কুরআন হাদীসের আলোকে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ আমল
মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী
সূচীপত্র
১ নেকী যাতে হাত ছাড়া না হয়
২ নিয়তের গুরত্ব
৩ ইসলামের ভিত্তি
৪ ঈমান
৫ ইলম/জ্ঞান অর্জন
৬ ইবাদত
৭ মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য
৮ খলিফার দায়িত্ব ও কর্তব্য
৯ নবী প্রেরণের উদ্দেশ্যে
১০ মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ না করা
১১ রাতের নামায/তাহাজ্জুদের নামায
১২ রমযানে রাতে নামায পড়লে কি লাভ হবে
১৩ এশরাকের নামায
১৪ আউয়াবীনের নামায
১৫ লাইলাতুল ক্বদরের রাতে ইবাদাত করলে কি লাভ হবে
১৬ কোরআন তেলাওয়াত করলে কি লাভ হবে
ক) আয়তুল কুরসী পড়ার ফযীলত
খ)সূরা হাশরের শেষাংশ পড়ার ফযীলত
ঘ) সূরা বাকারার শেষ ৩ আয়াত
১৭ দাওয়াত/আল্লাহর দিকে আহ্বান
১৮ সৎকাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ
১৯ সালাম দেয়া
২০ জ্ঞানী ব্যক্তি কে
২১ রাতের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ আমল
২২ প্রতিবেশীর সাথে আচার ব্যবহারের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়া যায়
২৩ রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারন করার ফজিল
২৪ রুগীর পরিবচর্যা করা/ রুগীর সেবা করার ফজিলত
২৫ বিধবা ও দুস্থ (মিসকিন) লোকের কল্যানের ফযিলত
২৬ ইয়াতিমকে খাওয়ালে/ ইয়াতিমকে লালন পালন করলে কি লাভ
২৭ মৃতব্যক্তির জানাযা ও কাফন–দাফনের ব্যবস্থা করার ফজিলত :
২৮ ন্যায় বিচর করার কজিলত
২৯ পিতা–মাতার খেদমত করালে কি লাভ হবে
৩০ পাঁচটি বিষয়ের উপর গুরত্ব প্রদান
৩১ জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়
৩২ আল্লাহর রাস্তায় দান করলে কি লাভ হবে
৩৩ ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ানো ও বস্ত্রহীন ব্যক্তিকে বস্ত্রদান করলে কি লাভ হবে
৩৪ কোন মুসলিমের সম্পদ আতœসাৎ করার পরিনাম
৩৫ কিয়ামতের দিন কারা আরশের ছায়ায় স্থান লাভ করবে
৩৬ তাওবা করলে/গুণা মাফ চালে কি লাভ
৩৭ ই‘তিকাফ
৩৮ নিদ্রা যাওয়ার সময় কতিপয় দু‘আ
১। নেকী যাতে হাত ছাড়া না হয়
১.১) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালাম বলেন : আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তিই প্রকৃত কাংগাল যে কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাতসহ আল্লাহর দরবারে হাজির হবে, সেই সাথে দুনিয়াতে কাউকে গালি দিয়ে থাকবে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকবে, কাউকে হত্যা করে থাকবে অথবা অন্যায়ভাবে প্রহার করে থাকবে। ফলে এসব মজলুমদের মধ্যে তার সব নেকীগুলো বন্টন করে দেয়া হবে। যদি পাওনা পরিশোধের পূর্বেই তার সব নেকীগুলো শেষ হয়ে যায় তা’হলে তাদের পাপ সমূহ তার ভাগে ফেলে দিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম শরিফ)।
সম্মানিত ভাইসব আখেরাতে নিয়ে যাওয়া কোন নেকী যাতে হাত ছাড়া না হয়ে যায় সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহর হুকুম মেনে চললে হয় নেকী, আর আল্লাহর হুকুম লংঘন করলে হয় গুনাহ। প্রতিটি মানুষের জীবনে গুনাহ থাকা স্বাভাবিক। তবে অনুশোচনাসহ তওবা করে গুনাহ মাফ করে নিতে হয়। কিন্তু কিছু গুনাহ এমন আছে যা দুনিয়াতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে জড়িত। দুনিয়াতে জীবিত থাকতেই সমাধা করে যেতে হবে। নইলে আখেরাতে নেকী কাটা পড়বে এবং অন্যের গুনাহ যোগ হয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। এ যেন সেই ব্যক্তির মত যে বহু কষ্ট করে কলসী ভর্তি পানি মাথায় বহন করে বাড়ীতে নিয়ে গেল। কিন্তু বাড়ীতে নিয়ে কলসী ছিদ্র করে দিল। ফলে তার জমানো পানি সব ছিদ্র দিড়ে বেরিয়ে গেল।
২। নিয়তের গুরত্ব
২.১) হাদীস :
আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা🙂 থেকে বর্ণিত। তিনি মিম্বারের উপর উঠে বলেছেন : আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালাম–কে বলতে শুনেছি, যাবতীয় কাজের ফলাফল নিযতের উপর নির্ভশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছে। কাজেই যার হিজরত দুনিয়ার কোন স্বার্থ হাসিলের জন্য কিংবা কোন রমনীকে বিবাহ করার নিয়তে হয়েছে, তা হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হয়েছে। (বুখারী)
২.২) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালাম বলেছেন : আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাদের সৌন্দর্য ও সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না, বরং তোমাদের অন্তর ও কাজের দিকে লক্ষ্য করেন। ( মুসলিম)
২.৩) হাদীস :
আল্লামা ইমাম খাত্তাবী (রা🙂 বলেছেন : সকল কাজের পরিশুদ্দতা ও তার ফলাফল লাভ নিয়ত অনুযায়ী হয়। কেননা নিয়তই মানুষের কাজের দিক নির্ণয় করে। (বোখারী)
নিয়তের হাদীসটি সহীহ আল বুখারী শরীফের সর্বপ্রথম হাদীস। উক্ত হাদীস দিয়ে বুখারী শরীফের লিখা শুরু কর হয়। নবী করীম (সা🙂 খুব সংক্ষেপে অল্প শব্দে এবং ব্যাপক অর্থ ও ভাববোধক যত মূল্যবান বানীই বলেছেন আলোচ্য হাদীসটি তার অন্যতম।
সকল প্রকার কাজ কর্মের ভাল ও মন্দ এবং গ্রহণযোগ্য ও গ্রহণঅযোগ্য হওয়া একমাত্র নিয়্যতের উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল এই কথা সুষ্পষ্ট করে বলাই এ হাদীসের মূল লক্ষ্য। অর্থাৎ যে কাজ সৎ নিয়্যতে ও সৎ উদ্দেশ্যে করা হবে তা সৎ কাজরূপে গণ্য হবে এবং আল্লাহর দরবারে তা একমাত্র মূল্য ও সম্মান লাভ করতে সমর্থ হবে। কিন্তু কোন ভাল কাজও যদি খারাপ উদ্দেশ্যে দুষ্ট নিয়্যতে করা হয়, তবে তা কখনও ভাল কাজরূপে গণ্য হবে না ও আল্লাহর নিকট তা গৃহীতও হবে না। বাহ্যদৃষ্টিতে হা যত ভাল ও সৎ কাজ বলে মনে করা হোক না কেন।
৩। ইসলামের ভিত্তি
৩.১) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা🙂 হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালাম ইরশাদ করেছেন : ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত করা হয়েছে। প্রথম, এ মৌলিক সত্যের সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা🙂 তাঁর বান্দাহ ও রাসুল। দ্বিতীয়, নামায কায়েম করা। তৃতীয়, যাকাত আদায় কর। চতুর্থ, হজ্জ্ব করা। পঞ্চম, রমযান মাসের রোযা রাখা।
এই হাদীসে নবী করীম (সা🙂 দৃষ্টান্ত স্বরূপ ইসলামকে পাঁচটি স্তম্ভের ভিত্তিতে স্থাপিত এক প্রাসাদের সাথে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন যে, ইসলামের এ প্রাসাদটি এ পাঁচটি স্তম্ভের উপর দন্ডায়মান কাজেই কোন মুসলমানই এ পাঁচটি মৌলিক কাজ যথাযথরূপে সম্পন্ন করা সর্ম্পকে বিন্দুমাত্র অবজ্ঞা বা অবহেলা দেখাতে পারেনা। যদি দেখায় তবে সে ইসলামের মূলকেই উৎপাদিত করে।
হাদীসে বলা হয়েছে ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত হয়েছে। ইহা হতে স্পষ্টরূপে বুঝতে পারা যায় যে কালেমা, নামায, রোজা, হজ্জ্ব ও যাকাত ইসলামের ভিত্তি মাত্র, ইহা সমগ্র ইসলাম নয়। আর কেহ এ পাঁচটি কাজ সম্পন্ন করলেই ইসলামের সমগ্র দায়িত্ব তার পালন হয়ে যায় না। কেননা এ পাঁচটি ইসলামের ভিত্তি মাত্র; আর শুধু ভিত্তিটিকেই যেমন কেহ সমগ্র প্রাসাদ মনে করে না, মনে করলে তা যেমন শুধু ভুলই হবেনা বরং চরম পাগলামী হবে অনুরূপভাবে শুধু কালেমা, নামায, রোজা, হজ্জ্ব ও যাকাত এই পাঁচটিকে গোটা ইসলাম বা সম্পূর্ণ ইসলাম মনে করলেও ভুল বা পাগলামী হবে।
৪। ঈমান
৪.১) হাদীস :
হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা🙂 হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন : আমি নবী করীম (সা🙂 কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল আল্লাহ তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।
৪.২) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 থেকে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ (সা🙂 বলেছেন : সত্তরের ও কিছু বেশি ঈমানের শাখা–প্রশাখা রয়েছে। তম্মধ্যে সর্বশেষ্ঠ শাখাটি হচ্ছে, কালেমা শরীফ লা–ইলাহা ইল্ল্ল্লাাহহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর স্বীকৃতি আর সর্বাপেকক্ষা ক্ষুদ্র শাখাটি হচ্ছে, মানুষের চলাচলের রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া এবং লজ্জা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। (বুখারী, মুসলিম)
৪.৩) হাদীস :
হযরত আবু উমামা (রা🙂 থেকে বর্ণিত। রাসুলূল্লাহ (সা🙂 বলেছেন যে, ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য করেই কাউকে ভালোবাসলো বা কারও প্রতি শক্রতা পোষন করল, আল্লাহ ওয়াস্তেই কাউকে দিল এবং গোনাহর পথে কিছু দেওয়া বা গোনাহর পথে খরচ করতে পারে এই আশঙ্কায় কাউকে কিছু দেওয়া থেকে বিরত রইল, সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করে নিল। (আবু দাউদ)
৪.৪) হাদীস :
কোন সৎকাজ করতে পারলে যদি মনে প্রফুল্লতা সৃষ্টি হয়, আর কোন মন্দ কাজ করে ফেললে যদিমনের মধ্যে অনুশোচনা সৃষ্টি হয় তবে বুঝতে হবে; তুমি ঈমানদার।
ভূমিকা
মুসলমানের জীবনার্দশের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঈমান। গাছ যেমন তার মূলের উপর দাড়িয়ে থাকে, কোন অট্রালিকা যেমন তার ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তেমনি একজন মুসলিম প্রতিষ্ঠিত থাকে ঈমানের ভিতের উপর। যার ঈমান হতে যত মজবুত মুসলমান হিসাবে তিনি হবেন ততোটা খাঁটি ও উন্নত। প্রত্যেক মুসলমনের সে সর্ম্পকে স্বচ্ছ ধারণা থাকা ধরকার ঈমানিয়াতের প্রতিটি দিক ও সেগুলোর শাখা প্রশাখা সর্ম্পকে অনাবিল বুঝ ও ধারণা না থাকলে মুসলমানের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার সমুহ আশংকা থেকে যায়।
ঈমান :
ঈমান আরবী শব্দ। শাব্দিক অর্থ হলো বিশ্বাস স্থাপন। শরীয়তের ভাষায় ঈমান হলো অন্তরে বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও কার্যে পরিণত করার নাম। অর্থাৎ কোন বিষয়েক গ্রহণ ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও স্বীকৃতি দানই ঈমান। গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সদিচ্ছা না থাকলে মৌখিক স্বীকৃতির দ্বারা মু’মিন হওয়া যায়না।
যা দেখা যায়না বা সরাসরি যে বিষয়ে জ্ঞান নেই পরোক্ষ জ্ঞানের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার নাম ঈমান।
1.ঈমান আননে হবে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে।
11.ঈমান হতে হবে খালেস ও শেরক মুক্ত।
111.ঈমান হতে হবে ঘোষণার বাস্তবায়ন।
ঈমান হলো একটি ঘোষণা যা আমরা কালেমা তইয়্যেবার মাধ্যমে দিয়ে থাকি।
কালিমা তাইয়্যিবা “লা–ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”।
অর্থাৎ “আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সার্বভৌমত্বের মালিক নয়, হযরত মুহাম্মদ (সা🙂 আল্লাহর রাসূল”।
এই কালেমার দুইটি অংশ আছে–
১। “লা–ইলাহা ইল্লাল্লাহু”
২। “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”
উপরোক্ত দুইটি দিককে :
১। গ্রহন করা– মানিয়া লওয়া
২। এলমী দিক– আমলি দিক।
কালেমা তাইয়্যেবার প্রথম অংশের অর্থ–
1.আরবি ভাষায় ইলাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে–ইবাদতের যোগ্য। শ্রেষ্ঠত্ব, গৌরব মহত্বে সে সত্তা উপাসনার যোগ্য। বন্দেগী ও ইবাদতের যার সামনে মাথা নত করা যায়।
11.ইলাহ শব্দের অর্থ তিনি হবেন অনন্ত শক্তির অধিকারী, যে শক্তির উপলিব্দি মানুষের জ্ঞান–বুদ্ধির সীমানা অতিক্রম করে যায়।
111.ইলাহ শব্দের অর্থ আইনদাতা, হুকুমদাত। জীবনের সকল ক্ষেত্রে তার মুখাপেক্ষী হবে। তাঁর কাছেই সাহায্য ভিক্ষা করতে হবে।
কালেমার প্রথম অংশকে দুইভাবে ভাগ করা যায়–
১। প্রথমভাগ হচ্ছে “নিতিবাচক” বা ‘তাত্বিক’ দিক না বোধক অর্থে অর্থাৎ কোন মাবুদ নেই, প্রভু নেই, সৃষ্টিকর্তা নেই, আমি কাউকে মানিনা। কারো দয়া অনুগ্রহ সাহয্য আমি চাইনা। কাউকেও উচ্চতর ক্ষমতার অধিকারী স্বীকার করি না। কারো ইবাদত বন্দেগী করিনা, কারো সাথে আমার কোন সর্ম্পক নেই।
২। আর দ্বিতীয় দিকে হচ্ছে ‘ আস্থা বাচক’ বা ‘বাস্তবিক দিক’ হাঁ বাচক অর্থে অর্থাৎ এসব দিক দিযে আমি একমাত্র আল্লাহকেই স্বীকার করি ও মানি।
কালেমা তাইয়েবার দ্বিতীয় অংশের অর্থ :
লা–ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলার পর মুহাম্মদ (সা🙂 এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার রিসালত বা শরীয়ত মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন। একথা স্বীকার করি। আল্লাহকে নিজেদের মনিব মালিক বাদশাহ স্বীকার কার পর একথা অবগত হওয়া একান্ত দরকার যে, সেই বাদশাহর আইন ও হুকুম কী ? আমরা কোন কাজ করলে আল্লাহ খুশি হবেন আরব কোন কাজ করলে আল্লাহ নারাজ হবেন। কোন আইন অনুসরণ করলে তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন, আর কোন আইনের বিরোধিতা করলে তিনি আমাদের শাস্তি দিবেন। এসব জানার জন্য আল্লাহতায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সা🙂 কে তার নবী হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাঁর মাধ্যমে তিনি আমাদের প্রতি তার কিতার (আলা কুরআন) নাযিল করেছেন। হযরত মুহাম্মদ (সা🙂 আল্লাহর হুকুমমত কিরুপে জীবন যাপন করতে হয় তা বাস্তব ক্ষেত্রে দেখিয়ে গেছেন। কাজেই আমরা যকন বলি “ মুহাম্মদুর রাসূলূল্লাহ” তখন এ দ্বারা একথাই স্বীকার করা হয় যে, যে আইন যে নিয়মে হযরত মুহাম্মদ (সা🙂 জীবন যাপন করতে বলেছেন সেই নিয়মেই আমার অনুসরণ করে চলবো। আর সে আইন এর বিপরীত হলে তাকে অমান্য করব।
1.তাই সকল অবস্থাতেই আল্লাহর আইন মেনে চলা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
11.শুধু মেনে চললে দায়িত্ব শেষ হবে না। আল্লাহর আইন জারী না থাকলে আমাদের তা জারী করার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
111.আর এই চেষ্টা করাটাই ফরয।
ঈমানদারকে পুনরায় ঈমান আনতে বলার তাৎপর্য :
মুখে মুখে শুধু ঈমাননের দাবীকেই যথেষ্ট মনে কার ঠিক হবে না, বরং ঈমানের উপর টিকে থাকার জন্য সকল প্রকার ত্যাগ ও কুরবানীর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আখেরাতের কঠিন আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সুখময় জান্নাত পাওয়ার জন্য যে ব্যবসার কথা আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন তার মূল পুঁিজ হলো ঈমান ও জিহাদ। দুর্বল ঈমান নিয়ে আল্লাহর ঘোষিত ব্যবসা করা কোন মুসলমানের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ তায়ালা ঈমানদার লোকদেরকে জিহাদের ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য প্রথমেই “ত’ুমিনুনা বিল্লাহি ওয়ারাসূলিহি” বলে মযবুত ঈমান আনার শর্ত আরোপ করেছেন। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান কালে ইসলামী আন্দোলনই এই জেহাদের একটি স্তর।
মযবুত ঈমানের প্রধান শর্ত দুটো :
১। শিরকমুক্ত ঈমান বা নির্ভেজাল তাওহীদ।
২। ইমানের দাবিদারকে তাগুতের কাফির হতে হবে।
সুতারং মযবুত ঈমানের অধিকারীকে
১) তাওহীদ
২) শিরক ও
৩) তাগুত সর্ম্পকে সুষ্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে ।
১। তাওহীদ :
তাওহীদ শব্দের অর্থ হলো অদ্বিতীয়তাবাদ। অদ্বিতীয় মানে যার কোন সমকক্ষ নেই, এমনকি যার সাথে তুলনা করার মতোও কেউ নেই।
২। শিরক :
শিরক শব্দটির অর্থ হলো শরীক করা। যারা শিরক করে তারা আল্লাহকে অস্বীকার করে না। তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে বটে, কিন্তু আল্লাহর সাথে অন্যান্য সত্তা বা শক্তিকে বিভিন্নভাবে শরীক করে। আল্লাহর সাথে কী কী ভাবে শরীক করা হয় তা বুঝতে হলে শিরক সর্ম্পকে ধারনা থাকতে হবে তাহলেই শিরক থেকে বেচেঁ থাকাও সজহ হবে।
ক) শিরকুন ফিয–যাত অর্থাৎ আল্লাহর সত্তা
খ) শিরকুন ফিস–সিফাত অর্থাৎ আল্লাহর গুনাবলি
গ) শিরকুন ফিল এখতিয়ারাত অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতা
ঘ) শিরকুন ফিল হুকুক অর্থাৎ আল্লাহর অধিকার
তাওহীদকে বুঝতে হলে শিরককে বুঝতে হবে। শিরকের বিপরীতই তাওহীদ। ঈমান শিরকমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাওহীদের দাবী পূরণ হতে পারে না।
শিরকুন ফিয–যাতের উদাহরণ :
আল্লাহর সত্তাকে শরীক করা যেমন কাউকে আল্লাহর পুত্র, স্ত্রী মনে করা। ফেরেশতা, দেব–দেবী ইত্যাদিকে আল্লাহর বংশধর বলে বিশ্বাস করা।
শিরকুন ফিস সিফকাতের উদাহরণ :
যে সব গুন একান্তই আল্লাহর সে সবগুন কারোর মধ্যে আছে বলে বিশ্বাস করা শিরক। আল্লাহ ছাড়া কাউকে সকল রকম দুর্বলতা ও দোষক্রটি থেকে পাক মনে করা। যেমন–গায়েবী ইলম বা অদৃশ্য সর্ম্পকে জ্ঞান। কারো সর্ম্পকে এমন ধারণা করা যে, তিনি সবকিছু জানেন, দেখেন বা শুনেন এবং সব দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত।
শিরকুন ফিল এখতিয়ারাতের উদারহণ :
আলৌকিকভাবে উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা, প্রয়োজন পূরণ ও হেফাযত করার যোগ্যতা, মানুষের ভাগ্য গড়া ও ভাঙ্গা, দোয়া করা, মানব জীবনের জন্য আইন কানুন রচনা করা, সন্তান দান করা, রোগ ভাল করা, গুনাহ মাফ করা, হায়াত ও মওত দেয়া, রিযক দান করা ইত্যদি।
শিরকুন ফিল হুকুকের উদাহরণ :
কাউকে রুকু, সিজদা ও পূঁজা পাওয়ার অধিকারী বা হাত বেঁধে নত হয়ে দাড়িয়ে ভক্তি করার পাত্র মনে করা, কারো আস্তানাকে চুমু দেয়ার যোগ্য মনে করা, কুরবানী ক, নযর, নিয়য, মানত পেশ করার যোগ্য মনে করা। নিয়ামতের শুকরিয়া পাওয়ার অধিকারী বা আপদে বিপদে সাহায্যের জন্য আবেদন গ্রহনের যোগ্য, সব অবস্থায় যাকে ভয় করা যায় বা যার জন্য আর সব মহ্বত ত্যাগ করা যায় বলে মনে করা।
৩। তাগুতঃ
তাগুত শব্দের অর্থ সীমা লঙ্ঘন কারী। আল্লাহর নাফরমানীর দুটো সীমা রয়েছে–
ক) প্রাথমিক সীমা হলো পিসক
খ) আর চূড়ান্ত ও শেষ সীমা হচ্ছে কুফর
যে আল্লাহর হুকুম স্বীকার করে বটে কিন্তু পালন করে না সে ফাসিক। আর যে আল্লাহর হুকুমকে স্বীকারই করেনা সে কাফির। যে নাফরমানীর এ দুটো সীমা লঙ্ঘন করে সেই তাগুত।
১। যে নিজে কাসেক এবং অন্য মানুষকেও ফাসেক বানাবার চেষ্টা করে সেই তাগুত। সে নাফরমানীর প্রাথমিকম সীমা লঙ্ঘন করলো।
২। যে নিজে কাফির এবং অন্যকেও কাফির বানাবার চেষ্টা করে সে তাগুত। সে আল্লাহর নাফরমানীর শেষ সীমাও লঙ্ঘন করলো।
কোনআনের অসংখ্য জায়গায় ঈমান সর্ম্পকে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনায় পাঁচটি বিষয়ের উপর ঈমান আনার জন্য বলেছেন।
১। আল্লাহর প্রতি ঈমান
২। ফেরেশতার প্রতি ঈমান
৩। আল্লাহর অবর্তীণ কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান
৪। নবী ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান
৫। পরকালের প্রতি ঈমান
হাদীসেও ঈমান সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনায় ৭টি বিষয়ের উপর ঈমান আনার জন্য বলা হয়েছে।
“আমানতুবিল্লাহি ওয়ামালাইকাতিহি, ওয়াকুতুবিহি, ওয়ারাসুলিহি,ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি, ওয়াল ক্কাদরি খাইরিহি, ওয়াশাররিহি মিনাল্লাহি তাআলা ওয়াল বা’ছি বা’দাল মাউতি”। অর্থাৎ আমি নিম্ম বিষয় সমুহের প্রতি ঈমান আনলাম : ১) আল্লাহ, ২) তার ফেরেস্তাগন, ৩) তাঁর কিতবাসমুহ, ৪) তাঁর রাসূলগন, ৫) শেষদিন (পরকাল), ৬) তাকদীরের ভাল ওমন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয় এবং ৭) মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন।
ঈমানের প্রধান বিষয় তিনটি :
১। তাওহীদ
২। রিসালত
৩। আখেরাত
১। তাওহীদ :
তাওহীদ মানে একত্ববাদ, অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালাকে এক বলে জানা ও এক বলে স্বীকার করা। আল্লাহ তায়ালঅ তাঁর অস্তিত্ব ও গুনাবলীতে সম্পূর্ণ এক ও একক । তার সত্ত্বা একক ও অনন্য কারো সাথে তার কোন আতœীয়তা নেই। নেই কারো সাথে তাঁর কোন রক্তের বন্ধন। তাঁর বিশাল খোদায়ীত্বে কারো সামন্যতম অংশীদারিত্ব নেই। তাঁর উপর প্রভাব খাঁটাতে পারে এমন কোন শক্তি নেই।
২। রিসালত :
নবী–রাসূলের প্রতি ঈমান ঈমানিয়াতের মৌলিক অংগ। “নবুয়্যত” শব্দের অভিধানিক অর্থ হচ্ছে সংবাদ বাহন করা আর নবী অর্থ সংবাদ বাহক। রিসালত শব্দের অর্থ বাণী বহন করা আর রাসুল শব্দের অর্থ বাণী বাহক। মর্মগত দিক থেকে দু’টি শব্দের মধ্যে তফাত নেই। ইসলামের পরিভাষায় নবী বা রাসূল বলা হয় তাঁদেরকে, যারা আল্লাহর বাণী তাঁর বান্দাহদের কাছে পৌছে দেন এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তাদের সৎপথে চালিত করেন। সৎ পথে চলার সুপরিনামের সুসংবাদ দেন। অসৎ পথে চলার ভয়াবহ পরিনামের ভয় প্রদর্শন করেন এবং মানুষকে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে সত্য ও জ্ঞানের আলোকে উজ্জ্বলতায় বের করে নিয়ে আসেন। এ জন্যে নবীকে কোরআনে ‘হাদী’(পথ প্রর্দশক) বাশীর (সুসংব্দাদাত) নাযীর (ভয় প্রর্দশনকারী) ও সিরাজাম মুনীরা (উজ্জ্বল প্রদীপ) ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত কর হয়েছে।
৩। আখেরাত :
আখেরাত হচ্ছে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন। বাংলায ‘পরকাল’ ও ‘পরজীবন’ ও বলা হয়। মৃত্যুর পর থেকে এ জীবন শুরু হয়ে আর শেষ হয় না। অনন্তকাল এ জীবন চলতে থাকবে। সে জীবনে আর কারুর মৃত্যু ঘটবে না। পরকাল সর্ম্পকে কোরআন যে ধারণা পেশ করেছে, তার সংক্ষিপ্ত নমুনা হচ্ছে এই যে–
ক) মৃত্যুর পর সমস্ত মানুষ একটা বিশেষ স্থানে নিদির্ষ্ট সময়ের জন্যে অবস্থান করবে–এটাকে বলা হয় আলমে ‘বরযখ”।
খ) একদিন নিখিল বিশ্ব ধ্বংশ করে দেয়া হবে। কোরআনে এটাকে ‘সায়াত’ ও কিয়ামত বলা হয়েছে।
গ) এ ধ্বংশের পর পরই দুনিয়ার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্তকার সকল মানুষকে একস্থানে পুনরুঙ্খিত করা হবে। এটাকে বলা হয় হাশর।
ঘ) এ স্থানে আল্লাহ মানুষের পাপ পূণ্যের হিসাব নেবেন।
ঙ) হিসাবের পর পাপীদের জাহান্নামে এবং নেককারদের জান্নাতে পাঠানো হবে।
চ) জাহান্নাম কঠিন শাস্তির জায়গা।
ছ) জান্নাত পরম সুখের স্থান।
১। তাওহিদের মধ্যে শমিল রয়েছে তিনটি :
ক) আল্লাহ
খ) ফেরেস্তাগন
গ) তাকদীর
ঈমান বিল্লাহ বা আল্লাহর প্রতি ঈমান :
আল্লাহর প্রতি ঈমান হচ্ছে বুনিয়াদী ঈমান। বাকী আর যতো ঈমান ও প্রত্যয় আছে তা ঐ একই মুল কান্ডের শাখা প্রশাখা মাত্র। তাই প্রত্যেক মুসলিমকেই ঈমান বিল্লাহর বিস্তৃতি ও সুষ্পষ্ট ধারণা নিজ অন্তরে বদ্ধমুল করে নিতে হবে।
ঈমান বিল্লাহর তাৎপর্য :
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার তাৎপর্য এই যে, মানুষকে আল্লাহর অসিত্ব; তাঁর গুনরাজি, তাঁর অধিকার, তাঁর ক্ষমতা ও তাঁর একত্ব সর্ম্পকে সিঠক ও স্বচ্ছ জ্ঞান লাভ করতে হবে। এগুলোর উপর পূর্ণ প্রত্যয় লাভ করতে হবে। এগুলোর প্রতি মৌখিক স্বীকৃতি, আন্তরিক বিশ্বাস ও প্রত্যয় এবং বাস্তব কর্মে এগুলোর প্রতিফলন ঘটাতে হবে। এইভাবেই আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান আনতে হবে।
ক) ঈমান বিয–যাত (আল্লাহর অস্তিতের উপর ঈমান)
খ) ঈমান বিস–সিফাত (আল্লাহর গুনরাজির উপর ঈমান)
গ) ঈমান বিল হুকুক (আল্লাহর ক্ষমতার উপর ঈমান)
ঘ) ঈমান বির ইখতিয়াত (আল্লাহর অধিকারে উপর ঈমান)
ক) ঈমান বিয–যাত (আল্লাহর অস্তিতের উপর ঈমান) :
অর্থাৎ আল্লাহর অসিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করা। এই বিশ্ব–জাহান এর সৃষ্টি, এর সুনিয়ন্ত্রিত বিধি সম্মত ব্যবস্থাপনা, হাওয়ার গতি, বৃষ্টির আগমন, দিন–রাতের আবর্তণ, চাঁদ সূর্য, গ্রহ–উপগ্রহের গতিশীলত, ঋতুর পরিবর্তন, বীজ থেকে বৃক্ষের জম্ম, অনু–পরমানু মহা শক্তি ইত্যাদিতে আল্লাহর অস্তিত্বে পূর্ণ আস্থা ও প্রত্যয় লাভ। প্রত্যেক মুসলিমকেই পরিপূর্ণ প্রশান্তি ও প্রত্যয় সহকারে আল্লাহর অস্তিত্বে আস্থা স্থাপন করতে হবে। বস্তুত এটাই ঈমানের বীজ। এখান থেকে ঈমানিয়াতের যাত্রা শুর হয়। এখান থেকে গজিয়া উটবে ঈমানের মূল কান্ড ও শাখা প্রশাখা।
খ) ঈমান বিস সিফাত (আল্লাহ গুণরাজির উপর ঈমান) :
