Home ইসলাম দোয়া এবাদাতের সার, অতরক্ষার ঢাল পর্ব-৩

দোয়া এবাদাতের সার, অতরক্ষার ঢাল পর্ব-৩

by admin
0 comment

দোয়ার আদব

দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বেশ কিছু আদব রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-

১. দোয়ার শুরু, মাঝে, শেষে মহান আল্লাহর প্রশংসা করা। যেমন-আলহামদুলিল্লাহ বলা।
২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর দরূদ ও সালাম পাঠ করা। দুরূদ পাঠ না করলে আল্লাহ পর্যন্ত দোয়া পৌঁছে না।
৩. দোয়া কবুলের সময় দোয়া করা।
যেমন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, সেজদা, আযান ও একামতের মধ্যবর্তী সময়, সালাতের পর। শুক্রবার দিন আসরের পূর্ববর্তী সময়, আরাফাতের দিন এবং ইফতারের সময় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা প্রসঙ্গে বলেছেন-ঐ সময় বান্দা আল্লাহর সর্বাধিক নিকটে থাকে বলে তার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। (সহীহ মুসলিম)
৫. কেবলামুখী হয়ে দোয়া করা। কোন সময় দন্ডায়মান হয়ে দলবদ্ধভাবে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করার কথাও বর্ণিত আছে।
৬. দোয়ার জন্য পবিত্রতা হাসিল করা উত্তম। অজু সহকারে দোয়া করলে আল্লাহ সেই দোয়া কবুল করবেন।
৭. দোয়ার মধ্যে এসমে আজম বা আল্লাহর মহান নাম পাঠ করা। ক) এ মর্মে আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-আমি একদিন মসজিদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি সালাত পড়ছিল। সে বলল-হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি, যাবতীয় প্রশংসা তোমার জন্য, তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তুমি ¯েœহ ও দোয়া দানকারী, আসমান ও জমীনের ¯্রষ্টা, হে সম্মান ও শ্রদ্ধার মালিক! হে চিরঞ্জীব ও চির অবস্থানকারী। আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি। খ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে এসমে আজম সহকারে আল্লাহর নিকট দোয়া করেছে। এসমে আজম সহকারে দোয়া করলে তিনি কবুল করেন এবং প্রার্থনা করলে তিনি দান করে। (জামে আত তিরমিযী, সুনানে নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
৮. দোয়া কবুলের বিষয়ে বিনীতভাবে বারবার আল্লাহর নিকট কাকুতি মিনতি করা তাকে রাজী করার জন্য নানাভাবে ও ভাষায় চেষ্টা করা। হযরত আয়েশা সিদ্দিকী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-আল্লাহ দোয়ায় বারবার অনুনয় বিনয়কারীদেরকে পছন্দ করেন। কেননা এর মাধ্যমে বান্দা নিজের অক্ষমতা, অভাব, ভয়-ভীতি ও চাওয়া পাওয়ার মনোভাব ব্যক্ত করে, যা আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন।
৯. দোয়ার সময় দু’হাত উপরে উঠাতে হবে। এটা করা উত্তম। ক) সাহাল বিন সাদ বলেন : রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ আঙ্গুল কাঁধ বরাবর তুলে দোয়া করতেন। (বায়হাকী) খ) সায়েব বিন ইয়াজিত থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়ার সময় হাত তুলে পরে হাত মুখে মুছতেন। (সুনানে বায়হাকী)                গ) হযরত ইকরামা ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন: আল্লাহর নিকট কিছু চাওয়ার নিয়ম হলো তুমি দুই হাত কাঁধ বরাবর কিংবা এর কাছাকাছি উঠাবে, পাপরাশি ক্ষমা চাওয়ার সময় তুমি তোমার একটি আঙ্গুল (শাহাদাত) দ্বারা ইশারা করবে এবং করুণভাবে কাকুতি-মিনতি করার সময় তুমি তোমার দুই হাত পূর্ণ সম্প্রসারিত করবে। (আবু দাউদ)
১০.নি¤œ স্তরে দোয়া করা। হযরত আবু মূসা আশ’আরী থেকে বর্ণিত। একবার আমরা সফর থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলাম। তিনি মদীনার নিকটবর্তী হয়ে তাকবীর বললেন। লোকেরাও উচ্চস্ত^রে তাকবীর বললো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : হে লোকেরা, তোমরা যাকে আহŸান করছ তিনি বধির ও অনুপস্থিত নন। বরং তিনি তোমাদের ও তোমাদের সওয়ারীর ঘাড়ের মাঝখানে আছেন।
১১.দোয়ায় ছন্দ মিলানোর চেষ্টা না করা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : দোয়ায় ছন্দের মিল থেকে দূরে থাকো। তোমাদের জন্য এতটুকু বলাই যথেষ্ট। দোয়ায় কাকুতি-মিনতি ও বিনয়ের ভাব থাকা আবশ্যক। ছন্দ ও কবিতা সেই বিনয়ের পথে বাধা প্রদান করে।
১২.আগ্রহ ও ভয় সহকারে দোয়া করা।
১৩.ভালভাবে দোয়ার শব্দাবলী তিনবার উচ্চারণ করা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করলে তিনবার করতেন এবং কোন কিছু চাইলে তিনবার চাইতেন।
১৪.আল্লাহর যিকির দ্বারা দোয়া আরম্ভ করা এবং প্রথমেই কিছু না চাওয়া। ক) সালমা বিন আকওয়া বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও এই কালেমা পাঠ না করে দোয়া আরম্ভ করতে শুনিনি। খ) আবু সোলায়মান দারানী বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোন প্রার্থনা করতে চায়, তার উচিত, প্রথম দরূদ পাঠ করা এবং দরূদ দ্বারা দোয়া শেষ করা কেননা, আল্লাহ উভয় দরূদ কবুল করেন। গ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন তোমরা আল্লাহর নিকট চাও তখন আমার প্রতি দরূদ পাঠ কর। আল্লাহর শান এরূপ নয় যে, কেউ তার কাছে দুইটি জিনিস চাইলে একটি পূর্ণ করবেন এবং অপরটি করবেন না।
১৫.তাওবা করা। মনে রাখতে তাওবা সবচেয়ে বড় যিকর। বান্দার উচিত এ যিকর বেশী বেশী করা। হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বযেলন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি। ‘আল্লাহর শপথ’ প্রতি দিন আমি সত্তুরবারের চেয়েও অধিক আল্লাহর ইস্তিগফার ও তাওবা করি। (সহীহ মুসলিম) নিষ্পাপ নবী দিনে ৭০ বারের বেশী তাওবা করলে আমাদেরমত পাপী উম্মাহর উচিত কমপক্ষে ৭০ এবং আরো বেশী তাওবা করা। তাওবা হল মানুষের অন্তরের প্রচেষ্টা। অর্থাৎ মানুষের অন্তরে অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়া এবং নিজেকে গুনাহের কারণে অপরাধী মনে করা যা বান্দার অন্তরে কখনো কখনো জাগ্রত হয়ে থাকে। অন্তরে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার অর্থই হল তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা ও আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। আর আত্মাকে সকল প্রকার গুনাহ, অন্যায়, পাপাচার ইত্যাদি হতে বিরত রাখার মাধ্যমে একজন বান্দা সফলকাম হতে পারে। জনৈক আলেম তাওবার সংজ্ঞায় বলেন, আল্লাহর অসোন্তোষ ও পাকড়াওয়ের ভয়ে গুনাহের ইচ্ছা ছেড়ে দেয়া এবং সমপর্যায়ের যে সব গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, তার থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। শুধু সংঘটিত গুনাহ নয়, যদি কোন গুনাহের ইচ্ছা মনে জাগ্রত হয়ে থাকে তা থেকে ফিরে আসাও এক ধরনের তাওবা। কারো তাওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে বুঝবেন ? অনেক আলেম এ সম্পর্কে বলেন : কারো যদি তাওবা করার পরের জীবন আগের জীবন থেকে ভালো হয় অর্থাৎ পাপের কাজ অনেক কমে যায় ও ভালো কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারে তার তাওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। কিন্তু কারো যদি এমন না হয় অর্থাৎ তাওবার আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার তাওবাতে ক্রুটি আছে। তার উচিত হতাশ না হয়ে বার বার আন্তরিকতার সাথে খালেস নিয়তে তাওবা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।

আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হবার বিশুদ্ধ উপায়
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের নামে কখনও শর্ট কাটে কিছু করেননি, নতুন কিছু প্রবর্তন করেননি। নতুন  কিছু তৈরীর আমল সম্পর্কে তিনি বলেছেন “দ্বীনের ভেতর প্রত্যেক নতুন আবিষ্কার হলো বিদ’আত, প্রত্যেক বিদ’আত হলো পথভ্রষ্টতা”। (সহীহ মুসলিম) আল্লাহকে আমরা কিভাবে ডাকব। তিনি কি সরাসরি আমাদের ডাক শুনবেন? আল্লাহ বলছেন-“(হে নবী), আমার কোন বান্দা যখন তোমাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে (তাকে তুমি বলে দিয়ো), আমি তার একান্ত কাছেই আছি। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে, তাই তাদেরও উচিৎ আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং (সম্পূর্ণভাবে) আমার ওপরই ঈমান আনা। আশা করা যায় এতে করে তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে”। (বাকারাহ : ১৮৬) সুবহানাল্লাহ, এর চেয়ে সহজ ভাষা আর কি হতে পারে? এর চেয়ে বড় সুযোগ আর কি হতে পারে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম দোয়ায় কি বলেছেন, তাঁর সাহাবাগন কিভাবে আল্লাহর কাছে চেয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ইজাস সলাতু ফাসল্লিল্লাহ”, “যদি তোমার কোনকিছু চাইতে হয় তুমি আল্লাহর কাছে চাও”। (সহীহ মুসলিম)। সাহাবী জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, “ইসলাম গ্রহণের পর আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে কিছু চাইনি। সকল কিছুই আমরা আল্লাহর কাছেই চাইতাম। এমনকি আমাদের কারো জুতার ফিতাটিও যদি খুঁজে না পেতাম তাও আমরা আল্লাহকে বলতাম” (সহীহআল বুখারী)। কোন কোন সাহাবা এমনও ছিলেন যে তাঁরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে চাওয়া তো দূরে থাক, পার্থিব জীবনের ছোট-খাটো কোন বিষয়েও মানুষকে সাহায্যের জন্য বলতেন না। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-“যে ব্যক্তি আমার সাথে এই অঙ্গীকার করবে যে, সে কারো কাছ থেকে কোন কিছুই চাইবে না, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হবো।” আমি বললাম, আমি অঙ্গীকার করছি। (হাদিসটি বর্ণনাকারী রাবী বলেন) এরপর থেকে তিনি (সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু) কারো কাছ থেকে কিছু চাননি। এমনকি তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়া অবস্থায় তাঁর হাত থেকে চাবুক পড়ে গেলেও নিচে থাকা লোকটিকে তা উঠিয়ে দিতে বলতেন না, নিজেই নেমে তা উঠিয়ে নিতেন। (আবু দাউদ)। সুতরাং আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হবার বিশুদ্ধ উপায় হলো সরাসরি আল্লাহর কাছে ছাওয়া।
