Home ইসলাম কেন কোরআন বুঝা জরুরী

কেন কোরআন বুঝা জরুরী

by admin
0 comment

সবযুগেই মুসলিম জনসাধারণ কুরআনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। মহান আল্লাহ ততদিন পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহকে সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ জাতির স্বীকৃতি দেবেন যতদিন তারা এ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করবে, হিফয করবে, হিফাযত করবে, এর অর্থ নিয়ে চিন্তা-

গবেষণা করবে, এর গূঢ় তত্ত্বব উপলদ্ধি করবে, এর নির্দেশ মেনে চলবে এবং এর নিষেধকৃত সকল কিছু পরিহার করবে। ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বীশেষে সকল জাতির জীবনে এ গ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা যেহেতু অপরিসীম, সেহেতু মুসলমানগণ এ গ্রন্থের প্রতি সর্বাধিক যতœ ও গুরুত্ব দিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন জাতির গ্রন্থ এ রকম গুরুত্ব পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেনি। কুরআন কারীমের এ অপরিসীম গুরুত্বের কারণে সারা বিশ্বের মুসলিম মানসে কুরআনের পঠন-পাঠন, অধ্যয়ন ও কুরআন বুঝার এক অভূতপূর্ব সাড়া ও বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, যেন কুরআন কারীমের এ বিশাল চর্চা থেকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিষ্ঠাবান মুসলিম মাত্রই উপকৃত হতে পারে।

১.কুরআন হচ্ছে দ্বীনের সকল জ্ঞানের উৎস এবং মৌলভিত্তির আধার। দ্বীন, দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণ এর মাধ্যমেই শুধু অর্জিত হয়। কুরআন নাযিল হয়েছে এর বিধান অনুযায়ী আমল করার জন্য। আমলের জন্য বোঝা ও উপলব্ধির প্রয়োজন। না বুঝে আমল করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে অথচ বুঝে না তার উদাহরণ হল-যেমন একদললোকের কাছে তাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে একটি নির্দেশিকা আসল, যাতে লিখা আছে কি করা যাবে আর কি করা যাবে না, কিসে তাদের মঙ্গল হবে এবং কিভাবে ভুলপথে চললে শক্র তাদেরকে পাকড়াও করবে, তারা সে নির্দেশিকা মাথায় রেখে খুবই সম্মান দেখাল এবং সুন্দর সূরে তা পড়ল কিন্তু বুঝার চেষ্টা না করে ভুল পথে চলল, ফলে অনিবার্যরুপেই তারা শক্র দ্বারা আক্রান্ত হল।

২.কুরআনের অর্থ না বুঝার মানেই হল দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও ধারণা না থাকা। আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম, তিনি আকাশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন, ‘‘এটা সে সময় যখন মানুষের কাছ থেকে জ্ঞান উঠিয়ে নেয়া হবে, ফলে তারা তা অর্জন করতে সক্ষম হবে না।’’ তখন যিয়াদ ইবন লাবিদ আল-আনসারী বললেন, কিভাবে জ্ঞান আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হবে অথচ আমরা কুরআন পড়েছি? আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্যই কুরআন পড়ব, আর আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে কুরআন পড়াব। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘হে যিয়াদ তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক তোমার মৃত্যু হোক) আমি তো তোমাকে মদীনাবাসী ফাকীহদের মধ্যে গণ্য করতাম। এ তাওরাত এবং ইনজিল ইয়াহুদ ও নাসারাদের কাছে আছে। কিন্তু তা তাদের কি কাজে এসেছে?’’ জুবায়ের বললেন, এরপর আমরা উবাদাহ ইবন আস-সামিতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, তুমি কি শুনেছ তোমার ভাই আবুদ্দারদা কি বলছে? আর আবুদ্দারদা কি বলেছে তা তাকে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, আবুদ্দারদা সত্য বলেছে, তুমি চাইলে আমি তোমার কাছে সে ইলম সম্পর্কে বলব যা সর্বপ্রথম উঠিয়ে নেয়া হবে, তা হল খুশূ ও বিনয়। তুমি হয়ত কোন মাসজিদে প্রবেশ করে সেখানে কোন বিনয়ী লোক পাবে না।

অতএব বুঝা গেল যে, ইলম ও জ্ঞান উঠে যাওয়ার কারণই হল এমন ব্যক্তিগণের অভাব ও অনুপস্থিতি যারা ইলমকে ধারণ করবেন এবং সঠিকভাবে উপলব্ধি করবেন ও আমল করবেন।