সিফাত মানে গুণরাজি। প্রত্যেক মুসলিমকে আল্লাহর গুণরাজির উপর পরিপূর্ণ ঈমান আনতে হবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের সমাজে আল্লাহর গুণরাজি সম্পর্কে ওয়াকিবহল লোক খুব কমই আছেন। অনেকে আবার আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো শুধু আরবীতেই জানেন। কিন্তু এগুলোর মর্ম ও তাৎপর্য় সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না। এ জন্যে প্রত্যেক মুসলিমকে অবশ্য অবশ্যই আল্লাহর গুণাবলী ও বৈশিষ্টসমূহ জানতে হবে। আল্লাহ তায়ালার গুণাবলরি স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট ধারণা মগজে বদ্ধমূল করতে হবে। সেই হিসাবে নিজের আকীদা–বিশ্বাস ও মন–মানসিকতা তৈরী করতে হবে এবং আলোকে নিজ আচার আচরণ চরিত্র ও পরিবেশ তৈরী করতে হবে।
বস্তুত: চিরকাল আছেন চিরদিন থাকবেন, তিনি বেনিয়াজ, পরমুখাপেক্ষীহীন, আত্মনির্ভরশীল ও চিরঞ্জীব। তিনি সার্বভৌমত্তের মালিক, একচ্ছত্র শাসক ও সর্বোচ্ছ ক্ষমতাবান। তাঁ জ্ঞান সর্বত্র সর্বব্যাপী, তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ সবার জন্য প্রসারিত। তাঁর শক্তি সকলের উপর বিজয়ী। তাঁর হিকমাত ও বুদ্ধিমত্তার কোন ত্রুটি–বিচ্যুতি নেই। তার আদল–ইনসাফে যুলুমের লেশমাত্র নেই। তিনি জীবনদাতা এবং জীবন ধারণের জন্যে প্রয়োজনীয় উপকরণাদির সরবরাহকারী। তিনি ভালমন্দ ও লাভ–ক্ষতির তার শক্তির অধিকারী। তাঁর অনুগ্রহ ও হিফাজতের সবাই মুখাপেক্ষী। সকল সৃষ্ট বস্তু তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনশীল। তিনি সবার হিসাব গ্রহণকারী। শাস্তিও পুরস্কার দানের অধিকার তাঁরই এবং তাঁর সকল গুণাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ও আন্তরিক প্রত্যয় যদি আজকের মুসলিম সমাজের থাকতো তাহলে মুসলমানদের এ বিপর্যয় কোনো অবস্থাতেই ঘটতো না।
গ) ঈমান বিল হুকুক (আল্লাহর ক্ষমতার ঈমান :
বান্দাহর উপর আল্লাহর কি কি অধিকার রয়েছে সেগুলো জানা ও সেগুলোর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপন করাই হচ্ছে ঈমান বিল ‘হুকুক’। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই জানতে হবে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী জীবন যাপন করার সঠিক পন্থা কি? তাকে আরো জানতে হবে কি কি জিনিস আল্লাহ পছন্দ করেন। যা তাকে পালন করতে হবে এবং কি কি জিনিস আল্লাহ অপছন্দ করে যা থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে। এ উদ্দেশ্যে খোদায়ী আইন ও বিধানের সাথে পরিপূর্ণ পরিচয় করতে হবে। আল্লাহর গুণবাচক নামসমুহের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি এসব নামের মধ্যে কি কি দাবী ও অধিকার রয়েছে বান্দাহর উপর।
বস্তুৃত মানুষের উপর আল্লাহর প্রধানতম হক হচ্ছে এই যে, মানুষ উলুহিয়াত (খোদায়ত্ব ও সার্বভৌমত্ব)কে নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর জন্য ঘোষণা দেবে এবং এ ব্যাপারে কখনো কোনো অবস্থাতেই অন্য কাউকেও তাঁর সাথে শরীক করবে না, শুধু ঘোষণা দিলেই চলবে না। এ হতে হবে তার আন্তরিক প্রত্যয় ও ঈমান এবং তার বাস্তব (জীবনে) যিন্দিগীতে বাস্তবভাবে রূপায়িত হতে হবে।
এ আলোচনার সার সংক্ষেপ হচ্ছে এই যে, মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার (১) ইবাদত (২) খিলাফতের দায়িত্ব পালন করা। অথবা কথাটা এ ভাবে বলা যায় যে, আল্লাহ, তায়ালার সমস্ত হুকুম পালন করাই হচ্ছে মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার আর এটাই হচ্ছে মানুষের সঠিক মর্যাদা।
ঘ) ঈমান বিল ইখতিয়াত (আল্লাহর অধিকারের উপর ঈমান :
অর্থাৎ আল্লাহ শক্তি ও ক্ষমতার উপর পূর্ণ ঈমান ও আস্থা পোষণ করা। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই ঈমান রাখতে হবে যে, আল্লাহর তায়ালার শক্তি ও ক্ষমতার বাইরে কিছুই নেই। তাঁর শক্তি ও ক্ষমতা সর্বত্র কার্যকর। মানুষকে জানতে হবে আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলার পরিণতি কি? রুকু ও সেজদা করা, হাত বেঁধে নত হওয়া, ভক্তি শ্রদ্ধা দেখানো, পশু কুরবাণী করা, আপদে বিপদে কাতর ভরে দোয়া করা, দয়া ও অনুগ্রহ পাওয়ার অধিকার, কোন কিছু দান করা ইত্যাদি একমাত্র আল্লাহর প্রাপ্য বা হক।
খ) ফেরেশতাগণ :
ফেরেশতারা আল্লাহর কর্মচারী, তাঁরা ভালো ও মন্দ সম্পর্কে জানেন। কিন্তু তাঁরা সব সময়ই আল্লাহর হুকুম পালন করেন। তাঁরা কখনও আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলেন না। আল্লাহর কোনো গুণের সাথেই তাঁরা কোনো দিক দিয়ে শরীক নন। তাঁরা শুধুই কর্মচারী। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বিশাল সৃষ্টি জগত পরিচালনার কাজে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করার জন্য তাদের সৃষ্টি করেছেন। তারা নারী বা পুরুষ নয়। তাদের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম–নিদ্রা ও কামনা বাসনা নেই। তাদের আকৃতি ও সংখ্যা মানুষকে জানানো হয়নি। তারা শুধু আল্লাহর নির্দেশ পালন এবং তাঁর গুণগান বর্ণনায় নিয়োজিত রয়েছে। ফেরেশতাদের সম্পর্কে কুরআনের ধারণা এটাই। অসংখ্য ফেরেশতা রয়েছে এর মধ্যে হাদীসে চার জন বড় ফেরেশতা নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ক) হযরত জিব্রাইল (আঃ)
খ) হযরত মীকাঈল (আঃ)
গ) হযরত ইস্রাফিল (আঃ)
ঘ) হযরত আজরাঈল (আঃ)
গ) তাকদীর :
এ শব্দটির অর্থ হলো যা নির্ধারিত হয়ে আছে। এ কথা বিশ্বাস করতে হবে যে, দুনিয়ায় তাই ঘটে যা আল্লাহ ঠিক করে রেখেছেন। ভালো ও মন্দ যা–ই ঘটে আল্লাহর ফায়সালামতেই ঘটে থাকে। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। তাকদীর সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হওয়া ঈমানের জন্য খুবই জরুরী। দুটো কথা বুঝে নিলেই এ বিষয়ে কোনো অষ্পষ্টতা থাকবে না।
ক) আল্লাহ তাআলা মানুষকে কোনো কাজ সমাধা করার ক্ষমতা দেননি। মানুষ কোন কাজের জন্য ইচ্ছা ও চেষ্টা করতে পারে মাত্র। কাজটি পুরা হওয়া আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। যদি তাকদীরে থাকে তাহলে সমাধা হবে। তাকদীরে না থাকলে কাজটা সম্পন্ন হবে না।
খ) কোনো কাজের শুধু ইচ্ছা ও চেষ্টা করার ক্ষমতাই মানুষকে দেয়া হয়েছে। তাই যদি মানুষ কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা ও চেষ্টা করে তাহলে কাজটা সমাধা না হলেও সে কাজটা পুরা করেছে বলে পুরষ্কার পাবে। তেমনিভাবে যদি কোনো খারাপ কাজের ইচ্ছা চেষ্টা করে তাহলে কাজটা পুরা না হলেও সে শাস্তি পাবে। কাজটা সমাধা করার ক্ষমতা তো মানুষকে দেওয়াই হয়নি। যেটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এ ভিত্তিতেই পুরষ্কার বা শাস্তি পাবে।
২। রিসালতের মধ্যে শামিল রয়েছে দুইটি :
ক) কিতাবসমূহ
খ) রাসূলগণ
ক) কিতাবসমূহ :
রাসূলগণের নিকট ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ কিতাব নাযিল করেছেন। শেষ রাসূলের নিকট কুরআন নাযিল করা হয়েছে। পূর্বে কিতাবগুলোর কোনোটাই আসল অবস্থায় নেই। আল্লাহ তাআলা কুরআনকে কিয়ামত পর্যন্ত আসল যে সব কওম ও জনপদে নবী এসেছিলেন যে, সে সবগুলোরই নাম কুরআনে উল্লেখ্য হয়নি। মাত্র কয়টির নামই উল্লেখ হয়েছে। যেমন : ইরাক, ফিলিস্তিন, জর্ডান, মক্কা, মিসর, আদ জাতি, সামুদ জাতি, মাদায়েনবাসী, বনী ইসরাঈল ইত্যাদি।
মোট কথা যে সব নবীর নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁদের প্রত্যেকের প্রতি বিশেষভাবে এবং যাদের নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি তাদের প্রতি সাধারণভাবে প্রত্যেক মুসলিমকে ঈমান রাখতে হবে।
অবস্থায় হেফাযত করার দায়িত্ব নিয়েছেন। আমাদেরকে হুকুম করা হয়েছে; যেন আমরা একমাত্র কুরআনকে মেনে চলি। কিন্তু আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ সকল নবী ও রাসূরে কাছেই ওহী পাঠিয়েছেন। কিতাবের ভাষা ও অর্থ কোনটাতেই পয়গম্বরগণের নিজস্ব বুদ্ধি ও চিন্তা এবং ইচ্ছা ও আকাংখার বিন্দুমাত্র সংমিশ্রণ থাকে না। কিতাব হচ্ছে নিরেট ও বিশুদ্ধ খোদায়ী কালাম। প্রত্যেক নবী নিজে যে ভাষায় কথা বলতেন তাঁর নিকট সে ভাষায় কিতাব নাযিল হয়েছে। কিতাব নাযিল হয়েছে মানুষের হেদায়েতের জন্য। অর্থাৎ মানুষের জীবন বিধান হিসেবে। কুরআন হচ্ছে আল্লাহর বিধান। সে কারণে কুরআনের কোনো বিধানকে অমান্য করার অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহকে অমান্য করা। আল কুরআনে যে কয়েকটি কিতাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো।
ক) তাওরাত : হযরত মুসা (আঃ)
খ) যবুর : হযরত দাউদ (আঃ)
গ) ইঞ্জিল : ইসা (আঃ)
ঘ) কুরআন : হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
খ) রাসূলগণ :
একথা বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। তবে একমাত্র শেষ নবীকেই মেনে চলতে হবে। প্রত্যেক জাতির মধ্যে নবী ছিলেন। কুরআনের ভাষণ অনুযায়ী দুনিয়ার এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে নবী প্রেরিত হননি। এমন কোনো জাতি নেই যাদের মধ্যে নবীর আবির্ভাব ঘটেনি। কুরআনে সকল নবীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। কয়েক জনের নামই উল্লেখ হয়েছে।
৩। আর আখেরাতের মধ্যে শামিল রয়েছে দুইটি :
ক) শেষ দিন
খ) মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন
ক) শেষ দিন :
যে দিন সব মানুষকে হাশরের ময়দানে একত্র করা হবে, সে দিনকেই আখিরাতের দিন বলা হয়েছে। সেখানে সব মানুষের বিচার হবে এবং ফয়সালা হবে যে, কে বেহেশতে যাবে, আর কে দোযখে যাবে।
খ) মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন :
মানুষের শরীরটা শুধু মরে। আসল মানুষ রূহ মরে না। কিয়ামতের পর সব মানুষকে হাশরের ময়দানে জমা করা হবে। দুনিয়ার কাজের হিসাব নেয়ার হবে এবং বিচারের পর বেহেশ কিংবা দোযখে পাঠিয়ে দেওয়া
৫। ইলম/ জ্ঞান অর্জন :
জ্ঞান অর্জন ফরজ সকল ফরজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কারন জ্ঞান ব্যতীত মহান আল্লাহকে চেনা যায় না এবং আল্লাহ কোন ইবাদত করা যায় না।
৫.১) কোরআন :
সূরা আলাকের ১নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “পড় তোমরা প্রতি পালকের নামে, যিনি সূষ্টি করেছেন ( সব কিছু)।”
৫.২) কোআন :
সূরা আর–রাহমানের ১নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “অতি বড় মেহেরবান (আল্লাহ) এ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন।”
৫.৩) কোরআন :
সূরা ত্বা–হার ১১৪ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “এবং বল, হে আমার প্রভু! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও”।
৫.৪) কোরআন :
সূরা আযযুমার ৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “বল যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি সমান হয়”।
৫.৫) কোরআন :
সূরা আল মুজাদিলার ১১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে এবং (ঈমানদারদের মধ্য থেকে) যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন”।
৫.৬) কোরআন :
সূরা ফাতিরের ২৮ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : আল্লাহকে একমাত্র তারাই ভয় করে যারা তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের জ্ঞান রাখে”।
৫.৭) কোরআন :
সূরা জুময়ার ৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “যাদেরকে তাওয়াত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সে গাধার মত, যে পুস্তক বহন করে( অথচ গাধা জানেনা পুস্তকের মধ্যে কি লিখা আছে।”
৫.৮) কোরআন :
সূরা জুমার ৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন : “বল,যারা জানে আর যারা জানেনা, তারা কি সমান হতে পারে?”
৫.১) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন : যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার জন্য কোন পথে চলে (এর বিনিময়ে) আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে যাবার পথ সজহ করে দেন।
৫.২। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন : যে ব্যক্তি হিদায়াতের দিকে আহবান করে সে ব্যক্তি (তার আহবানের ফলে) যারা হিদায়াতের পথে চলে তাদের সমান প্রতিদান পায়। এক্ষেত্রে হিদায়াতের পথ অবলম্বনকারীদের সওয়াবের কোন কমতি করা হয়না।
৫.৩। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন : মানুষ যখন মারা যায়, তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। তিনটি আমলের সওয়াব জারী থাকে : সাদকায়ে জারীয়া, এমন ইলম যা থেকে লাভবান হওয়া যায় এবং সুসন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।
৫.৪। হাদীস :
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন : কল্যাণ (দ্বীনে ইলম) কখনো মুমিনকে পরিতৃপ্ত করতে পারেনা, অবশেষে জান্নাতে এর পরিসমাপ্তি ঘটবে।
৫.৫) হাদীস :
হযরত আবু দারদা (রা🙂 হতে বর্ণিত। তিন বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেছেন : যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করার উদ্দেশ্যে পথ চলবে, আল্লাহ তা‘য়ালা তার বেশেতের পথ সহজ ও সুগম করে দেবেন। আর পেরেশতাগণ ইলম অর্জনকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজের পাখা বিছিয়ে দেয়। আলিম ব্যক্তির জন্য আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সকলেই মাগফিরাতের দু’আ করে, এমনকি পানির ভিতরের মাছও। আর আবিদের উপর আলিম ব্যক্তির মর্যাদা হচ্ছে সমগ্র তারাকাজীর উপর পূর্ণিমা রাত্রের চাঁদের যে মর্যদা। অবশ্য আলিমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী । আর নবীগণ তাঁদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে দিরহাম ও দীনার রেখে যাননি; তবে তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ইলম রেখে গেছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তা আহরণ করল সে ব্যক্তি বিপুল অংশ লাভ করল । (তিরমিযি)
৫.৬) হাদীস :
হযরত হাসান বসরী (রা🙂 হতে মুরসাল হিসেবে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেছেন : যে ব্যক্তির মৃত্যু এসে পৌঁছবে এ অবস্থায় যে, যখন সে ইসলামকে যিন্দা করার উদ্দেশ্যে ইলম অন্বেষণে ব্যস্ত ছিল, তার মধ্যে এবং নবীগণের মধ্যে জান্নাতে মাত্র একটি স্তরের পার্থক্য থাকবে। ( দারেমী)
৫.৭) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা🙂 হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেছেন : মহান আল্লাহর নিকট নামায, রোযা, হজ্ব ও আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়ে জ্ঞানার্জন হচ্ছে অধিক উত্তম। (দায়েলামী)
৫.৮) হাদীস :
হযরত আনাস (র্:া) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেছেন : জ্ঞানর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর–নারীর উপর ফরয। (ইবনে মাযা)
৫.৯) হাদীস :
হযরত আনাস (রা🙂 হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূল্ল্লুাহ (সা🙂 বলেছেন : যে ব্যক্তি দীনি ইলম অন্বেষণে (নিজ ঘর হতে) বের হয়েছে, সে পর্যন্ত না সে ( নিজ ঘর) প্রত্যার্বতন করবে সে পর্যন্ত আল্লাহ রাস্তায় থাকবে। (তিরমিযি, দারেমী)
৫.১০) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা🙂 হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা🙂 কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন : আল্লাহ তা‘য়ালা সে ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন, যে আমার কোন হাদীস শুনেছে, সেভাবেই তা অপরের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। কেননা অনেক সময় যাকে পৌঁছানো হয়, সে ব্যক্তি শ্রোতা অপেক্ষা অধিক রক্ষণাবেণকারী বা জ্ঞানী হয়ে থাকে। (তিরমিযি, ইবনে মাজা)
৫.১১) হাদীস :
হযর রাসূলে করীম (সা🙂 বলেছেন : আল্লাহ তা‘আলা ধন্য করবেন সেই ব্যক্তিকে, যে আমার নিকট হতে কোন কিছু শুনল এবং তা যেভাবে শুনল সেই ভাবেই অন্য লোকদের নিকট পৌঁছায়ে দিল। কেননা প্রথম শ্রোতার অপেক্ষা তা পরে যার নিকট পৌঁছায় সেই তার সংরক্ষণকারী হয়ে থাকে। (তিরমিযী)
আপর হাদীসে উল্লেখ আছে, ‘যারা মানুষকে ভাল কথা শিক্ষা দেয় তাদের জন্য আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাকুল এবং আসমান ও যমীনের অধিকাসীরা এমনকি পিপিলিকাসমূহ তাদের গর্তে, মৎসসমূহ পানিতে দু‘আ করতে থাকে।”
আলোচ্য হাদীসে ইলম অন্বেষণকারীর মর্যাদা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথমত : ইলম অন্বেষন করার উদ্দেশ্যে যে পথ চলবে, তাকে আল্লাহ জান্নাতে গমনের পথ সুগম করে দেবেন। কেননা জান্নাতে যেতে হলে নেক আমল করতে হবে। আর নেক আমল করার জন্য ইলম অর্জন করা জরুরী।
দ্বিতীয়ত : ইলম অন্বেষণকারীগণ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইলম শিক্ষার জন্য বের হয়, তাই তাদের মর্যাদায় ফেরেশতাগণ তাদের পাখা বিস্তার করে দেন। অর্থাৎ ইলম অন্বেষণকারীর সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
তৃতীয়ত : ইলম অন্বেষণকারীর জন্য গর্তের পিপিলিকা ও পানির মাছ পর্যন্ত দু‘আ করতে থাকে এবং সকলেই তার মাগফিরাত কামনা করে।
৫.১২) হাদীস :
হযরত আবু যর (রা🙂 থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা🙂 বলেছেন : হে আবু যর, তুমি যদি আল্লাহর কিতাব থেকে একটা আয়াত শেখ, তবে সেটা তোমার জন্য একশো রাকাত (নফল) নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর যদি তুমি ইসলামী জ্ঞানের একটা অধ্যায়ও মানুষকে শেখাও, তবে তা তোমার জন্য এক হাজার রাকাত নামায পড়ার চয়েও উত্তম, চাই তদনুসারে আমল করা হোক বা না হোক। (ইবনে মাজাহ)
৫.১৩) হাদীস :
হযরত আবদুল্লা ইবনে আমর আস (রা🙂 থেকে বর্ণিত। রসূলূল্লাহ (সা🙂 বলেছেন : আমরা নিকট থেকে একটি বাক্য পেলেও তা লোকদের কাছে পৌঁছে দাও।
৫.১৪) হাসীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেছেন : জ্ঞান মুমিনদের হাারানো সম্পদ। অতএব যে খানেই তা পওয়া যায় । মুমিনগণ তার সবচেয়ে হকদার (তিরমিযী ও ইবনে মাযা)।
৫.১৫) হাদীস :
হযরত আলী (রা🙂 হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলছেন : অচিরেই মানুষের নিকট এমন এক সময আসবে, যখন ইসলামের নাম ছাড়া আ কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা এবং কুরআনের শব্দগুলি ছাড়া আর কিছুই থাকবেনা। তাদের মসজিদগুলি লোকে পরিপূর্ণ থাকবে, অথচ ওর মুসল্লিরা সঠিক রাস্তা হতে বঞ্চিত থাকবে, আর তাদের আলিমগণ হবে আকাশের নীচে সর্বনিকৃষ্ট জীব। তাদের মধ্য হতেই ফিৎনা প্রকাশ পাবে এবং তাদের মধ্যেই প্রত্যাবর্তন করবে। (বায়হাকী)
৫.১৬) হাদীস :
রসূলে করীম (সা🙂 বলেছেন : আল্লাহ তা‘আলা সেই লোকদের মুখমন্ডল উজ্জল–উদ্ভাসিত করবেন, চির সবুঝ, চির তাজা করে রাখবেন, যে আমার কথা শুনিয়া মুখস্থ করে রাখবে কিংবা স্মৃতিপটে সংরক্ষিত রাখবে এবং অপর লোকের নিকট তা পৌঁছায়ে দিবে। জ্ঞানের বহু ধারকই প্রকৃত জ্ঞানী নহে, তবে জ্ঞানের বহু ধারক তা এম ব্যক্তির নিকট পৌঁছায়ে দেয় যে তার অপেক্ষা অধিক সমঝদার। (আবু দাউদ)
৬। ইবাদত
ইবাদত শব্দটির মূল হচ্ছে ‘আবদ’ থেকে– অর্থ গোলাম। গোলামের কাজ মনিবের নির্দেশ মেনে চলা। মনিবের নির্দেশ অমান্য করার এবং মনিবকে নির্দেশ করার কোন অধিকার গোলামের নাই। মানুষের মনিব হচ্ছে মহান আল্লাহ আর মানুষ হচ্ছে তাঁর গোলাম। আল্লাহ বিধান নিরংকুশ ভাবে মেনে চলাই মাবন সৃষ্টির উদ্দেশ্য। তাঁর কোন বিধান, অমান্য অস্বীকার ও লংঘন করার কোন অধিকার মানুষের নেই। মহান আল্লাহর বিধান, নির্দেশ ও নিয়ম কানুন মেনে চলার নামই হচ্ছে ইবাদত।
৬.১। কোরআন :
সূরা যারিয়াতের ৫২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “আমি মানব জাতি ও জিন জাতিকে শুধুমাত্র আমর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।
৬.১। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। একবার জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলো এবং বললো : হে আল্লাহর রাসূল। আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যা করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো। তিনি বললেন : আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে আর কোন কিছুকে শরীক করো না, নিয়মিত নামায পড়, ফরয যাকাত আদয় কর, এবং রমযানের রোযা রাখ।
৬.২। হাদীস :
হযরত আবু আইউব রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন : আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি জবাব দিলেন : আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে আর কোন কিছুকে শরীক করোনা, নিয়মিত নামায পড়, ফরয যাকাত আদয় কর এবং আতœীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার কর।
৭। মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য :
৭.১.১) কোরআন :
সূরা যারিয়াতের ৫২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “ওয়ামা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিয়াবদুন”। অর্থাৎ আমি মানব জাতি ও জিন জাতিকে শুধুমাত্র আমর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।
৭.১.২) কোরআন :
সূরা বাকারার ২১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : ইয়া আয়্যুহান্নাসু’বুদু রাব্বাকুমুল্লাজি খালাক্বাকুম ওয়াল্লাজিনা মিন ক্বাবলেকুম লা’আল্লাকুম তাত্তাকুন”। অর্থাৎ হে মাবন জাতি ইবাদাত করো তোমার রবের, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবার সৃষ্টিকর্তা, এভাবে তোমরা নি®কৃতি লাভের আশা করতে পারো।”
৭.১.৩) কোরআন :
সুরা বাকারার ৩০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেণ : “ আমি পৃথীতে খলীফা নিযুক্ত করতে চাই ।
৭.৪) কোরআন :
সূরা আন আমের ১৬৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “তিনি আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ায় প্রতিনিধি বানিয়েছেন।
৭.১.৫) কোরআন :
সূরা সাদের ২৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “হে দাউদ, আমরা তোমাকে দুনিয়ারয় আপন প্রতিনিধি বানিয়েছি। সুতরাং তুমি লোকদের ভেতর সত্য সহকারে শাসন কর এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করনা: কারণ এ তোমদের আল্লাহর পথে থেকে বিতচ্যুৎ করবে।
৭.১.৬) কোরআন :
সূরা আল ইমরানের ১১০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “ তোমাদেরকে উত্তম জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের কাজ হল : তোমরা মানুষদের সৎ পথে আবহবান করবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।
মানব জাতি সৃষ্টি করা হয়েছে এজন্য যে, মানুষ শুধু মাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে। তাঁর বিধান মোতাবেক চলবে এবং খেলাফতের দায়িত্ব পালন করে আল্লাহর বিধান আল্লাহর যমীনে জারী করবে। মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। নিজের ইচ্ছা মোতাবেক কোন কাজ করার মালিক নয় বরং প্রতিটি কাজেই আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক পালন করবে। মানুষ অন্যকে সৎ পথের দিকে ডাকবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।
৮। খলিফার দায়িত্ব ও কর্তব্য
৮.১) কোরআন :
সুরা বাকারার ৩০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেণ : “ আমি পৃথীতে খলীফা নিযুক্ত করতে চাই ।
৮.২) কুরআন :
সূরা আন আমের ১৬৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন :“তিনি আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ায় প্রতিনিধি বানিয়েছেন।
৮.৩) কোরআন :
সূরা সাদের ২৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “ হে দাউদ, আমরা তোমাকে দুনিয়ারয় আপন প্রতিনিধি বানিয়েছি। সুতরাং তুমি লোকদের ভেতর সত্য সহকারে শাসন কর এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করনা: কারণ এ তোমদের আল্লাহর পথে থেকে বিচ্যুৎ করবে।
দুনিয়াতে মানুষ আল্লাহর খলীফা। আল্লাহ তাআলা মানুষকে খলীফা হিসাবেই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। কিন্তু খলীফা হিসাবে মানুষের দায়িত্ব কী তা কমই চর্চা করা হয়। অথচ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাও অত্যন্ত প্রয়োজন। আল্লাহর খলিফা হিসাবে মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, এই পৃথিবীকে আল্লাহর মর্জি বা তাঁর বিধান মোতাবেক পরিচালনা করা। মানুষের সমাজে আল্লাহর দেয়া বিধান কায়েম করার দায়িত্ব আল্লাহপাক সরাসরি মানুষের উপরই ন্যাস্ত করেছেন। নবী রাসূলগণের আনীত হিদায়েত মানবজাতির কাছে পৌঁছে দেয়াই খলিকার দায়িত্ব। আর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করাই দায়াতের কাজ। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহর বিধান চালু করা খলিফার দায়িত্ব।
