Home ইসলাম দোয়া এবাদাতের সার, অতরক্ষার ঢাল পর্ব-২

দোয়া এবাদাতের সার, অতরক্ষার ঢাল পর্ব-২

by admin
0 comment

দোয়া কবুলের সময়
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা দোয়া করার জন্য এমন অসংখ্য সময় ও সুযোগ আমাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়। বিশেষ সময় ও মওসুমে দোয়া বেশি কবুল হয়। অনুরূপভাবে বিশেষ স্থান এবং বিশেষ ব্যক্তির দোয়াও কবুল হয়।
১. রমযান মাস : রমযান ফযীলতের মাস। এ মাসে যাবতীয় ভোগ লালসা থেকে বিরত থেকে আল্লাহ বিধান পালনের কারণে রোযাদার ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। তিনি দোয়া করলে আল্লাহ সেই দোয়া কবুল করেন। তাই রমযানে আল্লাহর নিকট অধিক পরিমাণে দোয়া করা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-রোযাদারের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না, অর্থাৎ কবুল করা হয়। রমযানে অধিক পরিমাণে দোয়া করা আবশ্যক। ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণমূলক কাজের জন্য দোয়া করা প্রয়োজন। দোয়া করতে অবহেলা করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর রহমত থেকে গাফেল থাকা। অথচ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাতের শেষাংশে আল্লাহ প্রথম আসমানে আগমন করেন এবং জিজ্ঞেস করেন, কোন প্রার্থনাকারী আছে কি যাকে আমি দান করবো? কোন দোয়াখানী আছে কি যার দোয়া আমি কবুল করবো? এবং গুনাহের জন্য কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমি যার পাপরাশি ক্ষমা করবো? এ অপূর্ব সুযোগ একজন ঈমানদার হাতছাড়া করতে পারে না?
ক)আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ইফতারের সময় রোযাদারের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। তাই ইফতারের সময় সকলেরই উচিত অধিক পরিমাণে দোয়া করা। (ইবনে মাজাহ)
খ)আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারের সময় বলতেন : হে আল্লাহ! আমি তোমাদের রহমত কামনা করি যা সকল বস্তর ও বিস্তÍৃত। তুমি আমার পাপরাশি ক্ষমা কর। (ইবনে মাজাহ, হাকেম)
২.রাতের দোয়া :
ক) হযরত মু’আয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন ব্যক্তি যদি ওযূ করে দোয়া পড়ে রাতে শয্যা যায়, তারপর শেষ রাতে উঠে সে আল্লাহর নিকত কিছু চায় আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন”। (মুসানাদে আহমদ, আবু দাউদ)
খ) হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব, যে আমার নিকট চাইবে আমি তাকে দান করব, যে আমার নিকট ¶মা চাইবে আমি তাকে ¶মা করব।’ (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম)
গ) হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘নিশ্চয়ই রাতে একটা সময় রয়েছে, যে সময়ে কোন মুসলমান ইহকাল ও পরকালে কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন এবং এটা প্রতি রাতে হয়ে থাকে।’ (সহীহ মুসলিম)
৩.রাতের শেষ তৃতীয়াংশে : এই সময় দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে অত্যন্ত জোরালো রেফেরেন্স আছে। এটা প্রতিটি রাতের জন্যই প্রযোজ্য, শুধুমাত্র শবে বরাত, শবে মিরাজ বা কদর রাতে নয়।
ক) হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নীচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ¶মা প্রার্থনাকারী, যে আমি তোমাকে ¶মা করে দেবো?” (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম)
