Home ইসলাম কাদের জন্য ঈদ-উল-ফিতর

কাদের জন্য ঈদ-উল-ফিতর

by admin
0 comment

পবিত্র মহে রমযানের এক মাস রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখ সহীহ মুসলিম মিল্লাতের নিকট হাজির হয় তাদের প্রথম জাতীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। এই দিনে এক মাস ধরে পানাহার, আর যৌন পিপাসা নিয়ন্ত্রণের কঠিন সাধনায় সফল হওয়ার পর তারা শপথ নেয় অবশিষ্ট জীবনে আল্লাহর কঠিন হতে কঠিনতর নির্দেশ মেনে চলার, আর আল্লাহর নিকট থেকে তারা লাভ করে নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার শুভ সংবাদ। ঈদ তাই পরম সাফল্যের, চরম আনন্দের। ইসলমামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের মহান আদর্শ সেখানে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তোলেন। মদীনায় তখন “সিহিরজান” ও “নওরোজ” নামে দুটি উৎসব ছিল। তিনি ওগুলো বদলিয়ে দুই ঈদের প্রচলন করেন। সেই হতে প্রতি বছর সারা দুনিয়ার মুসলমানেরা শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখে ঈদ-উল-ফিতর উৎসব পালন করে আসছে। ঈদ-উল-ফিতর কথার মধ্যে দুটি শব্দ আছে ঈদ এবং ফিতর। ঈদ অর্থ উৎসব। এমন উৎসব যা বারবার ফিরে আসে। ফিতর অর্থ উপবাস ভাঙা। রমযান মাসে আমরা দিনের বেলায় পানাহার বন্ধ রেখ উপবাস করি শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখ তা ভঙ্গ করি বলে এটা ফিতরের উৎসব বা ঈদ-উল-ফিতর।

হাদীস

১. আমাদের প্রিয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন জানো? “এ ঈদ তাদের জন্য নয়, যারা নতুন কাপড় পরলো; বরং তাদের জন্য, যারা আল্লাহকে ভয় করলো। এ ঈদ তাদে জন্য নয়, যারা ভাল খানা-পিনা করল; বরং তাদের জন্য, যারা অপরকে সাহায্য করলো।” রমাযানের শিক্ষা ঈদের খুশি সবই হলো অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য দুঃখীর দুঃখে সাহায্য করা জন্য। শিক্ষা যত কষ্টকর হয়, শিক্ষা সমাপন করতে পারলে আনন্দও তত বেশি । তাই রমযানের রোজার শেষে আসে খুশির ঈদ। আসে আনন্দ। আসে খুশি।

২. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুবলেন, মদীনায় রাসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিযরত করে আসার পর দেখলেন মদীনা বাসী দুদিন খুবই উৎসব করেছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এ দুদিন তোমরা কী কর? তারা জবাবে বললো, জাহেলিয়াতের যুগে এ দুদিন খেলাধুলা আমোদ-ফূর্তি করতাম। তা শুনে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের এ দুটো দিনের পরিবর্তে আরো উত্তম দুটো দিন প্রদান করেছেন। তার একটি হচ্ছে ঈদ-উল-ফিতর; অপরটি হলো ঈদ-উল-আযহা। (আবু দাউদ)

৩. হযর আউস আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহুবলেন, রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঈদুল ফিতরের দিন সকালে সব ফিরেশতা রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান এবং মুসলামানদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, হে সহীহ মুসলিমগণ! তোমরা দয়ালু প্রতিপালকের দিকে এগিয়ে আস। উত্তম প্রতিদান ও বিশাল সওয়াব প্রাপ্তির জন্য এগিয়ে আস। তোমাদের রাত্রিবেলা নামাজের নির্দেশ দেয়া হলে তোমরা সে নির্দেশ মেনে নামাজ পড়েছ। তোমাদের দিগুলোতে রোজা রাখতে বলা হলে তোমরা সে নির্দেশ পালন করো। এক মাস রোজা রেখেছ। গরীব-দুঃখীদের পানাহার করিয়েছো এখন নামাজ পড়ার মাধ্যমে এগুলোর প্রতিদান ও পুরস্কার গ্রহণ কর। ঈদের নামাজ পড়ার পর ফেরেশতাগণের মাঝে একজন ঘোষণা দেন শোন নামাজ আদয়কারীগণ! তোমাদের মহান রাব্বুল আলামীন মাফ করে দেয়েছেন। সব গুনা থেকে মুক্ত অবস্থায় নিজ নিজ ঘরে ফিরে যাও, আকাশে এ দিনের নাম করণ করা হয়েছে পুরস্কারের দিন। (তাবরানী)