৯। নবী প্রেরণের উদ্দেশ্যে
মহান আল্লাহ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব জাতীর নিকট তাঁর হুকুম–আহকাম বিধান ও হিদায়েত পৌঁছান, তাকে রিসালত বলা হয়। যারা মানুষের নিকট হিদায়েত পৌছান তাদেরকে বলা হয়, রাসূল, নবী বা পয়গাম্বর। মানব জাতীর নিকট প্রত্যেক জাতীর মধ্যে নবী এসেছেন পবিত্র কুরআনে ২৫ (পঁচিশ) জন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
৯.১) কোরআন :
সূরা আল–আহযাবের ৪৫–৪৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “ হে নবী ! আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি স্বাক্ষী স্বরূপ, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকরী হিসেবে এবং আল্লাহর অনুমতি ক্রমে তাঁর প্রতি আহবানকারী ও উজ্জ্বল প্রদ্বীপ হিসেবে।”
৭.২) কোরআন :
সূরা আল নাহলেন ৩৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “ আমি প্রত্যেক জাতীর নিকট রসূল প্রেরণ করেছি, তাঁরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিয়েছেন এবং তাগুতী শক্তিকে বর্জন করতে বলেছেন।”
৯.৩) কোরআন :
সূরা আরাফ–৫৯,৬৫,৭২,৮৫ ও সূরা হুদ ৬১,৮২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “হে জাতীর লোকেরা, আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তেমাদের আর কোন ইলাহ নেই।”
৯.৪) কোরআন :
সূরা হাশরের ৫৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : “রসুল তোমাদের যা করতে বলেছেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন কর।”
৯.৫) কোরআন :
সূরা আল ফাতাহ–এর ২৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন :“তিনি সে মহান সত্তা, যিনি তাঁর রসূলকে পথ–নির্দেশ (আল–কুরআন) ও সত্য দ্বীন (আল–ইসলম) সহ পাঠিয়েছেন। যাতে একে অন্য সব মতবাদের উপর বিজয়ী করেন। এ কাজের জন্য আল্লহর স্বাক্ষী যথেষ্ট।”
ব্যাখা–সূরা আত–তাওবার ৩৩ নং আয়াত, সূরা আল–ফাতহ–এর ২৮নং আয়াত ও সূলা আসসাফফের ৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে যে, আল্লাহর বিধানকে বিজয়ী করার দায়িত্ব দিয়েই তিনি রসূল (সা🙂 কে পাঠিয়েছেন। সকল নবীরাই আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর বিধান মেনে চলার দাওয়াত দিয়েছেন। এবং বাতিল শক্তি ও ব্যবস্থাকে পরিত্যাগ করতে বলেছেন। সকল বাতিল ব্যবস্থা, আইন, নিয়ম–কানুন অকেজো করে দিয়ে আল্লাহর দেয়া ব্যবস্থা ও বিধি–বিধান কায়েম করা ও বিজয়ী করে দেয়াই নবীদের উদ্দেশ্য। তাই সকল নবীরাই আল্লাহর দ্বীন, জীবন বিধানকে দেশে বিজয়ী করার জন্য বাতিল শক্তির সাথে মোকাবেলা করেছেন।
মানুষের জন্যই এসেছে আল্লাহর বিধান। মানুষের কাছে এটি পৌঁছানো ছিলো রসূলের (সা🙂 কর্তব্য। যুগপৎ এই কর্তব্য বর্তায় তাঁর প্রতি ঈমান পোষণকারী প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর।
১০। মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ না করা
১০.১) “ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানুত্তাকুল্লাহা হাক্কাতুক্কাতিহি ওয়ালা তামুতুন্না ইল্লা ওয়ানতুম মুসলিমুন।”
অর্থাৎ হে মুমিনগণ ? তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যেমন ভয় করা উচিৎ এবং পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ( মুসলমাল) না করে মৃত্যু বরণ করো না।
১০.২) “ওয়ামন আহসানু ক্বাওলাম মিম্মান দাআ’ইল্লালাহি ওয়ামিলাচ্ছালিহাও ওয়াক্বালা ইন্নানি মিনাল মুসলিমিনা।” (সূরা হা– মিম আসসেজদা)
অর্থাৎ সেই ব্যক্তির চেয়ে আর কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎকাজ করলো এবং ঘোষণা দিল আমি মুসলমান।
১০.৩) “ইন্নাল্লা হাসত্বফা লাকুমুদ্দিনা ফালা তামুতুন্না ইল্লা ওয়ানতুম মুসিলিমুন।” (সূরা
অর্থাৎ হে আমার সন্তানগণ! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দ্বীনকে মনোনীত (পঁছন্দ) করেছেন। সুতরাং তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যু বরণ করো না।
১০.৪)। “লা শারিকালাহু অবিযালিকা উমিরতু ওয়াআনা আউয়ালু মুসলিমুন।”
অর্থাৎ তার কোন শরীক নেই। আমাকে এরই হুকুম দেওয়া হয়েছে। আর সবচেয়ে পয়লা আমি আতœসমর্পনকারী অর্থাৎ মুসলমান।
১১। রাতের নামায/তাহাজ্জুদের নামায
১১.১) কোরআন :
মহান আল্লাহ বলেন : তোমরা রাত্রি বেলা তাহাজ্জুদ পড়। এটা তোমার জন্য নফল। এটা অসম্ভব নয় যে, তোমার মাবুদ তোমাকে মাকামে মাহমুদে সুপ্রতিষ্ঠিত করে দিবেন। (সূলা ইসরা–৭৯)
১১.১) হাদীস :
(তাহাজ্জুদ নামাযে) রাত্র জাগরন তোমাদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য কিন না তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার বান্দাদের অনুসৃত তরীকা । তোমাদের পরোয়ারদেরগারের নৈকট্য লাভের মাধ্যম। গোনাহ মাফের উপায় এবং গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার পথ। (তিরমিযী)
১১.২) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা🙂 কে বলতে শুনেছি যে, ফরজের পর সর্বাপেক্ষা উত্তম নামায হল রাত্রির নামায। অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামায। (আহমেদ)
১১.৩) হাদীস :
হযরত মাসরুক বলেন : আমি আয়েশা (রা🙂 কে রাসূলুল্লাহ (সা🙂 এর রাতের নামায সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন : ফযরের দু’রাকা’আত ব্যতীত তা সাত, নয় ও এগার রাকা’আত ছিল। (বিতরে পড়তে তাই বেজোড় হত)। (বুখারী)
১১.৪) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে ্এমন এক ব্যক্তির প্রসংগ উঙ্খাপিত হলো যে এক রাতে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়েছিলো। তিনি বললেন : সে এমন এক ব্যক্তি যার দুই কানে – অথবা বলেছিল এক কানে শয়তান পেশাব করে দিয়েছে।
১১৪.৫) হাদীস :
হযরত আলী রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ও ফাতিমার কাছে রাতে আসেন এবং বলেন : তোমরা কি রাতের নামায (অর্থাৎ তাহজ্জুদ) পড়না ?
১১.৬) হাদীস :
হযরত ইবনে আব্বস রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ত বলেছেন : আমার উম্মতের শ্রেষ্ঠ লোক তারা যারা কুরআনের বাহক এবং রাত্রি জাগরণকারী । (বায়হাকী)
১১.৭) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে লোক সকল? বেশি করে সালম দাও, ক্ষুধার্তকে খেতে দাও, আতœীয়তা রক্ষা কর, রাতে নামায পড় লোক যখন ঘুমায়, এবং নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ কর।
১২। রমযানে রাতে নামায পড়লে কি লাভ হবে ?
১২.১) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : রমযানের প্রথম রাত্রি যখন আসে, তখনই আসমানের সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হয় এবং রমযানের শেষ রাত্র (থাকা) পর্যন্ত উহা খোলা থাকে এবং রমযানের রাত্রিতে কোন মুমিন বান্দা খাঁটিভাবে কিছু নামাজ পড়লে উহার প্রত্যেক রাকাতের বদলে তাকে আড়াইগুন সওয়াব দেওয়া হবে এবং তার জন্য বেহেশতে লাল ইয়াকুত পাথর দ্বারা এমন একটি অট্টালিকা নির্মিত হবে, যার ৬০টি দরজা এবং প্রত্যেক দরজার সামনের ইয়াকুত দ্বারা সুসজ্জিত একটি স্বর্নের কক্ষ থাকবে।
১২.২) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : রমযানের দিনের বা রাতে মুমিন বান্দা যে সকল নামাজ পড়ে, তার প্রত্যেক রাকাতের বরকতে বেহেশতের মধ্যে তার জন্য বিরাট একটি বৃক্ষ জম্মে যার ছায়ায় সোয়া পাঁচশত বছর পর্যন্ত ভ্রমন করা যাবে।
১২.৩) হাদীস :
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্র্ণিত হযরত (সা:) এরশাদ করছেন : রমাযানের প্রথম রাতে বেহেশতের সকল দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। যদি কোন মোমেন পুরুষ বা মহিলা এই রাতে নামাজ পড়ে তবে প্রত্যেক সেজদাহর পরিবর্তে এক হাজার সাতশত পূণ্য দান করা হয়। আর তার জন্য লাল ইয়াকুত দ্বারা বেহেশতে প্রাসাদ তৈরী করা হবে। প্রত্যেক প্রাসাদের স্বর্ণের তৈরী সত্তর হাজার দরজা থাকবে। দরজাগুলো ইয়াকুত দ্বারা সুসজ্জিত করা হবে।
১২.৪) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন কোন বান্দাহ রমযানের প্রথম রোজা রাখে–আল্লাহ রমযানের শেষ পর্যন্ত তার সমস্ত গুনা ক্ষমা করে দেন। প্রত্যেকটি রোযার পরির্বতে সত্তর হাজার দরজা বিশিষ্ট একটি প্রাসাদ তার জন্য তৈরী করা হয়। সকাল হতে সন্ধা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। রাতে–দিনে যত সিজদাহ করে উহার প্রত্যেক সিজদার পরির্বতে এমন একটি গাছ দান করা হবে, যার ছায়ায় কোন অশ্বরোহী শত বছর অর্শ¦ পরিচালনা করলেও সেই ছায়ার প্রান্ত সীমায় পৌঁছতে পারবে না।
১৩। এশরাকের নামায
১৩.১) হাদীস :
একদিন রাসূলুল্লাহ (সা🙂 সাহাবাদের সাথে বসে কথাবার্তা বলছিলেন। কথাবার্তা বলার সময় তিনি বললেন : সূর্য কিছুটা উপরে উঠলে কেউ তখন ওযু করে দুই রাকাত নামায পড়বে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং সে এমন নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেনো সবেমাত্র মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে।
১৩.২) হাদীস :
ফজরের নামায আদায় করে ধ্যানে বসে থেকে সূর্য উদয়ের পর ৪রাক’আত ইশরাকের নামায পড়লে একটি হজ্জ্ব ও একটি ওমরার সওয়াব পাওয়া যাবে। আল্লাহ পাক তার ঐ দিনের যাবতীয় নেক মকসুদ পূর্ণ করে দেন এবং তার জন্যে জান্নাতে ৭০ টি বালাখালা নির্মান করার আদেশ দিয়ে থাকেন।
১৩.৩) হাদীস :
যে ব্যক্তি ইশরাকের ১২ রাক’আত নামায পড়বে আল্লাহপাক তার জন্য জান্নাতে সোনার মহল তৈরী করে দিবেন। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
১৩.৪) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেছেন : যে ব্যক্তি জোহারের দু’রাকা’আত নামায সংরক্ষণ করবে, তার পাপরাশী মাফ করে দেয়া হয় যদিও উহা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়। (আহমদ, তিরমিযী)
সূর্য উদয় হতে সূর্য স্থির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়কে জোহা বলে। সকালে বেলা উঠার পর নামায পড়লে এশরাক বলে। আর বেলা স্থির হওয়ার পূর্বে পড়লে চাশত বলে।
১৩.৫) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 নবী (সা🙂 থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির জোড়াগুলোর ওপর সাদকা ওয়াজিব। কাজেই প্রত্যেক বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা সাদকা হিসেবে বিবেচিত, প্রত্যেক বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা সাদকা হিসেবে বিবেচিত, প্রত্যেক বার ‘লা–ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা সাদকা হিসেবে বিবেচিত এবং প্রত্যেকবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলা সাদকা হিসেবে বিবেচিত। আর ‘সৎকাজের আদেশ করা” সদকা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং ‘আসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা’ সাদকা হিসেবে বিবেচিত হবে। আর এসবের মুকাবিলায় চাশতের যে দু’রাকা’আত নামায পড়া হবে তা যথেষ্ট বিবেচিত হবে।
১৪। আউয়াবীনের নামায
১) হাদীস :
হাদীস শরীফে আছে যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ৬ রাকা’আত আউয়াবীন নামায পড়বে সে রাতে নফল নাময ও দিনে রোযা রাখাসহ ১২ বছরের ইবাদত করার সমান সওয়াব লাভ করবে।
২) হাদীস :
যে ব্যক্তি মাগরিবের নামায পড়ার পর ৬ রাকা’আত নফল নামায পড়ে সে ব্যক্তি ১২ বছর ইবাদত করার সওয়াব পায়। অবশ্যই যদি সে উক্ত নামাযের মাঝে কোন বাজে কথা না বলে থাকে। (ইবনে মাজাহ)
আউয়াবীনের নামায নফল। তা মোট ৬ রাকা’আত। দু’দু’ রাকা’আত করে আদায় করতে হয়। মাগরিবের সুন্নাতের পর এশার পূর্ব পর্যন্ত এই নামাযের সময় । তা উর্ধ্বে ২০ রাকা’আত পর্যন্ত পড়া যায়।
১৫) লাইলাতুল ক্বদরের রাতে ইবাদাত করলে কি লাভ হবে ?
মহান আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিটি রাত ও দিন মানবজাতির অগনিত কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত। কিন্তু শবে–ক্বদর, শবে বরাত, শবে মিরাজ, শবে ঈদ, জুমাতুল বিদা, জুমার দিন ঈদের দিন, হজ্বের দিন, রোজার দিন এমনকি আরাফাতের রজনী মানবজাতির বিশেষ আশা আকাঙ্খার দিন ও রাত। এদের মধ্যে শবে–ক্বদর সর্বপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় রাত্রি।
নবি করীম (সা🙂 বলেছেন সব রাতের মধ্যে শবে–ক্বদরের রাতই সর্বোত্তম।
অন্য কোন রাত ক্বদরের রাতের সমতুল্য হতে পারে না। এমনকি ৩৬৪/৩৬৫ রাত একত্র হয়েও এ রাতের সাথে কোন প্রতিযোগিতা ও প্রতিন্দ্বিতা করতে পারে না। ক্বদরের রাতটি হলো সমস্ত রাতগুলো রাজা। আকাশের তারকারাজির উপর পূর্ণচন্দ্রের যেরূপ প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে এ রূপ সমস্ত রাতের উপরে ক্বদরের রাতের প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।
লাইলাতুল ক্বদর :
লাইলাতুল ক্বদর আরবী শব্দ। লাইলাতুল ক্বদরের মধ্যে দু’টি শব্দ আছে :
১) লাইলাতুন
২) ক্বদর
আরবীতে রাতকে লাইলাতুন বলে। আর ক্বদর শব্দের আভিধানিক অর্থ দু’টি।
১) নির্ধারন করা, সিদ্ধান্ত করা, বন্টন করা অর্থাৎ তকদীর বা ভাগ্যরজনীর রাত।
এই মোবারক রজনীতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারন করা হয়। আগত এক বছর প্রতিটি মানুষের জীবনে যা কিছু ঘটবে, যা কিছু ভোগ করবে, যা কিছু থেকে বঞ্চিত হবে ইত্যাদি সব কিছু ক্বদর রাতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এই জন্য রাতটিকে ভাগ্য রজনী বলা হয়।
১। কোনআন :
বরকতময় রাতে প্রত্যেকটি হেকমতপূর্ণ হুকুম ফায়সাল কর হয় আমার নিকট থেকে। ( সূরা দুখানÑ৩ ও ৪)।
২। কোরআন :
ক্বদরের রাতে ফেরেশতাসমূহ এবং জিবরাঈল তাদের প্রভূর অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে নাযিল হন। (সুলা আল–ক্বদর–৪)
১। হাদীস :
হযরত ইমাম নাবাবী ও মোল্লা আলী কারী, মুজতাহিদ আলেমগণ বলেছেন এ রাতকে ক্বদরের রাত (নির্ধারণ করার রাত) বলে এজন্য নাম রাখা হয়েছে। এ রাতে এক বছরের বিভিন্ন রিযিক, ভাগ্যসমূহ, যত সন্তান পয়দা হবে, যত মানুষ মারা যাবে এ রাতে ফেরেশতাদের দ্বারা লেখানো হয়।
২। হাদীস :
ইমাম শাওকানী (র🙂 বলেন : লাইলাতুল ক্বদর (নির্ধারণ করার রাত) বলে নাম রাখা হয়েছে এ জন্য যে, এ রাতে আল্লাহ তায়ালা আগামীতে এক বছর পর্যন্ত তাঁর হুকুমগুলো থেকে যা ইচ্ছা নির্ধারণ করেন।
৩। হাদীস :
আল্লামা কুতুবুদ্দীন সাহজাহান আবাদী বলেন, এ রাতকে লাইলাতুল ক্বদর এ জন্য বলে যে, পূর্ণ এক বছরের রিযিক, যত সন্তান পয়দা হবে এবং যত মানুষ মারা যাবে এ হুকুমগুলো এ রাতে লেখা হয়। (সিদ্ধান্ত করা হয়)
সমস্ত মুফাস্সীরিন বলেন হেকমতপূর্ণ হুকুমগুলো হলো এক বছরে যত সন্তান পয়দা হবে, যত মানুষ মারা যাবে, বিভিন্ন রিযিক এবং গুরুত্বপূর্ণ হুকুমগুলো ক্বদরের রাতে সিদ্ধান্ত হয়ে জারি করা হয়।
৪। হাদীস :
সম্মান মর্যাদা অর্থাৎ সম্মানিত রাত্রি। হাজার মাসের চেয়েও অধিক মর্যাদা ও তাৎপর্যপূর্ণ এই রাত। এই রাতেই আল্লাহ তা’আলা লওহে মাহফুয থেকে প্রথম অকাশে কোরআন নাযিল করেছেন। এর পর ২৩ বছরে জিবরাঈল (আ🙂 এ মাধ্যমে নবী করীম (সা🙂 এর উপর পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।
১। কোরআন :
ক্বদরের রাতটি হাজার মাস থেকে উত্তম। এ রাতে ফেরেশতগণ এবং জিবরাঈল তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হন। রাতটি সুবহে সাদেক পযর্ন্ত শান্তি বর্ষিত হতে থাকে। (সূরা ক্বদর–৪)
২। কোরআন :
বরকতময় রাতে প্রত্যেকটি হেকমতপূর্ণ হুকুম ফায়সাল করা হয় আমার নিকট থেকে। (সূরা দুখানÑ৩ ও ৪)।
১) হাদীস :
এ রাতের বিরাট সম্মান ও মর্যদার কারণে এ রাতকে লাইলাতুল ক্বদর (সম্মানিত রাত) বলে নাম রাখা হয়েছে। (মুসলিম ১ম খন্ড পৃ: ৩৬৯ মিরকাত চতুর্থ খন্ড পৃঃ৩১৩)
২। হাদীস :
লাইলাতুল ক্বদর (সম্মানিত রাত) বলে নাম রাখা হয়েছে এ রাতের বিরাট সম্মান ও মর্যাদার জন্য। (ফাতহুল কাদীর,৫ম খন্ড, পৃঃ৪৭১–৪৭২)
৩। হাদীস :
এ রাতের বিরাট সম্মান হওয়ার কারণে এ রাতকে লাইলাতুল ক্বদর (সম্মানিত রাত) নাম রাখা হয়েছে। (মাজাহেরে ্হক, দ্বিতীয় খন্ড,পৃ: ১৮৬)
কোরআন নাযিল :
১)কোরআন :
রমযান সেই মাস, যে মাসে নাযিল করা হয়েছে কুরআন। (যা মানুষের জন্য হেদায়েত তথা পথ প্রদর্শনকারী এবং পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ। আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী) । (সূরা আল–বাকারা–১৮৫)
২। কোরআন :
আমি কোরআনকে বরকতময় রাতে নাযিল করেছি। (সূরা দুখান–৩)
৩। কোরআন :
আমি কুরআন শরীফকে ক্বদরের রাতে নাাযিল করেছি। (সূরা–ক্বদর–১)
শবে ক্বদরের গুরুত্ব ও মর্যাদা
১। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা:) বলেন : যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশা নিয়ে লাইলাতুল ক্বদের কিয়াম (রাত জেগে ইবাদাত) পালন করে তার বিগত জীবনের সমস্ত গোণাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
২) হাদীস :
নবী করীম (সা:) বলেছেন যে ব্যক্তি ক্বদরের রাত্রি পাবে, আল্লাহ তায়ালা তার উপর জাহান্নামের অগ্নি হারাম করে দিবেন এবং সমস্ত অভাব পূরণ করে দিবেন।
৩) হাদীস :
হযরত ওবাদাহ থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : যে ক্বদরের রাত্রের অন্বেষণে সেই রাতে নামায পড়ে এবং তা পেয়ে যায়। তার অতীতের ও ভবিষ্যতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
৪) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : যে রমযানে এশার নামায জামাআত সহকারে আদায় করে সে কদরের রাতে ফযীলত লাভ করে। (আবুশ শেখ ইসপাহানী)
৫) হাদীস :
নবী করীম (সা:) বলেছেন এ রাত হাজার মাস থেকে উত্তম। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা:) নিজে উম্মতের কাছে বনী ইসরাইলদের মধ্যে খুব বড় আবেদ হযরত শামাউন (আ:) একটি ঘটনা বলেছিলেন : শামাউন (আ:) দিবসে জিহাদ করতেন আর সারারাতে ইবাদাতে মুশগুল থাকতেন। এক হাজার মাস ধরে তিনি তার এ সাধনায় রত থাকেন। একথা শুনে সাহাবা কেরাম আক্ষেপ করে বললেন হে, রাসূলুল্লাহ আপনার উম্মতের হায়াত এরূপ দীর্ঘ হবেনা তা নইলে তারাও ইবাদত করতে পারতো। হযরত চিন্তিত হলেন এবং তার পরই সূরা ক্বদরের এই আয়াত নাযিল হলো। অর্থাৎ তোমর উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদাত করবে তাকে হাজার মাসের ইবাদাতের চাইতেও বেশী সওয়াব দান করব।
আরেকটি বর্ণনায় পাওয়া যায: সাহাবাগণ আল্লাহর রাসূলের কাছে গেলেন, বললেন আগের কালের মানুষ বহু বছর বেঁচেছে। নূহ (আ:) নয়শত বছর বেচেছিলেন। তারা দীর্ঘ জীবনে আখেরাতের জন্য কত পূণ্য সঞ্চয় করেছেন। আমরা আমাদের সংক্ষিপ্ত জীবনে অনন্তকাল আখেরাতের জন্য কতটুকু পূণ্য সঞ্চয় করতে পারব ? তখন আল্লাহর রাসূল ( সা:) বললেন, তোমাদের জন্য শবে ক্বদর রয়েছে। সাহাবীরা খুশী হয়ে চলে গেল।
৬) হাদীস :
নবী করীম (সা:) বলেছেন জিবরাঈল (আ:) এর এশত ডানা (পাখা) আছে, সেগুলোর মধ্যে এমন দুইটি ডানা আছে যা তিনি ক্বদরের রাতে বিস্তৃত করেন এবং তা পূর্বপ্রান্ত হতে পশ্চিম প্রান্ত ছড়িয়ে পড়ে। এর পর তিনি ফেরেশতাদেরকে উদ্ভুদ্ধ করতে থাকেন। ফেরেশতাগণ ঐ সমস্ত লোককে সালাম করতে থাকেন যারা দাড়িঁয়ে বসে ইবাদাত করে আর যারা নামায পড়ে এবং যারা আল্লাহর স্মরণ করে। তারা তাদের সাথে করমদন করে এবং তাদের দোয়ায়ও শামিল হয়ে আমীন বলতে তাকে ফযর উদয় হওয়া পর্যন্ত। অতপর ফযর হলে জিবরাঈল (আ:) উচ্চস্বরে বলেন, হে ফেরেশতাগণ চল, চল। তখন ফেরেশতাগন বলে, হে জিবরাঈল! আহমাদ (সা:) এর মু’মিন উম্মতের আশা–আকাংখাও প্রয়োজনগুলো সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা কি করেছেন? উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা এ রাতে তাদের প্রতি সুদৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন এবং তাদেরকে সম্পুর্ণ রূপে ক্ষমা করেছেন।
কিন্তু চার শ্রেণীকে ক্ষমা করেণি। (একথা শুনে সাহাবীগণ বলেন) হে আল্লাহর রাসূল! সে চার শ্রেণী কারা ? মহানবী (সা:) বলেন :
১। শরাব খোর
২। মাতা পিতার অবাধ্যাচারী নাফরমানকারী
৩। আতœীয়ের সাথে সম্পর্কচ্ছেদকারী
৪। অপরের প্রতি হিংসা–বিদ্বেষ ও শক্রতা পোষণকারী
৭) হাদীস :
প্রিয় নবী (সা🙂 বলেছেন, হে আমার উম্মতেরা! তোমরা রমজান মাসে চারটি আমল অধিক পরিমাণে কর। তম্মধ্যে দুটি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। আর দুটি যা না হলে তোমাদের উপায়ন্তর নেই। প্রথম দুটি হলো এক) কালেমা তাইয়্যিবাহ এবং দুই) এস্তেগফার বেশি বেশি করে পড়া। আর শেষ দুটি হলো তিন) আল্লাহর কাচে বেহেস্ত চাও এবং চার) দোযখ থেকে মুক্তি চাও।
রহমত ও মাগফিরাতের দশক অতিবাহিত করে আমরা এখন শেষ তথা নাজাতের দশকে রয়েছি। এই মুহূর্তে আমাদের কায়োমনবাক্যে আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য কান্নাকাটি করতে হবে। অতীত অপরাধের কথা স্মরণ করে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হতে হবে। জাহান্নাম কতই না ভয়ংকর জায়গা, এর অধিবাসীদের যে কত কঠোর শাস্তি দেয়া হবে তা চিন্তা করলে বুদ্ধিমান মানুষের পক্ষে স্থির থাকা সম্ভব নয়। জাহান্নামে যেন আমাদের প্রবেশ করেত না হয় এজন্য প্রিয় নবী (সা🙂 বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনকে আল্লাহর কাছে নাজাত চাও এবং জান্নাতের প্রত্যাশা কর। রমজানের প্রথম দশদিন ইবাদাদের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর রহমতের সীমাহীন সাগরে বিচরণ করবে। দ্বিতীয় দশকে বন্দেগী করে তার ক্ষমা লাভে নিজেকে ধন্য করবে এবং শেষ দশ দিনে ইবাদতের মাধ্যমে রহমত ও মাগফিরাতকে পূঁিজ করে আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাইবে। হিংসা–বিদ্বেষ, রিয়া, লৌকিকতা পরিহার করে একগ্রচিত্তে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে নিঃসন্দেহে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করবেন। জাহান্নাম থেকে নাজাত দেবেন। তাছাড়া রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর গোপন রয়েছে। অতএব এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর সময় এখই। নাজাত লাভের সর্বোত্তম সুযোগ আমরা পার করছি। কোনো রোজাদারই যেন এই সুবর্ণ সুযোগ না হারায়।
ক্বদরের রাতের দোয়া :
১) হাদীস :
হযরত আয়েশা (রা🙂 বর্ণনা করেন, আমি রাসূলূল্লাহ (সা🙂 এর কাছে আরয করলাম, কোন রাত্রিটি শবে–ক্বদর তা যতি আমি জানতে পারি, তবে সে রাত্রিতে আমি আল্লাহ তা’আলার দরবারে কি আরয করব এবং কি দোয়া করব ? তিনি বললেন, এ আরযী পেশ করবে।
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ‘ফুউন তুহ্বিবুল আ’ফওয়া ফাফু আ’ন্না।
অর্থ– হে আল্লাহ তুমিক্ষমাশলি, ক্ষমাকে তুমি পঁছন্দ কর, কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ‘ফুউন কারিমুন তুহ্বিবুল আ’ফওয়া ফাফু আ’ন্না।
অর্থ– হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল, পারম দয়াময়, ক্ষমাকে তুমি পঁছন্দ কর, কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
লাইলাতুল ক্বদেরর সংঘঠিত ঘটনাবলী :
১। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে পয়দা করেন।
২। এ রাতে বেহেশতের মধ্যে বৃক্ষসমূহ রোপন করা হয়।
৩। এ রাতে হযর আদম (আ🙂 এর মূল ও উপদানসমূহ একত্রি করা হয়।
৪। এ রাতে কুরআন শরীফ নাযিল করা হয়।
৫। এ রাতে আল্লাহ প্রদত্ত খেলাফত মহানবী (সা🙂 এর হাতে সোর্পদ করা হয়।
৬। কিয়মত পর্যন্ত প্রতি বছর এ রাতেই মানুষের ভাগ্য বন্টন হতে থাকে।
৭। এ রাতের নাম আল্লাহ তা’আলা লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল মোবারাকাহ রেখেছেন।
৮। এ রাতের ফযীলত ও মর্তবা এ হাজার মাস থেকে উত্তম বলে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন।