খ) হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“আল্লাহর কাছে তাঁর একজন উপাস্য সবচেয়ে নিকটতম যে সময়টাতে আসতে পারে তা হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সুতরাং তোমরা যদি পারো তাহলে তোমরা তাদের একজন হও যারা সে সময় আল্লাহর স্মরণ করে”। (জামে আত তিরমিযী, সুনানে নাসায়ী, আল হাকিম)
৪.শেষ রাতের যে কোন একটি সময় : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“রাতে এমন একটি সময় আছে যে সময়টাতে কোন মুসলিমের এমনটা হয়না যে সে এই পৃথিবী কিংবা পরকালের জৌবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইলো আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে”। (সহীহ মুসলিম)
৫.আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময় : মক্কা কিংবা মদীনার নামাজের জামায়াত শুরুহবার মাঝখানে অনেক মুসলিমকে দেখা যায় নামাজ শুরুর আগে হাত তুলে দোয়া করতে। এ সময়টা দোয়া কবুল হবার গুরুত্বপূর্ণ সময়। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না”। (আবু দাউদ, জামে আত তিরমিযী)
৬.জু’মার দিন যে কোন একটি সময়ে : জু’মার দিনে এমন অসাধারণ একটি নিয়ামাতের সময় আছে যে সময়টাতে দোয়া কবুল হবার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম থেকে এসেছে। হযরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, ‘জু’মার দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোন মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন’ এবং তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সং¶িপ্ততার ইঙ্গিত দেন”। (সহীহ আল বুখারী)। কেহ কেহ সে সময়টার ব্যপারে বলেছেন, তা হলো-ঈমাম যখন মসজিদে প্রবেশ করেন সে সময় থেকে সালাত শেষ হবার সময় পর্যন্ত, কেউ বলেছেন দুই খুতবার মাঝখানে, কেউ আবার জোর দিয়ে বলেছেন তা হলো আসর থেকে মাঘরিব পর্যন্ত সময়টা।
৭.জমজমের পানি পান করার সময় : হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জমজম পানি হলো তার জন্য, যার জন্য এটি পান করা হয়”। (ইবনে মাজাহ, মসুনাদে আহমাদ)। অর্থাৎ জমজমের পানি খাবার সময় আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তা পাবার সম্ভাবনা আছে।
৮.সিজদাহর সময়ে : হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সিজদাহর সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাও”। (সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ)
৯.রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠলে : উবাদা ইবনুস সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হা’মদু ওয়াহুয়া আ’লা কিল্লি শায়্যিন কা’দির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ এবং এরপর বলে ‘আল্লাহুম মাগফিরলি’ (আল্লাহ আমাকে ¶মা করুন) এবং আল্লাহর কাছে চায়, তাহলে তার ডাকে সাড়া দেয়া হবে এবং সে যদি অজু করে সালাত আদায় করে, তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে”। (সহীহ আল বুখারী)
১০.ফরজ সালাতের পরের সময়টাতে : হযরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, কোন সময়ের ডাক শোনা হয়?” তিনি বললেন, “রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ সালাতের পরে”। (জামে আত তিরমিযী) অনেকে বলেছেন, এ সময়টা হলো সালাম ফেরানোর আগের সময় আত্তাহিয়াতুর পর।
