কুরআনের বৈশিষ্ট
এ কুরআন যা আপনাদের নিকট আছে, আর যা আপনারা তিলাওয়াত করছেন, শুনছেন, মুখস্থ করছেন ও লিপিবদ্ধ করছেন, তা বিশ্ব জাহানের রব মহান আল্লাহতায়ালার কালাম। যিনি আপনাদের রব। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার ইলাহ। এ কুরআন আল্লাহতায়ালার সুদৃঢ় রজ্জু, তার সরল সঠিক পথ ও দিক নির্দেশনা এবং বরকতময় উপদেশ বাণী ও স্পষ্ট নূর। এ কুরাআন দ্বারাই আল্লাহতায়ালা নিজ শান মোতাবেক কালাম করেছেন। তিনি জিব্রাইল এর মাধ্যমে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর এ কুরআন নাজিল করেছেন। উদ্দেশ্য এর মাধ্যমে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুষ্পষ্ট আরবী ভাষায় মানব জাতিকে সতর্ক করবেন। আমাদের অন্তরে এ কুরআনের মহত্ব, গুরুত্ব ও মর্যাদা বর্ধিত করার জন্য মহান আল্লাহতায়ালা কতিপয় বিশেষণে বৈশিষ্ট্যম–িত করেছেন এ কুরআনকে।
১.আল্লাহতায়ালা বলেন : “রমযান এমন মাস যাতে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল–কুরআন। যা বিশ্ব মানবতার জন্য হেদায়েতও সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা এবং হক ও বাতিলের মধ্যকার পার্থক্য বিধান কারী।”
২.আল্লাহতায়ালা বলেন : “এটা এমন গ্রন্থ যার আয়াতসমূহ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ আপনার নিকট তিলাওয়াত করি।”
৩.আল্লাহতায়ালা বলেন : “হে মানব জাতি! অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে দলীল এসেছে এবং তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট নূর আমি নাজিল করেছি।”
৪.আল্লাহতায়ালা বলেন : “অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান যারা তাঁর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে।”
৫.আল্লাহতায়ালা বলেন : “আর এ কুরআন তো এমন নয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তা রচনা করতে পারবে; বরং এটি যা তার সামনে রয়েছে, তার সত্যায়ন এবং কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, যাতে কোন সন্দেহ নেই, যা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে।”
৬.আল্লাহতায়ালা বলেন : “হে লোক সকল! তোমাদের নিকট উপদেশ বাণী এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, এবং তা অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েতও মুমিনদের জন্য রহমত।”
আল্লাহতায়ালা বলেন : “এটা এমন কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুদৃঢ় ও সুপ্রতিষ্টিত। অতঃপর সবিস্তারে বর্ণিত এক মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময় সত্বার পক্ষ থেকে।”
৭.আল্লাহতায়ালা বলেন : “নিশ্চয় আমি উপদেশ বাণী তথা কুরআন নাজিল করেছি এবং নিঃসন্দেহে এর হেফাজতকারী আমি নিজেই।”
৮.আল্লাহতায়ালা বলেন : “আমি তোমাকে দিয়েছি পুনঃপুনঃ পঠিত সাতটি আয়াত ও মহা কুরআন। আমি তাদের কিছু শ্রেণীকে যে ভোগ উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি তুমি দু’চোখ প্রসারিত করো না। আর তাদের জন্য দুঃখিত হয়ো না। এবং মুমনিদের জন্য তোমার বাহু অবনত কর।”
৯.আল্লাহতায়ালা বলেন : “আমি তোমার নিকট কিতাবটি নাজিল করেছি। এটি এমন যে তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, আর এটা হেদয়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ।”
১০.আল্লাহতায়ালা বলেন : “নিশ্চয় এ কুরআন, যা যথার্থ ও সঠিক পথের দিকেই পথ নির্দেশ করে এবং ঈমানদারদের সুসংবাদ প্রদান করে, যারা নেক কাজ করে, নিঃসন্দেহে তাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে। আর যারা আখেরাতের প্রতি ঈমান আনে না তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করেছি।”
১১. আল্লাহতায়ালা বলেন : “আমি নাজিল করেছি এমন কুরআন যা রোগের নিরাময় এবং মুমিনদের জন্য রহমত স্বরূপ। আর এটা জালিমদের ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছুই বৃদ্ধি করে না।”
১২.আল্লাহতায়ালা বলেন : “বলে, যদি মানব ও জ্বিন জাতি সবাই মিলে একত্রিত হয় যে, তারা এ কুরআন অনুরূপ কিছু আনয়ন করবে, তারা এ কুরআনের অনুরূপ কিছুই আনয়ন করতে পারবে না, যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়।”
১৩.আল্লাহতায়ালা বলেন : “আমি তোমার প্রতি আল কুরআন এ জন্য নাজিল করিনি যে, তুমি দুর্ভোগ পোহাবে। বরং যে ভয় করে তার জন্য উপদেশ স্বরূপ। যিনি যমীন ও সুউচ্চ আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিকট থেকে অবতীর্ণ।”