৯। এ রাতে অসংখ্য ফেরেশতা ও জিবরাঈল (আ🙂 নাযিল হওয়ার কথা আল্লাহ নিজেই বলেছেন।
১০। এ রাতে আল্লাহ খাছ রহমতের ভান্ডার সূর্যাস্ত থেকে আরম্ভ হয়ে সুবহে সাদেক পর্যন্ত সর্বত্র বর্ষিত হতে থাকে।
১১। আগামী এক বছরের রিযিক, আহকাম, যত মানব সন্তান পয়দা হবে ও যত মানুষ মারা যাবে তা এ রাতে নির্ধারণ করা হয়।
১২। রাতে অসংখ্য ফেরেশতা ও জিবরাঈল (আ🙂 পৃথিবীতে এসে ইবাদতকারীদের সালাম ও করমদন করেন এবং তাদের দোয়ায় আমীন আমীন বলতে থাকেন।
১৩। এ রাতে একনিষ্ঠভাবে ইবদাতকারী মু’মিনদের পূর্বের সমস্ত পাপ ক্ষমা করা হয়।
১৪। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাহদের প্রতি সুদৃষ্টি নিক্ষেপ করেন।
শবে–ক্বদরের নামাযের নিয়্যত :
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাক’তায় ছালা–তিল লাইলাতুল ক্বদর (নফল) মোতাওয়াজ্জিহান, ইলা–জিহালতিল, কা’বাতিশ শরী–ফাতি– আল্লাহু আকবার।
১৬) কোরআন তেলাওয়াত করলে কি লাভ হবে ?
১) হাদীস :
হযরত আবু যর (রা🙂 থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা🙂 বলেছেন : হে আবু যর, তুমি যদি আল্লাহর কিতাব থেকে একটা আয়াত শেখ, তবে সেটা তোমার জন্য একশো রাকাত (নফল) নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর যদি তুমি ইসলামী জ্ঞানের একটা অধ্যায়ও মানুষকে শেখাও, তবে তা তোমার জন্য এক হাজার রাকাত নামায পড়ার চয়েও উত্তম, চাই তদনুসারে আমল করা হোক বা না হোক। (ইবনে মাজাহ)
২) হাদীস :
রাসূল (সা🙂 বলেন : যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কথা বলতে চায়, তবে সে যেন বেশী বেশী করে কুরআন তেলাওয়াত করে।
৩) হাদীস :
হযরত ইবনে উমর (রা🙂 বলেন, একদা রাসূল (সা🙂 বলেছেন : এই অন্তরসমূহের মরিচা ধরে, যেভাবে লোহায় মরিচা ধরে যখন উহাতে পানি লাগে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো : হে আল্লাহর রাসূল (সা🙂 উহার পরিশোধক কী? (উহার থেকে বাচাঁর উপায় কী?) তিনি বললেন: বেশী বেশী মৃতুৃর কথা স্মরণ করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করা। (বায়হাকী)
৪) হাদীস :
হযরত ইবনে উমার (রা🙂 থেকে বর্ণিত । রাসূল (সা🙂 বলেছেন : তিন ব্যক্তি কিয়ামাতের প্রাক্কালীন মহা আতংকে আতংকিত হবে না এবং তাদের কোন হিসাব দিতে হবে না, বরঞ্চ তারা সমস্ত সৃষ্টি জগতের হিসাব গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত একটা মস্কের পাহাড়ে থাকবে। (১) যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাড়লো এবং জনগনের সম্মতি নিয়ে কুরআনের বিধান অনুযায়ী তাদের নেতৃত্ব করলো, (২) যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষকে নামাযের দিকে ডাকে এবং (৩) যে ব্যক্তি আল্লাহর হক ও বান্দার হক সুষ্ঠুভাবে পালন করে। ( তাবরানী)
৫) হাদীস :
হযরত আবু সাঈদ (রা🙂 থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা🙂 বলেছেন : আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন অধ্যয়নে নিয়োজিত থাকায় আমার নিকট কিছু চাওয়ার সময় পায় না তাকে আমি ঐ ব্যক্তির চেয়ে শ্রেষ্ঠ নি’য়ামত দান করবো যে আমার কাছে চায়। কুরআন অধ্যয়নকারীর অন্তরের ইচ্ছাগুলো চাওয়া ছাড়াই পূরণ করে দেই। সমগ্র সৃষ্টির ওপর আল্লাহর যেমন শ্রেষ্ঠত্ব তেমনি দুনিয়ার অন্যসব বাণীর ওপর আল্লাহর কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব।” (তিরমিজি)
৬) হাদীস :
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “কুলহু ওয়াল্লাহু আহাদ” সর্ম্পকে বলেছেন : এ সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াশের সমান। (মুসলিম)
৭) হাদীস :
হযরত আবু আনাস (রা🙂 বর্ণনা করেছেন এক ব্যক্তি বলল : হে আল্লাহর রাসূল আমি কুলহুওয়াল্লাহুআহাদ সূরাটি ভালবাসি জবাবে তিনি বললেন: তোমার এই সূরাটির প্রতি ভাল বাসা তোমাকে অবশ্য বেহেশতে প্রবেশ করাবে। (তিরমিযি)
৮) হাদীস :
যে ব্যক্তি কুরআন পাক অধ্যায়ন করবে এবং তদনুযায়ী আমল করবে কেয়ামতের দিন তার পিতা–মাতাকে এমন মুকুট পরিধান করানো হবে যার জ্যোতি সূর্যের (আলো) জ্যোতির চেয়েও উজ্জল হবে।
৯) হাদীস :
যে ব্যক্তি কুরআন পাক অধ্যায়ন করবে (অর্থ ও ব্যাখাসহ জ্ঞান করবে) অর্থাৎ তদনুযায়ী জীবন গঠন করবে–উহার হালালকে হালাল জানবে, হারামকে হারাম জানবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন এবং তার পরিবার পরিজনদের ভেতর থেকে এমন দশজনকে (জান্নাতের জন্য) সুপারিশ করার ক্ষমতা দান করবেন যাদের প্রত্যেকের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হয়েছিল।
১০) হাদীস :
হযরত ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন : রোযা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে: যে আমার রব! আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত রেখেছি – তাই তার ব্যাপারে আমাকে সুপারিশ করার অনুমোতি দিন। আর কোরআন বলবে: হে আমার রব! আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আমাকে তার ব্যাপারে সুপারিশ করার অনুমতি দিন। তখন তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (বাইহাক্বী)
১১) হাদীস :
হযরত ওবাদাহ ইবনে সামেত (রা:) থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীসের এক অংশে বলা হয়েছে, “পবিত্র কুরআন কবরে তার সাথীর কাছে এসে বলবে, আমি রাত্রি জাগরণ ও দিনের পিপাসার্ত রেখেছি তোমাকে যৌন চাহিদা পূরণ করা থেকে বিরত রেখেছি এবং তোমার কান ও চোখকে সংযত রেখেছি। সুতরাং তুমি এখন আমাকে তোমার সত্যিকার বন্ধু হিসেবে পাবে। তার পর কুরআন উপরে উঠবে এবং বিছানা ও চাদর কামনা করবে, তখন তাকে বেহেশতের বিছানা, বাতি ও ইয়াসমিন ফুল দেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। তার পর কেবলার দিকে কোরআনকে ধাক্কা দিয়ে আল্লাহ যতটুকু চান ততটুকু কবরকে সম্প্রসারণ করবেন।
১২) হাদীস :
হযরত আলী (রা:) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে বলতে শুনেছি তিনি এই কাঠের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর আয়তুল কুরসি পড়বে তার বেহেশতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ব্যতীত আর কোন বাধা নেই। আর যে ব্যক্তি শয়ন কালে এই আয়াতুল কুরসি পড়বে আল্লাহ তা’আলা তার ঘর, তার প্রতিবেশীর ঘর এবং আশে পাশের আরও কিছু সংখ্যক ঘরকে নিরাপদে রাখবেন। (মেশকাতশরীফ ১ম খন্ড)
১৩) হাদীস :
সূরা হাশরের শেষাংশ প্রত্যেহ সকালে পাঠ করলে ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধা পর্যন্ত ও সন্ধায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত পাঠকারীর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন ও তার রক্ষনাবেক্ষন করেন। ফলে সকল প্রকার ফায়দা হাসিল হয়। যদি এ সময়ের মধ্যে সে মারা যায়। তবে শহীদি মর্তবা পাবে। এটি একটি উৎকৃষ্ট আমল। তিন বার আউযুবিল্লাহিচ্ছামিইল আলিম হিমিনাশ শায়তানির রাজীম ও একবার বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ করে উক্ত আয়াতটি পড়তে হয়।
১৪) হাদীস :
হযরত আনাস (রা🙂 থেকে বর্ণিত । রসূল (সা🙂 বলেছেন: মানুষের মধ্যে আল্লাহর কিছু আতœীয়–স্বজন রয়েছে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো: হে আল্লাহর রাসূল, তারা কারা ? তিনি বলেন : যারা কুরআনের ধারক–বাহক, তারাই আল্লাহর আতœীয় ও আপন জন। ( নাসায়ী, ইবরে মাজাহ ও হাকেম)
১৫) হাদীস :
হযরত আয়েশা (রা🙂 থেকে বর্ণিত। রাাসূল (সা🙂 বলছেন : কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত পুণ্যবান লেখক ফিরেশতাগণের সঙ্গী (মর্যাদার দিক দিয়ে তারা সম্মানিত ফিরেশতাগনের সমতুল্য) আর যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে মুকে আটকে যায়, বার বার ঠেকে যায় এবং উচ্চারণ করা বড়ই কঠিন বোধ করে তার জন্য দ্বিগুন সওয়াব। শুধু তিলাওয়াত করার জন্য একগুন আর কষ্ট করার জন্য আর একগুণ । (বুখারী ও মুসলিম)
১৬) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেছেন : যারা কোন জায়গায় একত্রি হয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকে তারা আল্লাহর মেহমান হয়ে যায়। ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে যতক্ষন পর্যন্ত তারা উঠে না যায় বা অন্য কাজে লিপ্ত না হয়। ততক্ষন যাবত ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখে।
১৭) হাদীস :
হযরত উবাই (রা🙂 বলেন, মসজিদে নববীতে আমরা বিভিন্ন মজলিসে বিভক্ত হয়ে দ্বীনের আলোচনা করাতাম, কেউ যিকের, কেউ দোয়া, কেউ কোরআন তেলাওয়াত কেউ কোরআন সর্ম্পকে আলোচনায় মশগুল থাকতাম। রাসূলুল্লাহ (সা🙂 হুযরা থেকে এসে কোরআনের মজলিসে বসে যেতেন। তিনি বলতেন আমাকে এই মজলিসে বসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
১৮। হাদীস :
হযরত আনাস রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : প্রত্যেক জিনিষের একটা কলব আছে। সূরা ইয়াসীন কুরআনের কলব। যে উহা একবার পড়বে আল্লাহ তার জন্য দশবার কুরআন পড়ার সওয়াব নির্ধারণ করবেন। (তিরযিী)
১৯। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কুরআনের ত্রিশ আয়াতে একটি সুরা (সূরা মুলক) আছে, যা এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করেছে। ফলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়েছে। সূরাটি হচ্ছে তাবারা কাল্লাজি বেইয়াদিহীল মুলক। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)
২০। হাদীস :
হযরত ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সূরা ইয়া যুলযিলাত কুরআনের অর্ধেকের সমান, কুল হুয়াল্লাহু আহাদ এক–তৃতীয়াশের সমান এবং কুল ইয়া আইউহাল কাফিরুন এক–চুর্তাথাংশের সমান । ( তিরমি
আয়তুল কুরসী পড়ার ফযীলত
১। হাসীস :
সহীহ বুখারীতে হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 এ ঘটনার উল্লেখ আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মসজিদে নববীতে সাদকায়ে ফিতর হিসেবে জমাকৃত খাদ্যশস্যের তত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেছেলেন। এই সময়ে এক ব্যক্তি পর পর দুই রাত সেখানে খাদ্যশস্যের স্তুুপের কাছে এসে মুঠি ভরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকলো। প্রতিবারই হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 তরিক হাতেনাতে পাকড়াও করলেন । কিন্তু নিজের চরম দরিদ্রদশার কথা বলে এবং পুনারাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে মুক্তিলাভ করলো।। তৃতীয় রাতে সে আবার আসলো। হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 তাকে পাকড়াও করে বললেন : এবার আমি তোমাকে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির না করে ছাড়ছি না। সে অনুনয় করে বললো, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কথা শিখিয়ে দিচ্ছি, যা তোমার জন্য খুবই কল্যাণকর হবে। হযরত আবু হুরায়রা কল্যাণকর কথার অনুরক্ত ছিলেন। তাই তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। সে বললো, রাতে যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করে দেয়া হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ ঘটনা শুনালে তিনি বললেন : সে নিজে মিথ্যাবাদী, কিন্তু তার এ কথাটা সত্য। তোমার সাথে যার কথা হয়েছে সে কে তা কি জানো? সে শয়তান।
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম, লা তা’খযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাউমু, লাহু–মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি, মানযাল্লাযী ইয়াস ফা’উ ইনদাহু ইল্লা বি‘ইযনিহি, ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালাফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইইম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা’-আ। ওয়াসিয়া কুরসিয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা, ওয়ালা ইয়া’উদুহু হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলীয়্যুল ‘আযীম”।
১. যে ব্যক্তি প্রভাতে ও শয়নকালে আয়তুল করছি পাঠ করবে, আল্লাহ পাক স্বয়ং দিবারাত্রির জন্য তার রক্ষক হবেন।
ক্স ১.আ্য়তুল কুরছি পাঠে জ্বীন, দেত্ত ,ভুত ও শয়তানের আছর হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
ক্স ১2.আয়তুল কুরছি পাঠের আমলে সকল প্রকার বিপদ আপদ ও দুংখ কষ্ট, দুর হয়। মনের বাসনা পূর্ণ হয়, রুজি রোজগার বৃদ্ধি পায়।
ক্স ১. কোন কাজে ওরয়ানা সময় বা বিদেশে যাওয়ার সময় তা পাঠ করে রওয়ানা দিলে নিরাপদে পৌঁছা যায় এবং সকফরের উদ্দেশ্যে সফল হয়।
ক্স ১. প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর আয়তুল কুরছি পাঠ করলে রূহ আরামের সাথে কবজ হয় এবং সহজে বেহশতে প্রবেশ করা সম্ভব হবে।
সূরা হাশরের শেষাংশ পড়ার ফযীলত
সূরা হাশরের শেষাংশ প্রত্যেহ সকালে পাঠ করলে ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধা পর্যন্ত ও সন্ধায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত পাঠ কারীর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন ও তার রক্ষনা বেক্ষন করেন। ফলে সকল প্রকার ফায়দা হাসিল হয়। যদি এ সময়ের মধ্যে সে মারা যায়, তবে শহীদি মর্তবা পাবে। এটি একটি উৎকৃষ্ট আমল। তিন বার আউযু বিল্লাহিচ্ছামিউল আলিম হিমিনাশ শায়তানির রাজীম ও একবার বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ করে উক্ত আয়াতটি পড়তে হয়ে।
“হুওয়াল্লা হুললাযী লা–ইলাহা ইল্লাহু আ’-লিমুল গাইবি ওয়াশশাহাদাতি হুওয়ার রাহমানুর রাহীম।
হুওয়াল্লা হুললাযী লা–ইলাহা ইল্লাহু আলমালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু‘মিনুল মুহাইমিনুল আযীযুল জ্বাব্বারুল মুতাক্বাব্বিরু; সুবহানাল্লাহি–আম্মা ইউশরিকুন।
হুয়াল্লা হুল মা–লিকুল বা–রিউল মুসাব্বিরু লাহুল আসমা–উল হুছনা; ইয়্যুসাব্বিহু লাহূ মা–ফিস্সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া হুওয়াল আযীযুল হাকীম”।
সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াতের ফযীলত :
১। হাদীস :
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। আবু মাসউদ আনসারী বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ঘুমানোর সময় যে ব্যক্তি সূরা বাকারার শেষ তিনটি আয়াত তিলাওয়াত করবে সেটি তার জন্য সব ব্যাপারেই যথেষ্ট হবে। কেউ কেউ এর অর্থ বুঝাচ্ছেন এই যে, এ আয়াতগুলির তিলাওয়াত করলে রাত জেগে ইবাদতের জন্যও যথেষ্ট হবে। কিন্তু এ অর্থটি একেবারেই ঠিক নয়। এ যথেষ্ট হওয়ার সঠিক অর্থ হলো, তা মানুষকে সব রকমের অকল্যাণ ও বিপদ থেকে নিরাপদ রাখবে।
হযরত আলী (রা🙂 বলেন : আমি মনে করি না, সূরা বাকারার শেষ তিনটি আয়াত না পড়ে কোন জ্ঞানী ব্যক্তি ঘুমাতে পারে।
২। হাদীস :
হযরর আবু মুসা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন : আমি কি তোমাকে জান্নাতের কোনো গুপ্ত ধনের কথা জানাবো না ? আমি বললাম : অবশ্যি জানান, হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন : (সে গুপ্তঘনটি হচ্ছে) লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ।
জিকির যেমন– আল্লাহকে স্মরণ করা বুঝায় তেমনি আল্লাহর আদেশ নিষেধ ও ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করাকেও বুঝায়। মোট কথা কোরআন হাদীস ও ইসলামী শরীয়ার যে কোন বিষয় সর্ম্পকে আলোচনা আল্লাহর জিকির বা স্মরণের অর্ন্তভুক্ত। কোরআনা হাদীস পড়া উত্তম যিকির।
সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত
লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্ধী; ওয়াইন তুবদূ মা ফি আনফুসিকুম আও তুখফুহু ইউহাসিবকুম বিহিল্লাহ; ফাইয়াগফিরু লিমাইয়াশাউ ওয়াইউ’আযযিবু মাইইয়াশাউ; ওয়াল্লাহু আল্লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। –২৮৪
আমানার রাসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহি মির বাব্বিহী ওয়াল মু’মিনুন; কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়ামালাইকাতিহি ওয়াকুতুবিহী ওয়া রসূলিহি; লানুফাররিকু বাইনা আহাদিম–মির রসূলিহি; ওয়া ক্বালু সামি’না ওয়াআত’¡না, গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছীর। –২৮৫
লাইয়্যুকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা; লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত; রাব্বানা লা তুআখিযনা ইন্নাসীনা আও আখতা’না; রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইছরান কামাহামালতাহু আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা; রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বক্বাতালানা বিহি, ওয়াফু আন্না, ওয়াগফিরলানা, ওয়ার হামনা, আনতা মাওলানা ফানছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরীন। –২৮৬
১৭) দাওয়াত/আল্লাহর দিকে আহ্বান
১। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 হতে বর্ণিত। রাসূল (সা🙂 বলেছেন : যে ব্যক্তি সত্যের দিকে ডাকে তার জন্য সত্যের অনুসারীদের বিনিময়ের সমান বিনিময় রয়েছে। এতে তাদের বিনিময় কিছু কম হবে না। আর যে ভ্রান্ত পথের দিকে আহবান করে, তার জন্য উক্ত পথের অনুসারীদের সমান পাপ হতে থাকবে। এদের মধ্যে তাদের অনুসারীদের পাপ কিছু মাত্র কম হবে না। (মুসলিম)
২। হাদীস :
আবু মাসউদ ওকবা ইবনের ওমর (রা🙂 হতে বর্ণিতি রাসূল (সা🙂 বলেছেন : যে ব্যক্তি সৎ পথ দেখাবে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে সে ব্যক্তির মত, যে সৎকাজটি করল। (মুসলিম)
৩। হাদীস :
হযরত হারেসুল আশয়ারী (রা🙂 হতে বর্ণিত রাসূল (সা🙂 বলেছেন : যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের (ইসলামী আদর্শ বিরোধী) নিয়ম–নীতির দিকে আহ্বান জানায়, সে জাহান্নামী হবে। যদিও সে রোজা রাখে, নামায পড়ে এবং নিজকে মুসলিম বলে দাবী করে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী)
হেদায়েতের প্রতি আবহান এর অর্থ হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা:)-এর পথে, কুরআনের পথে আহবান। এটা সত্যের পথ, সঠিক পথ। এপথ ছাড়া অণ্য পথে ডাকার কোন অধিকার কারও নেই।
আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথে মানুষকে ডাকবে সে ঠিক ঐ পরিমান পাপ কাজের গুনাহগার হবে, ভ্রান্ত পথে আহবানের কারণে তার আহবানকৃত ব্যক্তি যে পরিমান পাপ কাজ করবে।
আমাদের করণীয় –
ক্স আল্লাহর দিকে দাওয়াত দান করা ফরয।
ক্স হিকমতের সাথে দাওয়াতী কাজ করা উচিত।
ক্স যে সৎ পথের দিকে আহবান করবে, সে অবশ্যই তার প্রতিদান পাবে।
ক্স যে অসৎ পথে আহবান করবে, সে অবশ্যই তার শাস্তি ভোগ করবে।
ক্স যে ব্যক্তির কারণে মানুষ গোমরাহ হবে, সে তার জন্য দায়ী থাকবে
১৮) সৎকাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ
১। কোরআন :
সূরা আন নাহলের ১২৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেন “(হে নবী)! তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও হিকমত ও নসীহতের সাহায্যে। আর লোকদের সাথে পরস্পর বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়। তোমার আল্লাহ অধিক অবগত আছেন কে তাঁর পথ হতে ভ্রষ্ট হয়েছে আর কে সঠিক পথে আছে”।
২। কোরআন :
সূরা হামীম সিজদার ৩৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেন “আর সে ব্যক্তির অপেক্ষা অধিক ভালকথা কার হতে পারে? যে আল্লাহর দিকে ডাকে, আহবান করে, নেক আমল করে, এবং বলে আমি মুসলমান”।
৩। কোরআন :
সূরা ইউসুফের ১৩৮ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেন “(হে নবী !) তুমি তাদের স্পষ্ট বলে দাও যে, এটাই আমার একমাত্র পথ যে পথে আমি আল্লাহর দিকে আহবান জানাই। আমি নিজেও পূর্ণ আলোকে আমার পথ দেখতে পাচ্ছি, আর আমার সঙ্গী সাথীরাও”।
৪। কোরআন :
সূরা আহযাবের ৪৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেন “হে নবী ! আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী রূপে শুভসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শক রূপে এবং আল্লাহর নির্দেশ তার প্রতি আহ্বানকারী ও উজ্জল প্রদীপ রূপে”।
৫। কোরআন :
সূরা আনআমের ১৫৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেন“ আমার এ রাস্তা (ইসলামের পথ) সোজা। অতএব তোমরা এ রাস্তার অনুসরণ কর। ইহা ছাড়া অন্য কোন রাস্তার ( আর্দশ বা নীতির) অনুসরণ করনা, তাহলে তোমরা তাঁর সঠিক রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে”।
৬। কোরআন :
সূরা আননিসা–এর ১৭৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন“ যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁর দ্বীনকে মজবুতভাবে ধারণ করবে, আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় রহমাত ও অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ করাবেন এবং তাদের সঠিক পথের সন্ধান দিবেন”।
৭। কোরআন :
সূরা আল–ইমরানের ১১০ নং আয়াতের মহান আল্লাহ বলেন : “ তোমরা হচ্ছো সর্বোত্তম জাতী তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের হেদায়েত ও কল্যানের জন্য। অতএব তোমরা সৎ কাজের আদেশ কর এবং অন্যায় ও অসৎ কাজ হতে লোকদের বিরত রাখ এবং আল্লাহর প্রতি পূরিপূর্ণ ঈমান রক্ষা করে চল।
১। হাদীসঃ
হযরত হুযাইফা (রা🙂 হতে বর্ণিত। নবী করীম (সা🙂 ইরশাদ করেছেন : আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার নিয়ন্ত্রনে আমার জীবন। অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে লোককে বিরত রাখবে। নতুবা তোমাদের ওপর শীঘ্রই আল্লাহ আযাব নাযিল করে শাস্তি দিবেন। অতঃপর তোমরা তা থেকে নি®কৃতি পাওয়ার জন্য দু’আ করতে থাকবে কিন্তু তোমাদের দ‘ুআ কবুল হবে না। (তিরমিযী)
২। হাদীস :
হযরত আদী ইবনে আলী আলকেন্দী হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমদের এক মুক্ত কৃতদাস আমদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, সে আমর দাদাকে একথা বলতে শুনেছেন,ে আমি নবী করিম (সা:)-কে বলতেক শুনেছি আল্লাহ কনো বিশেষ লোকদের (পাপ) কাজের জন্য সাধারণ মানুষের উপর আযাব পাঠান না। কিন্তু যতি (সাধারণ লোক) তাদের সামনে প্রকাশ্যভাবে পাপ কাজ হতে দেখে, আর তা বন্ধ করা শক্তি থাকা সত্বেও যদি বন্ধ না করে কিংবা প্রতিবাদ না করে, তাহলে তখনই আল্লাহ পাক সাধারণ লোক ও বিশেষ লোক সকলকে একই আযাবে নিপতিত করেন। (সরহে সুন্নাহ)
৩। হাদীস :
হযরত উসামা ইবনে যায়িদত ইবনে হারিসা (রা🙂 থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা🙂 কে বলতে শুনেছি : কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে এনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তার নাড়ি–ভূঁড়ি বেরিয়ে আসবে। সে এটা নিয়ে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে যেভাবে গাঁধা চাক্কীর মধ্যে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামীরা তার চারপাশে সমবেত হয়ে জিজ্ঞেস করবে, হে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি কি সৎ করেজা আদেশ দিতে না এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখতে না? সে বলবে হাঁ আমি অন্যদের খরাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলাতাম, অথচ আমি নিজেই তা করতাম ানা। (বুখারী– মুসলিম)
৪। হাদীস :
হযরত আব সাঈদ খুদরী (রা🙂 হতে বর্ণিত রাসূল (সা🙂 বলেছেন : তোমাদের কেউ যদি অন্যায় কাজ দেখে, অবশ্যই তা হাত (শক্তি প্রয়োগ করে) দ্বারা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। যতি সে শক্তি না থাকে তাহলে মুখে প্রতিবাদ করবে, যদি সে শক্তিও না থাকে তাহলে অন্তরে তা পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করবে। আর এ ধরনের পরিকল্পনা করাই হলো ঈমানের সর্বনিম্ম ও দুর্বলতম স্তর। (মুসলিম)
১) প্রথমে সে হাত দ্বারা তথা মক্তি প্রয়োগ করে তা প্রতিহত করবে। সরাসরি হস্তক্ষেপ করে শরী’আত বিরোধী কার্যকলাপ বানচাল করে দেবে।