১১.শবে ক্বদরের রাতে : নিঃসন্দেহে লাইলাতুল ক্বদর হলো একটি বছরে কোন মানব সন্তানের পাওয়া শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ বলেছেন,“আমরা এটিকে (আল-কুরআন) ক্বদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জানো ক্বদরের রাত্রি কি? ক্বদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম”। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে এ রাতের সকল ইবাদত ও আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে।
১২.বৃষ্টি হবার সময় : হযরত সাহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয়না। আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া”। (আবু দাউদ)
১৩.আযানের সময় : আযানের সময় দোয়া কবুল হবার ভালো সময়। হযরত সাহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয়না। আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া”। (আবু দাউদ)
১৪.রোজাদার ব্যক্তির দোয়া : রমজান মাসই হলো আল্লাহর কাছে চাইবার শ্রেষ্ঠ সময়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“রমজান মাসে করুণার দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়”। (সহীহ আল বুখারী)
১৫.অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসরিত দোয়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এমন কোন বিশ্বাসী বান্দা নেই, যে তার অনুপস্থিত কোন ভাইয়ের জন্য দোয়া করে আর ফেরেশতারা বলে না ‘তোমার জন্যও তা হোক”। (সহীহ মুসলিম)
১৬.আরাফাতের দিনের দোয়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দোয়ার ভেতর শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া”। (জামে আত তিরমিযী, মুয়াত্তা মালিক)
১৭.জিহাদের মাঠে শক্রুর মুখোমুখি হলে : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দুটি দোয়া ক¶নো ফিরিয়ে দেয়া হয়না অথবা খুবই কম ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সময়কার দোয়া আর সেই ভয়ংকর সময়কার দোয়া যখন দু’টি বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়”। (আবু দাউদ, ইবন মাজাহ)
১৮.জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন ছাড়া আর এমন কোন দিন নেই, যে সময়ের সৎকাজ আল্লাহর কাছে তার চেয়ে বেশী প্রিয়”। (সহীহ আল বুখারী)
১৯.রোজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়কার দোয়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা ফিরিয়ে দেয়া হয়না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে, রোজাদার ব্যক্তি যত¶ণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (মুসনাদে আহমাদ, জামে আত তিরমিযী)
২০.অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাবার পর সেই ব্যক্তির দোয়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“যখন তোমরা কোন অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাও, তখন ভালো কথা বলো (ভালো কিছু চাও), কেননা তোমরা তখন যাই বলো, তার সাথে সাথে ফেরেশতারা ‘আমিন’ বলে”। (সহীহ মুসলিম)
দোয়া কবুলের স্থান

১. মসজিদে হারাম
২. মসজিদে নববী
৩. মসজিদে আকসা
৪. জমজম ক‚পের কাছে
৫. মিনায়
৬. মোযদালেফার ময়দানে
৭. আরাফাতের ময়দানে
৮. মিনার তিন জামরাহর নিকট
৯. ছাফা-মারওয়া পাহারের উপর
১০.বায়তুল্লাহ বা কাবা ঘরকে দেখা মাত্র
১১.ভোর রাতে
১২.সিয়াম অবস্থায়
১৩.রোযাদার ইফতার করা পর্যন্ত
১৪.ইফতারের সময়
১৫.তাহাজ্জুদের সময়
১৬.শুক্রবারে
১৭.হজ্জ্ব পালনকালে পাথর নি¶েপের পর
১৮.রাতের বেলায়
১৯.নামাজ বা সালাতের সময়
২০.আযান ও ইক্বামতের মাঝে
২১.আযান চলাকালিন সময়
