Home ইসলাম গোসল ও পবিত্রতা

গোসল ও পবিত্রতা

by admin
0 comment

গোসল পবিত্রতা

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উত্তমরূপে ধোয়াকে গোসল বলা হয়। নিয়মিত গোসল করা স্বাস্থ্যের জন্য হিতকর। ধূলোবালি, ময়লা থেকে মুক্ত থাকার জন্যও এটা একান্ত প্রয়োজন। বড় ধরনের নাপাকী অর্থাৎ ‘হাদাসে আকবার’ থেকে পবিত্রতা হাসিলের জন্য গোসল করা ফরয।

গোসলের ব্যাপারে কালামে পাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :

وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا ۚ وَإِنْ كُنْتُم ْمَّرْضىٰ أَوْ عَلٰى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنْكُمْ مِّنَ الْغَائِطِ أَو ْلَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِّنْهُ ۚ مَا يُرِيْدُ اَللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْ حَرَجٍ وَّلـٰكِنْ يُرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ.

উচ্চারণ : ওয়াইন কুনতুম জুনুবান ফাত্তাহহারু; ওয়াইন কুনতুম মারদ্বা আও-আলা সাফারিন আও জ্বাআ আহাদুম মিনকুম মিনাল গায়িতি আও লামাসতুমুন নিসাআ ফালাম তাজ্বিদু মাআন ফাতাইয়াম্মামু সায়িদান ত্বইয়িবান ফামসাহু বিউজুহিকুম ওয়া আইদীকুম মিনহু মাইয়ুরীদুল্লাহু লিইয়াজ্ব’আলা আলাইকুম মিন হারজ্বিঁও ওয়ালাকিই ইয়ূরীদু লিইয়াত্বহ্হিরাকুম ওয়ালিইয়ুতিম্মা নি’মাতাহু, আআইকুম লা’আল্লাকুম তাশকুরুন।

অর্থ : যদি তোমরা জানাবাত (অপবিত্র) অবস্থায় থাকো, তাহলে গোসল করে পাক সাফ হয়ে যাও। যদি তোমরা রোগগ্রস্ত হও বা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে বা তোমরা নারীদেরকে স্পর্শ করে থাকো এবং পানি না পাও, তাহলে পাক-পবিত্র মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তার ওপর হাত রেখে নিজের চেহারা ও হাতের ওপর মাসেহ করে নাও। আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে, হয়তো তোমাদের শোকর গুজার হবে।(সূরা ৫ মায়েদা :আয়াত ৬)

হাদীসের আলোকে গোসলের নিয়ম :

গোসলের নিয়ম সম্বলিত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতিপয় হাদীসে বর্ণনা করা হলো :

১. হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। মায়মুনা বলেছেন, আমি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তিনি তাঁর দু’হাত দুবার কিংবা তিনবার ধুয়ে ফেললেন। তারপর তিনি বাঁ হাতে পানি নিয়ে তাঁর বিশেষ স্থান ধুলেন তারপর হাত মাটিতে রগড়ালেন। তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন এবং মুখ মন্ডল ও দু’হাত ধুয়ে ফেললেন। অতপর সারা শরীরে পানি প্রবাহিত করলেন। সবশেষে সে স্থান থেকে সরে গিয়ে পা দু’টি ধুয়ে ফেললেন। (সহীহ আল বোখারী-২৫০)

২. হযরত মায়মুনা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাতে পানি ঢেলে উভয় হাত ধুয়ে ফেললেন। এরপর বিশেষ স্থান ধুলেন। তারপর হাতটি মাটিতে রগড়ালেন এবং ধুয়ে ফেললেন। এরপর কুল্লি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এরপর মুখম-ল ধুলেন এবং মাথায় পানি ঢাললেন এবং সে স্থান থেকে সরে গিয়ে পা দু’টি ধুলেন। অতঃপর তাঁকে গা মোছার জন্য এক টুকরা কাপড় দেয়া হলো। কিন্তু তিনি তা ব্যবহার করলেন না। (সহীহ আল বোখারী-২৫২)