২) শক্তি প্রয়োগ করার ক্ষমতা না থাকলে মৌখিক বক্তব্য দ্বার তা প্রতিহত করবে। যারা অন্যায় কাজ করে তাদেরকে উপদেশ, বক্তৃতা, বিবৃতি লিখনির মাধ্যমে তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবে।
৩) যদি সে শক্তি না থাকে তাহলে অন্তরে তা পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করবে। আর এ ধরনের চিন্ত–ভাবনা না থাকলে বুঝতে হবে তার মধ্যে ঈমানের জ্যোতি নেই।
৫। হাদীস :
হযরত আনাস (রা🙂 হতে বর্ণিত রাসূল (সা🙂 জিহাদ করা মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমাদের জান মাল ও মুখের প্রতিবাদ দ্বারা। (আবু ্দাউদ)
৬) হাদীস :
হযরত হুযাইফা (রা🙂 হতে বর্ণিত। নবী করীম (সা🙂 ইরশাদ করেছেন: আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার নিয়ন্তণে আমার জীবন। অবশ্যই তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ হতে লোকদেরকে বিরত রাখবে। নতুবা তোমদের ওপর শীঘ্রই আল্লাহর আযাব নাযিল করে শাস্তি দিবেন। অতঃপর তোমরা তা হতে নিস্কৃতি পাওয়ার জন্য দু’আ করতে থাকবে কিন্তু তোমাদের দু’আ কবুল হবে না।
৭) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহা (সা🙂 বলেছেন : যে ব্যক্তি ইসলামের জন্য কোন সংগ্রাম (সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ) করেনি এবং সংগ্রাম করার কোন ইচ্ছাও পোষণ করেনি, এরূপ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে, সে মুনাফিক অবস্থায় মৃত্যু করণ করল। ( মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসাঈ)
৮) হাদীস :
হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা🙂 একথা বলতে শুনেছি যে, জাতির মধ্যে কোন এক ব্যক্তি পাপ কাজ করার জন্য লিপ্ত হয়, আর সে জাতির লোকেরা শক্তি থাকা সত্ত্বেও সে পাপ কাজ হতে বিরত রাখে না, আল্লাহ সে জাতির উপর মৃত্যুর পূর্বেই এক ভয়াবহ আযাব চাপিয়ে দেন। (আবু দাউদ)
৯) হাদীস :
হযরত জারীরইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা🙂 বলতে শুনেছি : লোকেরা যখন দেখলো, অত্যাচারী অত্যাচার করছে, এরপর তারা এর প্রতিরোধ করলো না, এরূপ লোকদের উপর আল্লাহ
অচিরেই মহামারী আকারে শাস্তি পাঠাবেন। (আবু দাউদ, তিরমিযি ও নাসাঈ)
১০। হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : একটি আয়ত হলেও তা আমার পক্ষ হতে প্রচার কর। আর বনী ইসরাইল সর্ম্পকে আলোচনা কর, তাতে কোন দোষ নেই। যে ব্যক্তি আমার প্রতি ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা আরোপ করে, তার নিজ চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে সন্ধান করা উচিৎ। (বুখারী)
১১। হাদীস :
হযরত আনাস রাদি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : সহজ কর, কঠিন করনা, সুসংবাদ দাও বীত শ্রদ্ধ করো না। (বুখারী ও মুসলিম)
১২। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সত্যের দিকে ডাকে তার জন্য সত্যের অনুসারীদের বিনিময়ের সমান বিনিময় রয়েছে। এতে তাদের বিনিময় কিছু কম হবেনা। আর যে ভ্রান্ত পথের দিকে আহবান করে, তার জন্য উক্ত পতের অনুসারীদের সমান পাপ হতে থাকবে। এর মধ্যে তাদের অনুসারীদের পাপ কিছু মাত্র কম হবেনা। (মুসলিম)
১৩। হাদীস :
হযরত হারেসুল আশয়ায়ী রাদি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের (ইসলামী আদর্শ বিরোধী) নিয়ম–নীতির দিকে আহবান জানায়, সে জাহান্নামী হবে। যদিও সে রোযা রাখে, নামায পড়ে. এবং নিজকে মুসলিম বলে দাবী করে। (মুসনাদে আহমাদ– তিরমিযী)
১৯) সালাম দেয়া
১। হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা🙂 বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জনাতে চাইলো যে, ইসলামের কোন রীতিটা উত্তম ? তিনি বললেন, “দুঃস্থদের খেতে দেয়া এবং পরিচিত ও অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া’। (বুখারী ও মুসলিম)
২। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যতক্ষণ না তোমার পূণাঙ্গ মু’মিন হবে ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে পারষ্পারিক ভালবাসা ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি হবে ততক্ষণ তোমরা পুনার্ঙ্গ মু‘মিন হতে পরবে না। অতএব, আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় বলে দেব না যা গ্রহণ করলে তোমাদের মধ্যে পারষ্পারিক ভালবাসা ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি হবে। তোমাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সালামের প্রসার ঘটাও।
৩। হাদীস :
সহীহ বুখারীতে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা🙂 এর উক্তি বর্ণিত আছে-“যে ব্যক্তি নিজের মধ্যে তিনটি স্বভাব সৃষ্টি করতে পেরেছে সে ঈমানের ভান্ডার হস্তগত করেছে– নিজের প্রতি ইনসাফ করা, সবাইকে সালাম দেয়া, এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আল্লাহর পথে খরচ করা
৪। হাদীস :
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন বর্ণনা করেন, রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমদের মাঝে অবস্থান করছিলেন এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললো : ‘আস্সালামু আলাইকুম’ নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সে দশটি নেকী লাভ করলো। পরে অপর এক ব্যক্তি এসে বললো– ‘আস্সালামু আলাইকুম’ নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সে বিশটি নেকী লাভ করলো। এরপর তৃতীয় ব্যক্তি এসে বললো– ‘আস্সালামু আলাইকুম’ নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সে ত্রিশটি নেকী লাভ করলো।
৫। হাদীস :
হযরত আবু উমামা (রা🙂 থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : প্রথমে সালামদাতা আল্লাহর আনুগত্য ও নৈকট্যের দিকে দিয়ে সর্বাপেক্ষা উত্তম।
৬। হাদীস :
আবু দাউদ হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছে যে, নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একদল লোক চলার সময় যদি তাদের মধ্যে থেকে একজন সালাম দেয় তাহলে তা সবার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।
৭। হাদীস :
হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত। নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মজলিসে আগমন করলে সালাম দিবে এবং মজলিস থেকে বিদায় হওয়ার সময় সালম দিবে। মনে রাখো, প্রথম সালামের চেয়ে পরের সালাম অর্ধিক প্রতিদানযোগ্য নয়।
৮। হাদীস :
হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা🙂 হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, নবী করীম (সা🙂 ইরশাদ করেছেন : যে ব্যক্তি এ তিনটি কাজ এক সঙ্গে সম্পন্ন করল সে যেন ঈমানকে সুসংবদ্ধ করে নিল। তা হচেছ নিজের নফসের সাথে ইনসাফ করা, সকলকে সামলাম করা এবং দরিদ্র অস্থায় অর্থ ব্যয় কর।
৯। হাদীস :
হযরত নবী করীম (সা🙂 তুমি সালাম বল যাকে তুমি চেন ও জান এবং সালাম বল যাকে তুমি জান না চেন না।
১০। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সা🙂 বলেছেন : তোমরা বেহশতে যেতে পরবেনা যতক্ষন না তোমরা ঈমানদার হবে। আর তোমরা পুরোপুরি ঈমানদার হতে পার না যতক্ষন তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হবে। আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলব না, যে অনুযায়ী তোমরা কাজ করলে তোমাদের পরষ্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন খুব বেশী করে কর এবং উহা একেবারে সাধারণ করে তোল। (মুসলিম)
২০) জ্ঞানী ব্যক্তি কে ?
১) হাদীস :
হযরত ইবনে ওমার (রা🙂 থেকে বর্ণিত এক আনসার ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করল! হে আল্লাহর রাসূল সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী ব্যক্তি কে ? রাসূর (সা🙂 বলেন । যে মৃত্যুকে সর্বাধি স্নরণ করে এবং সে জন্য সর্বাতœক প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই হচ্ছে সর্বধিক জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান। তারা দুনিয়ার সম্মান এবং আখেরাতের মর্যাদা অর্জন করেছে। (ইবনে মাজাহ)
২১) রাতের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ আমল
১) হাদীস :
একদিন নবী করীম (সা:) বলেছিলেন আলী ! পাঁচটি কাজ সম্পাদন না করে নিদ্রা যেয়ো না।
প্রথমত– মিসকীনদের মধ্যে চার হাজার দেরহাম সাদকা করবে।
দ্বিতীয়ত– অন্তত এক খতম কুরআন পাঠ করবে।
তৃতীয়ত– জান্নাতের মূল্য পরিশোধ করবে।
চতুর্থত– হজ্ব আদায় করবে।
পঞ্চমত– সমগ্র দাবীদারদের তুষ্ট করবে।
হযরত আলী (রা:) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল¬¬াহ ! এতগুলি কাজ একরাতে সমাধা করা কিভাবে সম্ভবপর হবে ? নবী করীম (সা:) এরশাদ করলেন–
প্রথমত :
শয়নের আগে চারবার সূরা ফাতেহা পাঠ করবে। এতেই ফকীর–মিসকীনের মধ্যে চার হাজার দেরহাম সদকা দান করার তুল্য নেকি অর্জিত হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত :
তিনবার সূরা এখলাস পাঠ করবে, এতে করে পূর্ণ এক খতম কুরআন পাঠ করার সমান নেকি অর্জিত হয়ে যাবে।
তৃতীয়ত :
দশবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, এর দ্বারা তোমার বেহেশতের মূল্য পরিশোধ হয়ে যাবে।
চতুর্থত :
পাঁচবার “সুবহানাল¬¬াহ ওয়ালহামদুলিল¬¬াহ ওয়া লা–ইলাহা ইল¬¬াল¬াহু আল¬¬াহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল¬া বিল¬¬াহিল আলিয়্যিল আজীম, মাশাআল¬া¬হু কানা, মা–লাম ইয়াশাউ লাম ইয়াকুন” পাঠ কর। এর দ্বারা তুমি হজ্ব আদায় করার সমান নেকি লাভ করতে পারবে।
পঞ্চমত :
দশবার “সুবহানাল্লাহা বেহামদিহী,ওয়াসুবহানাল¬াহিল আলিয়্যিল আযীম, ওয়া বেহামদিহী ওয়াসতাগফেরুল¬া¬হা রাব্বী মিন কুলে¬¬ যাম্বিওঁ ওয়া আতুবু ইলাইহি”- পাঠ কর, এতটুকুই তোমার জন্য এমন ফলপ্রসূ হবে, যেন তুমি সমস্ত দাবীদারগণকে তুষ্ট করে দিলে।
২২) প্রতিবেশীর সাথে আচার ব্যবহারের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়া যায়
১) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 হতে বর্ণিত তিনি বলেন এক ব্যক্তি বলল ইয়া রাসুলূল্লাহ অমুক মহিলা নামায পড়ে, রোজা রাখে, এবং দান খয়রাত করার ব্যাপারে খ্যাতি লাভ করেছে কিন্তু সে তার প্রতিবেশিকে নিজের মুখদ্বারা কষ্ট দেয়, তিনি বললেন: সে জাহান্নামী। লোকটি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ অমুখ (অপর এক) মহিলা যে, কম করে রোজা রাখে, দান করে এবং নামায পড়ে বলে জনশ্রুতি আছে। তার দানের পরিমান হলো পনীরের টুকরা বিশেষ, কিন্তু নিজের মুখদ্বারা তার প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়না, তিনি বললেন: সে জান্নাতি। (আহম্মদ ও বায়হাকী।
২) হাদীস :
আবু শোরাইহ খুযায়ী কর্র্তৃক বর্ণিত রয়েছে, নবী করিম (সা🙂 বলেছেন আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয় বলা হলো হে আল্লাহর রাসূল (সা🙂 সে কোন ব্যক্তি ? তিনি বললেন; যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। (বুখারী)
৩) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ বিনা আমর বিনা আল আস বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা🙂 এরশাদ করেন–আল্লাহর নিকট উত্তম সহচর হলো সে ব্যক্তি, যে তার সহচরের নিকট উত্তম। আর আল্লাহর নিকট উত্তম প্রতিবেশী হলো সে ব্যক্তি, যে তার প্রতিবেশীর নিকাট উত্তম। (ইবনে কাছীর)
৪) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সা🙂 বলেছেন : তোমরা বেহশতে যেতে পরবেনা যতক্ষন না তোমরা ঈমানদার হবে। আর তোমরা পুরোপুরি ঈমানদার হতে পার না যতক্ষন তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হবে। আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলব না, যে অনুযায়ী তোমরা কাজ করলে তোমাদের পরষ্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন খুব বেশী করে কর এবং উহা একেবারে সাধারণ করে তোল। (মুসলিম)
৫) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সা🙂 ইরশাদ করেছেন : মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার মুখের কুটিক্তি ও হাতের অনিষ্টকারিতা হতে অন্যান্য মুসলমান সুরক্ষিত যাকে, আর মু’মিন সেই ব্যক্তি, যার নিকট লোকেরা তাদে জান ও মাল সর্ম্পকে নিরাপদ।
৬) হাদীস :
তোমরা প্রতিবেশীর প্রতি সদ্ব্যব্যবহার কর, তা হলেই তুমি ঈমানদার হতে পারবে।
৭) হাদীস :)
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং পরকালে আল্লাহর সন্তোষ ও কল্যান লাভ করতে চায় প্রতিবেশীদের কোন রূপ কষ্ট না দেয়াই তার কর্তব্য। (বুখারী ও মুসলিম)
৮) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন : আমি নবী করীম (সা🙂 কে বলতে শুনেছি যে, সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়, যে নিজে খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে আর তার পাশ্বেই তার প্রতিবেশী অভূক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। ( বায়হাকী)
৯। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন তুমি শুরুয়া পাক করবে তখন উহাতে বেশি পানি দিবে এবং তা দ্বারা তুমি তোমার প্রতিবেশীদের দান করবে। ( মুসলিম )
১০। হাদীস :
হযরত আনাস রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার ক্ষতি হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ না থাকে। ( মুসলিম)
১১। হাদীস :
হযরত আনাস রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে কোন মজলুমের ফরিয়াদে সাহায্য করবে আল্লাহ তার জন্য ৭৩টি মাগফিরাত লিপিবদ্ধ করবেন। তার একটি মাগফিরাত হবে তার সকল কাজের সংশোধন, আর ৭২টি কিয়ামাতের দিন তার মর্যদা বৃদ্ধির উপকরণ । ( বায়হাকী)
২৩) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারন করার ফজিল
১) হাদীস :
হযরত আবুহুরায়রা (রা🙂 বর্ণনা করেন, রাসূল (সা🙂 এরশাদ করেন, ঈমানের সত্তরটিরও অধিক শাখা রয়েছে। তম্মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হল লা–ইলাহা ইল্লাল্লাহ–আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। এ ঘোষণা দেওয়া এবং সর্বনিম্ম শাখা হল রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জাও ঈমানের একটি শাখা। (বুখারী ও মুসলিম)
২) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 নবী করীম (সা🙂 প্রমুখ্যাত বর্ণনা করেন যে, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা সাদকা বা দানস্বরূপ। (বুখারী)
৩) হাদীস :
হযরত আবুহুরায়রা (রা🙂 নবী করিম (সা🙂 থেকে বর্ণনা করেন যে, জনৈক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে পথিমধ্যে একটি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের শাখা পেয়ে (জনসাধারনের চলাচলের বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে বিধায়) তা রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলেন। এতে আল্লাহ খুশি হয়ে তার গুনাহ সমুহ মাফ করে দিলেন। তিরমিজি)
৪) হাদীস :
হযরত আবুহুরায়রা (রা🙂 নবী করিম (সা🙂 থেকে বর্ণনা করেন যে, জনৈক ব্যক্তি যে কখনো ভাল কাজ করেনি রাস্তা হতে কাঁটাযুক্ত শাখা সরিয়ে দিয়েছিল। হয়তো বা শাখাটি গাছ থেকে কেটে ফেলে দিয়েছিল, অথবা রাস্তায় পড়েছিল, সে তা সরিয়ে দিয়েছেল; এজন্য আল্লাহ তার প্রতি প্রীতি (সন্তুষ্ট) হয়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন। (আবু দাউদ)
২৪) রুগীর পরিবচর্যা করা/ রুগীর সেবা করার ফজিলত
১) হাদীস :
হযরত আনাস (রা🙂 বর্ণনা করেন, রাসূল্ল্লুাহ (সা🙂 এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি উত্তমরুপে ওযু করে সওয়াবের আশায় তার কোন অসুস্থ ভাইয়ের পরিচর্যা করে, সে ব্যক্তি জাহন্নাম থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরে অবস্থান করে। (নাইলুল আওতার)
২) হাদীস :
হযরত ছাওবান (রা🙂 নবী করিম (সা🙂 হতে বর্ণনা করেন, যখন কোন মুসলমান তার অসুস্থ মুসলমান ভাইকে পরিচর্যা করে, তখন সে ফিরে আসা অবধি জান্নাতের ফল চয়ন করতে থাকে। (মুসলিম তিরমিযি)
হযরত আলী (রা🙂 বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা🙂 বলেন যখন কোন মুসলমান সকালবেলা অন্য কোন অসুস্থ মুসলমানের পরিচর্যা করে, তখন সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর যদি সে বিকালবেলা পরিচর্যা করে, তাহলে প্রভাত পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতের ফল চয়নের মর্যাদা। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)
৩) হাদীস :
হযরত আলী (রা🙂 বর্ণনা করেন, আমি রাসূল (সা🙂 বলতে শুনেছি যে, ব্যক্তি তার (অসুস্থ) মুসলিম ভাইয়ের পরিচর্যার জন্য আগম করে, সে ব্যক্তি জান্নাতের বাগানের মধ্যে চলতে থাকে, যতক্ষণ না তথায় গিয়ে উপবেশন করে। অতঃপর যখন তথায় উপবেশন করে, তখন রহমত তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। যদি সকাল বেলা হয়, তাহলে সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর যদি সন্ধ্যাবেলা হয়, তাহলে (পরবর্তী) প্রভাত পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। (এবনে মাযাহ)
৪) হাদীস :
আবু হুরায়রা (রা🙂 কর্তৃক বর্ণিত অন্য একটি হাদিসে রাসুল (সা🙂 এরশাদ করেনে, যে ব্যক্তি রোগীর সেবা করার জন্য যায়, তাকে আকাশ থেকে আহ্বানকারী ডেকে বলে ধন্য তুমি, ধন্য তোমার চলার পথ, তুমি জান্নাতের মঞ্জিলে আশ্রয় গ্রহণ করেছো। (এবনে মাযাহ)
সম্মানিত ভাইয়েরা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাওয়া, তার খোঁজ–খবর নেয়া এবং সাধ্যমত তার পরিচর্যা করা প্রত্যেকটি মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব। চাই সে ব্যক্তি আতœীয় হোক বা অনাতœীয় হোক; মুসলমান হোক অথবা অমুসলামান হোক, প্রতিবেশী হোক অথবা অন্য কেউ। কারো অসুস্থতার খবর শুনলে রাসূল (সা🙂 তাকে দেখতে যেতেন, তার খোঁজ–খবর নিতেন, তার বিছানায় উপবেশন করে তার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দিতেন, কেমম আছো ? কোন ভয় নেই, আল্লাহতায়ালা তোমাকে সুস্থ করে দেবেন। আর তার জন্য দোয়া করতেন– হে আল্লাহ হে মানুরেষর রব! এ ব্যক্তির কষ্ট দূর করে দাও। তুমি রোগ নিরাময়কারী, তাকে রোগ থেকে সুস্থতা দান করো। তুমি ব্যতীত অন্য কেউ মুক্তিদাতা নেই। তুমি যদি রোগমুক্ত করো, তাহলে কোন প্রকার রোগ অবশিষ্ট থাকতে পারে না।
৫। হাদীস :
হযরত আনাস রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে উত্তমরূপে অজু করে সওয়াবে উদ্দেশ্যে তার কোন মুসলমান ভাইকে দেখতে যাবে, তাকে জাহান্নাম হতে ঘাট বছরের পথ দূরে রাখা হবে। (আবু দাউদ)
৬। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : রুগ্ন অবস্থায় মৃত ব্যক্তি শহীদ। তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করা হবে। সকাল– সন্ধ্যা বেহেশতে রিজিক দেয়া হবে। (ইবনে মাজাহ)
৭। হযরত হাসান বসরী (রহ🙂 বলেন, একদা হযরত মুসা (আ) আল্লাহ তায়ালার নিকট জানতে চেয়েছিলেন যে কোন রুগণ ব্যক্তির খোঁজ–খরব নিতে যাওয়া কি পুণ্যের কাজ ? জবাব দেওয়া হলো, যদি একান্তভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কেউ কোন রুগণ ব্যক্তিকে দেখতে যায় তবে তার সমস্ত (সগীরা) গুনাহ আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দেন।
২৫) বিধবা ও দুস্থ (মিসকিন) লোকের কল্যানের ফযিলত
১) হাদীস :
হযরত ছাফওয়ান (রা🙂 বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা🙂 বলেছেন, বিধবা ও দুস্থ (মিসকিন) লোকদের কল্যাণে কর্মরত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী ব্যক্তির মত, অথবা ঐ ব্যক্তির মত যিনি দিনে রোযা রাখেন এবং রাত্রি জাগরণ করে নামায পড়েন । (বুখারী ও তিরমিজি)
২৬) ইয়াতিমকে খাওয়ালে/ ইয়াতিমকে লালন পালন করলে কি লাভ
১) হাদীস :
হযরত এবনে আব্বাস (রা🙂 বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা🙂 বলেন, যে ব্যক্তি মুসলমানদের মধ্য হতে কোন ইয়াতিমের পনাহারের দায়িত্ব গ্রহণ করে, তাহলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অবশ্য সে যদি ক্ষমার অযোগ্য কোন পাপ করে থাকে, তাহলে স্বতন্ত্র কথা (তিরমিজি)
১) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস(রা🙂 বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা🙂 এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তিনজন ইয়াতিমকে লালন পালনা করে, সে ঐ ব্যক্তির মত যে রাত্রি জেগে ইবাদাত করে এবং দিনের বেলায় রোযা রাকে এবং স্বীয় তরবারীকে উন্মুক্ত করে সকাল–সন্ধ্যা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে। আর আমি এবং সে ব্যক্তি দুই ভাইয়ের মত জান্নাতে অবস্থান করব–যেমন এক দুইবোন এই বলে তিনি মধ্যমা ও শাহাদাৎ আংগুলিদ্বয় মিলিত করলেন। (এবনে মাযাহ)
৩) হাদীস :
হযরত সাহল বিন সা’দ (রা🙂 বর্ণিত। হাদীসে রয়েছে, রাসূল (সা🙂 বলেছেন : আমি এবং ইয়াতিমের জিম্মাদার জান্নাতে এ দুটির ন্যায় অবস্থান করব–এ বলে তিনি শাহদাৎ ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয়রে দ্বারা ইশারা করলেন। ( বুখারী, তিরমিজি, আবুদাউদ)
২৭) মৃতব্যক্তির জানাযা ও কাফন–দাফনের ব্যবস্থা করার ফজিলত :
১) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 বর্ণনা করেন, রাসূল (সা🙂 বলেছেন, যে ব্যক্তির জানাযার নামায আদায় করে, তার জন্য এক ক্বিরাত পরিমান সওয়াব এবং যে ব্যক্তি তার দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত তার অনুসরণ করে, তার জন্য দু’ক্বিরাত পরিমাণ সওয়াব রয়েছে, যার একটি অথবা ছোটটির পরিমাণ হলো ওহুদ পাহাড়ের সমান। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি ও আবু দাউদ)
২) হাদীস :
হযরত হাসান বসরী (রহ🙂 বলেন, একদা হযরত মুসা (আ) আল্লাহ তায়ালার নিকট জানতে চেয়েছিলেন যে কারো জানায় শরীক হওয়ার পুণ্য কতটুকু ? জবাব এলো, যে ব্যক্তি অন্যের জানাযায় শরীক হয়, তার মৃত্যুর পর ফেরেশতাগণ তার নামাযায় অংশ গ্রহণ করে এবং পতাকা হাতে নিয়ে কবর পর্যন্ত অতঃপর হাশর পর্যন্ত পশ্চাৎগমন করে থাকে।
৩) হাদীস :
হযরত হাসান বসরী (রহ🙂 বলেন, একদা হযরত মুসা (আ) আল্লাহ তায়ালার নিকট জানতে চেয়েছিলেন যে কারো মৃত্যু সংবাদ শুনে সমবেদনা জানালে কেমন পূণ্য হয় ? জবাব এলো, মৃত্যু সংবাদ শুনে সমবেদনা জানালে, হাশরের ময়দানে সমবেদনা জ্ঞাপনকারী ব্যক্তিকে আরশের ছায়াতলে স্থান দেওয়া হবে।
কোন ব্যক্তি মারা গেলে তাকে দেখতে যাওয়া, তার পরিবার–পরিজন ও আতœীয় স্বজনকে সান্ত¡না দেয়া, তার কাফন–দাফনের ব্যবস্থা করা, তার জানাযায় শরীক হওয়া এবং পরিবার–পরিজনের জন্য খানা–দানার ব্যবস্থা করা উচিত।রাসূলুল্লাহ (সা🙂 কোন ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ শুনলে তাড়াতাড়ি তথায় হাজির হতেন, মৃত ব্যক্তির আতœ্ীয়–স্বজনকে সান্ত¡না দিতেন, উত্তম কাফনের জন্য উপদেশ দিতেন, লোকদের ধৈর্য ধারণের নছিহত করতেন, মুসলমানদের জানাযার নামায নিজে পড়াতেন।
২৮) ন্যায় বিচর করার ফজিলত
১) হাদীস :
হযরত আবুহুরায়রা (রা🙂 হতে বর্ণিত রয়েছে একদিনের ন্যায় বিচার চল্লিশ বছর নফল ইবাদতের সমতুল্য।(এবনে কাছীর)
২) হাদীস :
অন্য একটি হাদিসে রয়েছে মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের প্রতিটি জোড়ার উপর প্রতিদিন সাদকা আবশ্যক। মানুষের মাঝে ন্যায় বিচার করাও একটি সাদকা।
যে ব্যক্তি মানুষের মাঝে ন্যায় বিচার কায়েম করে তার এ কাজটি সাদকা হিসাবে পরিগণিত হয়। তবে কোনো ব্যক্তি যদি বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে পাক্ষপাতমূলক আচরণ করে এবং কারো প্রতি অন্যায় ও জুলুম করে তাহলে এ ধরনের বিচারকের জন্য আখেরাতে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির সংবাদ দেয়া হয়েছে। সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের বিশেষ করে শাসক ও নেতৃস্থানীয় লোকদের দায়িত্ব হলো, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে পরিবারে বা সমাজে যেখানেই কোন বিশৃঙ্খলা ও ঝগড়া ফাসাদ দেখা দিবে সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে হস্তক্ষেপ করে ন্যায়সঙ্গতভাবে তা ফায়সালা করে দেয়া।
২৯) পিতা–মাতার খেদমত করালে কি লাভ হবে ?
১) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা🙂 বলেন, রাসুলূল্লাহ (সা🙂 বলেছেন, পিতা–মাতার সন্তুুষ্টিতে আল্লাহর সšু‘ষ্টি এবং পিতা–মাতার অসন্তুুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুুষ্টি রয়েছে। (তিরমিজি)
২) হাদীস :
হযরত আবু উমার (রা🙂 বর্ণনা করেন জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা🙂 সন্তানের উপর পিতা–মাতার হক কি ? তিনি বললেন তারা দু’জন (পিতা–মাতা) তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম। (এবনে মাজাহ)
৩) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ বিনা মাসউদ (রা🙂 বর্ণনা করেন আমি নাবী করীম (সা🙂 কে জিজ্ঞেস করলাম– কোন আমল আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় ? তিনি বললেন, ঠিক সময়ে নামায পড়া। সে বলল অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, অতঃপর মাতা–পিতার খেদমত করা। সে বলল তার পর কোনটি ? তিনি বললেন, তারপর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। (বুখারী ও তিরমিজি)
৪) হাদীস :
হযরত এবনে আব্বাস (রা🙂 বর্ণিত রাসূল (সা🙂 বলেছেন, যদি কোনো নোক সন্তান স্বীয় পিতা–মাতার দিকে রহমতের সাথে দৃষ্টিপাত করে, তাহলে আল্লাহ তাকে প্রতিটি দৃষ্টির জন্য একটি কবুল হজ্বের সওয়াব দিয়ে দেন। সাহগাবীগন বললেন, যদি কেই প্রতিদিন একশত বার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ? রাসূল বললেন, হাঁ তাহলেও; আল্লাহ মহান ও পবিত্র। (মেশকাত)
৫) হাদীস :
হযরত আবুত হুরায়রা (রা🙂 বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা🙂 এরশাদ করেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হয়েছে, সে ব্যক্তি ধ্বংস হয়েছে, সে ব্যক্তি ধ্বংস হয়েছে। বলা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ সে কোন ব্যক্তি? তিনি বললেন যে ব্যক্তি বৃদ্ধাবস্থায় পিতা–মাতার একজনকে অথবা উভয়কে পেয়েও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না। (মুসলিম)
৬) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মাতাপিতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং মাতাপিতার অস্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহিত। ( তিরমিযী)
৭। হাদীস :
হযরত আবু ইমামা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমর পিতামাতা উভয়ই তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম।
৮। হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : উপকার করে খোটাদানকারী, মাতাপিতার বিরুদ্ধাচরণকারী ও মদ পান কারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (নাসায়ী দারেমী)
৯। হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যদি নেক সন্তান আপন মাতাপিতার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকায় আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার আমলনামায় একিট মকবুল হজ্জ লিপিবদ্ধ করবেন। (বাযহাকী)
আল্লাহর হক আদায়ের পর একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ও গুরুত্পূর্ণ হকে হলো পিতা–মাতার হাক। আল্লাহর এবাদাতের পর সবচেয়ে উত্তম কাজ হলো পিতা–মাতার খেদমত করা। পিতা–মাতা হলো সন্তানদের জান্নাত লাভের মাধ্যম পিতা–মাতার অবাধ্য হলে, তার জন্য জান্নাত লাভ সুদুল পরাহত।
১০। হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কবিরা গুনা হল: আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা–মাতার অবাধ্য হওয়া, মানুষ হত্যা করা এবাং মিথ্যা কসম খাওয়া। (বুখারী)
৩০) পাঁচটি বিষয়ের উপর গুরত্ব প্রদান
১) হাদীস :
হযরত আমর ইবনে মাইমুন (রা🙂 থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন : জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেন, পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে পাঁচটি বিষয়ের প্রতি (সময় থাকতেই) গুরুত্ব প্রদান কর–
১) বার্ধক্য আসার আগে যৌবনের;
২) রোগাক্রান্ত হওয়ার আগে স্বাস্থ্যের;
৩) দারিদ্র আসার আগে সচ্ছতার;
৪) ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার আগে অবসর সময়ের;
৫) মৃত্যু আসার আগে জীবনে।
একজন মু’মিন বান্দার জীবনের লক্ষ্য নির্ধরণ করার জন্য রাসূল (সা🙂 জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে উপরোক্ত পাঁচটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করেছেন। সত্যিকার অর্থে কোন ব্যক্তি এ বিষয়েগুলোকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতে পারেল এবং আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক নিজের জীবন পরিচালনা করলো তা ইহকালীন জীবনে কল্যাণ ও পরিকালীন জীবনের লক্ষ্য নির্ধারনের ব্যর্থ হবে তার দ্রুততার সাথে কর্ম স্থির করতে ও তা সম্পাদন করতে পারবেন না। ফলে ইহকালীন সাকল্য লাভ ও পরকালীন মুক্তি লাভ করা সম্ভব হবে না।
১) বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনের গুরত্ব :
যৌবনে যা করা যায় বার্ধক্যে তা করা যায় না। যৌবন কালে মানুষের শক্তি–সাহস বেশী থাকে। তখন সে আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করতে ও দ্বিধা করে না। আল্লাহর সকল হুকুম পালনে ও ইবাদাতে ক্লান্ত হয় না। পক্ষান্তরে বার্ধক্যে ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে ইবাদাতের সকল হক আদায় করে যথা নিয়মে তা পালন করা যায় না।
২) রোগাক্রান্ত হওয়ার আগে স্বাস্থ্যের :
মানুষ কখন কিভবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে তা সে জানে না। মানুষ সাধারণত: রোগাক্রান্ত হলো তার কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কাজেই রোগাক্রান্ত হওয়ার আগে স্বাস্থ্যের যতœ নেয়া শরীরের হক আদায় ও রোগাক্রান্ত হওয়ার আগে বেশী বেশী করে নেক কাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা অপরিহার্য।
৩) দারিদ্র্য আসার আগে সচ্ছলতার :
সচ্ছলতা মানুষের মনে আনন্দ দেয়, দারিদ্র্যতা মানুষের মনে কষ্ট দেয়। কিন্তু দারিদ্রতা ও সচ্ছলতায় কারো কোন হাত নাই। তাই দারিদ্রতা আসার আগে সচ্ছল থাকতেই খরচ করতে হবে।
৪) ব্যস্ত হযে যাবার আগে অবসর সময়ের :
সকলকেই ব্যস্ত হয়ে যাবার আগে সঠিক সময়ে যথাযথ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হওয়ার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কোন কাজ পরে করব বলে ফেলে রাখা উচিত নয়। যারা বুদ্ধিমান লোক তারা সময় মতো সকল কাজ করেন। ইবাদাতের ক্ষেত্রেও সময়ের গুরত্ব দিতে হবে। মৃত্যুর জন্য তো সকলকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। কখন কার মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে সমন উপস্থিত হন, তা কেউ জানে না।
৫) মৃত্যু আসার আগে জীবনের :
মানুষ জন্মের পরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যত দিন বেঁচে থাকেন সে সময়টুকুকে জীবন বলা হয়। দুনীয়ার জীবনে যে যে কাজ করবেন সে তার ফল পরকালে ভোগ করবেন। কাজেই মৃত্যু আসার আগে জীবনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করতে হবে ও পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করে নিতে হবে, নচেৎ সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা, মৃত্যুর পরে মানুষের ভাল–মন্দ কোন কাজ করার সুযোগ পাবে না।
৩১) জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়
১) হাদীস :
হযরত উকবা ইবন আমর (রা🙂 হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা আমি রাসূলে করীম (সা:)-এর খেদমতে উপস্থিত হলাম ও আরজ করলাম যে, মুক্তির উপায় কি, তা বলে দিন। উত্তরে তিনি এরশাদ করেন : তোমদের জিহ্বা তোমাদের আয়ত্তে রাখ, তোমার ঘরকে প্রশস্ত কর এবং নিজের ভুলের ভ্রান্তির জন্য কান্নাকাটি কর। (মুসনাদে আহমদ ও তিরমিযি)
২) হাদীস :
মহানবী (সা🙂 বলেন: “দু‘টি চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না। একটি চক্ষু যা আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে আর অপরটি চক্ষু যা আল্লাহর রাস্তায় পাহারারত থেকে রাত কাটিয়ে দেয়।” (তিরমিযি)
৩। হাদীস :
হযরত উকবা ইবনে আমের রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নাজাতের উপায় পেতে হলে (১) নিজের জিহ্বাকে আয়ত্ব রাখ, (২) নিজের ঘরে পড়ে থাক, (৩) নিজের পাপের জন্য কাঁদো। ( আহমদ, তিরমিযী)
নিজের কৃত কাজের জন্য অশ্রু বর্ষন করা, নিজের ভুল স্বীকার করে আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত হওয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করে কান্নাকাটি করা। ভুলভ্রান্তি, দোষ,পদঙ্খলন মানুষেরই হয়ে থাকে এবং মানুষ যদি অনুতপ্ত হয় তবে আল্লাহ অপরাধ ক্ষমা করবেন। এটা স্বাভাবিক কথা। কাজেই প্রত্যেক ঈমানদার মানুষেরই উচিত স্বীয় অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, নিজে গুনাহের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। এই ক্ষমা প্রার্থনা ও কৃত্রিম হওয়া উচিত নয়, আন্তরিক নিষ্ঠাসহকারে হওয়া বাঞ্ছনীয়। সেই জন্য ক্রন্দন ও অশ্রু বর্ষণ অপরিহার্য।
৩২) আল্লাহর রাস্তায় দান করলে কি লাভ হবে ?
১) কুরআন :
যারা নিজেদের ধন–সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের খরচের দৃষ্টান্ত এই : যেমন একটি বীজ বপন করা হল এবং তা হতে সাতটি ছড়া বের হল আর প্রত্যেকটি ছড়ায় একশতটি দানা রয়েছে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে বহুগুনে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রশস্তকারী এবং মহাজ্ঞানী। তিনি যাকে যান তার কাজে এভাবেই প্রাচুর্য দান করেন। তিনি উদার হস্ত বটে এবং সবকিছু জানেন। (সূরা–আল বাকারা)
২) কুরআন :
তোমরা কিছুতেই কল্যাণ লাভ করতে পরবে না, যে পর্যন্ত না তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলোকে আল্লাহর পথে ব্যয় করবে। (সূরা আল–ইমরান : ৯২)
১) হাদীস :
হযরত আবু ইয়াহইয়া খারীম ইবনে ফাতিক (রা🙂 হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা🙂 বলেছেন : যে আল্লাহর পথে একটি জিনিস দান করলো, তার জন্যে সাতশত গুন সাওয়াব লেখা হবে। তিরমিযি)
২) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা🙂 বলেছেন : দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের নিকটমত এবং মানুষেরও নিকটতম। আর দূরে থাকে দোযগ থেকে। পক্ষান্তরে কৃপণ ব্যক্তি অবস্থান করে আল্লাহ থেকে দূরে, বেহেশত থেকে দূরে, মানুষ থেকে দূরে, দোযখের নিকটে। অবশ্যই একজন জাহেল দাতা একজন বখিল আবেদের তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিককতর প্রিয়। (তিরমিযি)
৩) হাদীস :
আল্লাহর রাসূল (সা🙂 বলেন : যখনই আল্লাহর বান্দারা প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করে, তখনই দুইজন ফেরেশতা অদবতীর্ণ হয়। তন্মধ্যে একজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! তুমি দাতা ব্যক্তিকে প্রতিদান দাও। অনজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! কৃপণ ব্যক্তিকে ধ্বংশ কর। (বুখারী ও মুসলিম)
৪। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আসমানে মেঘের মধ্যে যার নাম উচ্চারিত হয়েছিল তিনি বলেন, আমর ফসলকে তিন ভাগ করি, একভাগ দান করি, একভাগ আমিও আমার পরিবার খাই এবং একভাগ জমিতে লাগাই। (মুসলিম)
৫। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : দানশীলতা জান্নাতের একটি বৃক্ষ। দানশীল ব্যক্তি একটি শাখা ধরে যে শাখাটি তাকে জান্নাতে না পৌঁছিয়ে ছাড়ে না। কৃপণতা জাহান্নামের একটি বৃক্ষ। কৃপণ ব্যক্তি একটি শাখায় ধরে যা তাকে জাহান্নামে না পৌঁছিয়ে ছাড়ে না। (বায়হাকী)
৬। হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন জিনিষের এক জোড়া দান করবে, তাকে জান্নাতে সকল দরজা থেকে আহ্বান করা হব্ ে( বুখারী ও মুসলিম)
৭। হাদীস :
ইবনে আবদুল্লাহ রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কিয়ামতের দিন মুমিনের ছায়া হবে তার দান। (আহমাদ)
৩৩) ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ানো ও বস্ত্রহীন ব্যক্তিকে বস্ত্রদান করলে কি লাভ হবে ?
১) হাদীস :
হযরত আবু সাঈদ (রা🙂 বর্ণনা করেন, রাসূল (সা🙂 বলেছেন, যে মুসলমান কোনো বিবস্ত্র মুসলমানকে বস্ত্র পরিধান করায়, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন। যে মুসলমান অন্য কোন ক্ষুর্ধাত মুলসলমানকে খাদ্য খাওয়ায়, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফলমুল হতে খাওয়াবেন। আর যে, মুসলমান কোন পিপার্সাত মুসলমানকে পান করায় আল্লাহ তাকে সীল করা সুরক্ষিত পাত্র হতে পান করাবেন। (আবু দাউদ)
২। হাদীসঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে খানাতে বিসমিল্লাহ বলা হয় না, শয়তান সে খানাকে নেজের জন্য হালাল করে নেয়। (মুসলিম)
৩। হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কেহ যখন কিছু খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায়। আর যখন পান করে যেন ডান হাতে পান করে। ( মুসলিম)
৪। হাদীস :
হযরত জাবের রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আঙগুল ও খাদ্য পাত্র চেটে খাবে। খাদ্যের কোন অংশের মধ্যে বরকত আছে নিশ্চয় তোমরা তা জানো না। (মুসলিম)
৫। হাদীস :
হযরত সাদ রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে তাকে সেদিন কোন বিষ, জাদুটোনা ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
৬। হাদীস :
হযরত আয়েশা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : খানা খায় ও আল্লাহর নাম নিতে ভুলে যায় সে যেন বলে বিসমিল্লাহে আওয়ালাহু ওয়া আখেরাহু। (তিরমিযী, আবু দাউদ)
৭। হাদীস
হযরত নোবায়শা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি কোন পাত্রে খায়, পরে উহা চেটে নেয় পাত্রটি তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করে। (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ।
৩৪) কোন মুসলিমের সম্পদ আত্নসাৎ করার পরিনাম
১) হাদীস :
আবু উমামা (রা🙂 থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেন : যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সম্পদ আতœসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যে শপথ করে, আল্লাহ তার জন্য জাহন্নাম ওয়াজিব ও জান্নাত হারাম করেছেন। এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করলো হে আল্লাহর রাসূল(সা🙂: যদি তা ক্ষুদ্র জিনিষ হয়? তিনি বললেন: যদি তা বাবলা গাছের একটি শাখাও হয় তবুও। ( সহীহ মুসলিম)
২। হাদীস :
হযরত সালেম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে অন্যায়ভাবে কারো জমি দখল করেছে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক জমীন পর্যন্ত ধসিয়ে দেয়া হবে। ( বুখারী )
৩৫) কিয়ামতের দিন কারা আরশের ছায়ায় স্থান লাভ করবে ?
১) হাদীস :
হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 হতে বর্ণিত। নবী করীম (সা:) বলেছেন : সাত প্রকার লোককে আল্লাহ তা’আলা (কিয়ামতের দিন) তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দান করবেন। সেদিন আরশের ছায়া ছাড়া আর অন্য কোন ছাড়া থাকবে না।
১) ন্যায়পরায়ণ নেতা; ২) ঐ যুবক যে তাঁর যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছেন; ৩) এমন (মুসল্লি) ব্যক্তি যার অন্তকরণ মসজিদের সাথে লটকানো থাকে, একবার মসজিদ থেকে বের হলে পুনরায় প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত ব্যাকুল থাকে; ৪) এমন দু’ব্যক্তি যারা কেবল মাত্র আল্লাহর মহব্বতে পরষ্পর মিলিত হয় এবং পৃথক হয; ৫) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর ভয়ে চোখের অশ্রু ফেলে; ৬) যে ব্যাক্তি কোন সম্ভ্রান্ত বংশের সুন্দরী রমণী ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আহবান জানায় আর ঐ ব্যক্তি শুধু আল্লাহর ভয়েই বিরত থাকে; এবং ৭) যে ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে তার ডান হাত কি দান করলো বাম হাতও তা জানেনা। (বুখারী ও মুসলিম)
৩৬) তাওবা করলে/গুণা মাফ চালে কি লাভ ?
‘তাওবা শব্দের অর্থ প্রত্যবর্তন করা, ফিরে আসা। গুনাহগার বান্দা তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর নাফরমানী থেকে আল্লাহর দিকে পুনরায় ফিরে আসে। বান্দা যত গুন্হাই করুক না কেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা ও মাফ করেন। বান্দাহ গুনাহ যত বড় তাঁর রহমত এর চাইতেও বড়। তাই নিরাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। আল্লাহ পবিত্র কুরআন মজীদে এরশাদ করেছেন :
১) কোরআন :
আল্লাহ বলেন : হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজের আত্মার উপর জুলুম করেছ, আল্লাহর রহম থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই, আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করেন। নিঃসন্দেহে, তিনি অধিক ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। (সূরা যুমার–৫৩)
এ আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া নিষিদ্ধ বা কুফরী।
২) কোরআন :
আল্লাহ বলেন : যারা অশ্লীল কাজ করে ফেললো কিংবা নিজেদের আতœার উপর জুলূম করে ফেললো, নিজেদের গুনাহ জন্য আল্লাহকে স্মরণ করলো; আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং তারা জেনে–শুনে কৃত গুনাহর পুনারাবৃত্তি করে না। তাদের পুরস্কার হলো, আল্লাহর ক্ষমা এবং এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত –তারা সেখানে চিরদিন থাকবে। আমলকারীদের পুরস্কার কতই না উত্তম! (সূরা আল–এমরান–১৩৫–১৩৬)
৩) কোরআন :
তিনি সেই সত্তা যিনি বান্দার তাওবা কবুল করেন, তাদের গুনাহ মাফ করেন এবং তোমরা যা করো সবকিছু তিনি জানেন। (সূরা শুরা–২৫)
৪) কোরআন :
আল্লাহ বলেন : কেউ খরাপ কাজ করে কিংবা নিজের উপর জুলুম করে যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও মেহেরবান দেখতে পাবে। (সূরা নিসা–১১০)
৫) কোরআন :
আল্লাহ বলেন : আপনি যাদের মধ্যে মওজুদ থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাদেরকে আজাব দেবেন না, যারা গুনাহ মাফ চায়, আল্লাহ তাদের উপরও আজাব দেন না। (সূরা আনফাল–৩৩)
৬) কোরআন :
তাওবা–এস্তেগফারকারীদের জন্য স্বয়ং আল্লাহর আরশ বহনকারী ফেরেশতা ও এর চারপাশের ফেরেশতারা এই বলে দোয়া করে যে, যারা তাওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। হে আমাদের রব, আপনি তাদেরকে এবং তাদের বাপ–দাদা, স্বামী–স্ত্রী ও সন্তান–সন্ততিদেরকে আপনার প্রতিশ্রুতি চিরকাল বসবাসের জান্নাতে প্রবেশ করান। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রশালী, প্রজ্ঞাময় এবং আপনি তাদেরকে আমঙ্গল ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন। আপনি যাকে সেদিন অমঙ্গল থেকে রক্ষা করেন, তাদের প্রতি অনুগ্রহই করনে। এটাই মহাসাফল্য। (সূরা মোমিন–৭–৯)
তাওবা–এস্তেগফরের মর্যাদা আল্লাহর আরশ বহনকারী ফেরেশতাসহ অন্যান্য ফেরেশতাদের কাছেও অনেক বেশী। ফেরেশতারা নিষ্পাপ। তাদের দোয়া কবুল হয়। তাওবা করলে ফেরেশতারা তাওবাকারীর পরিবার ও সন্তানদেরকে বেহেশতে প্রবেশের জন্য দোয়া করেন।
৭) কোরআন :
কিন্তু যারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং নেক আমল করে আল্লাহ তাদের গুনাহকে নেক দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালূ। (সূরা ফোরকান–৭১)
৮) কোরআন :
আল্লাহ বলেন : অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টি ধারা ছেড়ে দেবেন, তোমাদের ধন–সম্পদ ও সন্তান–সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী–নালা প্রবাহিত করবেন। ( সূরা নুহ–৯–১২)
৯) কোরআন :
নিশ্চয়ই নেক কাজ পাপ ও গুনাহ দূর করে দেয়। (সুরা হুদ–১১৪)
১০) কোরআন :
হে মুমিনগণ তোমরা সকলেই আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। সূরা নুর–৩১
১১) কোরআন :
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাঁর নিকট তাওবা কর, তোমর প্রতিপালক পরম দয়ালু ও প্রেমময়। সূরা হুদ–৯০
১২) কোরআন :
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কিট তাওবা কর– বিশুদ্ধ তাওবা। সূরা তাহরীম–০৮
১৩) কোরআন :
তোমরা প্রতিপালকের দয়া করা তাঁর কর্তব্য বলে স্থির করেছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ অজ্ঞানতাবশত যদি মন্দ কাজ করে তারপর তাওবা করে এবং সংশোধন করে (নিজের অবস্থার) তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা আন’আম
১৪) কোরআন :
(তাওবা নাসূহার বিনিময়ে) আশা করা যায়, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দকার্যগুলো মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রভাহিত। সূরা তাহরীম–০৮
১৫) কোরআন :
তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে এবং তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, আমি এখন তাওবা করছি। তাওবা তাদের জন্যও নয়, যারা মারা যায় কাফির অবস্থায়। এরাই তারা,যাদের জন্য আমি মর্মন্তদ শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। (সূরা নিসা–১৮)
আল্লাহ রাসূল এরশাদ করেছেন :
১) হাদীস :
আল্লাহ দিনে গুনাহকারীদের গুনাহ মাফ করার জন্য রাত্রে নিজ ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করেন এবং রাত্রে গুনাহকারীদের গুনাহ মাফ করার জন্য দিনের নিজ ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করেন। কেয়ামতের আগে পশ্চিমে সূর্যোদয় পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকবে। আল্লাহর বান্দার গুনাহ মাফের জন্য রীতিমত অপেক্ষা করেন। বান্দা মাফ চাইলেই মাফ পেতে পারে।
২) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 আরো বলেন: সেই ব্যাক্তির নাক ধূলামলিন হোক, যে রমযান পেয়েছে কিন্তু তার গুনাহ মাফ হয়নি। (তিরমিযী, হাকেম)
৩) হাদীস :
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে : আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম!তুমি আমার কাছে যা আশা করো এবং চাও,আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম এবং এ জন্য আমি কোন পরোয়া করি না। (তিরমযী)
৪) হাদীস :
হাদীসে কুদসীতে আর্ োএসছে : আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দা! তোমরা দিনে রাতে গুনাহ করে থাকো, আর আমি সকল গুনাহ মাফ করি। তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেব। (মুসলিম)
গুনাহ মাফের জন্য এর চাইতে বড় প্রতিশ্রুতি আর কি হতে পারে?
