Home ইসলাম আল-কুরআনের পরিচয়

আল-কুরআনের পরিচয়

by admin
0 comment

কুরআন আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর বাণী। অতি পঠিত, অধিক অধিক পঠিত। আল্লাহতায়ালা বড়ই মেহেরবানী যে, তিনি জিব্রাঈল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে মানব জাতির হেদায়াত হিসাবে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। কুরআন এমন একটি কিতাব যার মাধ্যমে আরবের সেই জাহেলী জাতি সৌভাগ্যবান জাতিতে পরিণত হয়েছিল। রাসূলুল্লাাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন দিয়েই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ তৈরি করেছিলেন। এতো গুরুত্বপূর্ণ কিতাব আলকুরআন শিক্ষা আজ অবহেলিত। দিন দিন কুরআন শিক্ষা থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি। একজন মুসলিম হিসাবে কুরআন শিক্ষার গুরুত্বও যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারছি না। সেজন্য আমাদেরকে কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে কুরআনের পরিচয়, কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, কুরআন তিলাওয়াতের ফযিলত ও কুরআন শিক্ষা না করার পরিণতি সম্পর্কে আলোকপাত করা  হলো।

১.কুরআন হলো নুর বা আলো

অন্ধকারে নিমজ্জিত জাতিকে সত্যিকার আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য আল কুরআন হলো আলো বা নুর। আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তাঁর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তাঁর অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হিদায়াত দেন’। (মায়িদাহ-৫ আয়াত : ১৫-১৬)

২.কুরআন মানবজাতির জন্য হেদায়াত

কুরআনুল কারীম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরন্তন মু‘জিযা, বিশ্ব মানবতার মুক্তিসনদ। এতে রয়েছে মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট হিদায়াত ও দিক-নির্দেশনা, রয়েছে আলোকবর্তিকা, উপদেশ, রহমত ও অন্তরের যাবতীয় ব্যাধির উপশম। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা বলেন,‘‘হে মানুষ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তরসমূহে যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমাত। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশী হয়। এটি যা তারা জমা করে তার চেয়ে উত্তম।’’ আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবন কীভাবে পরিচালিত হবে, তার প্রতিটি বিষয় কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘আমি তোমার নিকট কিতাবটি নাজিল করেছি। এটি এমন যে তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, আর এটা হেদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ’। (নাহল-১৬ আয়াত : ৮৯)

৩.কুরআন রমাদান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে

কুরআন রমাদান মাসে লাইলাতুল ক্বদরে অবতীর্ণ করা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে : রমযান এমন মাস যাতে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। যা বিশ্ব মানবতার জন্য হেদায়েতও সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা এবং হক ও বাতিলের মধ্যকার পার্থক্য বিধান কারী’ (বাকারা-২ আয়াত : ১৮৫)।

৪.কুরআন মুমিনদের  জন্য রহমাত

কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য রহমাত হিসাবে নাযিল করা হয়েছে। যারা এ কুরআন পড়বে, তা অনুযায়ী আমল করবে তারা আল্লাহর রহমাতপ্রাপ্ত হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘আর আমি কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়।’ (বনি ঈসরাইল-১৭ আয়াত : ৮২)

৫.কুরআন জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস

কুরআন মাজীদ সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস এবং কুরআন যে নির্দেশনা দিয়েছে তা নির্ভুল ও বাস্তবভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘ইয়া-সীন। বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ’। (ইয়াসিন-৩৬ আয়াত : ১-২)

৬.কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য চ্যালেঞ্জ

কুরআনের মত কোন কিতাব মানুষ বা কারো পক্ষে বানানো সম্ভব নয়। প্রায় চৌদ্দশত বছর আগের চ্যলেঞ্জ এ পর্যন্ত কেও মুকাবেলা করতে সক্ষম হয়নি। আর কিয়ামাত পর্যন্ত তা সম্ভবও হবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘বল, যদি মানব ও জ্বিন জাতি সবাই মিলে একত্রিত হয় যে, তারা এ কুরআন অনুরূপ কিছু আনয়ন করবে, তারা এ কুরআনের অনুরূপ কিছুই আনয়ন করতে পারবে না, যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়’। (বনি ঈসরাই-১৭ আয়াত : ৮৮)