শ্রেষ্ঠ দোয়া
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ অসংখ্য দোয়া উল্লেখ করেছেন এবং এগুলোই দোয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এর মধ্যে একটি দোয়ার কথা সহীহ হাদিসে এসেছে যেটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বেশি পড়তেন। সেটি হলো – “রাব্বানা আতিনা ফীদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফীল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়া কিন আ’জাবান নার”। (অর্থ-হে প্রতিপালক, আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিন আর আমাকে আগুনের শাস্তি থেকে র¶া করুন )।

ইস্তিÍগফার

হযরত আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শয়নকালে ৩ বার উক্ত ইস্তিগফার পাঠ করে, আল্লাহ্ তার গুনাহ্ মাফ করে দেন যদিও তা সমুদ্রের ফণরাশি বা বৃ¶ের পত্ররাজি বা টিলার বালুরাশি বা দুনিয়ার দিনগুলির সমসংখ্যক হয়। (জামে আত তিরমিযী)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন যে এরূপ বলে তার গুনাহসমূহ মার্জিত হয় যদিও সে জিহাদ থেকে পালিয়ে যায়। আস্তাগফিরূল্লাহিল আযীমিল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হায়্যুল কাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি ( অর্থ : আমি আল্লাহর নিকট ¶মা প্রার্থণা করছি যিনি ছাড়া আর কেউ উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী এবং আমি তাঁর নিকট প্রত্যাবর্তনকারী।)
সাইয়্যেদুল ইস্তিÍগফার
সাইয়েদুল ইসতিগফার দোয়াটি জানা আছে কি? এতে রয়েছে জান্নাতের ঘোষণা! সাইয়েদুল ইসতিগফারটি (আল্লাহর নিকট ¶মা চাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠতম  দোয়া) কি আমাদের জানা আছে ? হয়ত অনেকের জানা আছে আবার অনেকের জানা নেই। কিন্তু প্রতিটি মুসলমানের জন্য দুয়াটি জানা দরকার। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতে আমাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। এটা একটি বিরাট ঘোষণা। নি:সন্দেহে তা জান্নাত প্রত্যাশী মানুষের আনন্দিত হওয়ার বিষয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ এ কথাগুলো সন্ধ্যা বেলায় বললে, অতপর সকাল হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। অনুরূপভাবে তোমাদের কেউ তা সকাল বেলায় বললে, অতপর সন্ধ্যার আগেই তার মৃত্যু হলে তার জন্যও জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (সহীহ আল বুখারী,  জামে আত তিরমিযী)
আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানী ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহ্িদকা, ওয়া ওয়া’দিকা মাছত্বোয়াতাতু, আউযুবিকা মিন শাররি মা ছানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ লাকা বিজাম্বি, ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লাহ আন্তা। অর্থ : হে আল্লাহ্ তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার বান্দা। আর আমি সাধ্যমত তোমার অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রæতির উপর কায়েম আছি। আমি মন্দ যা করেছি তা থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমার উপর তোমার প্রদত্ত নেয়ামতের ¯^ীকৃতি দিচ্ছি। আর আমার গুনাহ্গুলো ¯^ীকার করছি। অতএব আমাকে ¶মা কর। কারণ তুমি ছাড়া গুনাহ্ ¶মা করার আর কেউ নেই।

দৈনন্দিন তসবীহ ও দোয়া সমুহ

১.ঘুমানোর আগে দোয়া : ওযু সহকারে ঘুমাবে। ঘুমানোর আগ পড়বে-আল্লাহুম্মা বিইছমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া। অর্থ-হে আল্লাহ্ আমি তোমার নামে ঘুমাই তোমার নামেই জাগরিত হই।
ক) হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান থেকে বর্ণিত-রাসূলুল্লাহ্ যখন ঘুমোতে ইচ্ছা করতেন তখন আল্লাহুম্মা বিইছমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া। অর্থ-হে আল্লাহ্ আমি তোমার নামে ঘুমাই তোমার নামেই জাগরিত হই। উক্ত দোয়া পড়তেন। আবার ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বলতেন, “আল-হামদুল্লিলাহিল্লাযী আহ্ইয়ানা বা’দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। উক্ত দোয়া পড়তেন।  (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম, জামে আত তিরমিযী)
খ) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন এই দোয়াটি পড়তেন -“আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া”। অর্থ-আল্লাহ! আমি তোমারই নামে মৃত্যুবরণ করি এবং তোমারই নামে জীবনধারণ করি।
গ) হযরত আবু উমামা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল¬াম বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি অযু করে শয্যা গ্রহণ করলো এবং আমাকে স্মরণ করতে করতে নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়লো, সে রাতের যে কোন মুহূর্তে পার্শ্ব পরিবর্তন করার সময় আল্লাহর কাছে যে কল্যাণই প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাই তাকে দান করবেন।
ঘ) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : শয্যা গ্রহণের সময় যে ব্যক্তি তিনবার এ দোয়াটি পড়বে সমুদ্রের বুদবুদের সমান, সাহরা মুরুভূমির বালুরাশির সমান কিংবা জীবিকা উপর্জনকালের সমান গুনাহ হলেও আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন। “আসতাগফেরুল্লাহাল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লাহুওয়াল হাইয়্যুল ক্কায়্যিুমু ওয়াতুবু ইলাহি”। অর্থ-আমি আল্লাহর কাছে আমার সমস্তÍ গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করছি-যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী সত্তা।
ঙ) একটি দীর্ঘ হাসীসে উল্লেখ আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উপদেশ দিয়েছিলেন : তোমরা যখন ঘুমাতে যাবে তখন ৩৩বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩বার আল্লাহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪বার আল্লাহু আকবার পড়বে। এই কাজটি তোমাদের জন্য ক্রীতদাসের চেয়ে উত্তম। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন : আমি জানতে পেরেছি, যে ব্যক্তি এই কথাগুলো (সুবহানাল্লাহি আল্লাহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার) নিয়মিত পড়বে সে যতোই পরিশ্রম করুক না কেন ক্লান্তি ও অবসন্নতা তাকে মোটেই কষ্ট দিতে পারবে না।
চ) হযরত মুসনাদে আহমাদে ইবনে আ’বাদ হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আমাকে তাঁর নিজের ও হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সর্স্পকে এ হাদীসটি পুরো শুনিয়েছেন এবং উপরোক্ত দোয়াটি পড়তে উপদেশ দিয়েছেন। এ হাদীসটির পটভূমি হলো, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজির হয়ে আবেদন করলেন যে, তাঁর যাঁতা পিষতে পিষতে এবং পারিবারিক কাজকর্ম করতে করতে তাঁর হাতের তালুতে ঘা হয়ে গিয়েছে। তাই যুদ্ধবন্দিনীদের মধ্য থেকে তাঁকে একটি দাসী দেয়া হোক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বাড়ীতে ছিলেন না। ফাতিমা ফিরে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ী আসলে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর কাছে হযরত ফাতিমার রাদিয়াল্লাহু আনহা অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন। এতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর বাড়ীতে গিয়ে হাজির হলেন। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা দুজনেই তখন বাড়ীতে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি বিষয় বলবো না, যা তোমাদের জন্য খাদেমের চেয়ে অনেক গুণ উত্তম হব্?ে অত:পর তিনি প্রত্যেক নামাযের পরে এবং রাতে শোবার সময় উপরোক্ত দোয়াটি পড়তে উপদেশ দিলেন।
ছ) বুখারী ও মুসলিমে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই আমলটি বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিয়ম ছিলো প্রত্যেক রাতে যখন তিনি ঘুমানোর জন্য বিছানায় যেতেন তখন দুই হাতের তালু সংযুক্ত করতেন এবং তারপর সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তাতে ফুঁ দিতেন এবং নিজের দেহের যতোদূর পর্যন্ত সম্ভব হতো ছোঁয়া লাগাতেন। স্তúর্শ করা শুরু করতো মাথা, মুখমন্ডল এবং শরীরের সম্মুখভাগ থেকে। এরূপ তিনবার করতেন।