৩.কুরআন বুঝা ও কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণার বিপুল সাওয়াব রয়েছে। উকবা ইবন আমের আল-জুহানী বলেন, আমরা আহলে সুফফার সাথে থাকাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার আমাদের কাছে এসে বললেন, ‘‘তোমাদের কোন ব্যক্তির এটা পছন্দ যে, সে আল্লাহর অবাধ্যতা ছাড়াই এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট না করে বুতহান অথবা আকীক প্রান্তরে গিয়ে দু’টো বিশালকায় উট নিয়ে আসবে?’’ আমরা বললাম, আমাদের সবারই তা পছন্দ। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ প্রতিদিন মাসজিদে গিয়ে কিতাবুল্লার দু’টো আয়াত শেখা কিংবা পড়া দু’ উটের চেয়েও তার জন্য উত্তম। আর তিনটি আয়াত তিনটি উটের চেয়ে এবং চারটি আয়াত চারটি উটের চেয়ে উত্তম। আর যতগুলো আয়াত সে অধ্যয়ন করবে তা সমসংখ্যক উটের চেয়ে উত্তম।’’ যদি জ্ঞানার্জন সবচেয়ে উত্তম ও মর্যাদাকর কাজ হয়ে থাকে তাহলে এর অগ্রভাগে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে আল্লাহর কালাম জানা, বুঝা ও উপলব্ধি করা। কেননা জ্ঞানের মর্যাদা জ্ঞানগত বিষয়ের মর্যাদার উপর নির্ভর করে। কিতাবুল্লাহ হচ্ছে জগতের সবচেয়ে সম্মানিত বিষয়; সুতরাং এর জ্ঞানার্জনই হল সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাকর কাজ।

৪.মুসলমানদের অনৈক্য, ভুল বুঝাবুঝি ও হানাহানি দূর করে ভালবাসা, সম্প্রীতি ও হৃদ্যতা আনয়নের বিশুদ্ধ উপকরণই হল আল-কুরআনকে সঠিকভাবে বুঝা ও হৃদয়ঙ্গম করা। কুরআনকে সঠিকভাবে না বুঝাই হল যত অনৈক্যের মূল। ইবরাহীম আত-তাইমী বলেন, ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন একাকী ছিলেন, তিনি স্বগতোক্তি করে বললেন, কিভাবে এ উম্মতের মধ্যে বিভেদ থাকতে পারে, অথচ তাদের রাসূল এক এবং কিবলা এক!? এরপর তিনি ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কে ডেকে পাঠালেন ও জিজ্ঞাসা করলেন, এ উম্মত কিভাবে বিভক্ত হতে পারে অথচ তাদের রাসূল এক ও কিবলা এক? ইবন আববাস বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন, আমাদের উপর কুরআন নাযিল হয়েছে এবং আমরা তা অধ্যয়ন করেছি এবং জেনেছি কোন ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। আর আমাদের পর একদললোক আসবে যারা কুরআন পড়বে অথচ জানবে না কোন ব্যাপারে কুরআন নাযিল হয়েছে। ফলে সে ব্যাপারে তারা নিজস্ব মতামত দেবে। আর যখন তাদের নিজস্ব মতামত হবে তারা মতভেদ করবে এবং এভাবে মতভেদ করতে করতেই তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হবে…।

৫.কুরআন শেখা ও তা সঠিকভাবে বুঝা থেকে যারা বিরত থাকে ও মুখ ফিরিয়ে রাখে তারা মূলত কুরআনী জীবন যাপন থেকে সরে গিয়ে অন্য জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের মাধ্যমে জানিয়েছেন, যাদের কাছে কুরআনের জ্ঞান এসেছে অথচ সে জ্ঞান থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ও তা পরিত্যাগ করেছে, তাদেরকে তিনি জ্ঞানের আলোতে উদ্ভাসিত করেননি, বরং অজ্ঞানতার মধ্যেই তারা হাবুডুবু খেয়েছে। তিনি ইয়াহুদদের সম্পর্কে বলেন,‘‘আর যখন তাদের নিকট আল্লাহর কাছ থেকে একজন রাসূল এলো, তাদের সাথে যা আছে তা সমর্থন করে, তখন আহলে কিতাবের একটি দল আল্লাহর কিতাবকে তাদের পেছনে ফেলে দিল, (এভাবে যে,) মনে হয় যেন তারা জানে না। আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলায়মানের রাজত্বে পাঠ করত।’’

ইয়াহুদদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব আসার পর তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বলে আল্লাহ তাদেরকে এমন এক নিকৃষ্ট গ্রন্থের ফিতনায় তাদেরকে আক্রান্ত করেছিলেন যা সুলায়মান আলাইহিস সালামের রাজত্বে শয়তান তিলাওয়াত করতো।

আল্লাহ কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার শাস্তি সম্পর্কে বলেন,‘‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাব অন্ধ অবস্থায়।’’

তিনি আরো বলেন,‘‘আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে, যাকে স্বীয় রবের আয়াত সমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেয়ার পর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।’’

You may also like