৭.কুরআন শিক্ষা সহজ

যারা কুরআন শিক্ষা করতে চান বা দিতে চান, তাদের জন্য আল্লাহতায়ালা সহজ করে দিয়েছেন। বুঝমান যেকোন বয়সের মানুষ তা শিখতে পারবে। কুরআনে ঘোষণা : ‘আর আমি তো কুরআন শেখার জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি’? (কামার-৫৪ আয়াত : ১৭)

৮.কুরআনের বেশ কিছু নাম রয়েছে

কুরআনের বেশ কিছু নাম রয়েছে। যেমন, হুদা-পথনির্দেশক, যিকর-উপদেশ বাণী, ফুরকান-সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী, নুর-আলো ইত্যাদি। যেমন কুরআনে এসেছে, তিনি বরকতময় যিনি তাঁর বান্দার উপর ফুরকান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী) নাযিল করেছেন যেন সে জগতবাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে। (ফুরকান-২৫ আয়াত : ১)

কুরআনের ব্যাপারে আল্লাহর বাণী

১.উহারা কি দাবী করে যে কুরআন (আপনার) বানানো? আপনি বলুন, তোমরা যদি তোমাদের দাবীতে সত্যবাদী হও তাহলে একটি সূরা অন্তত : তৈরী করে নিয়ে এস। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত যাদের সাহায্য প্রয়োজন বোধ কর, সাধ্যমত তাদেরকেও ডেকে নাও। (ইউনুস-১০ আয়াত : ৩৮)

২.আর এই কুরআন এমন এক জিনিস নহে যা আল্লাহর অহী ও শিক্ষা ব্যতীত রচনা করে নেয়া সম্ভব হতে পারে। বরং উহাতে পূর্বে যা এসেছে তার সত্যতার স্বীকার ও আল কিতাবের বিস্তারিত রূপ। উহা যে বিশ্ব নিয়ন্তার তরফ থেকে আসা কিতাব, তাতে কোনরূপ সন্দেহ নেই। (ইউনুস-১০ আয়াত : ৩৭)

৩.আপনি ঘোষণা করে দিন, জগতের সমগ্র মানব ও জ্বিন জাতি মিলেও যদি এ ধরনের একখানা কুরআন তৈরীর করার চেষ্টা করে, তাহলেও তারা তা পারবে না, যদিও তারা এ ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে। (বনী ইসরাইল-১৭ আয়াত : ৮৮)

৪.নিশ্চয়ই কুরআন আমি নাযিল করেছি। আর অবশ্যই উহার হেফাজতের দায়িত্ব আমারই। (হিজর-১৫ আয়াত : ৯)

৫.হে রাসূল দ্রুত কুরআন আয়ত্ত করার নিমিত্তে আপনি আপনার জিহবা সঞ্চালন করবেন না। কুরআন সংরক্ষণ করা এবং উহা পাঠ করিয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব। সুতরাং আমি যখন (জিব্রাঈলের জবানে) উহা পাঠ করি, তখন আপনি উহা অনুসরণ করুন। অত :পর উহা ব্যাখ্যাদান ও আমার জিম্মাদারী। (কিয়ামাহ-৭৫ আয়াত : ১৬ থেকে ১৯)

৬.উহারা নাকি বলে যে, কুরআন রাসূলের তৈরী করা? আপনি বলুন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে এ ধরনে রচিত দশটি সূরা নিয়ে এস। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত যাদের সাহায্য প্রয়োজন বোধ কর সাধ্যমত তাদেরকেও ডেকে নাও। (হুদ-১১ আয়াত : ১৩)

৭.আর যে কিতাব আমি আমার বান্দার (মুহাম্মদের) উপরে নাজিল করেছি, তা আমার পক্ষ হতে কিনা, এ ব্যাপারে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে। তাহলে অনুরূপ একটি সূরা তৈরী করে নিয়ে এস। আর এ কাজে আল্লাহ ছাড়া তোমাদের অন্যান্য সাহায্যকারীদেরকে ডেকে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (আল বাকারা-২ আয়াত : ২৩)

কুরআনে ব্যাপারে হাদীসের ভাষ্য

১.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন কোন রাসূল ছিলেন না যাকে মুজিজা দেয়া হয়নি, যা দেখে লোকেরা ঈমান এনেছে। কিন্তু আমাকে যা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে অহী (কুরআন) যা আল্লাহ আমার কাছে নাযিল করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতেরদিন তাদের অনুসারীদের তুলনায় আমার উম্মতের সংখ্যা সর্বাধিক হবে। (সহীহ আল বুখারী)

You may also like