৫) হাদীস :
হযারত আনাস (রা🙂 থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সা🙂 কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম! তুমি আমর নিকট যা যা দোয়া ও প্রত্যাশা করো, আমি তোমার সকল গুনাহ মাফ করে দেবো এবং এ ব্যাপারে আমি কোন কিছুর পরোয়া করবো না। হে বনি আদম! যদি তোমার গুনাহ আকাশের মেঘমালার মতো বিপুল পরিমাণও হয়, তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমার সে গুনাহ মাফ করে দেবো এবং সে জন্য আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! যতি তুমি জমীন পরিমাণ বিশাল গুনাহরাশি নিয়েও আমার দিকে ফিরে আসো এবং আমার সাথে আর কাউকে শরীক না করো, তাহলে আমিও তোমার প্রতি জমীন পরিমাণ বিশাল ক্ষমা নিয়ে হাজির হবো। (তিরমিজী)
বন্ধুগন! ক্ষমার জন্য এর চাইতে বড় আহবান আর কি হতে পারে?
রোখারী শরীফে আরেকটি ঘটনার উল্লেখ আছে। ঘটনাটি হলো, আগের উম্মাতের এক ব্যক্তি ৯৯টি হত্যার গুনাহ মাফ সম্ভব কিনা তার জানার জন্য একজন আলেমের কাছে যান। আলেম ব্যক্তিটি ‘না’ বলেন। তখন হত্যাকারী একেও হত্যা করে হত্যার সংখ্যা ১শত পূর্ণ করেন। তারপর ১শ’ হত্যার গুনাহ মাফ সম্ভব কিনা তা জানার জন্য আরেক আলেমের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথে তার মৃত্যু উপস্থিত হলে নেক ও পাপী লোকের মৃতুদানকারী ফেরেশতাদের মধ্যে কে তার রূহ হরণ করবে তা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে তার তাওবার গন্তব্যস্থল কাছে না প্রস্থান স্থল কাছে তা মাপার নির্দেশ আসে। জরীপে তাওবার স্থান নিকটবর্তী হওয়ায় নেক লোকের রূহ হরণকারী ফেরেশতারারা তার রূহ হরণ করেন। এই ঘটনা তাওবার মর্ম ও মাহাতœ্যকে কি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্যিকারভাবে তাওবা করার তাওফীক দিন।
৬) হাদীস :
আবু হোরায়রা (রা🙂 থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেছেন : যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, তোমরা যদি গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে উঠিয়ে নিতেন এবং যারা গুনাহ করে এমন জাতি তৈরী করতেন। তার পর তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত, তিনি তাদেরকে ক্ষমা কতে দিতেন। (মুসলিম)
৭) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেন : যে ব্যক্তি নিজ আমলনামা দেখে খুশি হতে চায় সে যেন বেশী করে গুনাহ মাফ চায়। (বায়হাকী–শআ’বুল ঈমান, আলবানী একে বিশুদ্ধ হাদীস বলেছেন)
৮) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেন : নিশ্চয়ই শয়তান বলেছে, হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের শপথ করে বলছি, আমি আপনার বান্দাদেরকে তাদের শরীরে প্রাণ থাকা পর্যন্ত গোমরাহ করতে থাকবো। তখন রব বলেন, আমার ইজ্জত ও শ্রেষ্ঠত্বের শপথ করে বলছি, তারা যে পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকবো। (আহমদ)
৯) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেন : আল্লাহর কসম, আমি দিনে আল্লাহর কাছে ৭০ বারের অধিক তাওবা–এস্তগফার করি। (বুখারী)
নিষ্পাপ নবী দিনে ৭০ বারের বেশী তাওবা করলে পাপী উম্মাহর সদস্যদের কমপক্ষে ৭০ এবং আরো বেশী তাওবা করা উচিত।
১০) হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর এবং গুনাহ মাফ চাও। আমি প্রতিদিন একাশ বার তাওবা করি। (মুসলিম)
১১) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেন : যার আমলনামায় অধিক এস্তেগফার থাকবে তার জন্য সুখবর।
(ইবনে মাজাহ–নাসেরুদ্দিন আলবানী হাদীসের সনদকে বিশুদ্ধ বলেছেন)
১২) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেন : যে ব্যক্তি বলে যে, আমি আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চাই, তিনি ছাড়া আর কোন সত্যিকার মা‘বুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও ধারক এবং আমি তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবো। তাহলে, তার গুনাহসমুহ মাফ করে দেয়া হবে। যদিও সে জোহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে আসুক না কেন। (আবু দাউদ)
জেহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে আসা কবীরা গুনাহ। তা সত্বেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন।
১৩) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেন : যে সাইয়েদুল এস্তেগফার পড়ে এবং এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস করে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই দিনে মারা যায়, সে বেহশতবাসী হবে; আর যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস সহকারে তা পড়ে সকাল হওয়ার আগে রাত্রে মারা যায, সেও জান্নাতবাসী হবে। (বোখারী)
“আল্লাহুমা আনতা রাব্বি লা–ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়ানা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াহদিকা মাসতাত্ব’আতু ওয়া আউ’যুবিকা মিনশাররি মাছানা’তু আবুউ লাকা বিনিহমাতিকা আলাইয়া ওয়াবুউ বিজানবি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনাতা।”
১৪) হাদীস :
আয়েশা (রা🙂 থেকে বর্ণিত। মৃত্যুর আগে নবী করিম (সা🙂 নিম্মের বাক্যটি অধিক হারে উচ্চারন করতেন: “সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াতুবুএলাহি”। (বুখারী ও মুসলিম)
১৫) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেন: বান্দা যখন তাওবা করে তখন আল্লাহ তার উপর ভীষণ খুশী হন। যেমন তোমাদের কারো সওয়ারী যদি মুরুভূমিতে হারিয়ে যায়া, এর পিঠে যদি তোমাদের খাদ্য ও পানীয় থাকে, এটাকে তালাশ করে না পেয়ে ক্লান্ত–শ্রান্ত হয়ে কোন গাছের নীচে হতাশ হয়ে শুয়ে পড়ে এবং তখন যদি হঠাৎ সওয়ারীটি এসে তার কাছে হাজির হয়, সে তখন এর লাগাম ধরে আনন্দের আতিশয্যে ভুলে বলে ফেলে ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার বান্দাহ, আমি তোমার রব। আল্লাহ তোমাদের এই আনন্দ অপেক্ষা আরো বেশী খুশী হন। (মুসলিম)
১৬) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন। কোন বান্দা গুনাহ করে এসে বলে, হে আল্লাহ, আমার গুনাহ মাফ করুন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে, সে জেনেছে যে তার একজন পালনকর্তা আছে যিনি গুনাহ মাফ করেন। তারপর সে আবারও গুনাহ করেছে এবং বলেছে, হে আল্লাহ আমার গুনাহ মাফ করুন। আল্লাহ জবাবে বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন যিনি গুনাহ মাফ করুন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা গুনাহ এবং সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছে যিনি গুনাহ মাফ করেন। আল্লাহা বলেন, তুমি যা ইচ্ছা করো, আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দিলাম। (মুসলিম)
১৭) হাদীস :
মোমেনের প্রতিটি বিষয়ই কল্যানকর। ক্রটি করাও কল্যাণকর হতে পারে যদি মানুষ এরপর তাওবা করে বিনীত হয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়।
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেন : মোমেনের বিষয় আশ্চর্যজনক। তার প্রত্যেকটি জিনিসই কল্যাণকর। আর এটা মোমেন ছাড়া আর কারো জন্য নয়। সে সুখ ও আনন্দ পেলে শুকরিয়া আদায় করে, সেটা তার জন্য কল্যাণকর। আর দু:খ ও কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করে; সেটাও তার জন্য কল্যানকর।’ (মুসলিম)
গুনাহ ও ক্রটি তখন কল্যাণকর হবে, যখন তা মানুষকে অধিক সওয়াবের কাজ এবং তাওবা–এস্তেগফারের জন্য উদ্ধুদ্ধ করে। এ জন্য কোন গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে তাওবার সাথে সাথে আরো কিছু নেক কাজ করা কর্তব্য। তা সেই গুনাহর কাফফারা হয়ে যাবে।
১৮) হাদীস :
আবু হোরায়রা (রা🙂 থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেন : আমার বান্দা যখন নেক কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমল করেনি, আমি তার জন্য একটি সওয়াব লিখি। আর যদি আমল করে তাহলে, ১০ থেকে ৭শ গুন সওয়াব লিখি। যদি গুনাহর কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু এখন ও তা করেনি, আমি তা লিখি না। কিন্তু যদি কাজটি করে ফেলে, তাহলে, আমি কেবল ১টি গুনাহ লিখি।(মুসলিম)
১৯) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 থেকে এক হাদীসে এসেছে : আমার প্রাণ যার হাতে তাঁর শপথ করে বলছি, তোমরা গুনাহ না করলে আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে অন্য একটি সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যারা গুনাহ করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইবে এবং তিনি তাদেরকে মাফ করবেন।
গুনাহ করার পর গর্ব–অহংকার না করে আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে গুনাহ মাফ চাওয়া ও তাওবা করা দরকার। তাওবা করলে আল্লাহ গুনাহ মাফ করেন। বান্দা গুনাহ করবে, আল্লাহ তা জানেন।
তাওবার পর্যাগুলো নিম্মরূপ :
ক) গুনার স্বীকৃতি
খ) গুনার জন্য লজ্জিত হওয়া
গ) তাওবা করা ও মাফ চাওয়া
ঘ) পুনারয় সেই গুনাহ না করার ওয়াদা করা
ঙ) সকল পর্যায়ে পূর্ণ এখলাস ও আন্তুরিকতা থাকা
চ) ওয়াদার উপর টিকে থাকার জন্য আল্লাহ সাহায্য প্রার্থনা করা
৩৭) ই‘তিকাফ
সৌভাগ্য রজনী লাইলাতুল ক্বাদরকে পাবার জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন সাধনা। কর্মব্যস্ত মানুষের পক্ষে তা অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু ই’তিকাফে বসে মহান আল্লাহর ধ্যানে রমযানের শেষ দশকটা কাটিয়ে দিলে বিষয়টি অনেক সহজ্য হয়ে যায়।
ই‘তিকাফ কি :
ই’তিকাফের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, কোন জিনিসকে আকঁড়ে ধরা এবং এ উপর নিজ সত্তা ও আতœাকে আটকে রাখা বা থেমে যাওয়া। ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় আÍশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটা নির্দিষ্ট সময় (বিশেষ করে রমযানের শেষ দশ দিন) পর্যন্ত দুনিয়ার সংশ্রব, সম্বন্ধ ও পরিবার–পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মসজিদে (মহিলাদের জন্য ঘরের একটি নির্জন স্থানে) অবস্থান করে ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়াকে ই‘তিকাফ বলে। এতেকাফের শাব্দিক অর্থ–অবস্থান করা, কোন বস্তুর ওপর স্থায়ীভাবে থাকা। ই‘তিকাফ যেকোন সময় করা যায়। যখনই কেউ ই‘তিকাফের নিয়তে মসজিদে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবস্থান করে, তখনই তা ই‘তিকাফ বলে পরিগণিত হবে। তবে রমযান মাসের শেষ বিশদিন বা দশদিন সুন্নাতে মুয়াক্কাদ্দা আলাল কেফায়া। যিনি ই‘তিকাফ করেন তাকে মু‘তাকিফ বলে।
ই‘তিকাফের ফজিলত :
মানব আÍার পরিশুদ্ধি ও নৈকট্য লাভের জন্য ই‘তিকাফ একটি উত্তম মাধ্যম। দুনিয়ায় মানুষকে হাজারও কর্মব্যস্ততা ও ঝামেলার মধ্যদিয়ে জীবন যাপন করতে হয়। শয়তান মানুষের পিছে অবিরাম লেগে থাকে এবং প্রতিটি কাজে সে মানুষকে ধোঁকা দিতে চেষ্টা করে। ফলে মানুষকে প্রতিনিয়ত শয়তানের বিরুদ্ধে ঈমানের পরীক্ষা দিতে হয়। এ পরীক্ষায় কখনও কখনও মানুষের পদস্খলন হয়। স্ত্রী–পুত্রের মায়া, পরিবার–পরিজনের সুখের চিন্তা, দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাত, অর্থমোহ তথা দুনিয়াপ্রীতি মানুষকে প্রতিনিয়ত গোনাহের দিকে টানছে। অথচ পবিত্র আÍাই কেবল আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। যত বেশি পরিচ্ছন্ন ও তাকওয়া নিয়ে আল্লাহকে উপলব্ধি করতে পারে তত বেশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। বস্তুত ই‘তিকাফ আমাদের জীবনে এমনই একটা সংযোগ এনে দেয়। সংসার ও সামাজিক বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে কিছুদিনের জন্য মানুষ একান্তভাবে আল্লাহর ধ্যানে ব্যস্ত হওয়ার সুযোগ পায় ই‘তিকাফের মাধ্যমে। এখানে স্ত্রীর ভালোবাসা নেই, নেই সন্তানাদির জন্য মায়া, সম্পদের ভীতি, সাংসারিক ঝামেলা এবং ব্যবসা ও অফিসের কর্মচাঞ্চল্য পুরোদমে স্তব্ধ। মোটকথা সকল চিন্তার ঊর্ধ্বে উঠে এখানে একমাত্র আল্লাহর ভাবনায় মশগুল হওয়ার সুযোগ হয়। ই‘তিকাফকারী প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহর ধ্যানে ব্যস্ত থাকে, প্রবৃত্তির কামনা–বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে সমস্ত যোগ্যতাকে আল্লাহর স্মরণে ও ইবাদতে লাগিয়ে দেয়। তাঁর আযাবের কথা স্মরণ করে ভীত কম্পিত হয়ে উঠে, পুরস্কারের কথা স্মরণ করে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে। একদিকে সে অশ্লীল কথাবার্তা ও কাজ থেকে বেঁচে থাকে অন্যদিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে ব্যস্ত থাকে। এইভাবে কয়েকদিনের তরবিয়তের (প্রশিক্ষণ) মাধ্যমে তার মনের উপর খোদাভীতির গভীর প্রভাব পড়ে ফলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে, নাফরমানী থেকে মুক্ত হয়ে সত্যিকারভাবে রাসূল (সা:)কে অনুসরণের মাধ্যমে নৈতিক, আধ্যাÍিক শক্তি ও চেতনা নিয়ে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের ক্ষেত্রে আল্লাহর বান্দাগণ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। এভাবে আল্লাহর হুকুম পালন করে মনে আনন্দ অনুভব করে সমগ্র জীবন আল্লাহর বন্দেগীতে কাটিয়ে দেয়ার প্রেরণা পায়।
ই’তিকাফের হুকুম :
ই’তিকাফ ছুন্নাত। রমযানের শেষ দশ রাত্রে ক্বদরের রাত্রির অন্বেষনে ই’তিকাফ করার বিধান চালু হয়েছে। কিন্তু ই’তিকাফের মান্নত করলে তা পালন করা ওয়াজিব হবে। রমযান ছাড়াও যে কোন সময় মসজিদে অনির্ধারিত সময়ব্যাপী ই’তিকাফ করা যায়।
কুরআনের আলোকে ই’তিকাফ :
১) “আর যখন তোমরা ই‘তিকাফে থাকো তখন স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা : এভাবেই আল্লাহ তাঁর নির্দেশাবালী সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যাতে তারা মুত্তাকী হতে পারে।” (সূরা আল–বাকারা, আয়াত–১৮৭)
২) “ আমার ঘরকে তাওয়াফ ও ই’তিকাফকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।” (সূরা )
হাদীসের আলোকে ই’তিকাফ :
১) হাদীস :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন–যে ব্যক্তি খালেসভাবে এবং খাঁটি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় ই‘তিকাফ করবে আল্লাহ তার পূর্বের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিবেন। (দায়লামী)
২) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন–যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ই‘তিকাফ করে আল্লাহপাক তাহার ও জাহান্নামের মধ্যে তিন খন্দক পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করিবেন। (তাবারানী ও হাকেম)
প্রত্যেক খন্দকের দুরত্ব পূর্ব ও পশ্চিমের দুরত্বের চাইতে আরো বহুদুরে। আবার কোন কোন বর্ণনা এসেছে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়েও বেশি। আবার কোন কোন বর্ণনায় এসেছে এক খন্দক পাঁচশাত বৎসরের পথ।)
৩) হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা🙂 বণিত। রাসূল (সা🙂 বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় একদিন এতকাফ করবে, আল্লাহ তা’আলা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিনটি গহ্বর সৃষ্টি করবেন–যার দূরুত্ব আসমান ও যমীনের দূরত্বের চেয়েও অধিক হবে।
৪) হাদীস :
আবু হুরায়রা (রা:) বলেন : রাসূল (সা:) প্রতি রমযান মাসে দশদিন ই‘তিকাফ করতেন কিন্তু যে বছর তিনি ইন্তিকাল করেন সে বছর বিশদিন ই‘তিকাফ করেন। (বুখারী, মুসলিম)
৫) হাদীস :
হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, “হুজুর (সা:) সবসময় রমযানের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করতেন। ইন্তিকাল পর্যন্ত তিনি এ নিয়ম পালন করেন। তাঁর ইন্তিকালের পর তাঁর স্ত্রীগণ ই‘তিকাফের সিলসিলা জারি রাখেন।” (বুখারী)
৬) হাদীস :
হযরত আয়েশা (র:) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) রমযানের শেষ দশ দিনে ই’তিকাফ বসতেন এবং বলতেন–তোমরা লাইলাতুল ক্কাদরকে রমযানের শেষ দশ দিনে তালাশ করো। (বুখারী)
৭) হাদীস :
অন্য আরেক হাদীসে এসেছে, তিনি ই’তিকাফ করা জন্য মসজিদে তাঁবু টানানোর নির্দেশ দেন। তাঁবু নির্মাণ করা হল। তাঁর স্ত্রী যয়নবসহ অন্যান্য স্ত্রীরাও তাঁবু টানানোর নির্দেশ দেন। ফজরের সময় তিনি এত তাঁবু দেখে বললেন, কল্যাণ নেমে এসেছে। তারপর তিনি তাঁবুগুলো সরিয়ে নেযার নির্দেশ দেন এবং নিজেও সেই বছর রমযানের ই’তিকাফ ছেড়ে দেন ও শাওয়াল মাসের প্রথম ১০ দিন ই’তিকাফ করেন। (মুসলিম)
৮) হাদীস :
হযরত আয়েশা ( রা:) বর্ণনা করেরেছেন, যখন রামাযানের শেষ দশ দিন এসে যায়, তখন নবী (সা:) পরনের কাপড় মজবুত করে বাঁধতেন (অর্থাৎ দৃঢ়তার সাথে প্রস্তুতি নিতেন), রাত জাগতেন এবং পরিবারের লোকদেরকেও জাগিয়ে দিতেন। (বুখারী)
৯) হাদীস :
হযরত আয়েশা (রা:) বলেন– “হুজুর (সা:) রমযানের শেষ দশদিন জিকির ও ইবাদতের এমন ব্যবস্থা করতেন যা অন্য সময়ে করতেন না।” (মুসলিম)
১০) হাদীস :
হযরত আনাস (রা:) বলেন-“হুজুর (সা:) রমযানের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করতেন। এক বছর তিনি ই‘তিকাফ করতে পারেননি তাই পরের বছর বিশদিন ই‘তিকাফ করেন।” (তিরমিযী)
১১) হাদীস :
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, ই’তিকাফকারী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: ই’তিকাফকারী গুনাহ থেকে বিরত থাকে। তাকে সকল নেক কাজের কর্মী বিবেচনা করে বহু সওয়াব দেয়া হবে। ( ইবনে মাজাহ)
ই‘তিকাফের প্রকারভেদ :
ই‘তিকাফ তিন প্রকার। যথা :
১। ওয়াজিব ই‘তিকাফ
২। সুন্নাত ই‘তিকাফ
৩। মুস্তাহাব ই‘তিকাফ।
১) ওয়াজিব ই‘তিকাফ :
মান্নতের ই‘তিকাফ ওয়াজিব। কেউ যদি মান্নত করে (শর্তে বা বিনাশর্তে) যেমন – কেউ বললো যদি আমার অমুক কাজ হয় তাহলে ই‘তিকাফ করবো। তবে এ ই‘তিকাফ ওয়াজিব হবে এবং তা পূর্ণ করতেই হবে এবং ওয়াজিব ই‘তিকাফকারী অবশ্যই রোযাদার হতে হবে। হযরত ওমর (রা:) একদিন রাসূল (সা:)কে বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা:) জাহেলী যুগে আমি হারাম শরীফে একরাত ই‘তিকাফ করার মান্নত করেছিলাম”। হুজুর (সা:) বললেন– “তোমার মান্নত পূর্ণ কর”। (বুখারী)।
২) সুন্নাত ই‘তিকাফ :
রমযানের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট মহল্লার মুসলমানদের পক্ষ থেকে এক বা একাধিক ব্যক্তি ই‘তিকাফ করলে সকলের ওপর থেকে ই‘তিকাফ আদায় হয়ে যায়। অন্যথায় সকলে গোনাহগার হবে।
৩) মুস্তাহাব ই‘তিকাফ :
রমযানের শেষ দশদিন ব্যতীত অন্য যেকোন সময়ে ই‘তিকাফ মুস্তাহাব। এই ই‘তিকাফের নির্দিষ্ট সময় বা সীমা নেই। যেকোন সময় করা যায়।
ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য :
ক্স ই’তিকাফের উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক কায়েম করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পথে যেন কোন দুনিয়াবী চিন্তা ও কাজ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে। তার জন্য নির্জনতা/ মসজিদে অবস্থান করা।
ক্স ই‘তিকাফের মূল উদ্দেশ্য হলো মানব আÍার পরিশুদ্ধি– তথা তাজকিয়ায়ে নফস বা আÍার পবিত্রতা অর্জন, আধ্যাÍিক উৎকর্ষ এবং আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক উন্নয়ন করা।
ক্স ই’তিকাফের উদ্দেশ্য হলো হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম একটি মর্যাদাবান রাত তথা লায়লাতুল কদরকে সন্ধান করাই হলো এর অন্তর্নিহিত ভাব।
ক্স এতেকাফের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর কাছে নিরবে একাকী দোয়া ও কান্নাকাটি করা এবং এবাদত করা।
সর্বোত্তম ই‘তিকাফ :
মসজিদুল হারামে ই‘তিকাফ করলে তা সর্বোত্তম ই‘তিকাফ। তারপর মসজিদে নববীতে তারপর বায়তুল মুকাদ্দাসে অতপর উৎকৃষ্ট ই‘তিকাফ নিকটবর্তী কোন জামে মসজিদে যেখানে নিয়মিত জামায়াতে নামায হয়।
ই‘তিকাফের শর্ত :
১) মুসলমান হওয়া
২) ই‘তিকাফের জন্য নিয়ত করা।
৩) পুরুষদের জন্য মসজিদ ব্যতীত ই‘তিকাফ সহীহ হবে না।
৪) শরীর পাক–পবিত্র হতে হবে।
৫) রোযাদার হতে হবে।
৬) আকেল (জ্ঞানসম্পন্ন) ও বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) হওয়া।
৭) আবশ্যকীয় প্রয়োজন ব্যতীত পূর্ণাঙ্গ সময় মসজিদে অবস্থান করা।
মহিলাদের ই‘তিকাফ :
রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর উত্তম আদর্শ থেকে জানা যায় নারীরাও ই‘তিকাফ করতে পারবে। নারীদের ই‘তিকাফ ঘরের কোন নির্জন স্থানে (বিশেষ করে নামাযের স্থান) নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। কিন্তু সন্তান প্রসব হলে বা গর্ভপাত হলে সাথে সাথে ই‘তিকাফ ছেড়ে দিতে হবে। তবে বিশিষ্ট ওলামায়ে–কেরামদের মতে মহিলাগণ ই‘তিকাফ অবস্থায় থেকে নিতান্ত পারিবারিক প্রয়োজনের খুঁটিনাটি কাজ মৌখিকভাবে ই’তিকাফের স্থান ত্যাগনা করে খুব শর্তকতার সাথে অল্প কথায বলে দিতে ই’তিকাফের কোন ক্ষতি হবেনা।
ই‘তিকাফের স্থান ত্যাগ না করে খুব সতর্কতার সাথে, অল্প কথায় বলে দিলে ই‘তিকাফের কোন ক্ষতি হবে না। কোন মহিলা যদি নিজ ঘরের কোন নির্দিষ্ট স্থানকে সবসময় নামাযের স্থান বানিয়ে থাকে তবে সে জায়গাটিকে সে মসজিদ বলুক বা নামাযের স্থান বলুক কিছু যায় আসে না। তার জন্য সেই নির্দিষ্ট স্থানটি ছাড়া ঘরের অন্য কোথাও ই‘তিকাফ করা জায়েয নয়। বর্তমানকালে সাধারণ মসজিদে মহিলাদের পক্ষে ই‘তিকাফ করা সম্ভব নয়। কেননা ই‘তিকাফের দীর্ঘ সময়টা মসজিদে তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নির্বিঘেœ থাকবে, আজকাল সে আশা করা যায় না।
তাছাড়া মহিলাদের ব্যাপারে নবী (সা:)-এর বাণী হলো– “মহিলাদের ঘরে নামায পড়া মহল্লার মসজিদে নামায পড়ার চাইতে উত্তম।” যেহেতু হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় রোযা রাখা যায় না তাই ই‘তিকাফ অবস্থায় যদি কোন মহিলার হায়েজ হয় বা নেফাস আরম্ভ হয় তবে ই‘তিকাফের স্থান ত্যাগ করা তার জন্য ওয়াজিব। হায়েজ ও নেফাস বন্ধ হওয়ার পর তাকে পুনরায় ই‘তিকাফ স্থানে প্রবেশ করতে হবে এবং যতদিন ই‘তিকাফের জন্য নিয়ত বা মান্নত করেছিল তার অবশিষ্ট দিনগুলো পূর্ণ করতে হবে।