জ) একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন আলী ! পাঁচটি কাজ সম্পাদন না করে নিদ্রা যেয়ো না। প্রথমত-মিসকীনদের মধ্যে চার হাজার দেরহাম সাদকাহ করবে। দ্বিতীয়ত-অন্তত এক খতম কুরআন পাঠ করবে। তৃতীয়ত-জান্নাতের মূল্য পরিশোধ করবে। চতুর্থত- হজ্জ্ব আদায় করবে। পঞ্চমত-সমগ্র দাবীদারদের তুষ্ট করবে। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এতগুলি কাজ একরাতে সমাধা করা কিভাবে সম্ভবপর হবে ? নবী করীম সল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল¬াম ইরশাদ করলেন- প্রথমত : শয়নের আগে চারবার সূরা ফাতেহা পাঠ করবে। এতেই ফকীর-মিসকীনের মধ্যে চার হাজার দেরহাম সাদকাহ দান করার তুল্য নেকি অর্জিত হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত : তিনবার সূরা এখলাস পাঠ করবে, এতে করে পূর্ণ এক খতম কুরআন পাঠ করার সমান নেকি অর্জিত হয়ে যাবে। তৃতীয়ত : দশবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, এর দ্বারা তোমার বেহেশতের মূল্য পরিশোধ হয়ে যাবে। চতুর্থত : পাঁচবার “সুবহানাল্ল¬াহ ওয়ালহামদুলিল্ল¬াহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্ল¬াল্লাহু আল্ল¬াহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্ল¬াহিল আলিয়্যিল আজীম, মাশাআল্লা¬হু কানা, মা-লাম ইয়াশাউ লাম ইয়াকুন” পাঠ কর। এর দ্বারা তুমি হজ্জ্ব আদায় করার সমান নেকি লাভ করতে পারবে। পঞ্চমত : দশবার “সুবহানাল্ল¬াহি বেহামদিহী,ওয়া সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম,ওয়া বেহামদিহী ওয়াসতাগফেরুল্লাহা রাব্বী মিন কুল্লে¬ যাম্বিওঁ ওয়া আতুবু ইলাইহি”- পাঠ কর, এতটুকুই তোমার জন্য এমন ফলপ্রসূ হবে, যেন তুমি সমস্তÍ দাবীদারগণকে তুষ্ট করে দিলে।
ঝ) আয়তুল কুরসী :
১.সহীহ বুখারীতে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু এ ঘটনার উল্লেখ আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মসজিদে নববীতে সাদকাহয়ে ফিতর হিসেবে জমাকৃত খাদ্যশস্যের  তত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেছিলেন। এই সময়ে এক ব্যক্তি পর পর দুই রাত সেখানে খাদ্যশস্যের স্তুুপের কাছে এসে মুঠি ভরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকলো। প্রতিবারই হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে হাতেনাতে পাকড়াও করলেন। কিন্তু নিজের চরম দরিদ্রদশার কথা বলে এবং পুনারাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে সে মুক্তিলাভ করলো। তৃতীয় রাতে সে আবার আসলো। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে পাকড়াও করে বললেন: এবার আমি তোমাকে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির না করে ছাড়ছি না। সে অনুনয় করে বললো, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কথা শিখিয়ে দিচ্ছি, যা তোমার জন্য খুবই কল্যাণকর হবে। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু কল্যাণকর কথার অনুরক্ত ছিলেন। তাই তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। সে বললো, রাতে যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করে দেয়া হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সকালে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ ঘটনা শুনালে তিনি বললেন : সে নিজে মিথ্যাবাদী, কিন্তু তার এ কথাটা সত্য। তোমার সাথে যার কথা হয়েছে সে কে তা কি জানো? সে শয়তান।
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম, লা তা’খযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাউমু, লাহু-মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি, মানযাল্লাযী ইয়াস ফা’উ ইনদাহু ইল্লা বি‘ইযনিহি, ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালাফাহুম, ওয়ালা  ইউহীতূনা বিশাইইম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা’-আ। ওয়াসিয়া কুরসিয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা, ওয়ালা ইয়া’উদুহু হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলীয়্যুল ‘আযীম।
ক্স    যে ব্যক্তি প্রভাতে ও শয়নকালে আয়তুল করছি পাঠ করবে, আল্লাহ পাক ¯^য়ং দিবারাত্রির জন্য তার রক্ষক হবেন।
ক্স    আয়তুল কুরসী পাঠে জ্বীন, দেত্ত, ভুত ও শয়তানের আছর হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
ক্স    আয়তুল কুরসী পাঠের আমলে সকল প্রকার বিপদ আপদ ও দুংখ কষ্ট, দুর হয়। মনের বাসনা পূর্ণ হয়, রুজি রোজগার বৃদ্ধি পায়।
ক্স    কোন কাজে রওয়ানার সময় বা বিদেশে যাওয়ার সময় তা পাঠ করে রওয়ানা দিলে নিরাপদে পৌঁছা যায় এবং সফরের উদ্দেশ্যে সফল হয়।
ক্স    প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়তুল কুরছি পাঠ করলে রূহ আরামের সাথে কবজ হয় এবং সহজে বেহশতে প্রবেশ করা সম্ভব হবে।
ঞ) সূরা হাশরের শেষাংশ : সূরা হাশরের শেষাংশ প্রত্যেহ সকালে পাঠ করলে ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধা পর্যন্ত ও সন্ধায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত পাঠ কারীর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন ও তার রক্ষনা বেক্ষন করেন। ফলে সকল প্রকার ফায়দা হাসিল হয়। যদি এ সময়ের মধ্যে সে মারা যায়, তবে শহীদি মর্তবা পাবে। এটি একটি উৎকৃষ্ট আমল। তিন বার আউযু বিল্লাহিচ্ছামিউল আলিম হিমিনাশ শায়তানির রাজীম ও একবার বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ করে উক্ত আয়াতটি পড়তে হয়ে।
হুওয়াল্লা হুললাযী  লা-ইলাহা ইল্লাহু  আ’-লিমুল গাইবি  ওয়াশশাহাদাতি  হুওয়ার রাহমানুর রাহীম। হুওয়াল্লা হুললাযী লা-ইলাহা ইল্লাহু আলমালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু‘মিনুল মুহাইমিনুল আযীযুল জ্বাব্বারুল মুতাক্বাব্বিরু; সুবহানাল্লাহি-আম্মা ইউশরিকুন। হুয়াল্লা হুল মা-লিকুল বা-রিউল মুসাব্বিরু লাহুল আসমা-উল হুছনা; ইয়্যুসাব্বিহু লাহূ মা-ফিস্সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া হুওয়াল আযীযুল হাকীম।

ঢ) সূরা আল বাকার শেষ তিন আয়াত :
১.হযরত আবু মাসউদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ঘুমানোর সময় যে ব্যক্তি সূরা বাকারার শেষ তিনটি আয়াত তিলাওয়াত করবে সেটি  তার জন্য সব ব্যাপারেই যথেষ্ট হবে। কেউ কেউ এর অর্থ বুঝাচ্ছেন এই যে, এ আয়াতগুলির তিলাওয়াত করলে রাত জেগে ইবাদতের জন্যও যথেষ্ট হবে। কিন্তু এ অর্থটি একেবারেই ঠিক নয়। এ যথেষ্ট হওয়ার সঠিক অর্থ হলো, তা মানুষকে সব রকমের অকল্যাণ ও বিপদ থেকে নিরাপদ রাখবে। (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে)
২.হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : আমি মনে করি না, সূরা বাকারার শেষ তিনটি আয়াত না পড়ে কোন জ্ঞানী ব্যক্তি ঘুমাতে পারে।
৩.হযরত আবু মাসউদ বদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাক্বারার শেষ আয়াত দুটি পাঠ করবে, তার জন্য সে দুটিই যথেষ্ট হবে।” (সহীহ আল বুখারী)
লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্ধী; ওয়াইন তুবদূ মা ফি আনফুসিকুম আও তুখফুহু ইউহাসিবকুম বিহিল্লাহ; ফাইয়াগফিরু লিমাইয়াশাউ ওয়াইউ’আযযিবু মাইইয়াশাউ; ওয়াল্লাহু আল্লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। – ২৮৪
আমানার রাসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহি মির বাব্বিহী ওয়াল মু’মিনুন; কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়ামালাইকাতিহি ওয়াকুতুবিহী ওয়া রসূলিহি; লানুফাররিকু বাইনা আহাদিম-মির রসূলিহি; ওয়া ক্বালু সামি’না ওয়াআত’¡না, গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছীর। – ২৮৫
লাইয়্যুকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা; লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত; রাব্বানা লা তুআখিযনা ইন্নাসীনা আও আখতা’না; রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা  ইছরান কামাহামালতাহু আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা; রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বক্বাতালানা বিহি, ওয়াফু আন্না, ওয়াগফিরলানা, ওয়ার হামনা, আনতা মাওলানা ফানছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরীন। – ২৮৬
ড) সূরা ইখলাস :
১.    হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “কুলহু ওয়াল্লাহু আহাদ” সর্ম্পকে বলেছেন: এ সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াশের সমান। (সহীহ মুসলিম)
২. হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে যার যার সূরা কুলহু আল্লাহু আহাদ পড়তে শুনে সকাল হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে তা বর্ণনা করলো। লোকটি যেন কুলহু আল্লাহু আহাদ এর মর্যাদাকে খাটো করছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি এ সূরাটি অবশ্যই কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। (সহীহ আল বুখারী)
৩. হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত তিনি বলেছেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি একটি সেনাদলের অধিনায়ক করে যোদ্ধাভিযানে পাঠালেন। নামাযে সে যখন সঙ্গীদের ইমামতি করতো তখন কুলহু আল্লাহু আহাদ দিয়ে শেষ করতো। অভিযান শেষে ফিরে এসে লোকজন ঐ বিষয়টি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বললে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কেন এরূপ করে তা জিজ্ঞেস করো। সবাই তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বললো, ঐ সূরাতে আল্লাহতায়ালার গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে তাই তা পাঠ করতে আমি ভালোবাসি। এ কথা শুনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাকে জানিয়ে দাও যে আল্লাহও তাকে ভালোবাসে।                (সহীহ আল বুখারী)
ণ) লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ পড়া : হযরর আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলছেন: আমি কি তোমাকে  জান্নাতের কোনো গুপ্ত ধনের কথা জানাবো না ? আমি বললাম: অবশ্যি জানান, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন : (সে গুপ্তঘনটি হচ্ছে) লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ।