১৪.আল্লাহতায়ালা বলেন : “বরকতময় সেই সত্বা যিনি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী কুরআন তাঁর বান্দার প্রতি নাজিল করেছেন, যাতে তিনি বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে।”
১৫.আল্লাহতায়ালা বলেন : “নিশ্চয় এ কুরআন তো বিশ্ব জাহানের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। বিশ্বস্ত ফেরেস্তা একে নিয়ে অবতরণ করেছে, আপনার অন্তরে, যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শনকারীদের অন্যতম হোন, সুষ্পষ্ট আরবী ভাষায়। নিশ্চয় এর উল্লেখ আছে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে। তাদের জন্যে এটা কি নিদর্শন নয় যে, বনী–ইসরাইলের আলেমগণ এটা অবগত আছেন।”
১৬.আল্লাহতায়ালা বলেন : “আর শয়তানরা এ কুরআন নিয়ে অবতরণ করে না। আর তাদের জন্য উচিতও নয় এবং তারা পারবেও না।”
১৭.আল্লাহতায়ালা বলেন : “বরং এ কুরআন কতিপয় নিদর্শন ও যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে এদের হৃদয়ে কতিপয় সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা।”
আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন : “এটা তো কেবল এক উপদেশবাণী ও প্রকাশ্য কুরআন। যাতে তিনি সতর্ক করতে পারেন জীবিতকে এবং যাতে কাফেরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়।”
১৮.আল্লাহতায়ালা বলেন : “তোমার নিকট অবতীর্ণ করেছি এক বরকতপূর্ণ কিতাব যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা গবেষণা করতে পারে, আর জ্ঞানীরা যেন উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।”
১৯.আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : “আল্লাহ উত্তম বাণী নাজিল করেছেন, যা সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব, যা বার বার পঠিত হয়। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, অতঃপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনয় হয়ে যায়। এটা আল্লাহর হেদায়াত, তিনি যাকে চান এর দ্বারা হেদায়েত করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হেদায়েতকারী নেই।”
২০.আল্লাহতায়ালা বলেন : “নিশ্চয়ই কুরআন তাদের নিকট আগমন করার পর যারা তা অস্বীকার করে (তাদের পরিণাম ভোগ করতে হবে) এটা অবশ্যই মহিমাময় গ্রন্থ। বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করে না, না সামনে থেকে, না পিছন থেকে, এটা প্রশংসিত, প্রজ্ঞাময় রবের পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে।”
২১.আল্লাহতায়ালা বলেন : “এমনিভাবে আমি তোমার কাছে আমার নির্দেশ থেকে রূহ–কে ওহী যোগে প্রেরণ করেছি। তুমি জানতে না কিতাব কী আর ঈমান কী? কিন্তু আমি একে আলো বানিয়েছি, যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করি। আর নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিক নির্দেশনা দাও।”
২২.আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন : “নিশ্চয় এ কুরআন আমার কাছে উম্মুল কিতাবে সুউচ্চ মর্যাদা, প্রজ্ঞাপূর্ণ।”
২৩.আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন : “এটা মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়াত ও রহমত।”
২৪.আল্লাহতায়ালা বলেন : “অতএব আমি তারকারাজির অস্তাচলের শপথ করছি। নিশ্চয় এটা মহা শপথ যদি তোমরা জানতে। নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে এক গুপ্ত গ্রন্থে, লওহে মাহফুযে। যারা পাক–পবিত্র তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করে না। এটা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।”
২৫.আল্লাহতায়ালা বলেন : “যদি আমি নাজিল করতাম এ কুরআনকে পাহাড়ের ওপর তাহলে অবশ্যই তুমি দেখতে পেতে পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহর ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য উপস্থাপন করি। যাতে তারা চিন্তা করতে পারে।”
২৬.আল্লাহতায়ালা জ্বিন জাতির কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন : “নিশ্চয় আমরা বিস্ময়কর এক কুরআন শুনেছি যা হেদায়াতের পথে পরিচালিত করে। সুতরাং আমরা এর প্রতি ঈমান আনলাম।”
২৭.আল্লাহতায়ালা বলেন : “বরং এটা সম্মানিত কুরআন। যা লওহে মাহফুজে রয়েছে।”
এ সব বৈশিষ্ট যা কুরআনের ব্যাপারে উল্লেখ করলাম আর যা উল্লেখ করিনি, সব গুলোই এ কুরআনের মহত্ব ও বিশালত্বের জ্বলন্ত দলীল এবং কুরআনকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে ইজ্জত ও সম্মান প্রদর্শন করার প্রতি আহ্বান জানায়। বিরত থাকতে বলে এর সাথে সব ধরনের আদব বর্হিভূত আচরণ, উপহাস, ঠাট্টা–বিদ্রুপ করা থেকে।