৩.রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয গোসলে প্রথমে দু’হাত ধুতেন। তারপর ডান হাতে পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে শরীরের বিশেষ স্থান ধুইতেন। এরপর নামাযের অযুর মতো অযু করতেন। এরপর পানি ঢেলে আঙ্গুল দিয়ে চুলের গোড়া ভেজাতেন। চুল ভালোভাবে ভিজে যাবার পর তিন আঁজলা পানি শির মোবারকে দিতেন। এরপরে গোটা শরীরে পানি প্রবাহিত করতেন। সবশেষে দুই পা ধৌত করতেন।

৪.অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে-আঙুল দিয়ে চুলের গোড়া ভিজাতেন। চুলের গোড়া ভালোভাবে ভিজে যাবার পর শির মোবারকে তিনবার পানি ঢালতেন। (সহীহ আল বোখারী)

৫.কেউ যদি ফরয গোসলের মধ্যে শরীরের এক চুল পরিমাণ স্থানও শুকনা রাখে তাহলে তা জাহান্নামের আগুনে এই শাস্তি ভোগ করবে।

গোসল চার প্রকার : ক. ফরয খ.ওয়াজিব গ. সুন্নত ঙ. মুস্তাহাব।

ক. গোসল ফরয হওয়ার কারণ সাতটি :

১. নিদ্রিত বা জাগ্রত অবস্থায় যৌন উত্তেজনায় বীর্যপাত হলে

২. স্বপ্নদোষ হলে

৩. স্ত্রী সহবাস করলে

৪. বীর্যপাত হোক বা না হোক পুরুষের লিঙ্গের অগ্রভাগ স্ত্রী লিঙ্গে বা গুহ্যদ্বারে প্রবেশ করালে

৫. মহিলাদের হায়েজ-নেফাসের রক্তস্রাব বন্ধ হলে

৬. স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ হোক বা না হোক নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর শরীরে বা কাপড়ে বীর্য পরিদৃষ্ট হলে এবং

৭. হস্তমৈথুন, পুংমৈথুন অথবা পশুমৈথুন হলে। এ ধরণের নাপাকী হতে পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল ফরজ হয়।

খ. গোসল ওয়াজিব হওয়ার কারণ তিনটি :

১.অমুসলিম অবস্থায় (পুরুষ বা মহিলা) মুসলমান হলে

২.ছেলেরা স্বপ্নদোষের মাধ্যমে বালেগ হলে

৩.মেয়েরা স্বপ্নদোষ বা ঋতুস্রাবের (হায়েয) মাধ্যমে বালেগা হলে গোসল ওয়াজিব হয়।

গ.সুন্নত গোসল :

১. যাদের প্রতি জুম’আর নামায পড়া ফরয তাদের জন্য জুম‘আর নামাযের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে

২. যাদের প্রতি ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব তাদের জন্য ফজরের পর থেকে ঈদের নামাযের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে মধ্যে

৩. হজ্জ বা ওমরার ইহরাম বাঁধার পূর্বে এবং

৪. হজ্জ উদযাপনকারীদের জন্য আরাফার দিন দ্বি-প্রহরের পর গোসল করা সুন্নত।

গোসলে ফরয তিনটি :

১.গড়গড়া করে উত্তমরূপে কুলি করা, কিন্তু রোযাদার হলে কুলি করা যাবে/গড়গড়া করা যাবে না।

২. নাকের ভেতরের নরম স্থানে উত্তমরূপে পানি প্রবেশ করানো এবং

৩.সমস্ত শরীর একবার উত্তমরূপে ধৌত করা।

গোসলের সুন্নত ছয়টি :

১.গোসলের পূর্বে নামাযের অযুর ন্যায় অযু করা। শুধু পা ধোয়া দরকার হবে না।

২.দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া

৩.তিনবার গড়গড়া করা

৪.নাকের ভিতরে তিনবার পানি পৌঁছানো

৫.প্রথম লজ্জাস্থান ধুয়ে তারপরে শরীর ভালোরূপে মর্দন করা

৬.সর্বাগ্রে নাপাকি ধুয়ে শরীর পরিষ্কার করা এবং

৬.সমস্ত শরীর উত্তমরূপে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা।

গোসলের নিয়ত :

নাপাকী দূর করা উদ্দেশ্যে আমি গোসলের নিয়ত করলাম।

 

You may also like