২.রাতের দোয়া :
ক) হযরত মু’আয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন ব্যক্তি যদি অযু করে দোযা পড়ে রাতে শয্যা যায়, তারপর শেষ রাতে উঠে সে আল্লাহর নিকত কিছু চায় আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন”।      (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ)
খ) যে ব্যক্তি অযুসহ রাতে ঘুমায়, অতপর রাতে জেগে উঠেই এ দোয়া পড়ে তারপর যে আবেদন করে তা কবুল হবে, এবং যথাযথ অযু করে সালাত আদায় করলে তা কবুল হবে (জামে আত তরমিযী) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদ্হাু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন ক্বাদীর। ছুবাহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার ওয়া লা হাওলা ওয়া লা ইলাহা ইল্লা বিল্লাহিল আলীযড়্যল আযীম। আল্লাহুম্মাগফিরলী।
গ) হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম  আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব, যে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব, যে আমার নিকত ¶মা চাইবে আমি তাকে ¶মা করব।’ (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম)
ঘ) হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, ‘নিশ্চয়ই রাতে একটা সময় রয়েছে, যে সময়ে কোন মুসলমান ইহকাল ও পরকালে কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন এবং এটা প্রতি রাতে হয়ে থাকে।’ (সহীহ মুসলিম)
৩.রাতের শেষ তৃতীয়াংশে : এই সময় দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে অত্যন্ত জোরালো রেফেরেন্স আছে। এটা প্রতিটি রাতের জন্যই প্রযোজ্য, শুধুমাত্র শবে বরাত, শবে মিরাজ বা কদর রাতে নয়।
ক) হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নীচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ¶মা প্রার্থনাকারী, যে আমি তোমাকে ¶মা করে দেবো?” (সহীহ আল বুখারী)
খ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আল্লাহর কাছে তাঁর একজন উপাস্য সবচেয়ে নিকটতম যে সময়টাতে আসতে পারে তা হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সুতরাং তোমরা যদি পারো তাহলে তোমরা তাদের একজন হও যারা সে সময় আল্লাহর স্মরণ করে”। (জামে আত তিরমিযী, সুনানে নাসায়ী, আল হাকিম)
৪.শেষ রাতের যে কোন একটি সময় : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“রাতে এমন একটি সময় আছে যে সময়টাতে কোন মুসলিমের এমনটা হয়না যে সে এই পৃথিবী কিংবা পরকালের জৌবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইলো আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে”। (সহীহ মুসলিম)
৫.ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময়রে দোয়া :
ক) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন এই দোয়াটি পড়তেন -“আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাহিন নুশুর”। অর্থ : সকল প্রশসংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর পর জীবিত করলেন এবং তার কাছেই ফিরে যেতে হবে।
খ) হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান থেকে বর্ণিত-রাসূলুল্লাহ্ যখন ঘুমোতে ইচ্ছা করতেন তখন উক্ত দোয়া পড়তেন। আবার ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বলতেন,“আল-হামদুল্লিলাহিল্লাযী আহ্ইয়ানা বা’দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর”।              (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম, জামে আত তিরমিযী)
গ) ইমাম বুখারী (র:) উবাদা ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ঘুম থেকে জেগেই যে ব্যক্তি পড়বে : “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া-লাহুল হামদ, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদির। আলহামদু লিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহ”। অর্থ-আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তার কোনো শরীক নেই। সার্বভৌমত্ব ও সমস্তÍ প্রশংসা তাঁরই। তিবি সর্বশক্তিমান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। তিবি পবিত্র ও নিষ্কুলুষ। আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন তৎপরতা ও শক্তি কার্যকর হতে পারে না।
এই দোয়া পাঠ করার পর যদি সে বলে “আল্লাহুম্মাগ ফিরলী” (হে খোদা আমাকে ক্ষমা করে দাও) কিংবা অন্য কোনো দোয়া করে তাহলে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেন এবং যে অযু করে নামায পড়বে তার নামায কবুল করা হবে।
ঘ) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময়ে আল্লাহর নাম স্মরণ করার দর্শন বর্ণনা করে বলা হয়েছে : শয়তান তোমার বিছানায় তিনটি গিরা লাগিয়ে দেয়। প্রতিটি গিরা দেয়ার সময় সে হাত বুলিয়ে দিয়ে বুঝাতে চায় যে, এখনো রাত আছে, ঘুমিয়ে থাকো। কিন্তু জেগে উঠে মানুষ আল্লাহর নাম নিতে শুরু করলে একটি গিরা খুলে যায়। যখন সে অযু করে তখন দ্বিতীয় গিরাটি খুলে যায়। যখন সে নামায পড়তে শুরু করে তখন তৃতীয় গিরাটি খুলে যায় এবং সে প্রফুল্ল ও নব উদ্দীপনায় দিনের সূচনা করে। কিন্তু যে এ কাজ করে না সে অত্যন্ত অবসাদ ও অলসতার শিকার হয়।
৯.নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়ার আগে পড়বে : হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত-যে ব্যক্তি সালাতের জন্য ঘর থেকে বেরোনোর সময়  পড়বে “আল্লাহুম্মাজআল ফী ক্বালবী নুরাওঁ ওয়া ফী লিসানি নুরাওঁ ওয়াজআল ফী ছাময়ী নুরাওঁ ওয়াজআল ফী বাছারী নুরাওঁ ওয়াজআল মিন খালফী নুরাওঁ ওয়া মিন আমামি নুরাওঁ ওয়াজআল লী মিন ফাওক্বী নুরাওঁ ওয়া মিন তাহতী নুরাওঁ আল্লাহুম্মা আ’তিনী নুরাঁও।” অর্থ-হে আল্লাহ্! আমার ক্বলবে নুর দিন, আমার জিহŸায় নুর দিন, আমার কর্ণে নুর দিন, আমার চোখে নুর দিন, আমার পিছনে ও সামনে নুর দিন, আমার উপরে ও নীচে নুর দিন। হে আল্লাহ্ আমাকে নুর দিন। আল্লাহ্ তার জন্য সত্তুর হাযার ফিরিশতা নিয়োজিত করবেন যারা তার জন্য ¶মা পার্থনা করতে থাকবে এবং সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ্ তার দিকে অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকাবেন। (যাদুল মা’আদ)।
১০.ফজরের সুন্নাতের পর ফরজ নামাযের আগে পড়বে : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের সুন্নাতের পর ফরজ নামাযের আগে ১০০ বার পড়বে “ছুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী ছুবহানাল্লাহিল আযীমি আস্তাগফিরুল্লাহ্”। দুনিয়া তার নিকট ফিরে আসবে (অর্থাৎ তার ধন-সম্পদে অশেষ বরকত হবে); আল্লাহ উক্ত দোয়ার প্রতিটি শব্দ থেকে এক একজন ফিরিশতা সৃষ্টি করে কিয়ামত পর্যন্ত তসবীহ পাঠে নিযুক্ত করে দিবেন এবং তার সওয়াব এর পাঠকারী ফেতে থাকবে। (জামে আত তিরমিযী)
১১.অযু শুরুর দোয়া : হযরত আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি এমন এক সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম, যখন তিনি অযু করছিলেন এবং তাঁর যবান মুবারক থেকে এ দোয়া উচ্চারিত হচ্ছিল : “হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করে দিন। আমার ঘরের প্রয়োজন মিটিয়ে দিন এবং আমার রিযিকে বরকত দান করুন।” (আন-নাসায়ী
১২.অযু শেষের দোয়া : হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অযু সম্পন্নের পর নিম্নলিখিত দোয়া করে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। সে যে কোনো দরজা দিয়েই ইচ্ছা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম ও জামে আত-তিরমিযী) :
ক) আশহাদ আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শরীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লাহুম্মাজ্’আলনী মিনাত্ তাওয়াবীনা ওয়াজ’আলনী মিনাল মুতাত্বহ্হেরীন। অর্থ-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো ইলাহ্ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারী লোকদের মধ্যে শামিল করুন। (সহীহ মুসলিম ও জামে আত-তিরমিযী)
খ) ছুবহানাকা ওয়াবিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা আছতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা। অর্থ-সমস্ত ত্রæটি ও অক্ষমতা থেকে মুক্ত তুমি। তোমার প্রশংসা ¯^ীকার করে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তোমার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী, তোমারই দিকে আমি প্রত্যাবর্তন করছি।
১৩.আযানের দোয়া : আল্ল¬াহুম্মা রাব্বা হাযিহীদ্দা‘ওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস্সালাতিল ক্বা-য়িমাতি আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাদ্বীলাতা ওয়াদ্দারাজাতিররাফী’য়াতা ওয়াবআসহু মাক্বামাম মাহমুদানিল্ল¬াযী ওয়া‘আদতাহু ইন্নাকা লা তুখলিফুল মীয়াদ।
অর্থ-হে আল্লাহ, এ পরিপূর্ণ আহŸান ও শাশ্বত নামাযের তুমিই প্রভু; হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দান করো সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান ও সুমহান মর্যাদা এবং জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থানে তাঁকে তুমি অধিষ্ঠিত করো। যার প্রতিশ্রæতি তুমি তাঁকে দিয়েছ। নিশ্চয়ই তুমি ভঙ্গ করো না অঙ্গীকার।
১৪.মসজিদে প্রবেশে দোয়া : আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক। অর্থ-হে আল্লাহ! তোমার রাহমতের দরজা আমার জন্য খুলে দাও।
