (নেশা ছাড়াই) নামাযে যা পড়ি তা কি সত্যি বুঝতে পারি? ওই আয়াতে পরিষ্কারভাবে আল্ল-াহতায়ালা আমাদের জন্য ফরয (বাধ্যতামূলক) করে দিয়েছেন যে, আমরা নামাযে যা পাঠ করবো তা অবশ্যই উপলব্ধি করবো। আমরা বাংলা ভাষায় কথাবার্তা বলি। সেহেতু নামাযের পঠিত বিষয়গুলো বাংলা ভাষায় উপস্থাপন করলে আমাদের সবার বুঝতে সহজ হবে। নামাজে আন্তরিকতা সৃষ্টি হবে এবং দৈনন্দিন জীবনে নামাযের বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হবে। শারীরিক, আত্মিক ও মানসিক পবিত্রতা এবং পরিশুদ্ধতার সঙ্গে সঙ্গে নামাযের পঠিত বিষয়গুলো মাতৃভাষায় বুঝতে পারলে নামাযের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য উভয় উদ্দেশ্য এবং আল্লাহর দিদার লাভে সক্ষম হতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

.নামাযের নিষিদ্ধ সময় : হযরত উকাবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তিন সময় নামাজ পড়তে অথবা জানাযা নামাজ আদায়ে নিষেধ করেছেন :

১.সূর্য যখন আলোকময় হয়ে উঠে, যতক্ষণ না তা কিছু উপরে উঠে যায়।

২.সূর্য যখন স্থির হয়ে দাঁড়ায় দ্বিপ্রহরে, যাবৎনা পশ্চিমে ঢলে পড়ে এবং

৩.সূর্য যখন অস্ত যেতে থাকে, যাবৎনা উহা সম্পূর্ণ অস্তমিত হয় । (সহীহ মুসলিম)

আসুন, এখন আমরা নামায কিভাবে পড়বো এবং নামাযে কি কি পড়ি বা কি কি ওয়াদা করিতা জানতে চেষ্টা করি।

You may also like