২২.আযানের পরে
২৩.যুদ্বের মাঠে শক্রুর সাথে মোকাবেলার সময়
২৪.রুকু ও সেজদার সময়
২৫.নামাজের মধ্যে তাশাহুদের পর
২৬.মাতাফ-তাওয়াফ করার স্থানে ।
২৭.মুলতাযামে।
২৮.হাতিমের মধ্যে।
২৯.মিযানে রহমতের মধ্যে।
৩০.ক্বাবা শরীফের চৌকাঠ ধরে।
৩১.মুলতাযামে।
৩২.ক্বাবাঘরের ভেতর।
৩৩.মাকামে ইবরাহিমের কাছে।
৩৪.রুকনে ইয়ামনি ও হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে।
৩৫.মিনার ময়দানে
৩৬. মিনার মসজিদে খায়েফে।
৩৭.কংকর নিক্ষেপের স্থানে
৩৮.দুই ঈদের রাতে
৩৯.দুই ঈদের দিন
৪০. লাইলাতুল কদ্বরের রাত্রে
৪১.শবেবরাতের রাত্রে
৪২.শবেমেহরাজের রাত্রে
৪৩.দুই ঈদের রাতে
৪৪.জু’মাআর দিন ও রাত্রে
৪৫.রামযানের দিন ও রাত্রে
৪৬.সেহরীর সময়

যে সব ব্যক্তিদের দোয় কুবুল হয়
১.মাতা-পিতার দোয়া : হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম বলেছেন, তিনটি দোয়া কবুল হয়, এতে কোন সন্দেহ নেই। মা-বাবার দোয়া, মজলুমের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া। (আবু দাউদ ও জামে আত তিরমিযী
২.মুসাফিরের দোয়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিনটি দোয়া (আল্লাহর দ্বারা) ফিরিয়ে দেয়া হয়না। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া”। (সুনানে বায়হাকি, জামে আত তিরমিযী)
৩.মজলুম ও নির্যাতিত ব্যক্তি দোয়া : মজলুমের দোয়া এবং বদ দোয়া দুটোই আল্লাহর কাছে কবুল হবার সম্ভাবনা শতভাগ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম মুয়াজকে বলেছেন, “মজলুমের দোয়া থেকে সবসময় সতর্ক থেকো, কেননা মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা বা আশ্রয় থাকে না”। (সহীহ আল বুখারী) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা ফিরিয়ে দেয়া হয়না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে, রোজাদার ব্যক্তি যত¶ণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (মুসনাদে আহমাদ, জামে আত তিরমিযী)
৪.আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণকারীর দোয়া : যারা আল্লাহ বেশী বেশী ¯œরণ করে তাদের দোয়া আল্লাহ কুবুল করেন।
৫.ন্যায়পরায়ন শাসকের দোয়া : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা ফিরিয়ে দেয়া হয়না। রোজাদার ব্যক্তি যখন ইফতার করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে, রোজাদার ব্যক্তি যত¶ণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (মুসনাদে আহমাদ, জামে আত তিরমিযী)

দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকসমূহ
দোয়া করার সময় অনেক ভুলভ্রান্তি ঘটে এবং সেগুলো দোয়াকে কবুল হওয়া থেকে বিরত করে। দোয়া করার ¶েত্রে কৃত ভুলের সংখ্যা অনেক, যেগুলোর অধিকাংশই ‘সীমালক্সঘন’ শিরোনামের আওতাভুক্ত যেমন ঃ-
১.আল্লাহ প্রদত্ত ফরয-ওয়াজিব বিধান লংঘন করা এবং হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ করা : আল্লাহর প্রদত্ত ফরয-ওয়াজিব লংঘন করা এবং হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ করা, দোয়া কবুলের পথে বাধা। কেননা, এর ফলে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। তাই তার দোয়া আল্লাহ কবুল করে না। মানুষ ঠেকা ও বিপদে পড়ে দোয়া করে যেন বিপদমুক্ত হওয়া যায়, সুস্থ ও ভাল অবস্থায় দোয়া করে না। এ প্রসঙ্গে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ভাল অবস্থায় তুমি আল্লাহকে চিনতে শিখ বিপদের অবস্থায় আল্লাহ তোমাকে চিনবে।