১৫.মসজিদ হতে বের হওয়ার দোয়া : আল্লাহুম্মা ইন্নি আছআলুকা মিন ফাদলিকা। অর্থ-হে আল্লাহ! তোমার পক্ষ থেকে আমি কল্যাণ কামনার জন্য বের হচ্ছি।
১৬.জায়নামাযের দোয়া : ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাসসামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনালমুশরিকীন। অর্থ-নিশ্চয়ই আমি তাঁর দিকে মুখ করলাম। যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, বস্তুত আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।
১৭.রুকু হতে সোজা হয়ে খাড়া হওয়ার দোয়া : ‘রাব্বানা লাকাল হামদ, হামদান কাছিরান, ত্বাইয়্যেবান, মোবারাকান ফীহি’।    অর্থ-হে আল্ল¬াহ! সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য, এমন ব্যাপক প্রশংসা, যাতে রয়েছে খুবই উত্তম বরকত। এ প্রশংসায় মঙ্গল হোক বরকত হোক।
ক) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (নামাযে রুকু হতে মাথা উঠানোর সময়) ইমাম যখন সামিআল্লাহু-লিমান হামিদাহ বলবে, তোমরা তখন আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ বল। কেননা, যে ব্যক্তির এ কথা ফেরেশতাদের এ কথার সাথে (অর্থাৎ একই সময়ে) উচ্চারিত হবে, তার অতীতের সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (সহীহ আল বোখারী)
খ) হযরত রিফ’আ ইবনে রাফে’ যুরাকী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে নামায আদায় করছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের জামায়াতে ইমামতি করছিলেন, যখন তিনি নামাযে রুকু থেকে সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে দাঁড়ালেন, তখন এক সাহাবী পিছন থেকে রাব্বনা লাকাল হামদ বলার পর হামদান কাছীরান ত্ব্যায়্যিবান মুবারকান ফিহি এই শব্দগুলিও বললেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন যে, কওমের মধ্যে উক্ত কালেমাগুলি কে বলেছিলেন? এক সাহাবী বললেন হুযুর! এই কালিমাগুলি আমি আদায় করেছিলাম। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যখন তুমি এই কালেমাগুলি আদায় করতেছিলে-তখন আমি দেখলাম ৩০ জন ফেরেশতা ঐ কালেমাগুলি লুফে নেয়ার জন্য লাফিয়ে দ্রুত ধাবিত হচ্ছেন কার আগে কে ঐ কালেমাগুলি নিয়ে তার সওয়াব লিখবেন। (সহীহ আল বোখারী)
১৮.রুকুর ও সিজদাতে মধ্যে পড়ার দোয়া : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ-ফিরলী। অর্থ-হে আল্লাহ তুমি পাক পবিত্র, হে আমাদের রব তোমার প্রশংসা সহকারে ফরিয়াদ করছি! তুমি আমাকে মাফ কর।
১৯.দোয়ায়ে মাছুরা : আল্ল¬াহুম্মা ইন্নী জালামতু নাফসী জুলমান কাসীরাওঁ ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্ল¬া আনতা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম। অর্থ-হে আল্ল¬াহ! আমি আমার আত্মার উপর বড়ই অত্যাচার করেছি এবং তুমি ভিন্ন কেউই পাপসমূহ ক্ষমা করতে পারে না। অতএব তুমি নিজ হাতে আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার উপর রহমত (করুণা) বর্ষণ করো। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।
২০.নামায শেষে দোয়া :
ক) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-“দরিদ্র মুহাজিরগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লামের নিকটে এসে আরয করলেন, সম্পদশালীরা জান্নাতের সমুচ্চ মর্যাদা ও চিরস্থায়ী নিয়ামত লাভের আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেলেন!’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম জিজ্ঞেস  করলেন, ‘কিভাবে তারা অগ্রগামী হয়ে গেল? সাহাবীরা বললেন, ‘নামায-রোযা ইত্যাদি আমল আমরাও করি, তারাও করেন, কিন্তু সম্পদশালী হওয়ার কারণে তারা দান-সদকা করে থাকেন, ক্রীতদাস মুক্ত করে থাকেন, যা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় শিখিয়ে দিব যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রগামী হয়ে যাবে আর ওই আমল করা ছাড়া কেউ তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হতে পারবে না? তারা বললেন, ‘অবশ্যই বলুন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম ‘বললেন তোমরা প্রতি নামাযের পর তেত্রিশ বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার পড়বে’।” বর্ণনাকারী বলেন, “কিছুদিন পর মুহাজির সাহাবীগণ পুনরায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লামের খিদমতে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লুাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম! আমাদের সম্পদশালী ভাইরা এই আমল সর্ম্পকে জানতে পেরেছেন এবং তারাও তা করতে আরম্ভ করেছেন!’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম তখন বললেন,‘এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করে থাকেন’।” (সহীহ মুসলিম)
খ) হযরত কা’ব ইবনে ইজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম বলেন-‘নামায শেষে বাক্যগুলি যে পাঠ করে সে নিষ্কাম হয় না। বাক্যগুলো হল-তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ, চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার।’ (সহীহ মুসলিম)
গ) ১. সালাম ফিরানোর পর ৩ (তিন) বার আস্তাগফিরুল্লাহ  ২. একবার আল্লাহু আকবার ৩.এরপর-পড়তে হয় : আল্লাহুম্মা আনতাছ সালামু ওয়া মিনকাছ সালামু তাবারাকতা ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম। অর্থ-হে আল্লাহ! শান্তির উৎস তুমি, তোমার থেকেই আসে শান্তি। হে প্রতাপশালী মহা মর্যাদার অধিকারী। তুমি বড়ই বরকতময়-প্রাচুর্যশালী।
২১.প্রত্যেক ফরয নামাযের পর দোয়া : রাসূলুল্লাহ্ নামাযের পর সালাম ফিরিয়ে এরুপ পড়তেন। ক. আল্লাহু আকবার।                      খ. আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ। গ. আল্লাহুম্মা আন্তাচ্ছালামু ওয়া মিনকাচ্ছালামু ওয়া তাবারাকতা ইয়া যাল-যালালি ওয়াল ইকরাম। (অর্থ-হে আল্লাহ্! আপনি শান্তি, আপনা থেকেই শান্তি, বরকতসমূহ আপনারই, হে গৌরব ও সম্মানের অধিকারী।) যে এরূপ আমল করবে তার ও জান্নাতের মধ্যে একটিই মাত্র প্রতিবন্ধক থাকে, আর তা হলো মৃত্যু। আর পরবর্তী নামায পর্যন্ত সে আল্লাহর যিম্মায় থাকে। (যাদুল মাআদ)
যে ব্যক্তি ফযরের পর ৭ বার “আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার”। (অর্থ-হে আল্লাহ্ আমি আপনার নিকট জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই) এ দোয়া পাঠ করবে সেইদিন মৃত্যু হলে তার জন্য জাহান্নামের ৭ টি দরজাই নিষিদ্ধ করা হবে। অনুরুপ ভাবে সন্ধ্যায় (মাগরিবের পর) ৭ বার এ দোয়া পাঠ করবে সেইদিন মৃত্যু হলে তার জন্য জাহান্নামের ৭ টি দরজাই নিষিদ্ধ করা হবে।
২২.প্রত্যেক নামাযের পর দোয়া : যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর উক্তরূপে সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার এবং একবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদ্হাু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শ্যাড়্যন ক্বাদীর তসবীহ পাঠ করে তার সকল গুনাহ মার্জিত হয়ে যায় যদিও তা সমুদ্রের ফেণরাশির মত অফুরন্ত হয়। যে প্রত্যহ ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহি ও বিহামদিহী’ পাঠ করে তার পাপরাশি সমুদ্রের ফণরাশির ন্যায় অপরিসীম হলেও তা ¶মা করা হয়।
২৩.সকাল-সন্ধ্যায় দোয়া :
ক) হাসবিয়াল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আযীম। (যাদুল মাআদ) অর্থ-আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তারই উপর নির্ভর করছি, আর তিনি হচ্ছেন মহান আরশের অধিপতি। ক.সকাল-সন্ধ্যায় ৭ বার পড়লে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল চিন্তা ভাবনার জন্য আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবেন।
খ) যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদ্হাু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদু ইউয়ি ওয়া ইউমীতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লিশায়্যিন ক্বাদীর”। এ দোয়া ৩ বার করে পাঠ করে তাকে সর্বপ্রকার ¶তি থেকেই হিফাজত করা হয়।
গ) যে ব্যক্তি “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদ্হাু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদু ইউয়ি ওয়া ইউমীতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লিশায়্যিন ক্বাদীর”। এ দোয়াটি ১০ বার পাঠ করবে সে ব্যাক্তি ইসমাঈলীয় বংশের ১০ জন গোলাম আযাদ করার পুণ্য লাভ করবে। তার ১০ টি গুনাহ্ মাফ করা হবে, এবং ১০ টি পদর্যাদা উন্নত করা হবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান থেকে হিফাজতে থাকবে। সে সকলের চেয়ে বেশী পূণ্যের অধিকারী হবে যদি না কেউ তার চেয়ে বেশী এই দোয়া পাঠ করে থাকে। (যাদুল মাআদ)।
ঘ) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদ্হাু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদু ইউয়ি ওয়া ইউমীতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লিশায়্যিন ক্বাদীর। এ দোয়াটি প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করলে বিশেষ ফযীলতের অধিকারী হবে। (সহীহ আল বোখারী, সহীহ মুসলিম)।
ঙ) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদ্হাু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদু ইউয়ি ওয়া ইউমীতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লিশায়্যিন ক্বাদীর। যে ব্যক্তি এ দোয়টি দিনে ২০০ বার উক্ত কালাম পাঠ করে কেউই তার পূর্বে (জান্নাতে) যেতে পারবে না এবং কেউই তার নাগাল পাবে না। শুধু যে ব্যক্তি তার আমল থেকে উত্তম আমল করে তার কথা ভিন্ন।