১) মান্নতের ই‘তিকাফ হয়ে থাকলে ওজরের কারণে যতদিন ই‘তিকাফ করতে পারেনি ই‘তিকাফ স্থানে ফিরে এসে সেই ছুটে যাওয়া দিনগুলোসহ ই‘তিকাফের মুদ্দত পূরণ করতে হবে।
২) সুন্নাত ই’তিকাফ শুরু করার পর তা কোন কারণে পূর্ণ করতে না পারলে পরবর্তীতে কাজ আদায করা উত্তম । হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে জানা যায়, একবার রাসূলুল্লাহ (সা:) শাওয়াল মাসে তা কাজা করেন।
৩) নফল ই‘তিকাফ হলে ছুটে যাওয়া দিনগুলোর জন্য অতিরিক্ত ই‘তিকাফ করতে হবে না।
৪) মহিলাদের ই’তিকাফের স্থান নিয়ে মতভেদ আছে। কিউ কেউ বলেছেন, ঘরে ই’তিকাফ করা উত্তম। আবার কেউ কেউ বলেছেন, মসজিদে নিরাপদ হলে সেখানেও ই’তিকাফ করা যায়। তবে শর্ত হল, মহিলাদের জন্য স্বামীর অনুমতি নিয়ে ই’তিকাফে বসেতে হবে। বিনা অনুমতিতে বসলে স্ত্রীকে ই’তিকাফ থেকে সরিযে নেয়ার অধিকার স্বামীর রযেছে। তবে স্বামী যদি বিদেশে কিংবা পেশাগত কারণে দূরে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। তাছাড়া স্বপ্নদোষ হলেও ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয় না।
ই‘তিকাফকারীর জন্য যা বর্জনীয় :
ড় নিরর্থক, অপ্রয়োজনীয়, অশ্লীল কথা বলা ও কাজ করা।
ড় দুনিয়াবী কোন কাজ করা।
ড় চুপ থাকাকে এবাদত মনে করে কোন কথা না বলা।
ড় লেন–দেন বা বেচা–কেনা করা।
ড় গীবত করা।
ড় বসে বসে বাজে গল্প বলা ও শোনা।
ড় যে কথায় গুনাহ হয়।
ই‘তিকাফকারীর জন্য যা করা যায়েজ :
ড় কুরআন তেলাওয়াত।
ড় তাসবিহ–তাহলীল, জিকির–আজকার।
ড় বেশি বেশি ইস্তেগফার ও দরূদ পড়া।
ড় তাফসীর অধ্যয়ন ও হাদীসের জ্ঞানচর্চা।
ড় বেশি বেশি নফল নামায বিশেষ করে তাহরিয়্যাতুল ওযু, সালাতুল এশরাক, সালাতুল চাশত, সালাতুল জাওয়াশ, সালাতুল আউয়াবীন ও সালাতুল তাসবীহ ইত্যাদি নিয়মিত আদায় করা।
ড় দ্বীন সম্পর্কে পড়াশোনা করা ও করানো।
ড় ওয়াজ ও দ্বীনের প্রচার, প্রসারের কাজে লিপ্ত থাকা।
ড় ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কীত বইপত্র পড়া ও রচনা করা।
ড় মসজিদে থেকে করা যায় এমন সব কাজ ইতিকাফ অবস্থায় করা যায়।
কি কি কারণে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায় :
ড় মসজিদ বা নারীদের ইতিকাফ স্থান থেকে নিস্প্রয়োজনে বের হলে।
ড় ইসলাম ত্যাগ করলে।
ড় অজ্ঞান, পাগল ও মাতাল হলে।
ড় নিয়মিত ঋতুস্রাব দেখা দিলে।
ড় সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে বা গর্ভপাত হলে।
ড় সহবাস করলে।
ড় বীর্যপাত ঘটলে।
ড় ইতিকাফকারীকে মসজিদ বা ইতিকাফের (মহিলাদের) স্থান থেকে জোরপূর্বক বের করে দিলে।
ড় শরিয়ত অনুমোদিত প্রয়োজনে বাইরে গেলে যদি কেউ আটকে রাখে না রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে যায় ফলে পৌঁছতে দেরি হয় তবে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
যে সব প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে :
ড় যে কোন প্রাকৃতিক বা শরীয়তের প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া যায়।
ড় জুমার নামায পড়ার ব্যবস্থা না থাকলে জুমা পড়ার জন্য নিকটবর্তী জুমা মসজিদে যাওয়া যায় তবে এ ব্যাপারে সময়ের আন্দাজ ইতিকাফকারীর উপর নির্ভর করে।
ড় প্রশ্রাব, পায়খানা ও ওযু করার জন্য বাইরে যাওয়া যাবে।
ড় খানা আনার লোক না থাকলে বাড়ি থেকে এনে মসজিদে খাওয়া যাবে।
ড় আযান দেয়ার জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া যাবে।
ড় ঘুমানো ও আরাম করা যাবে।
ড় মসজিদের বাইরে অবস্থানরত কোন লোকের সাথে প্রয়োজনীয় কথা না বলা এমনকি সালাম না দেয়া।
ড় ফরজ গোসলের জন্য যাওয়া। সম্ভব হলে নিয়মিত গোসল ত্যাগ করা।
ড় যদি মসজিদ বা ইতিকাফ স্থানের পাশে আগুন লাগে বা কেউ পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে বা মসজিদ ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা থাকলে ইতিকাফ স্থান থেকে বাইরে যাওয়া কেবল জায়েয নয় বরঞ্চ জরুরি তবে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
আরো কতিপয় বিষয় জেনে রাখা ভালো :
ড় ঘুমন্ত অবস্থায় বা কোন খারাপ চিন্তার ফলে শরীর থেকে বীর্যপাত হলে ইতিকাফের কোন ক্ষতি হয় না।
ড় মাথা আঁছড়ানো, চুল কাটা, নখ কাটা, সুন্দর জামা পরিধান করা মুবাহ অর্থাৎ ইতিকাফকারী ইচ্ছা করলে করতে পারে আবার নাও করতে পারে।
ড় ইতিকাফের নিয়ত করার সময় যদি আপনজনের (মা, পিতা, ভাই, বোন ইত্যাদি) জানাযায় অংশগ্রহণের নিয়ত করে তাহলে শরীক হতে পারবে অন্যথায় পারবে না।
ড় নিয়মিত সাধারণ গোসল না করা ভালো তবে অনেক ওলামাদের মতে ইতিকাফকারী যদি বিনা গোসলে শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করে যা তার ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে তবে সে প্রস্রাব পায়খানা করে ফিরার সময় গোসল করে ফিরতে পারে।
ড় কেবল ওয়াজিব ইতিকাফের সময় রোযাদার হতে হয় আর সুন্নাত ইতিকাফতো রমযানেই হয়ে থাকে।
ড় মহিলাদের ক্ষেত্রে পারিবারিক একান্ত প্রয়োজনীয় কাজ ইতিকাফের স্থান ত্যাগ না করে সংক্ষেপে মৌখিকভাবে বলে দেয়া যেতে পারে তবে সম্ভব হলে বর্জন করাই উত্তম।
ড় সর্বদা ইতিকাফের হক ও মসজিদের আদাবের প্রতি তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে।
ই’তিকাফে প্রবেশ ও তা শেষ হওয়ার সময়কাল :
কোন ব্যক্তি ই’তিকাফের নিয়তে যে সময় মসজিদে প্রবেশ করবে সেটাই তার ই’তিকাফের সময় হিসেবে বিবেচিত হবে। এরপর যখন শেষ করার নিয়তে বের হয়ে পড়বে তখনই ই’তিকাফ শেষ হয়ে যাবে। উদারহরণ স্বরুপ বলা যায় কেহ রমযানের শেষ ১০ দিন ই’তিকাফ করতে চাইলে ২০ই রমযান সূর্যাস্তের আগে মসজিদে প্রবেশ করবে এবং রযমানের সবশেষে দিন সূর্যাস্তের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসবে।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এই মর্যাদাপূর্ণ রমযানের সেই বহুল কাক্সিক্ষত ক্বদর রাতকে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালনের নিমিত্তে হুজুরে পাক (সা.) রমযানের শেষ দশদিন আসলে পরিধেয় বস্ত্রকে খুব শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং ইবাদতের জন্য বিশেষ মনোনিবেশ করতেন। রাসূল (সা.) এর সত্যিকার অনুসারী হিসাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত ব্যস্ততাকে একটু কমিয়ে দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যাদের সামর্থ আছে তাদের হারাম শরীফে অথবা মসজিদে নববীতে ইতিকাফের প্রস্তুতি নেয়া উচিত। তা না হলে ন্যূনতম মহল্লার নিকটবর্তী জামে মসজিদে রমযানের শেষ দশদিনে ক্বদর রাতের বিশেষ ফজিলতপ্রাপ্তির প্রত্যাশায় ইতিকাফ করে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছার পূর্বেই কিছু নেকী অগ্রিম পাঠানোর ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।
ই’তিকাফের বিরাট সওয়াব ও মর্যাদা লাভ করার জন্য সবাইর সচেষ্ট হওয়া দরকার। বিশেষ করে তা মসজিদে, রমযানে এবং রমযানের শেষ দশকে হওয়ার কারণে এর মর্যাদা বহু বহু গুন বেশী। আল্লাহ আমাদের সবাকে তৌফিক দিন। আমীন।
38) নিদ্রা যাওয়ার সময় কতিপয় দু‘আ
১। হাদীস :
হযরত আবু হোরায়রা (রা🙂 বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা🙂 যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন এই দু‘আটি পড়তেন -“আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া”।
অর্থ–আল্লাহ! আমি তোমারই নামে মৃত্যুবরণ করি এবং তোমারই নামে জীবনধারণ করি।
২। হাদীস :
হযরত আবু ইমামা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:) বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি ওযু করে শয্যা গ্রহণ করলো এবং আমাকে স্মরণ করতে করতে নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়লো, সে রাতের যে কোন মুহূর্তে পার্শ্ব পরিবর্তন করার সময় আল্লাহর কাছে যে কল্যাণই প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাই তাকে দান করবেন।
৩। হাদীস :
হযরত আব ু সাঈদ খুদরী (রা🙂 থেকে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ (সা🙂 বলেছেন : শয্যা গ্রহণের সময় যে ব্যক্তি তিনবার এ দু‘আটি পড়বে সমুদ্রের বুদবুদের সমান, সাহরা মুরুভূমির বালুরাশির সমান কিংবা জীবিকা উপর্জনকালের সমান গুনাহ হলেও আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন।
“আসতাগফেরুল্লাহাল্লাজি লা–ইলাহা ইল্লাহুওয়াল হাইয়্যুল ক্কায়্যিুমু ওয়াতুবু ইলাহি”।
অর্থ–আমি আল্লাহর কাছে আমার সমস্ত গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করছি–যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী সত্তা।
৪। হাদীস :
একটি দীর্ঘ হাসীসে উল্লেখ আছে যে, নবী করীম (সা🙂 হযরত আলী (রা🙂 ও হযরত কাতিমাকে (রা🙂 উপদেশ দিয়েছিলেন : তোমরা যখন ঘুমাতে যাবে তখন ৩৩বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩বার আলাহামদু লিল্লাহ, এবং ৩৪বার আল্লাহু আকবার পড়বে। এই কাজটি তোমাদের জন্য ক্রীতদাসের* চেয়ে উত্তম।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন : আমি জানতে পেরেছি, যে ব্যক্তি এই কথাগুলো (সুবহানাল্লাহি আলাহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার) নিয়মিত পড়বে সে যতোই পরিশ্রম করুক না কেন ক্লান্তি ও অবসন্নতা তাকে মোটেই কষ্ট দিতে পারবে না।
৫। হাদীস :
মুসনাদে আহমাদে ইবনে আ’বাদ হযরত আলী (রা🙂 বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আমাকে তাঁর নিজের ও হযরত ফাতিমা (রা🙂 এর সর্স্পকে এ হাদীসটি পুরো শুনিয়েছেন এবং উপরোক্ত দু‘আটি পড়তে উপদেশ দিয়েছেন। এ হাদীসটির পটভূমি হলো, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা হযরত ফাতিমা (রা🙂 নবী (সা:)-এর দরবারে হাজির হয়ে আবেদন করলেন যে, তাঁর যাঁতা পিষতে পিষতে এবং পারিবারিক কাজকর্ম করতে করতে তা ঁর হাতের তালুতে ঘা হয়ে গিয়েছে। তাই যুদ্ধবন্দিনীদের মধ্য থেকে তাঁকে একটি দাসী দেয়া হোক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বাড়ীতে ছিলেন না। ফাতিমা ফিরে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ী আসলে হযরত আয়েশা (রা🙂 তাঁর কাছে হযরত ফাতিমার (রা🙂 অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন। এতে নবী (সা🙂 হযরত ফাতিমা (রা:)-এর বাড়ীতে গিয়ে হাজির হলেন। হযরত আলী (রা🙂 ও হযরত ফাতিমা (রা🙂 দুজনেই তখন বাড়ীতে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন: আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি বিষয় বলবো না, যা তোমাদের জন্য খাদেমের চেয়ে অনেক গুণ উত্তম হব্?ে অতঃপর তিনি প্রত্যেক নামাযের পরে এবং রাতে শোবার সময় উপরোক্ত দু‘আটি পড়তে উপদেশ দিলেন।
৬। হাদীস :
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। আবু মাসউদ আনসারী বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ঘুমানোর সময় যে ব্যক্তি সূরা বাকারার শেষ তিনটি আয়াত তিলাওয়াত করবে সেটি তার জন্য সব ব্যাপারেই যথেষ্ট হবে। কেউ কেউ এর অর্থ বুঝাচ্ছেন এই যে, এ আয়াতগুলির তিলাওয়াত করলে রাত জেগে ইবাদতের জন্যও যথেষ্ট হবে। কিন্তু এ অর্থটি একেবারেই ঠিক নয়। এ যথেষ্ট হওয়ার সঠিক অর্থ হলো, তা মানুষকে সব রকমের অকল্যাণ ও বিপদ থেকে নিরাপদ রাখবে।
হযরত আলী (রা🙂 বলেন : আমি মনে করি না, সূরা বাকারার শেষ তিনটি আয়াত না পড়ে কোন জ্ঞানী ব্যক্তি ঘুমাতে পারে।
৭। হাসীস :
সহীহ বুখারীতে হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 এ ঘটনার উল্লেখ আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মসজিদে নববীতে সাদকায়ে ফিতর হিসেবে জমাকৃত খাদ্যশস্যের তত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেছেলেন। এই সময়ে এক ব্যক্তি পর পর দুই রাত সেখানে খাদ্যশস্যের স্তুুপের কাছে এসে মুঠি ভরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকলো। প্রতিবারই হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 তরিক হাতেনাতে পাকড়াও করলেন । কিন্তু নিজের চরম দরিদ্রদশার কথা বলে এবং পুনারাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে মুক্তিলাভ করলো।। তৃতীয় রাতে সে আবার আসলো। হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 তাকে পাকড়াও করে বললেন : এবার আমি তোমাকে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির না করে ছাড়ছি না। সে অনুনয় করে বললো, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কথা শিখিয়ে দিচ্ছি, যা তোমার জন্য খুবই কল্যাণকর হবে। হযরত আবু হুরায়রা কল্যাণকর কথার অনুরক্ত ছিলেন। তাই তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। সে বললো, রাতে যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করে দেয়া হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। হযরত আবু হুরায়রা (রা🙂 সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ ঘটনা শুনালে তিনি বললেন : সে নিজে মিথ্যাবাদী, কিন্তু তার এ কথাটা সত্য। তোমার সাথে যার কথা হয়েছে সে কে তা কি জানো? সে শয়তান।
৮। হাদীস :
বুখারী ও মুসলিমে হযরত আয়েশা (রা🙂 থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই আমলটি বর্ণিত হয়েছে যে, নবী (সা:)-এর নিয়ম ছিলো প্রত্যেক রাতে যখন তিনি ঘুমানোর জন্য বিছানায় যেতেন তখন দুই হাতের তালু সংযুক্ত করতেন এবং তারপর সূরা ইখলাস , ফালাক ও নাস পাঠ করে তাতে ফুঁ দিতেন এবং নিজের দেহের যতোদূল পর্যন্ত সম্ভব হরা ছোঁয়া লাগাতেন। স্পর্শ করা শুরু করতে মাথা, মুখমন্ডল এবং শরীরের সম্মুখভাগ থেকে। এরূপ তিনবার করতেন।
৯। হাদীস :
একদিন নবী করীম (সা:) বলেছিলেন আলী ! পাঁচটি কাজ সম্পাদন না করে নিদ্রা যেয়ো না।
প্রথমত– মিসকীনদের মধ্যে চার হাজার দেরহাম সাদকা করবে।
দ্বিতীয়ত– অন্তত এক খতম কুরআন পাঠ করবে।
তৃতীয়ত– জান্নাতের মূল্য পরিশোধ করবে।
চতুর্থত– হজ্ব আদায় করবে।
পঞ্চমত– সমগ্র দাবীদারদের তুষ্ট করবে।
হযরত আলী (রা:) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্ল¬াহ ! এতগুলি কাজ একরাতে সমাধা করা কিভাবে সম্ভবপর হবে ? নবী করীম (সা:) এরশাদ করলেন–
প্রথমত :
শয়নের আগে চারবার সূরা ফাতেহা পাঠ করবে। এতেই ফকীর–মিসকীনের মধ্যে চার হাজার দেরহাম সদকা দান করার তুল্য নেকি অর্জিত হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত :
তিনবার সূরা এখলাস পাঠ করবে, এতে করে পূর্ণ এক খতম কুরআন পাঠ করার সমান নেকি অর্জিত হয়ে যাবে।
তৃতীয়ত :
দশবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, এর দ্বারা তোমার বেহেশতের মূল্য পরিশোধ হয়ে যাবে।
চতুর্থত :
পাঁচবার “সুবহানাল্ল¬াহ ওয়ালহামদুলিল্ল¬াহ ওয়া লা–ইলাহা ইল্ল¬াল্লাহু আল্ল¬াহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্ল¬াহিল আলিয়্যিল আজীম, মাশাআল্লা¬হু কানা, মা–লাম ইয়াশাউ লাম ইয়াকুন” পাঠ কর। এর দ্বারা তুমি হজ্ব আদায় করার সমান নেকি লাভ করতে পারবে।
পঞ্চমত :
দশবার “সুবহানাল্ল¬াহি বেহামদিহী,ওয়া সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম,ওয়া বেহামদিহী ওয়াসতাগফেরুল্লাহা রাব্বী মিন কুল্লে¬ যাম্বিওঁ ওয়া আতুবু ইলাইহি”- পাঠ কর, এতটুকুই তোমার জন্য এমন ফলপ্রসূ হবে, যেন তুমি সমস্ত দাবীদারগণকে তুষ্ট করে দিলে।
১০৩) ঘুমাবার আগের আমলগুলো নিম্মরূপ
১। প্রথমে ওযু করে ঘুমাতে যাওয়া।
২। “আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া”পড়া।
৩। তিনবার “আসতাগফেরুল্লাহাল্লাজি লা–ইলাহা ইল্লাহুওয়াল হাইয়্যুল ক্কায়্যিুমু ওয়াতুবু ইলাহি” পড়া।
৪। সূরা ফাতেহা–৪ বার পড়া
আল হামদু লিল্ল¬াহি রাব্বিল আলামীন। আর রাহমানির রাহীম। মালিকি ইয়াওমিদ্দীন। ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা’ঈন। ইহদিনাছ ছিরাত্বাল মুসতাক্বীম। সিরাতাল লাযীনা আন‘আমতা আলাইহিম গায়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্বোয়াল্ল¬ীন। আমীন।
৫। সূরা ইখলাস– ৩ বার পড়া
কুল–হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুছ ছমাদ। লাম ইয়ালিদ, ওয়ালাম ইউলাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্ল¬াহু কুফুওয়ান আহাদ।
৬। দুরূদ শরীফ– ১০ বার পড়া
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মদ ওয়া আলা আলে মুহাম্মদ কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলে ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ ওয়া আলা আলে মুহাম্মদ কামা–বারাকতা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলে ইবরাহীম ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ।
সংক্ষিপ্ত দুরুদ : আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মদ ওয়া আলা আলে সায়্যিদিনা মুহাম্মদ।
৭। সুবহানাল¬াহ– ৫ বার পড়া
সুবহানাল্ল¬াহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ ওয়ালা–ইলাহা ইল্ল¬াল্ল¬াহু আল্ল¬াহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্ল–াবিল্লা– হিল আলিয়্যিল আজীম, মাশাআল্ল¬াহু কানা, মা–লাম ইয়াশাউ লাম ইয়াকুন।
৮। সুবহানাল্লাহি বেহামদিহি– ১০ বার পড়া
সুবহানাল্ল¬াহি বেহামদিহী, ওয়া সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম, ওয়া বেহামদিহী ওয়াসতাগফেরুল্লাহা রাব্বী মিন কুল্লে যাম্বিওঁ ওয়া আতুবু ইলাইহি।
৯। ক) ৩৩ বার :
সবুহানাল্লাহ
খ) ৩৩ বার :
আল হামদুলিল্লাহ
গ) ৩৪ বার :
আল্লাহু আকবার পড়া
১০। ১০০ বার পড়া
লা–ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা–শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া–লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদীর।
১১। ১০০ বার পড়া
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সবুহানাল্লাহিল আযীম।
১২। ১০০ বার পড়া
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।
১৩। ১০০ বার পড়া
সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ লা–ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
১৪। আয়তুল কুরসী – ১ বার পড়া
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম, লা তা’খযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাউমু, লাহু–মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি, মানযাল্লাযী ইয়াস ফা’উ ইনদাহু ইল্লা বি‘ইযনিহি, ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালাফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইইম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা’-আ। ওয়াসিয়া কুরসিয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা, ওয়ালা ইয়া’উদুহু হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলীয়্যুল ‘আযীম।
১৫। সূরা হাশরের শেষাংশ – ১ বার পড়া
হুওয়াল্লা হুললাযী লা–ইলাহা ইল্লাহু আ’-লিমুল গাইবি ওয়াশশাহাদাতি হুওয়ার রাহমানুর রাহীম।
হুওয়াল্লা হুললাযী লা–ইলাহা ইল্লাহু আলমালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু‘মিনুল মুহাইমিনুল আযীযুল জ্বাব্বারুল মুতাক্বাব্বিরু; সুবহানাল্লাহি–আম্মা ইউশরিকুন।
হুয়াল্লা হুল খা–লিকুল বা–রিউল মুসাব্বিরু লাহুল আসমা–উল হুছনা; ইয়্যুসাব্বিহু লাহূ মা–ফিস্সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া হুওয়াল আযীযুল হাকীম।
১৬। সূরা আল বাকার শেষ তিন আয়াত ১বার পড়া পড়া
লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্ধী; ওয়াইন তুবদূ মা ফি আনফুসিকুম আও তুখফুহু ইউহাসিবকুম বিহিল্লাহ; ফাইয়াগফিরু লিমাইয়াশাউ ওয়াইউ’আযযিবু মাইইয়াশাউ; ওয়াল্লাহু আল্লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। –২৮৪
আমানার রাসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহি মির বাব্বিহী ওয়াল মু’মিনুন; কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়ামালাইকাতিহি ওয়াকুতুবিহী ওয়া রসূলিহি; লানুফাররিকু বাইনা আহাদিম–মির রসূলিহি; ওয়া ক্বালু সামি’না ওয়াআত’¡না, গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছীর। –২৮৫
লাইয়্যুকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা; লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত; রাব্বানা লা তুআখিযনা ইন্নাসীনা আও আখতা’না; রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইছরান কামাহামালতাহু আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা; রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বক্বাতালানা বিহি, ওয়াফু আন্না, ওয়াগফিরলানা, ওয়ার হামনা, আনতা মাওলানা ফানছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরীন। –২৮৬
১৭। সূরা নাস ১বার পড়া
১৮। সূরা ফালাক ১বার পড়া
১৯। রাসূলুল্লাহ (সা:) এর রওযা শরীফে সালাম প্রেরণ
আচ্ছালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইাকা ইয়া রাসূলুল্লাহ
আচ্ছালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইাকা ইয়া নাবীয়্যাল্লাহ
আচ্ছালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইাকা ইয়া হাবীবাল্লাহ
আচ্ছালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইাকা ইয়া খায়রী খালকিল্লাহ
আচ্ছালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইাকা ইয়া সাইয়্যিদুল মুরছালীন
আচ্ছালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইাকা ইয়া খাতিমান নাবীয়্যিন
আচ্ছালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইাকা ইয়া শাফিয়াল মুজনিবীন
আচ্ছালাতু ওয়াস সালামু আ’লাইাকা ইয়া রাহমাতালিল আলামীন