২.হারাম খাদ্য ও পোশক : দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে হারাম উপার্জন দ্বারা খাবার পানীয় ও পোশাক পরিধান করা সবয়েছে বড় বাধা।
ক) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া কবুলের উদ্দেশ্যে দূর থেকে পবিত্র স্থানে সফলাগত আওলাকেশী ধূলিমলিন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, সে ব্যক্তি আকাশের দিকে দু’হাত উত্তোলন করে হে আল্লাহ, হে আল্লাহ বলে দোয়া করে। অথচ তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারাম দ্বারাই তার রক্তমাংস তৈরি। তার দোয়া কিভাবে কবুল হবে? (সহীহ মুসলিম)
খ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : তোমরা খাবারকে পবিত্র করো,তাহলে তোমার দোয়া কবুল হবে।
৩.শিরক ও বিদ’আত : শিরক ও বিদ’আতের কারণে দোয়া কবুল হয় না। আল্লাহ ঘোষণা করেন-তোমরা আল্লাহকে ডাক এবং তার দ্বীনকে এখলাসপূর্ণ ও একনিষ্ঠ করো এখলাস এবং একনিষ্ঠতার মূল অর্থ হচ্ছে, শিরক ও বিদ’আত থেকে দূরে থাকা। আল্লাহর সাথে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর নাম ধরে কোন কিছু চাওয়া হয়, সেটা হতে পারে কোন ব্যক্তি কিংবা গাছ অথবা কবর, কারণ দোয়া হচ্ছে একটি ইবাদাত আর এটাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে করা হলো শিরক আর শিরক হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম অপরাধ যেটার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ করা হয়। হাদীসে বর্ণিত আছে যে : “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ কোনটি? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) বলেন-‘আল্লাহর সমক¶ কাউকে বানানো অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম) যারা আল্লাহর সাথে দেবতা, কবরবাসী, নেক লোক, মাযার ও অন্যান্য জিনিসকে অংশীদার স্থাপন করে এবং তাদের সাহায্য কামনা করে তাদের দোয়া কবুল হয় না। আল্লাহ ঘোষণা করেন-আল্লাহর সাথে কাউকে তোমরা আহŸান করো না। কবর পূজারীরা মৃতদের উসিলায় দোয়া কবুলের আহŸান জানায় এবং বলে, আমরা অমুকের উসিলায় কিংবা তার সম্মানের উসিলায় দোয়া কবুলের আবেদন করছি। তাদের এ দোয়া শিরক ও বিদ’আত মিশ্রিত। কেননা আল্লাহ কাউকে মাধ্যম কিংবা উসিলা বানিয়ে দোয়া করার আদেশ করেননি। বরং তিনি সরাসরি তার নিকট দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দোয়া করো, আমি কবুল করবো।
৪.উসিলার মাধ্যমে দোয়া করা : উসিলার মাধ্যমে দোয় করা নিষেধ। কোন উসিলা ছাড়াই আল্লাহ তার কাছে দোয়া করার আদেশ করেছেন। তবে হাদীস শরীফে নেক আমলের দোয়াহাই দিয়ে দোয়া করার কথা উল্লেখ আছে। যেমন এক গুহায় পাথর দ্বারা অবরুদ্ধ তিন ব্যক্তি তাদের তিনটি নেক আমালের কথা উল্লেখ করে দোয়া করায় আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং গুহার মুখ অবরুদ্ধকারী পাথরটিকে সরিয়ে তাদেরকে নাজাত দেন। তাই কোন নেক বান্দাহ নয়, বরং নেক আমলকে উসিলা হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।
৫.গাফেল ও উদাস মনের দোয়া কবুল করেন না : বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-তোমরা এমনভাবে আল্লাহর নিকট দোয়া করো যেন তা কবুল হওয়ার দৃঢ়, বিশ্বাস থাকে। তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ গাফেল ও উদাস মনের দোয়া কবুল করেন না। (হাকেম)
৬.ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের প্রতিরোধ না করলে দোয়া কবুল হয় না :