চ) যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় (অর্থাৎ ফজর ও মাগরিবের পর) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদ্হাু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদু ইউয়ি ওয়া ইউমীতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লিশায়্যিন ক্বাদীর। এ দোয়াটি ৩ বার করে পাঠ করবে তার উপর সন্তুষ্ট হওয়া আল্লাহর উপর দায়ীত্ব হয়ে যায়। (জামে আত তিরমিযী)
ছ) রাদ্বী-তু বিল্লাহি রাব্বাও ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনাও ওয়া বি মুহাম্মাদি নাবিয়্যাও ওয়া রাসূলি। অর্থ-আমি সন্তুষ্ট আছি আল্লাহ্কে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নবী হিসাবে পেয়ে।
জ) ছুবহানাল্লাহি ওয়া আলহামদুলিল্লাহি, ওয়া লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার। অর্থ-আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা তাঁরই, তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।
জ) ছুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী আদাদা খালক্বীহি ওয়া রেদ’আ নাফছিহী ওয়া জ্বীনাতা আরশিহী ওয়া মিদাদা কালিমাতিহী। অর্থ-আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার প্রশংসা সহকারে, তার সৃষ্টিরাজির সমপরিমান, তার ¯^ীয় সন্তুষ্টির অনুরূপ, তার আরশের ওজনের পরিমান এবং তার বানীসমূহ লিখনের কালির পরিমান।
ঝ) আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান নাফীয়্যান, ওয়া রিযকান তাযড়্যবান, ওয়া আমালাম মুতাকাব্বালান। অর্থ-হে আল্লাহ্ আমি তোমার নিকট উপকারী ইলম, পবিত্র রিযিক এবং গ্রহণযোগ্য আমলের আবেদন করছি।
২৪.কালেমা তৈয়্যবার শরীফের ফযীলত :
ক) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি খাঁটিঅন্তরে কালেমা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ” পাঠ করবে সে বেহেশতবাসী হবে।
খ) হযরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-“যখন কোনো মুমিন বান্দা কালেমা শরীফ অর্থাৎ “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ” উচ্চারণ করেন, তখন তার মুখ থেকে গাঢ় থেকে সবুজ বর্ণের পাখি বেশে দু’জন ফেরেশতা বের হয়ে আসেন। এদের দুটি পাখা এতো বড় যে তা মাশরিক ও মাগরিব পর্যন্ত  বিস্তৃত হয়ে যেতে সক্ষম। এই ফেরেশতা দু’জন উর্ধ্ব জগতে আরশের নীচে পৌঁছে যায়। তাঁদের মুখ থেকে মধু-মক্ষিকার আওয়াজের ন্যায় গুণ-গুণ আওয়াজ বের হতে থাকে। আরশে আজিমে বিদ্যমান ফেরেশতাগণ এই দুই আগন্তুক ফেরেশতাকে  বলতে থাকেন, চুপ হও! আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের মহা-পরাক্রমের প্রতি লক্ষ্য করে আওয়াজ বন্ধ করো! তখন আগন্তুক দুই ফেরেশতা বলেন, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত যে পর্যন্ত কালেমা শরীফ পাঠকারী বান্দার সমস্ত গুনাহ মাফ করে না দেন, সে পর্যন্ত আমরা চুপ হতে পারি না। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে নি:সন্দেহে আমি কালেমা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ” পাঠকারীকে ক্ষমা  করে দিলাম। অত:পর আল্লাহ জাল্লা শানহু উক্ত দুই ফেরেশতাকে সত্তর হাজার যবান দান করেন, যার দ্বারা তারা কেয়ামত পর্যন্ত কালেমা শরীফ পাঠকারী বান্দার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। কেয়ামত সংঘঠিত হওয়ার পর এই দুই ফেরেশতা কালেমাশরীফ পাঠকারী বান্দার নিকট হাজির হয়ে হাত ধরে তাকে পুলসিরাত পার করে দিবেন।
গ) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:“লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” হল নিরানব্বইটি রোগের ওষধ যাদের সহজটা হল চিন্তা। (বায়হাকী)
ঘ) হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে তিনবার আল্লাহর নিকট জান্নাত চায়, জান্নাত বলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল কর। আর যে তিনবার জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চায়, জাহান্নাম বলে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ কর। (তিরমিযী)
২৫.সুবহানাল্লাহি ওয়া বেহামদিহি পাঠ করার ফযীলত :
১.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতিদিন একশতবার “সুবহানাল্লাহি ওয়া বেহামদিহি” পাঠ করবে তার জীবনের সমস্ত গোনাহ আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দিবেন। এই গোনাহ সমুদ্রের পানির বরাবর হলেও! (মুসলিম,ফোওয়ায়েদুল মুরিদিন, হযরত শরফুদ্দীন ইয়াহইয়া মানিরী (রাহ) থেকে বর্ণিত)।
২.হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি “সুবহানাল্লাহি ওয়া বেহামদিহি” বলবে তার জন্য একটি খেজুর গাছ রোপন করা হয়। (তিরমিজী ও নাসাঈ)
২৬.৩৩বার সুবহাল্লাহ, ৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৩বার আল্লাহু আকবার পড়ার ফযীলত : হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর ৩৩বার সুবহাল্লাহ, ৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৩বার আল্লাহু আকবার পড়ে এবং একশতবার পূর্ণ করার জন্য একবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মূলক ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদির পড়ে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়, যদিও তা হয় সাগরের ফেনাপুঞ্জের সমান। (সহীহ মুসলিম)
২৭.সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ পড়ার ফযীলত :
ক) হযরত আবদুল মালেক আশ’আরী রাদিয়াল্লাহুথেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তাহারাত ঈমানের অর্ধেক আর “আলহামদুলিল্লাহ” বাক্যটি মীযান (দাঁড়িপাল্লা) ভরে দেয় এবং “সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ” এই বাক্যদুটি ভরে দেয় বা এদের প্রত্যেকটি ভরে দেয় আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে সবটুক। (সহীহ মুসলিম) খ) হযরত আবদুল মালেক আল হারেস ইবনে আসেম আল আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক; আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য) বললে পাল্লা পরিপূর্ণ করে দেয় এবং “সুবহানাল্লাহ ওয়া হামদুলিল্লাহ” (আল্লাহ কতই না পবিত্র! এবং সমস্ত প্রশংসা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য) উভয়ে অথবা এর একটি আসমান ও যমীনের মাঝখান পূর্ণ করে দেয়। নামায হচ্ছে আলো, সাদকা হচ্ছে প্রমাণ, সবর হচ্ছে উজ্জ্বল আলো, আর কুরআন হচ্ছে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ। প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে সকাল শুরু করে-আর তা হয় তাকে মুক্ত করে দেয় অথবা তাকে ধ্বংস করে দেয়।
২৮.সুবহানাল্লাহ,আলহামদুলিল্লাহ,আল্লাহু আকবার,লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ১০০বার পড়ার ফযীলত :
ক) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচাতো বোন উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলে আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি বৃদ্ধ ও দুর্বল হয়ে পড়েছি- অথবা এ ধরনের অন্য কোন শব্দ তিনি ব্যবহার করেছিলেন-আপনি এমন কোন আমল আমাকে বলে দিন যা আমি বসে বসে করবো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এক’শবার ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়। এটা তোমার জন্য ইসমাঈলের বংশের একশ’ ক্রীতদাস মুক্ত করার সওয়াবের সমান হবে। এক’শবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়। এটা তোমার জন্য আল্লাহর রাস্তায় একশ’ ঘোড়া সজ্জিত করে দেয়ার সওয়াবের সমান হবে। একশ’বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়। এটা তোমার জন্য আল্লাহর দরবারে গৃহীত এবং কিলাদা বাঁধা একশ’উটের সওয়ারেব সমান হবে। একশ’বার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পড়। এটা তোমার জন্য আসমান ও জমীনের মধ্যবর্তী সবকিছুকে পূর্ণ করে দেবে।
খ) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: এমন দু’টি দোয়া আছে যার উচ্চারণ খুবই সহজ। কিন্তু (কিয়ামতের দিন) মিজানে অত্যন্ত ভারী ও ওজনদার এবং রাহমানের কাছে অতীব প্রিয়। দোয়া দু’টি হচ্ছে-“সুবহানাল্লাহি ওয়া বেহামদিহি ওয়া সুবহানাল্লাহিল আযিম”

২৯.সুবহানাল্লাহ ১০০বার পড়ার ফযীলত :

ক) হযরত সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত। এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম। এ সময় তিনি বললেন: তোমাদের কেউ কি প্রতিদিন হাজারটি নেকী অর্জন করতে পরনা? উপস্থিত সাহাবাদের মধ্যে থেকে একজন আরয করলেন: কেমন করে সে হাজারটি নেকী অর্জন করবে? জবাব দিলেন: সে একশত বার “সুবহানাল্লাহ” পড়বে। এতে তার নামে একহাজারের নেকী লেখা হবে অথবা তার একহাজার গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে। (সহীহ মুসলিম)
খ) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনে: যে ব্যক্তি দিনে একশবার “সুবহানাল্লাহহি ওয়াবিহামদিহি” পড়ে তার ভুল-ক্রটি সমুদ্রের ফেনার সমান হলেও ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম)