৪. রাসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নামাজ সমাপন কারীরা নিষ্পাপ অবস্থায় ঈদের মাঠ থেকে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করে যেন তারা নবজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ।

৫. হাদীসে আছে, যারা ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য ঈদের ময়দানে একত্রিত হয় তাদের সর্ম্পকে দয়াময় আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করেন যারা স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালন করে আজ এখানে সমবেত হয়েছে তাদের কী কী প্রতিদান দেয়া উচিত? ফেরেশতারা জবাবে বলেন, তাদের পূর্ণময় কাজের সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দেয়া দরকার তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের ইজ্জতের শপথ করে বলেন, অবশ্যই তিনি তাদের প্রার্থনা কবুল করেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা  ঈদের নামাজ সমাপনকারী তার নেক বান্দাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আর তোমাদের কৃত অতীত পাপকে নেকীতে পরিণত করে দিয়েছি।

৬. রাসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন সায়েম ঈদের ময়দানে ঈদুল ফিতরের সালাতের জন্য বের হন, তখন আল্লাহ ফরমান যে আমার বান্দা তোমরা; বিশেষ করে আমার জন্য সিয়াম পালন করেছেন এবং এখন সালাত আদায় করো, আমি তোমাদের সবাইকে মাফ করলাম। কিন্তু আল্লাহ কয়েক শ্রেণীর লোককে ক্ষমা করবেন না। ১. যে ব্যক্তি ইবাদাতে আল্লাহর সাথে শরীক করে, ২. যে মদ্য পানে আসক্ত, ৩. যে পিতা-মাতার অবাধ্য, ৪. যে আত্মীয়-স্বজনের সংশ্রাব ত্যাগ করে, ৫. যে মিথ্যা কথা বলে, ৬. যে মুসলিমের সাথে শক্রতা করে, ৭. যে হারাম ভক্ষণ করে।

৭. হাদীসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে, যখন সবে ক্বদর শুরু হয়, তখন হযরত জিব্রাইল (আ.) ফেরেশতাদের নিয়ে অবতীর্ণ হন এবং তাদের জন্য দোয়া করেন। তারপর যখন ঈদের দিন (ঈদ-উল-ফিতর) আসে, তখন আল্লাহ তার বান্দাহদের জন্য (রোজাদার) গর্ব করে ফিরেশতাদের জিজ্ঞাসা করেন হে আমার ফিরেশতাবৃন্দ, বল দেখি আমার কর্তব্যপরায়ণ শ্রমিক বান্দার প্রতিদান কী হবে? ফিরেশতারা বলেন হে প্রভু পূর্ণরূপে তার পারিশ্রমিক দান করাই তো তার প্রতিদান। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা যারা তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছে তার পর আমার কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে করতে ঈদগাহে গমন করেছে, আমার শপথ ও মর্যাদার শপথ। জেনে রাখো, আমি তাদের প্রার্থনা অবশ্যই শ্রবণ করব। তার পর হে আমার বান্দাগণ! আমি নিশ্চয়ই তোমাদের পাপসমূহ পুণ্যে পরিণত করলাম। আমি নিশ্চয়ই তোমাদের পাপসমূহ পুণ্যে পরিণত করলাম। রাসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়ি ফিরেন।

You may also like