ক) হযরত হোজায়ফা বিন ইয়ামান থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-আমার প্রাণ যার হাতে সেই পালনকর্তার কসম করে বলছি, হয় তোমরা ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের প্রতিরোধ করবে, না হয় অচিরেই আল্লাহ তোমাদের ওপর নিজ আযাব প্রেরণ করবেন, এরপর তোমরা তার নিকট দোয়া করবে, তিনি দোয়া কবুল করবেন না। (জামে আত তরমিযী)
খ) ইমাম ইবনুল কাইয়েম বলেছেন, উদ্দেশ্য হাসিল ও ক্ষতিকর জিনিস প্রতিরোধ দোয়া হচ্ছে শক্তিশালী পন্থা। দোয়ার ফলাফল কয়েক কারণে দেখা যায় না। যদি মন্দ কাজ বা উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দোয়া করা হয় তাতে আল্লাহর নাফরমানী থাকায় তা আল্লাহ কবুল করেন না। দুর্বল মন ও বেপরোয়া মনের দোয়াও আল্লাহ কবুল করেন না। তিনি আরো বলেন, দোয়া হচ্ছে সর্বোত্তম চিকিৎসা। তা বিপদের শত্রæ এবং নাযিলে বাধা প্রদান করে কিংবা হাল্কা করতে সাহায্য করে। দোয়া ঈমানদারের অস্ত্র।
গ) হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-দোয়া ঈমানদারে হাতিয়ার ও দ্বীনের খুটি এবং আসমান ও জমীনের আলো। (হাকেম)
৭.তাড়াহুড়া করে দোয়া না করা : হাদীসে বর্ণিত আছে, দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করলে দোয়া কবুল হয় না। (সহীহ মুসলিম, জামে আত তিরমিযী)
৮. দোয়া করার সময় কোন নতুন পদ্ধতির তাওয়াসসুল (আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়) প্রবর্তন করা হয় : আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যক্তিসত্তা কিংবা তাঁর মর্যাদার তাওয়াসসুল করা। ইসলাম ধর্ম হচ্ছে অনুসরণ করার জন্য, বিদ’আত তৈরির জন্য নয়।
৯.কারো ওপর বিপদ পতিত হওয়ার দরূণ মৃত্যুকামনা করা :
ক) হযরত খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছে : যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে মৃত্যুকামনা করতে নিষেধ না করতেন, আমি মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করতাম।” (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম)
খ) হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে : “তোমাদের কেউ যেন তার ওপর বিপদ আসার কারণে মৃত্যুকামনা না করে। যদি সে একান্তই তা করতে চায় তবে যেন বলে: ‘হে আল্লাহ! আমাকে তত¶ণ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখুন যত¶ণ পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর এবং আমাকে মৃত্যুদান করুন যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর’। ” (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম)
১০.শাস্তি তাড়াতাড়ি প্রদানের প্রার্থনা করা : আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতে যাতে নিরাপদ ও সুর¶িত থাকা যায়, সেই দোয়া করা উচিত। একবার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) এক মুসলিম ব্যক্তিকে অসুস্থা ও মুরগির মত দুর্বল অবস্থায় দেখতে পেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন : “তুমি কি কোন কিছুর জন্য দোয়া করেছিলে অথবা এই অবস্থার জন্য প্রার্থণা করেছিলে?” সে বললঃ “হ্যাঁ, আমি বলতাম : ‘হে আল্লাহ্! আখিরাতে আপনি আমাকে যে শাস্তি দেওয়া নির্ধারণ করেছেন, আমাকে তা এই দুনিয়াতেই প্রদান করুন।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বললেন : “সুবহানাল্লাহ্! তুমি এটা সহ্য করতে পারবে না। তুমি কেন বললে না যে, ও আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গাতেই কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে আমাদের হেফাযত করুন?” তারপর তিনি আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া করলেন এবং আল্লাহ তাকে আরোগ্য করলেন। (সহীহ মুসলিম)