৩০.১০০বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মূলক ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদির পড়া : হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতিদিন একশতবার বলবে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মূলক ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদির” (অর্থাৎ আল্লাহ ছড়া আর কোন ইলাহ নেই । তিনি এক তার কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব তাঁর। তিনি সকল বস্তুর উপর শক্তিশালী)
১। সে দশটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব লাভ করবে।
২। তার নামে একশোটি নেকী লিখা হবে।
৩। তার নাম থেকে দশটি গুনাহ মুছে ফেলা হবে।
৪। সন্ধা পর্যন্ত শয়তান থেকে হেফজতে থাকবে।
৫। কিয়ামতের দিন কেউ তার চেয়ে ভাল আমল নিতে পারবে না, একমাত্র সে ব্যক্তি ছড়া যে, তার চেয়ে বেশী আমল করলো।
৩১.সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাউলা  ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম পড়ার ফযীলত :
ক) হযরত আবি মাকনা ইমাম ইয়ালার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা উদ্ধৃত করে বলেন, একদা তিনি আরজ করেছিলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ সল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল¬াম লোকেরা সাদকাহ করে পূণ্য অর্জন করে থাকে কিন্তু আমর নিকট সাদকা দেওয়ার  মতো কিছু নাই। তবে আমিত “সবুহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম” পড়ে থাকি। একথা শুনে হযরত নবী করীম সল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়াসাল¬াম ইরশাদ করেছিলেন “এই বাক্যগুলো নিয়মিত পাঠ করা মিছকিনদের মধ্যে এক মন ¯^র্ণ সাদকাহ করার চাইতেও উত্তম।
খ) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। এক দরিদ্র মুহাযিররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন: ধনবানরা তো সমস্ত বড় মর্যাদাগুলো দখল করে নিলেন এবং চিরন্তন নিয়ামতগুলো তাদের ভাগে পড়লো। কারণ আমরা যে সব নামাজ পড়ি তারাও তেমনি নামাজ পড়ে, আমরা যে সব রোযা রাখি তারও তেমনি রোযা রাখে কিন্তু বিত্তের দিক দিয়ে তারা আমাদের চাইতে অগ্রসর। ফলে তারা হজ্জ্ব  করে, ওমর করে, আবার জিহাদ করে এবং সাদকাও করে। জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিস বলে দেবো (যার ওপর আমল করো) তোমরা নিজেদের চাইতে এগিয়ে যাবে আর তোমাদের মতো ঐ আমলগুলো না করা পর্যন্ত কেউ তোমাদের চাইতে অগ্রবর্তী হবে না ? তারা বললেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই বলে দিন। তিনি বললেন: তোমরা প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩বার তাসবীহ তামিহদ ও তাকবীর পড়ো। বর্ণনা কারী আবু সালেহ মহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, যখন তাঁকে ঐ কালেমাগুলো পড়ার ধরণ সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করা হলো তিনি বললেন: এ কালেমাগুলো  সর্ম্পকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: এগুলো হচ্ছে ‘সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার এবং প্রত্যেকটি কালেমাই হবে ৩৩বার।
গ) হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত যিকির করা অবস্থায় অপেক্ষা করে এবং পরে দুই রাকা’আত নামায পড়ে তার জন্য রয়েছে ১টি হজ্জ্ব ১টি ওমরর পূর্ণ সওয়াব। (তিরমিযী)
ঘ) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহতা’য়ালার একটি ফেরেস্তা দল আছে, যারা পথে পথে যিকিরকারীদের সন্ধান করে বেড়ায়। যখনই তারা মহামহিম আল্লাহর যিকিরত কোন লোকের সন্ধান পায়, সাথীদের  ডেকে বলে : এদিকে এসো! তোমাদের প্রয়োজনের দিকে এসো! তখন তারা সবাই দৌড়ে এসে নিজেদের ডানা দিয়ে যিকরকারীদের পরিবেষ্টন করে। তাদের এই পরিবেষ্টনের ধারা উর্ধাকাশ পযর্ন্ত দীর্ঘায়িত হয়। তাদের রব তাদের কাছে জানতে চান যদিও তিনিই সর্বাধিক জ্ঞাত আমার দাসগুলো কি বলেছে ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তখন ফেরেস্তারা জবাব দেয় : তারা তোমার পবিত্রতা ও ক্রুটিহীনতা (তাসবিহ) প্রকাশ করছে, তোমর শ্রেষ্ঠত্ব (তাকবীল) ঘোষণা করছে, তোমার প্রশংসা (তাহমীদ) উচ্চারণ করছে এবং তোমার শ্রেষ্ঠতম মর্যদার (তামজীদ) কথা ঘোষণা করছে। তিনি জিজ্ঞেস করেন : ওরা কি আমাকে দেখেছে? ফেরেস্তারা জবাব দেয় ‘না’ আল্লাহর কসম, ওরা আপনাকে দেখেনি। আল্লাহ বলেন : ওরা যদি আমাকে দেখতে ফেতো তখন ওদের অবস্থা কেমন হতো ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন ফেরেস্তারা জবাব দেয় : আপনাকে দেখতে পেলে, তারা আপানার কঠোর ইবাদতে আতœনিয়োগ করতো। আপানার মর্যাদা প্রকাশে চরমভাবে লিপ্ত হতো। অত্যর্ধিকভাবে তাসবীহ উচ্চারণ করতো। তিনি জানতে চান : ওরা আমার কাছে কি  চায় ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ফেরেস্তারা জবাব দেয় : তারা আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করেছে। তিনি জিজ্ঞেসে করেন; ওরা কি জান্নাত দেখেছে ? ফেরেস্তারা জবাব দেয় : না, হে প্রভু আপনার শপথ! তারা জান্নাত দেখেনি। তিনি জেজ্ঞেস করেন, জান্নাত যদি ওরা দেখতে পেতো তবে ওদের অবস্থা কেমন হতো ? তারা জবাব দেন: জান্নাত দেখতে পেলে তারা তার জন্য আরো চরম লোভাতুর হতো, অতিমাত্রায় তলবগার হতো এবং পরম সম্মোহনে নির্মজিত হতো। তিনি জানতে চান : তারা কোন জিনিস থেকে আশ্রয় চাইছে ? ফেরেশতারা বলেন: তারা জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইছে । তিনি জেজ্ঞেস করেন ওরা কি কখনো জাহান্নাম দেখেছে ? ফেরেস্তারা  জবাব দেন না, হে প্রভু দেখেনি। তিনি জিজ্ঞেস করেন : দেখলে তাদের অবস্থা কী রমক হতো ? তিনি জিজ্ঞেস করেন: দেখলে তাদের অবস্থা কি রকম হতে ? তারা জবাব দেয় : দেখলে তা থেকে তারা তারা চরমভাবে পলায়ন করতে এবং সাংঘতিক ধরণের ভীত হয়ে কাঁদত। তখন আল্লাহ বলেন : আমি  তোমাদের ¯^াক্ষী রেখে বলছি, আমি ওদের ক্ষমা করে দিলাম। তখন একজন ফেরেস্তা বলেন, এদের একজন লোক আছে, সে আসলে তাদের অর্ন্তুভুক্ত নয়। সে অন্য কোনো কারনে এখানে এসেছে, আল্লাহ বলেন: এরা এমন মজলিসের লোক যে মজলিসের কাউকেও বঞ্চিত করা হয় না। (সহীহ আল বুখারী)
ঙ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ফজরে নামাযের পর নিম্মোক্ত দোয়াটি দশবার করে পড়ো। প্রত্যেকবার পাঠে দশটি নেকী লেখা হয়, দশটি গুনাহ মুছে যায় এবং হযরত ইসমাঈলের (আ:) বংশের একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করার মর্যাদা লাভ হয়। “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু  লাহুল মুলকু ওয়া-লাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুয়া হাইয়ুন লা-ইয়ামুতু-আবাদান আবাদা, বে ইয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদীর”।
চ) হযরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহর কিছু সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন; হে আল্লাহর রাসূল! বিত্তবান লোকেরা প্রতিফল ও সওয়াবের কাজে এগিয়ে গেছে। আমরা নামায পড়ি তারাও সেরকম নামায পড়ে, আমরা রোযা রাখি তারও সেরকম রোযা রাখে, তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সাদকাহ করে। তিনি বলেন; আল্লাহ কি তোমাদের জন্য এমন জিনিসি রাখেননি যে তোমরা সাদকাহ দিতে পারে। প্রত্যেক তাসবী (সুবহান আল্লাহ) হচ্ছে সাদকাহ, প্রত্যেক তাকীবর (আল্লাহু আকবার) হচ্ছে সাদকাহ, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) হচ্ছে সাদকাহ প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলা ইল্লাল্লাহু) হচ্ছে সাদকাহ, প্রত্যোক ভালো কাজের হুকুম দেয়া হচ্ছে সাদকাহ এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত করা হচ্ছে সাদকাহ। আর তোমাদের প্রত্যেকে আপনার স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও হচ্ছে সাদকাহ। তারা জিজ্ঞাসা করেন; হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কেউ যখন যৌন আকাক্সখা সহকারে স্ত্রীর সাথে সম্ভোগ করে, তাতেও কি সওয়াব হবে? তিনি বলেন; তোমরা কি দেখ না, যখন সে হারাম পদ্ধতিতে তা করে, তখন সে গুনাহগার হয় কি না! সুতরাং অনুরূপভাবে যখন সে ঐ কাজ বৈধভাবে করে তখন সে তার জন্য প্রতিফল ও সওয়াব পাবে।
ছ) হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেছেন; প্রত্যেহ যখন সূর্য উঠে মানুষের (শরীরের) প্রত্যেক গ্রন্থির সাদকাহ দেয়া অবশ্য কর্তব্য। দুজন মানুষের মাঝে ইনসাফ করা হচ্ছে সাদকাহ, কোন আরোহীকে তার বাহনের উপর আরোহন করতে বা তার উপর বোঝা উঠাতে সাহায্য করা হচ্ছে সাদকাহ, ভাল কথা হচ্ছে সাদকাহ, সালাতের জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপ হচ্ছে সাদকাহ এবং কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরানো হচ্ছে সাদকাহ। (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
৩২.বাড়ী থেকে বের হওয়ার দোয়া : সুনানে তিরমিযীতে হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় যে ব্যক্তি এ দোয়াটি পড়ে “বিসমিল্লাহি তাওয়াককালতু আলাল্লাহি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি”। অর্থ-আল্লাহর নামে আমি বাইরে পা বাড়ালাম। আল্লাহর ওপরেই আমি ভরসা করলাম, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন উপায় বা শক্তি হতে পারে না। তবে জবাব দেয়া হয় তোমার কাজ সংশোধন করে দেয়া হলো, তোমাকে নিরাপত্তা দেয়া হলো এবং তোমাকে সঠিক পথ দেখানোর ব্যবস্থা করা হলো। শয়তান তার থেকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় এবং সঙ্গীদের কাছে গিয়ে বলে, যাকে পথ প্রদর্শন করা হয়েছে, যার কাজকর্ম সংশোধন করা হয়েছে এবং যাকে নিরাপদ করা হয়ছে, তার ওপর তোমার কর্তৃত্ব কিভাবে চলতে পারে ?