১১.কারো পরিবার এবং সম্পদের বিরুদ্ধে দোয়া করা : হাদীসে বর্ণিত আছে যে,“নিজেদের বিরুদ্ধে দোয়া করো না, তোমাদের সন্তানাদির বিরুদ্ধে দোয়া করো না, এবং তোমাদের সম্পদের বিরুদ্ধে দোয়া করো না; কেননা এই আশঙ্কা হতে পারে যে এটা এমন এক সময়ের সাথে মিলে যেতে পারে যখন আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাওয়া হয় আর তিনি তা কবুল করে নেন।” (সহীহ মুসলিম)
১২.পারিবারিক বন্ধন ছিন্নকরণের জন্য দোয়া করা : কারো বিরুদ্ধে দোয়া করা এবং তার ও তার আতœীয়-¯^জন অথবা স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক যাতে ছেদ হয়, সেই জন্য দোয়া করা।
১৩.সীমিত রহমতের জন্য দোয়া করা : হে আল্লাহ্! কেবল আমাদের যমীনে বৃষ্টি বর্ষণ করুন এবং এরকম কিছু।
১৪.আল্লাহর কাছে দোয়া করার ¶েত্রে সঠিক আচরণ পালনে ব্যর্থতা : এমনভাবে দোয়া করা যেটা সঠিক নয়। আল-খাত্তাবি বলেছেন :“এইভাবে বলা ঠিক নয় যে ও কুকুরসমূহের সৃষ্টিকর্তা অথবা হে বানর ও শূকরসমূহের সৃষ্টিকর্তা, যদিও সকল সৃষ্টি আল্লাহ্ কর্তৃক সৃষ্ট এবং এদের সকলের উপর তাঁর কর্তৃত্ব রয়েছে।”(শা’ন আল-দোয়া) আল্লাহর কাছে দোয়া করার সময় যতটুকু সম্ভব সঠিক আচরণ পালন করা এবং যথাসম্ভব উচিত বেমানান কোন কিছু বলা পরিহার করা। দোয়া করার দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত বিনয় ও আনুগত্যপূর্ণ। আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দুয়ার সময় আল্লাহকে এত অধিক পরিমাণে প্রশংসা করতেন যে মনে হত তিনি যথেষ্টভাবে আল্লাহকে প্রশংসা করছেন না। তিনি বলতেন : “আমি আপনার নিকট আপ্রয় চাই; আমি আপনার যথেষ্ট প্রশংসা করতে পারিনা।”
১৫.দোয়া করার সময় অন্যের উপর নির্ভরশীল হওয়া : আপনি দেখতে পাবেন যে কিছু লোক রয়েছে যারা নিজেরা গোনাহগার এই মর্মে নিজেরা আল্লাহর কাছে দোয়াকরে না, তাই তারা সর্বদা অন্যদেরকে তাদের জন্য দোয়া করতে বলে। যদিও এটা সাধারণভাবে অনুমোদিত, কিন্তু এ¶েত্রে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। সুতরাং, কারো উচিত প্রচুর পরিমাণে আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং ইতিবাচক ধারণা পোষণ করা, আর আল্লাহর নিয়ামত ও করুণার বিশালত্ব সম্পর্কে চিন্তা করা; তার গোনাহ্ যত বিশালই হোক না কেন, আল্লাহর দয়া সবকিছুকে ছাপিয়ে যেতে স¶ম। যদি আল্লাহ মুশরিকদের চরম দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় করা দোয়া কবুল করতে পারেন, তাহলে তিনি অবশ্যই মুমিনদের সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও তাদের ডাকে সাড়া দিতে স¶ম। একজন মালিক ইবনে দিনার এর কাছে এসে বলল : “আমি আল্লাহর নামে বলছি আপনি তাঁর কাছে আমার জন্য দোয়া করুন, কারণ চরম দুর্বিপাকে রয়েছি।” প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন : “তাহলে তুমি নিজেই তাঁর কাছে দোয়া করো, কেননা তিনি দুর্দশাগ্রস্তদের দোয়া কবুল করে থাকেন।” (আল জামী’লী আহকামিল)
১৬.দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে সীমিত বিশ্বাস ও হতাশা পোষণ করা : কিছু লোক যারা দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত ভাবে যে তারা আরোগ্য লাভ করতে পারবে না আর তারা দোয়া করা ছেড়ে দেয় এবং আল্লাহর কাছে চাইতে ব্যর্থ হয় আর হয়ত শয়তানও এটা ভাবতে তাদের ওসওয়াছা দেয় যে তাদের দোয়া করার দরকার নেই। এটা অনেকগুলো মারাত্মক ভুলসমূহের একটি এবং এটি আল্লাহর ¶মতা ও দয়াশীলতা সম্পর্কে অজ্ঞতা কারণ আল্লাহ যে কোন কিছু করতে স¶ম আর তিনি যখনই কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন তখনই বলেন : “হও! আর তা হয়ে যায়।” যখন যাকারিয়া আলাহি ওয়াস সালাম বৃদ্ধ ছিলেন এবং তাঁর স্ত্রী বন্ধ্যা ছিলেন, তিনি সন্তানের জন্য দোয়া করেছিলেন : “হে, আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা প্রবণকারী।” (ইমরান : ৩৮)
আর আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেছিলেন এই বলে যে : “আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে, যিনি সা¶্য দেবেন আল্লাহর নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে, যিনি নেতা হবেন এবং নারীদের সংস্পর্শে যাবেন না, তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবী হবেন।”(ইমরান : ৩৯) সুতরাং আল্লাহর সাহায্য সম্পর্কে হতাশ হওয়া যাবে না এবং ভাবা যাবেনা যে তাঁর রহমত সীমিত।
১৭.আওয়াজ উঁচু করার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা : বিশেষত মাইক ব্যবহারের ¶েত্রে। যারা দোয়া করছেন তাদের আওয়াজ হয়ত অনেক দূর থেকেও শোনা যায়, আর এটি হচ্ছে একটি ভুল এবং সীমালক্সঘন ও অনেকটা লোক দেখানোর মত। ইবাদাতকারীদের শোনার মত যথেষ্ট পরিমাণ আওয়াজ উঁচু করা উত্তম যদি তারা আপনার পেছনে আমিন বলতে থাকে।
১৮.হুকুম পরিবর্তনের দোয়া : এটা বলা যে : “হে আল্লাহ্! আমি আপনাকে আপনার হুকুম পরিবর্তন করতে বলছি না বরং আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইছি আমাকে এর সাথে মোকাবিলা করার তৌফিক দান করতে।” এটা ঠিক নয়। কেননা, আল্লাহ আমাদের বলেছেন তাঁর কাছে তাঁর হুকুম পরিবর্তনের প্রার্থনা করতে, কারণ একজন ব্যক্তির উপর যতগুলো দুর্দশা পতিত হবে তার সবগুলোই পূর্বনির্ধারিত। একটি সুপরিচিত দোয়া উল্লেখ রয়েছে যে : “আপনার হুকুমের অনিষ্ট থেকে আমাকে হেফাযত করুন কারণ আপনিই হুকুমদাতা এবং কোন হুকুমই আপনাকে অতিক্রম করে যেতে পারে না।” আল বুখারী তাঁর “আল্লাহর কাছে দুর্ভাগ্য ও বিপদ থেকে আশ্রয় চাওয়া” শীর্ষক অধ্যায়ে আল্লাহর নাযিলকৃত এই আয়াত উল্লেখ করেন : “বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার।” (ফালাক্ব : ১) তারপর তিনি আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর কথাগুলো উদ্ধৃত করেন : “আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও কষ্ট, দুর্দশা ও দুর্ভাগ্য হতে।” (সহীহ আল বুখারী)
১৯.দোয়া-কুনূত দীর্ঘায়িত করা : এমনভাবে দোয়া করা যাতে দুয়ার মধ্যে যা চাওয়া হয় তার সাথে মানানসই হয় না, বিশেষ করে কোন বিপদ-আপদের সময়; কারণ বিপদের সময় দুয়ায়ে কুনূত পড়া কেবলমাত্র তখনই অনুমোদিত হয়, যখন তা কিছু মানুষের জন্য অথবা অন্যদের বিরুদ্ধে করা হয়। ইবনে তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন : “কুনূত যে পড়ছে তার উচিত এমন সময়ে সেটা পড়া যখন তা ঐ বিপদের সাথে মানানসই হবে।” (আল ফাতওয়া) তিনি আরো বলেছেন : “রাসূলের সুন্নাহ হল দোয়াকুনূত বিপদের সময় পড়া এবং যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত তাদের জন্য যতটুকু মানানসই, ঠিক ততটুকু দোয়ায় বলা।” (আল ফাতওয়া) এগুলো হচ্ছে দুয়ার মধ্যে কৃত কতিপয় ভুলভ্রান্তি।
দোয়ার আদব

You may also like