৩৩.অন্যের জন্য দোয়া করা : নিজের জন্য যেমন দোয়া করা প্রয়োজন, অন্য ভাইয়ের জন্যও দোয়া করা আবশ্যক। পাড়া প্রতিবেশীসহ দেশবাসী এবং সকল জীব ও মৃত মুসলমান নর-নারীর জন্য দোয়া করা প্রয়োজন। নবী সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য নেক ব্যক্তিবর্গের জন্যও দোয়া করা দরকার।
৩৪.মুসলমান ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে দোয়া :
ক) এ মর্মে হযরত আবু দারদা থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমান ভাইয়ের   অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করলে সে দোয়া কবুল হয়। তার মাথার নিকট নিয়োজিত ফেরেশতা আমীন বলেন এবং বলেন, তোমার জন্যও অনুরূপ হক। (সহীহ মুসলিম)
খ) হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সবচেয়ে দ্রুত যে দোয়া কবুল হয় তা হচ্ছে, কোন ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করা (আবু দাউদ ও জামে আত তিরমিযী)
৩৫.বিশেষ দোয়া : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরের আজাব, জাহান্নামের আজাব, দুনিয়ার ফেতনা ও মৃত্যুর সময়ের ফেতনা ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য ফরয, নফল বা সুন্নত, যেকোনো সালাতে তাশাহুদ ও দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর আগে এই দুয়া পড়তে বলেছেন। উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নাম ওয়া মিন আযাবিল ক্বাবরি ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়া-ওয়াল মামাতি ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জাল।
৩৬.শির্ক থেকে রক্ষার দোয়া : “হে আল্লাহ আমি জেনে-শুনে তোমার সাথে কোন কিছুকে শরিক করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আর আমার অজ্ঞাত গুনাহরাজি থেকে আমি ¶মা চাচ্ছি।” (মুসনাদে আহমাদ)
৩৭.বাজারে প্রবেশের সময় দোয়া : হযরত উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছে: যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশের সময় এই দোয়া “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া-লাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুয়া হাইয়ুন লা-ইয়ামুতু-আবাদান আবাদা, বে ইয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদীর”। অর্থ-আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও অনুপম। তার কোন শরীক নেই। সব কিছুর মালিকানা ও সার্বভৌমত্ব তারই। সব প্রশংসাও তারই জন্য নির্দিষ্ট। জীবন ও মৃত্যু তারই এখতিয়ারে। তিনি চিরঞ্জীব ও মৃত্যুহীন। তারই হাতে সকল কল্যাণ এবং তিনি সবকিছু করতে ক্ষমতাবান।” পড়বে আল্লাহতায়ালা তার জন্য দশ লাখ নেকী লিপিবদ্ধ করে দেবেন, দশ লাখ গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং দশ লাখ মর্যাদা দান করবেন। (জামে আত তরমিযী)
৩৮.কাবাশরীফ দেখা মাত্র দোয়া : ক্বাবা শরীফ প্রথম দেখামাত্র দোয়া কবুল হয়। তাই আপনি এসময় দাঁড়িয়ে বুক পর্যন্ত উভয় হাত উঠিয়ে বিগলিত অন্তরে দোয়া করুন-
১. (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া-লিল্লাহিল হামদু)
২. (লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর আল্লাহুম্মা আনতাসালামু ওয়ামিনকাসসালামু ওয়াদারাকা দারার সালাম তাবারাকা ইয়া জালজালালি ওয়াল আকরাম)
৩৯.আসওয়াদ চুমু খাওয়া দোয়া :  প্রতি চক্করে হাজরে আসওয়াদ চুমু খাওয়া অথবা হাতে স্পর্শ করা অথবা দুই হাত কাঁধ বরাবর তুলে “বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লিল্লাহিল হামদু ওয়াসসালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”
৪০.জাবালে রহমতের দোয়া : রাব্বানা জ্বালামনা আনফুসানা ওয়াইল্লাম তাগফিরলানা ওয়াতারহামনা লানা কুনান্না মিনাল খাসিরিন।
৪১.আরাফাহ ময়দানের দোয়া : যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে ইয়াউমে আরাফাহকে আরাফাহ দিবস বলে। এক আল্লাহর সর্বোত্তম দিবস আরাফাহ দিবস। আল্লাহ তা’আলা, আরাফাহ দিবসে তাঁর বান্দাদেরকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নাম থেকে মুক্ত দেন। দ্বীন ইসলামের পরিপূর্ণতা এবং আল্লাহ পাকের একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম সর্ম্পকিত আয়াতটি (মায়িদা-৩) আরাফাতের দিন আরাফাতে নাযিল হয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো দিনই এমন নেই, যেদিন আল্লাহতায়ালা আরাফাহর দিনের চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহন্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। তিনি তাদের নিকটবর্তী হন। এরপর ফেরেশতাদের সাথে তাদের নিয়ে গর্ব করে বলেন, কী চায় এরা? (সহীহ মুসলিম) আল্লামা ইবনু আব্দুল বার এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন যে, আল্লাহপাক আরাফাহবাসীদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেন। সেজন্যই তিনি ফিরিশতাদের নিকট তাদের প্রশংসা করেন।
আরাফাহ ময়দানের দোয়া : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির’।
৪২.তাওয়াফের দোয়া :
ক) সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া-লাহাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
খ) সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহাইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুও ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
৪৩.রোকনে ইয়ামীনে দোয়া : “রাব্বানা -আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া-হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল্ আ-খিরাতি হাসানাতওঁ ওয়া কিনা আযা-বান্ না-র। ওয়াদখিলনাল জান্নাতা মাআল আবরার ইয়া -আজিজু ইয়া-গাফ্ফারু ইয়া-রাব্বাল্ আলামীন”।
৪৪.মাকামে ইব্রাহিমে দোয়া : “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান ওয়া-রিযক্কান ওয়া-সিয়ান ওয়া-শিফায়াম মিন কুল্লি দায়িন”।
৪৫.যমযমের পানি পান করার দোয়া : “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান ওয়া-রিযক্কান ওয়া-সিয়ান ওয়া-শিফায়াম মিন কুল্লি দায়িন”।
৪৬.সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সায়ী করার দোয়া :
ক) “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া- লাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুয়া হাইয়ুন লা-ইয়ামুতু-আবাদান আবাদা, বে ইয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদীর লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াহদাহু, ওয়া নাছারা আব্দাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ”। খ) “সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া লাহাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম”।
৪৭.যে কোন কাজ করার সময় দোয়া : যে কোন কাজ করার সময় “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”। অর্থ-আমি পরম দাতা দয়াময় আল্লাহতাআলার নামে আরম্ভ করছি। পড়ে শুরু করতে হয়।
৪৮.খাবার পূর্বে দোয়া : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিমা রাজাকতানা ওয়াকিনা আজাবান নার বিসমিল্লাহি। অর্থ-হে আল্লাহ! আমার রুযিতে বরকত দিন এবং আমাকে দোযখের শাস্তি হতে বাঁচান। আল্লাহর নামে শুরু করছি।
৪৯.খাবার পর দোয়া : আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি আত’আমানা ওয়া সাকানা ওয়াজা ‘আলানা মিনাল মুসলিমীনা। অর্থ-সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে খাওয়ালেন, পান করালেন এবং আমাদেরকে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
৫০.ঘর থেকে বের হবার দোয়া : বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কলতু আলাল্লাহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। অর্থ : আল্লাহর নামে ওয়াদা করছি, আল্লাহর উপর ভরসা করছি। আল্লাহ ছাড়া (আমাদের) কোনো উপায় ও শক্তি নেই।
৫১.নৌযানে বা পুলে আরোহনের দোয়া : বিসমিল্লাহি মাজরেহা অমুরসাহা ইন্না রাব্বি লাগাফু-রুর রাহীম। অর্থ-এ চলা এবং থামা আল্লাহরই নামে। নিশ্চয়ই আমার প্রভু ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
৫২.যানবাহনে ভ্রমণের দোয়া : সুবহানাল্লাযি সাখখারা লানা হাযা ওয়ামা কুন্না লাহু মুক্বরিনীনা ওয়াইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবুন। অর্থ-পবিত্রতা ঘোষণা করছি সেই সত্ত¡ার, যিনি এসব কিছুকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে এনে দিয়েছেন। অন্যথায় আমরা এসব আয়ত্তে আনতে পারতাম না। এভাবেই আমরা সবাই তার দিকে ফিরে যেতে বাধ্য।
৫৩.প্রস্রাব-পায়খানায় প্রবেশের দোয়া : আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-ইছ। অর্থ-হে আল্লাহ! স্ত্রী-পুরুষ জ্বিনের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।
৫৪.প্রস্রাব-পায়খানা করার পর দোয়া : আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আযহাবা আন্নীল আযা ওয়াআ-ফানী। অর্থ-সেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমার কাছ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করে দিলেন এবং প্রশান্তি দান করেছেন।
৫৫.মোসাফাহার দোয়া : ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম। অর্থ-আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা কর পর্ব-১২৩
৫৬.কবর জিয়ারতের দোয়া :
ক) আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবূরি মিনাল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাতি আনতুম লানা সালাফুন ওয়া নাহনু লাকুম তাবয়ূন। অর্থ-হে কবরবাসী পুরুষ ও মহিলাগণ! তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। তোমরা আমাদের অগ্রবর্তী এবং আমরা তোমাদের অনুসরণকারী।
খ) আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবূরি ইয়াগ ফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম ওয়াআন্তুম সালাফুনা ওয়ানাহনু বিল আছরি। অর্থ-হে কবরের বাসিন্দাগণ! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ তোমাদের আমাদের সকলেরই গুনাহ মাফ করুন। তোমরা আমাদের অগ্রবর্তী আর আমরা তোমাদের অনুসরণকারী।

You may also like